হাদীছ শরীফে রয়েছে,
عن ابن لبا بة بن عبد المنذر رضی الله تعالی عنه قال قال النبی صلی الله علیه وسلم ان یوم الجمعة سید الایام واعظمها عند الله وهو اعظم عند اللهه من یوم الاضحی ویوم الفطر.
হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দিল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কি বলেন, নিশ্চয়ই জুমুয়ার দিন হচ্ছে দিনের সাইয়্যিদ। এরপর কি বলেন, আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা একটা মহান দিন।
কতটুকু মহান?
وهو اعظم عند الله من یوم الا الاضحی ویوم الفطر.
আল্লাহ পাক-এর কাছে এই জুমুয়ার দিনটা হচ্ছে কুরবানীর ঈদ, রোযার ঈদের চাইতেও বেশি মহা মূল্যবান, মহান দিন। সুবহানাল্লাহ।
কেন? فیه خمس خلال
মাত্র পাঁচটা কারণ। তিনটি কারণ মূল।
خلق الله فیه حضرت ادم علیه السلام.
এই দিন অর্থাৎ জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছেন। এক নাম্বার।
واهبط الله فیه حضرت ادم علیه السلام الی الارض.
এই দিন আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে জান্নাত থেকে যমীনে পাঠিয়েছেন।
وفیه توفی الله حضرت ادم علیه السلام.
এই দিন আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে উনার সাক্ষাতে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।
তিনটা মূল কারণ।
আর চতুর্থ ও পঞ্চম নাম্বার বলা হয়েছে,
وفیه ساعة لا یسأل العبد فیها شیئا الا اعطاه ما لم یسأل حراما.
এ জুমুয়ার দিন একটা সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক-এর নিকট কিছু চাইলে আল্লাহ পাক অবশ্যই তাকে তা দান করেন। তবে হারাম কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন না। অর্থাৎ যে সময়টা দুয়া কবুল হয়ে থাকে। এটা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজ্হাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের থেকে বর্ণিত, সেই সময়টা হচ্ছে আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। এই সময়টা দুয়া কবুল হয়ে থাকে। এই সময়টার কথা বলা হয়েছে।
وفیه تقوم الساعة.
আর জুমুয়ার দিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
এই পাঁচটা কারণে। এই পাঁচটা কারণে জুমুয়ার দিনের মর্যাদা হচ্ছে রোযার ঈদ, কুরবানীর ঈদের চাইতেও বেশি। সুবহানাল্লাহ।
এখন ফিকির করতে হবে। জুমুয়ার দিনের এত মর্যাদা হলো হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্য। উনার আগমন, বিদায়, সৃষ্টি জুমুয়ার দিনে হয়েছে, সেজন্য এত ফযীলত দেয়া হয়েছে। আরো ফযীরত দেয়া হয়েছে জুমুয়ার দিনের। কি ফযীলত দেয়া হয়েছে?
عن عبد الله بن عمرو رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم ما من مسلم یموت یوم الجمعة او لیلة الجمعة الا وقاه الله فتنة القبر.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ما من مسلم.
যদি কোন মুসলমান
یموت یوم الجمعة او لیلة الجمعة.
যদি কোন ব্যক্তি জুমুয়ার দিন অথবা জুমুয়ার রাত্রিতে যেমন আজকের দিনটি জুমুয়ার দিন, গত রাত্রি জুমুয়ার রাত্রি গেছে। এর মধ্যে যদি কোন মুসলমান ইন্তিকাল করে,
الا وقاه الله فتنة القبر.
তাহলে অবশ্যই আল্লাহ পাক তাকে কবরের আযাব আর কস্মিনকালেও হবে না। সুবহাল্লাহ। তার সুওয়াল-জাওয়াব আর হবে না। সুবহানাল্লাহ।
যেই মুসলমান জুমুয়ার দিন অথবা জুমুয়ার রাত্রিতে ইন্তিকাল করল সেই জুমুয়ার সম্মানার্থে সেই মুসলমানের কি করা হলো? কবরের আযাব অনন্তকাল ধরে ক্ষমা করে দেয়া হলো। তার সুওয়াল-জাওয়াব মাফ করে দেয়া হলো। সুবহানাল্লাহ।
কেন? এই জুমুয়ার দিন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার সৃষ্টি হয়েছে। উনি যমীনে এসেছেন এবং আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে গিয়েছেন। এইজন্য জুমুয়ার দিনকে এত মর্যাদা দেয়া হয়েছে। জুমুয়ার দিনকে এত মর্যাদা সেজন্য দেয়া হয়েছে। তাহলে এটা যদি হয়ে থাকে, জুমুয়ার দিনের এত মর্যাদা এত ফযীলত হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্য। তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহিস্ সালাম-এর তায়াল্লুক-নিসবত রয়েছে যেই দিনের সাথে, অর্থাৎ সোমবারের সাথে, ১২ই রবীউল আউয়ালের সাথে, তাহলে সেটার কতটুকু মর্যাদা হবে? সেটাতো চিন্তা-ফিকির করতে হবে। সেটার কতটুকু ফযীলত রয়েছে। যে জুমুয়ার দিনকে এত সম্মান দেয়া হলো, এত ইজ্জত দেয়া হলো, কিসের জন্য? একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্য। আর হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, “মুস্তাদরিকে হাকিম” বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফের কিতোব। তিনি যখন যমীনে আসলেন। মুখতালিফ রেওয়ায়েত- দু’শ, তিনশ, আড়াইশ, সাড়ে তিনশ অনেক রেওয়ায়েত রয়েছে। তিনি দুয়া করলেন, অনেক দুয়া করলেন। এরপর কি দুয়া করলেন?
یا رب اغفرلی بحق محمد صلی الله علیه وسلم.
হে আল্লাহ পাক! যিনি আপনার হাবীব, আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় আমার দুয়াগুলো কবুল করুন।
قال الله تعالی یا ادم علیه السلام کیف عرفت محمدا صلی الله علیه وسلم.
আল্লাহ পাক বললেন, হে আমার নবী হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম! আপনি কি করে আমার হাবীব মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনতে পারলেন?
فقال ادم علیه السلام یا رب لان لما خلقتنی بیدک ونفخت فی عن روحک فرفعت رأسی فرأیت علی قوام العرش مکتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم فعلمت انک لم تضف الی اسمک الا احب الخلق الیک.
হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, হে বারে ইলাহী! আপনি যখন আমাকে কুদরতী হাত মুবারকে সৃষ্টি করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফুঁকে দিয়েছিলেন তখন আমি মাথা উত্তোলন করেছিলাম। আমি দেখেছিলাম, আরশের খুটির মধ্যে লিখিত রয়েছে,
لا اله الا الله محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم.
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
فعلمت انک لم تضف الی اسمک الا احب الخلق الیک.
আমি ধারণা করলাম, হে বারে ইলাহী! আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, আপনার নাম মুবারকের সাথে যার নাম মুবারক সংযুক্ত তিনি তো সাধারণ লোক হতে পারেন না। নিশ্চয়ই আপনার হাবীব হবেন। সেজন্য উনার ওসীলাতে আমি দুয়া করেছি।
قال الله تعالی صدقت با ادم علیه السلام لولا محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم ما خلقتک.
আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম, হে আমার নবী, আমার রসূল, আপনি সত্যি কথাই বলেছেন। উনি আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে সৃষ্টি না করলে আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লৌহ, কলম, জিন, ইনসান, এমনকি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ।
যদি তাই হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম সৃষ্টি হয়ে থাকেন। আর সেই হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্য যদি জুমুয়ার দিনের মর্যাদা ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়, সুওয়াল-জাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন এসেছেন অর্থাৎ সোমবার দিন এবং ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ, সেই দিনের কত মর্যাদা। তাহলে সোমবার দিন কেউ যদি ইন্তিকাল করে তার কি ফযীলত হবে? সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। সোমবার দিন কেউ যদি ইন্তিকাল করে তার কত মর্যাদা হবে? কত ফযীলত হবে? এবং ১২ই রবীউল আউয়াল এবং সোমবারের কত মর্যাদা রয়েছে সেটাতো মানুষের জানা নেই। খুব ফিকির করতে হবে, খুব চিন্তা করতে হবে, অন্যথায় সেটা বুঝা যাবে না। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদার কারণে সমস্ত কায়িনাত সম্মানিত হয়ে গেছে। নবী রসূলগণও সম্মানিত হয়ে গেছেন।
আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, বেহেশত সম্মানিত হয়ে গেছে। তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণে সোমবার দিন ১২ই রবীউল আউয়াল দিন কতটুকু সম্মানিত হবে। এটা খুব ফিকির করতে হবে। ফিকির না করলে বুঝা যাবে না। ফিকির না করলে সেটা বুঝা যাবে না। (অসমাপ্ত)