খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ অনেক আলোচনা করেছেন। প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান নর-নারীর জন্যে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ অর্থাৎ সবচাইতে শ্রেষ্ঠ দিন, ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ সম্পর্কে সকলেরই জানা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবীদের নবী, রসূলদের রসূল। কাজেই আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত জানা সমস্ত ক্বায়িনাতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর খাছ করে যারা উম্মতে মুহম্মদী তাদের জন্য আরো বেশি ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
تعزروه وتوفروه.
কারণ আল্লাহ পাক নিজেই বলেন, তোমরা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদ্ধএর ইজ্জত সম্মান বজায় রাখ, উনার যথাযথ খিদমত কর, উনাকে ইজ্জত সম্মান কর। বিন্দু থেকে বিন্দুতম যেন চ্যুত না হয়ে যায়। তাহলে কেউ ঈমানদার থাকতে পারবে না।
কাজেই, আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করার তাওফিক দান করেন।
স্মরনীয় যে, আল্লাহ পাক-এর আস্মা ও ছিফত, ইল্ম্ ও কুদ্রত ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যেমন বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত, ঠিক একইভাবে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা উনার গুরুত্ব সম্পর্কে জানাও প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন-
انا اعطينك الكوثر.
“হে আমার হাবীব! আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।”
কাওছার শব্দের লক্ষ-কোটি অর্থ রয়েছে। আমরা সেটা আগেও বলেছি। তারমধ্যে যে দু’টা অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে তার একটি হচ্ছে হাউযে কাওছার। আরেকটা হচ্ছে, খইরে কাছীর। যে হাউযে কাওছারের পানি পান করলে জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত পানি পিপাসা লাগবে না। আর দ্বিতীয় খইরে কাছীর-এর অর্থ হচ্ছে অর্থাৎ যত ভালো রয়েছে, সমস্ত ভালাইগুলো আল্লাহ পাক আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। এখন সে ভালোগুলো আল্লাহ পাক একদিক থেকে দান করেছেন আরেকদিক থেকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে সেগুলো ভালো ও উত্তম হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।
ইজমা হয়েছে সমস্ত উম্মতের, অর্থাৎ সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ, সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকে যে মাটি স্পর্শ করেছে সে মাটি মুবারক আরশে মুয়াল্লার চাইতে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি সম্মানিত, ফযীলত পূর্ণ। সুবহানাল্লাহ। এটার একমাত্র কারণই হচ্ছে যিনি আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে একটা সম্পর্ক, তায়াল্লুক থাকার কারণে। কাজেই, এটার একমাত্র কারণই হচ্ছে যিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একটা সম্পর্ক, তায়াল্লুক থাকার কারণে। কাজেই, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর সাথে তায়াল্লুক থাকার কারণে একটা মাটি যদি এত সম্মানিত হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই তারিখে এসেছেন, যেই বার এসেছেন, যেই মাসে এসেছেন সেই মাস, তারিখ, সেই বার অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার দিনের কতটুকু মর্যাদা হতে পারে এটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। সেই দিন যে সমস্ত ঈদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ঈদ, সমস্ত দিনের চাইতে সবচেয়ে সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত দিন, মাস, তারিখ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সেজন্য ইজমা হয়েছে, “দুররুল মুখতার” কিতাবে বলা হয়েছে, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ইজমা করেছেন যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম। শুধু পবিত্রতম বললে এটা কম হয়ে যায়। এর চাইতে উত্তম কোন ভাষা আমাদের জানা নেই সেজন্য আমরা পবিত্রতম বলে থাকি। কারণ, যে সমস্ত খাদ্য হালাল করা হয়েছে মাছ, গোশ্ত, তরি-তরকারী এসমস্ত হালাল খাদ্য খেলে কেউ যে নাযাত পাবে বা জান্নাত পাবে তার কোন দলীল আদিল্লাহ নেই।
একটা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মজুসী, মুশরিক, জাহান্নামী, কাট্টা কাফির তারাও হালাল খাদ্য খেতে পারে মুসলমানও খেতে পারে সেজন্য সেই খাদ্য খেয়ে কেউ জান্নাতে যাবে তার কোন দলীল নেই। কিন্তু আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে যা কিছু রয়েছে সেখান থেকে, অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর মাথা মুবারক থেকে পায়ের তলা মুবারক পর্যন্ত সেটা প্রস্রাব মুবারক হোক, ইস্তিঞ্জা মুবারক হোক যেটাই হোকনা কেন, রক্ত মুবারক হোকনা কেন যে কোন জিনিস কারো শরীরে প্রবেশ করে যায় ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ‘সুবহানাল্লাহ’।
এখন এতবড় মর্যাদা, এত বড় ফযীলত কিসের জন্য? সে সম্পর্কে আমরা বলি তা একমাত্র নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অজুদ মুবারকের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুহম্মদী, নূরে মুজাস্সাম, সেই নূরে মুহম্মদী অজুদ মুবারকের সাথে সংশ্লিষ্ট যা কিছু রয়েছে এবং সেই নূর মুবারক যে যে ছূরত মুবারকে পরিবর্তীত হয়েছে বা ছূরত মুবারকের আকার ধারণ করেছে প্রত্যেকটার জন্য আলাদাভাবেই ফযীলত রয়েছে, মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে। সেজন্য অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, ইমাম বাহাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এরকম অসংখ্য মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ইমাম মুজতাহিদ বর্ণনা করেছেন, যে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংশ্লিষ্ট সকল কিছুই সম্মানিত ফযীলতপ্রাপ্ত।
সেজন্য যে ওয়াকেয়াটা বলা হয়ে থাকে। মশহুর ওয়াকেয়া। অনেক রয়েছে ওয়াকেয়া। আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের এ সংখ্যায় বেশ কিছু বর্ণনা করেছি। যেটা মশহুর। বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কারণে গামলা মুবারকে এক রাত্রিতে ইস্তিঞ্জা মুবারক রেখেছিলেন। সকাল বেলা এক ছাহাবীকে বললেন যে, তুমি এটা নিয়ে এমন এক স্থানে রেখে আসবে যাতে মানুষ কখনও পা দিয়ে সেটাকে পারাতে না পারে বা মাড়াতে না পারে। সেই ছাহাবী সেটা নিয়ে গেলেন অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। অনেক্ষণ পর তিনি আসলেন। এসে সেই গামলা মুবারক খালি ফেরত দিলেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব জিজ্ঞাসা করলেন, হে ছাহাবী তুমি সেই প্রস্রাব মুবারক কোথায় রেখে আসলে? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এমন এক স্থানে রেখে এসেছি যেখানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন জ্বীন-ইনসানের পক্ষে সম্ভব হবে না পা দিয়ে পারানো অথবা মাড়ানো। এটা বলার সময় সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জবান মুবারক থেকে, নাক মুবারক থেকে আতর গোলাপের চেয়ে বেশী সুঘ্রান বের হতে লাগল। সেটা বুঝতে পেরে আল্লাহ পাক-এর হাবীব বললেন, হে ছাহাবী! তুমি কি সেটা পান করে ফেলেছ? তিনি তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পেটের চাইতে উত্তম কোন স্থান আমি পাইনি, সে জন্য আমি সেটা পান করে ফেলেছি। সুবহানাল্লাহ। এটা শুনে আল্লাহ পাক-এর হাবীব কিন্তু একথা বলেননি, ভুল করেছ অথবা চলবে আর করো না। বরং আল্লাহ পাক-এর হাবীব স্পষ্ট বললেন, হে ছাহাবী! তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ। এবং সেটা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। সেই ছাহাবীর সাত পুরুষ পর্যন্ত যত সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছেন সকলের শরীর থেকে আতর-গোলাপের চাইতে বেশি সুঘ্রান বের হয়েছিল। ‘সুবহানাল্লাহ’।
এখন এত মর্যাদা এত ফযীলত আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই প্রস্রাব মুবারক পান করার কারণে। সেই প্রস্রাব মুবারককে তা’যীম-তাকরীম করার কারণে যদি কোন ব্যক্তি জান্নাতী হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার দিনকে কেউ সম্মান করলে তার কি ফায়ছালা হবে। এটাতো আক্বলের ব্যাপার রয়েছে। আক্বল যাদের নেই তার পক্ষে সেটা কস্মিনকালেও বোঝা সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যখন সিংগা মুবারক লাগানো হতো যেই ছাহাবী লাগাতেন তিনি যে রক্ত মুবারক বের হতো তা পান করে ফেলতেন। ‘সুবহানাল্লাহ’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব সেটা দেখে বলতেন, তোমার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে গেল, জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। ‘সুবহানাল্লাহ।’ যে, আজীবনের জন্য তুমি সুস্থতা লাভ করলে আর কখনও তোমার অসুখ-বিসুখ হবে না। ‘সুবহানাল্লাহ।’
এখন একটা ফিকির ও চিন্তার বিষয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি দিক থেকে এত ফযীলতপূর্ণ। আমরা সাধারণত জানি, সিংগা লাগালে মানুষের শরীরে যে ব্যাথা রয়েছে সেটা বের হয়ে যায় তাহলে বিষগুলো আরেকজনের শরীরের প্রবেশ করলে সে কি করে সুস্থতা লাভ করতে পারে? সেওতো অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল তার বিপরীত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই সিংগা মুবারক লাগিয়ে সেই রক্ত মুবারক পান করার কারণে সেই ছাহাবী আজীবনের জন্য সুস্থতা লাভ করলেন। ‘সুবহানাল্লাহ।’
আজীবনের জন্য সুস্থতা লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীবের কোন ব্যাপার অন্যান্য কারো মত নয়। ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। যদি কেউ আকলমন্দ হয় তাহলে তার জন্য বুঝতে সহজ হবে। বেআকেল যে রয়েছে সে তো সেটা বুঝবে না। (অসমাপ্ত)