পূর্ব প্রকাশিতের পর
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন, এটার মেছাল দিচ্ছেন তিনি নিজে
كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْـبَـتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْـبُـلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ
যেমন একটা বীজ সে জমিনে বপণ করলো, বীজ থেকে সাতটা ডালা উঠলো, প্রতি ডালাতে একশ’টা করে ধান, গম বা যব হলো। তাহলে একে হলো সাতশ’। একশ’ একশ’ করে সাতটায় সাতশ’। মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলতেছেন-
وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاء
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো দ্বিগুণ বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিতে পারেন।
وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক প্রচুর্যময়, তিনি অনেক প্রশস্তময়, তিনি অনেক অধিক রিযিক দেনেওয়ালা। সুবহানাল্লাহ! এবং তিনি জ্ঞানী। এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রাথমিকভাবে বলতেছেন যে, একটা লোক যখন মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মলিক রব উনার রেজামন্দীর জন্য পয়সা খরচ করে, উনার সন্তুষ্টির জন্য উনার রাস্তায় পয়সা খরচ করে, তখন কি হবে? সে একে কমপক্ষে সাতশ’গুণ পাবে। সুবহানাল্লাহ! এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলছেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে তার ইখলাছ অনুযায়ী দ্বিগুণ বহুগুণে সেটা বৃদ্ধি করে দিতে পারেন। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক দেনেওয়ালা, জ্ঞানী, সমঝদার তিনি জানেন। তাহলে এটা ইখলাছ অনুযায়ী একে সাতশ’গুণ কমপক্ষে। দেখা যাবে আরো লক্ষ কোটিগুণ মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে দিতে পারেন। সুবহানাল্লাহ! সেটাই বলা হচ্ছে-
اَلنَّـفَقَةُ فِى الْـحَجِّ كَالنَّـفَقَةِ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ
হজ্জে পয়সা খরচ করাটা হচ্ছে যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার রেজামন্দী সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে উনার রাস্তায় খরচ করার অনুরূপ বা শামিল। সেজন্য কমপক্ষে
بسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
কমপক্ষে সে সাতশ’গুণ লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! এরপর ইখলাছ অনুযায়ী আরো বেশি লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হচ্ছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلسَّخِيُّ حَبِيْبُ اللهُ وَلَوْ كَانَ فَاسِقًا اَلْبَخِيْلُ عَدُوُّ اللهُ وَلَوْ كَانَ عَابِدًا
সখী বা দানশীল ব্যক্তি হচ্ছে যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু, যদিও সে ফাসিক হোক না কেন। সুবহানাল্লাহ! আর বখীল ব্যক্তি হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু, যদিও সে আবেদ হোক না কেন। নাউযুবিল্লাহ! এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু এবং শত্রু দু’টি বিষয় সাব্যস্ত করা হয়েছে। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করে তাদের আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও তারা হাবীবুল্লাহ হিসাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুর অন্তর্ভুক্ত হবে। সুবহানাল্লাহ! আর যে বখীল, পয়সা খরচ করলো না, তার পয়সা খরচ হবে এজন্য সে হজ্জে গেল না, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় সে খরচ করে না, পয়সাটা খরচ হয়ে যাবে ইত্যাদি কারণে বখীলি করে। সেটাই বলা হচ্ছে যে, সে যদি আবেদও হয়, অনেক ইবাদত-বন্দেগীও করে তারপরও সে বখীল হওয়ার কারণে যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রুর অন্তভুর্ক্ত হবে। নাউযুবিল্লাহ! বিষয়টা ফিকিরের। এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَمَنْ يُّـوْقَ شُحَّ نَـفْسِهٖ فَأُوْلٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যে তার নফস্কে বখীলি থেকে বাঁচাতে পারলো সে কামিয়াবী হাছিল করলো। সুবহানাল্লাহ! যে তার নফস্কে বখীলি থেকে বাঁচাতে পারলো সে কামিয়াবী হাছিল করবে। সুবহানাল্লাহ!
সেজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ اللهُ أَنْفِقْ يَا اِبْنَ اٰدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আদম সন্তান! আমার রাস্তায় খরচ করো, আমি তোমাকে আবার দান করবো। সুবহানাল্লাহ!
أَنْفِقْ يَا اِبْنَ اٰدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ
তুমি আমার রাস্তায় খরচ করো, আমি অবশ্যই তোমাকে দান করবো। তোমাকে বরকত দিবো, তোমাকে আরো বেশি দান করবো। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই বিষয়টা হচ্ছে, এখন হজ্জ যদি কারো ফরয হয়, হজ্জে মাবরূর তাকে হালাল পয়সা দিয়ে করতে হবে। এখন বখীলি করে কেউ যদি হজ্জ করতে না যায়, পয়সা খরচ হবে বা পয়সা শেষ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি, চূ-চেরা কিল ও কাল, তাহলে হাক্বীক্বী হজ্জে মাবরূর তার নছীব হবে না, এর দ্বারা যে ফায়দা লাভ করার কথা সেটা সে লাভ করতে পারবে না। কাজেই হজ্জে মাবরূরের যে শর্তগুলো রয়েছে প্রত্যেকটা শর্ত যথাযথ পালন করতে হবে। এখন এখানে পয়সা খরচ করতে হবে, হজ্জ করতে হলে টাকা খরচ করতে হবে, তবে টাকা পয়সাগুলো হালাল হওয়া শর্ত। একটা লোক হজ্জ করবে, এখন হজ্জ করতে গেলে এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ, দশ লাখ সে খরচ করলো, এখন সে বখীলি করলো না, ঠিক আছে। কিন্তু তার পয়সাটা হালাল কি না, তা দেখতে হবে। পয়সা যদি হালাল না হয় তাহলেতো হজ্জে মাবরূর নছীব হবে না। এ বিষয়তো ফিকির করতে হবে, বুঝতে হবে। হজ্জে মাবরূরের জন্য যেমন শর্ত দেয়া হয়েছে, সে বেপর্দা-বেহায়া হতে পারবে না, নাফরমানীমূলক কাজ করতে পারবে না আবার ঝগড়াঝাটি করতে পারবে না। কাজেই হালাল পয়সা যেটা, সেই হালাল পয়সা যদি খরচ না করে, হারাম পয়সা দিয়ে করে তাহলে সে, নাফরমানী করলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে বলেছেন, হালাল গেযার জন্য সেটা সে পালন করলো না। কাজেই সে নাফরমানীমূলক কাজ করলো। তার হজ্জ কি করে কবুল হবে? কাজেই হজ্জের যে শর্ত শারায়েত রয়েছে, এই শর্ত শারায়েতগুলি বুঝতে হবে। হজ্জতো ফরয, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন, যাদের পথ এবং পাথেয় রয়েছে তাদের জন্য হজ্জ ফরয করা হলো। এখন পথ এবং পাথেয় তা আমভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু একজন মহিলা সারা পৃথিবীর মালিক হলেও তারতো হজ্জ ফরয হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তার সৎচরিত্রবান মাহরাম না থাকবে বা তার স্বামী না থাকবে। অথবা তার সৎচরিত্রবান কোন মাহরাম না থাকে, তাহলেতো তার হজ্জ ফরয হবে না। এখানে হজ্জ করার প্রশ্নই আসে না। ঠিক এরকম প্রতিটা শর্ত যখন পাওয়া যাবে তখন হজ্জটা ফরয হবে। অন্যথায় কিন্তু হজ্জ ফরয হবে না। এখন কেউ যদি বলে যে, হজ্জ ফরয হয়েছে। হজ্জ ফরযের জন্য শর্ত-শারায়েত রয়েছে। কাজেই শর্ত-শারায়েত অনুযায়ী হজ্জটা ফরয, এটা বুঝতে হবে। আমরা এ সমস্ত বিষয়গুলো সুক্ষ্ম তাহক্বীক্ব করে বলে থাকি।
এখন কিছু বাতিল, বদ মাযহাবের লোক আছে তারা অনেকে বলে থাকে, আমরা নাকি বলে থাকি, হজ্জ করা নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! আরে হজ্জতো ফরয। হজ্জ অস্বীকার করলে সেতো কাফির হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনিতো বলে দিয়েছেন-
وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে অস্বীকার করলো, কুফরী করলো। হজ্জ মানলো না সেতো কাফির হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তার থেকে বেনিয়াজ। কাজেই হজ্জতো ফরয। তাকে করতেই হবে। তবে যেমন নামায ওয়াক্ত হলে পড়তে হবে। এখন যুহরের সময় ফজরের নামায পড়লে হবে না, আছরের নামায পড়লে চলবে না, ছলাতুত তারাবীহ্র নামায পড়লে চলবে না, ঈদের নামায এখন পড়লে চলবে না। এখনতো যুহরের ওয়াক্ত হয়েছে, আজকে জুমুয়ার দিন জুময়ার নামায পড়তে হবে। কাজেই নামাযতো ফরয। হজ্জও ফরয হবে শর্ত-শারায়েত অনুযায়ী। প্রত্যেকটা আমলই যখন শর্ত-শারায়েত অনুযায়ী ফরয হয়ে থাকে তখন সেটা পালন করতে হয়। যখন যেটা ফরয হবে তখন সেটা করতে হবে। এখন ফরয না হলে সে যদি সেটা করে তাহলে সেটা আদায়ই হবে না। এখন যদি সে রোযা রাখা শুরু করে, ফরয রোযা তাহলেতো সেটা আদায় হবে না। পবিত্র রমাদ্বান শরীফে রোযা রাখতে হবে। এখন যদি তার ক্বাযা থাকে সেটা সে আদায় করতে পারবে। কিন্তু ফরয রোযা, এখনতো পবিত্র রমাদ্বান শরীফ না। কাজেই বিষয়টা বুঝতে হবে। এজন্য হজ্জের জন্য যে শর্ত-শারায়েত রয়েছে সেটা পুরা হলে তখন তার জন্য হজ্জটা ফরয হবে তখন তাকে হজ্জ আদায় করতে হবে। তখন যদি সে আদায় না করে তাহলে সে কঠিন গুনাহয় গুনাহগার হবে। (অসমাপ্ত)