পূর্ব প্রকাশিতের পর
যেমন, আরেকটা উদাহরণ দিলে আপনারা বুঝতে পারবেন। উদাহরণ হচ্ছে, হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস্্ সালাম লোহিত সাগড় পাড় হচ্ছিলেন, তখন কিন্তু ফিরাউন ও তার দলবল এসে থেমে গেল। ফিরাউন প্রথমে বুঝতে পেরেছিল, এটা হযরত মূসা আলাইহিস্্ সালাম-এর মু’জিযা হবে। আমরা সাগরের মধ্যে গেলে হয়তো ডুবে যাবো। সে ইতস্তত বোধ করছিল যাওয়ার জন্য।
আল্লাহ পাক তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস্্ সালামকে পাঠালেন একটা ঘোড়া দিয়ে; যে, তুমি ফিরাউনের সামনে দিয়ে নেমে যাও। ফিরাউনের ঘোড়াটা তোমার পিছনে পিছনে ধাবিত হবে। সত্যিই তাই হল। হযরত জিবরীল আলাইহিস্্ সালাম ঘোড়া নিয়ে নেমে গেলেন, সেটার পিছনে পিছনে ফেরাউনের ঘোড়া ধাবিত হয়ে গেল। ধাবিত হয়ে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
কিন্তু এখানে একটা ঘটনা ঘটে গেল। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর যারা পড়েছেন তারা হয়তো জানবেন। সামিরী যে ছিল, সে লোকটা মূর্তি পুজা করেছিল। সে একটা গো-বৎস বানিয়েছিল। সে কিন্তু তখন লক্ষ্য করল, হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম-এর ঘোড়ার পা যেখানে পড়ছে সে জায়গাটা মরুভূমি হওয়ার পরেও দুব্বা ঘাস পয়দা হয়ে যাচ্ছে আপসে আপ। সুবহানাল্লাহ। এটা দেখে সামিরী বুঝলো, নিশ্চয়ই এটা দুনিয়াবী কোন ঘোড়া হবে না। এটা গায়িবী কোন মদদ হবে। আসমানী কোন ঘোড়া হবে। জান্নাতী কোন ঘোড়া হবে। যার জন্য তার পা পড়ার সাথে সাথে মরুভূমির মধ্যে সেখানে গাছ পয়দা হয়ে যাচ্ছে। সবুজ ঘাস পয়দা হয়ে যাচ্ছে। সামিরী সকলের অজান্তে এক মুঠ, এক মুষ্টি মাঠি সেখান থেকে তুলে তার পকেটে হিফাযত করে ফেললো। কেউ দেখলো না সেটা। এই মাটিগুলি এনে সে পরবর্তী সময় আল্লাহ পাক-এর নবী এবং রসূল হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস্্ সালাম যখন গেলেন আল্লাহ পাক-এর কাছে তাওরাত কিতাব আনতে। হযরত হারুন আলাইহিস সালামকে দায়িত্ব দিয়ে। তখন সামিরী ফিৎনা সৃষ্টি করেছিল। একটা গরুর বাছুর বানিয়ে তার মুখের মধ্যে সেই মাটিগুলি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিল। এই মাটির এত তাছির ছিল। সেই মুর্দা মুর্তি বাছুরটা হাম্বা হাম্বা করতো। সুবহানাল্লাহ। তাহলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর ঘোড়ার পায়ের মাটি যদি এত ফযীলত থাকে, একটা মুর্দাকে জিন্দা বানিয়ে দেয়। তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকের তলেযে মাটিগুলো তার মর্যাদা কত বেশি হবে? এটাতো মানুষ হিসাব করতে পারবে না। এটা চিন্তা করতে পারবে না। আরশে মুয়াল্লা থেকেও কোটি কোটি গুণ বেশি এবং আরো যদি কিছু থেকে থাকে তার চাইতেও কোটি কোটি গুণ বেশি মর্যাদা সম্পন্ন হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকে যে ধূলা বালিগুলো স্পর্শ করে আছে। সুবহানাল্লাহ।
এটা তো সোজা কথা নয়। খুব ফিকির করতে হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা। তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন এসেছেন, সোমবার দিন, ১২ রবিউল আউয়াল শরফি সেটা কত বড় يوم عظيم
(ইয়াওমুন আযীম) মহান দিন, কত বড় ঈদ, কত বড় খুশী, মানুষের সেটা ভাষা জানা নেই।
ঠিক আরেকটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা। আল্লাহ পাক বলেন-
ورفعنا لك ذكرك.
অর্থাৎ- আমি আপনার যিকিরকে বুলন্দ করেছি। আলোচনা বৃদ্ধি করেছি। ইজ্জত, সম্মান, বৃদ্ধি করেছি, কতটুকু? আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
আরেকটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে সেটা হচ্ছে, একবার হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ যিনি হাদীছ শরীফে আমীরুল মু’মিনীন। তিনি হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এর- যাহিরী-বাতিনী খলীফা। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি আর হযরত মুয়াফা বিন ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট আল্লাহ পাক-এর ওলী, বুযূর্গ, আলিম, ফকীহ। এই দু’জন ফকীহকে, আল্লাহ পাক-এর ওলীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। মানুষতো বলে থাকে, হযরত উমার বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি খলীফা। উমাইয়াদের বিশিষ্ট খলীফা। উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনাকে অনেকে পঞ্চম খলীফা বলে থাকে। এ কথাটা ভুল। এটা মনে রাখবেন।
পঞ্চম খলীফা হচ্ছেন হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর ৬ষ্ঠ খলীফা হচ্ছেন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যদি ইনসাফগার হিসেবে বলা হয় তাহলে সপ্তম খলীফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি।
বলা হয়, উনি অনেক ইনসাফগার, অনেক কিছু করেছেন। উনার মর্যাদা বেশি? না হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্যাদা বেশি?
এটা জিজ্ঞাসা করা হল। উনারা শুনে আশ্চর্য হলেন। আশ্চর্য হয়ে বললেন, তোমরা কি প্রশ্ন এটা করলে। এটা কি প্রশ্ন করলে? এর জাওয়াব হচ্ছে, তোমরা যেনে রাখ! জাওয়াব হচ্ছে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি যে, ঘোড়ায় চড়ে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে তাশরীফ নিতেন। ঘোড়ায় চড়ে তাশরীফ নেয়ার সময় ঘোড়ার পায়ের পদাঘাতের কারণে যেই ধুলা-বালিগুলি উড়তো এবং যেই ধুলা-বালিগুলি ঘোড়ার নাকের মধ্যে প্রবেশ করতো। ঘোড়ার নাকে, উনার মধ্যে না। উনার পায়ের ধুলা-বালি নয়। উনার যে ঘোড়া সেই ঘোড়ার পদাঘাতের কারণে যে ধুলা-বালিগুলি উড়তো এবং ঘোড়ার নাকের ফির যে ধূলা-বালিগুলি প্রবেশ করতো সেই ধূলা-বালিগুলিও হযরত উমার বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি সম্পানিত। সুবহানাল্লাহ।
যদি তাই হয়ে থাকে অর্থাৎ একজন ছাহাবী-এর ঘোড়ার পায়ের ধূলার এত মর্যাদা হয়ে থাকে। হযরত জিবরীল আলাহিস সালাম-এর ঘোড়ার পায়ের ধূলার এত মর্যাদা হয়ে থাকে, তাহলে যিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আখিরী নবী যাঁর জন্য সকলেই সৃষ্টি হয়েছেন তাহলে সেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকে যে ধূলা-বালি স্পর্র্শ করেছে সেটার মর্যাদা কত বেশি হবে? সেটা ফিকিরের বিষয়।
কাজেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দিন এসেছেন সোমবার দিন, যে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাহলে সেই দিন, সেই বারের কম মর্যাদা রয়েছে? এটাতো ফিকির-চিন্তা করতে হবে। এখানে সামান্যতম ইহানত করলে কাট্টা কুফরী হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যেতে হবে। নাজাতের কোন পথ থাকবে না। নাজাতের কোন পথ থাকবে না। জাহান্নামে যাওয়া ছাড়া কোন গতি থাকবেনা একমাত্র তার জায়ে ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এক মাত্র জায়ে ঠিকানা হবে জাহান্নাম। খুব সাবধান থাকতে হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপারে।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক সমস্ত ভালো জিনিস দিয়েছেন। আর উনার স্পর্শে আসার কারণে সব ভালো হয়ে গেছে। কাজেই, সে জন্য সোমবার দিন, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ আল্লাহ পাক-এর ক্বায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে রবীউল আউয়াল শরীফ মাস। শ্রেষ্ঠ বার হচ্ছে সোমবার শরীফ। তারিখ হচ্ছে বারোই শরীফ। আল্লাহ পাক-এর ক্বায়িনাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস, শ্রেষ্ঠ তারিখ, শ্রেষ্ঠ বার এই ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর সোমবার দিন। কাজেই, এটাকে তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।
প্রত্যেক উম্মতের জন্য, শুধু উম্মতই নয় যারা ক্বায়িনাতের মধ্যে রয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর যমীনে যারা রয়েছে ও আল্লাহ পাক-এর যমীনে যত মাখলুকাত সৃস্টি করা হয়েছে, যা করেছেন আল্লাহ পাক, যা করবেন সকলের জন্যেই ফরয-ওয়াজিব, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে সেই দিন, সেই বার, সেই তারিখকে সম্মান-উজ্জত করা। এটা আল্লাহ পাক এরই নির্দেশ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ।
কাজেই, যারা এখন বরবে, দু’ ঈদ ছাড়া কোন ঈদ নেই। তারা মুসলমান থেকে খারিজ। আর যারা বলবে, এই ঈদে মীলাদুন্্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাকরীম করা যায়িয নেই, বিদ্্য়াত, র্শিক। তারাও মুশরিকের অন্তর্ভূক্ত, কাফিরের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে, ইসলাম তেকে খারিজ হয়ে যাবে। কারণ এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের দ্বারা ছাবিত হয়েছে, এই দিন, এই তারিখ, এই বারকে তা’যীম-তাকরীম করা ফরযে আইন। অসমাপ্ত।