উহুদের ময়দানে আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক-এর মধ্যে যখন হেলমেটের আংটা প্রবেশ করল তখন তা বের করার সময় রক্ত মুবারক বের হল। এক ছাহাবী সেটা পান করে ফেললেন। তাঁর জন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব একই কথা বললেন। অর্থাৎ যে ছাহাবী যেভাবেই হোক না কেন, আল্লাহ পাক এর হাবীব-এর শরীর মুবারকের কোন কিছু যিনি পান করেছেন অথবা খেয়ে ফেলেছেন তাঁর জন্য জাহান্নাম হারাম হয়েছে। জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে। আজীবনের জন্য তিনি সুস্থতা লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
এখন এটা যদি ফযীলত ও নাজাতের কারণ হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর আগমনের দিন ও তারিখ যা ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ ও সোমবার শরীফকে যদি কেউ তা’যীম-তাকরীম করে, ইজ্জত-সম্মান করে তাহলে সে কতটুকু ফযীলত লাভ করবে? সেটা খুব ফিকির করতে হবে, চিন্তা করতে হবে।
আবার সেই দিনকে তা’যীম-তাকরীম করার নির্দেশও রয়েছে। তিরমিযী শরীফের হাদীছ শরীফে রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বলেছিলেন যে, তোমাদের যদি রোযা রাখতে হয় সোমবার দিন রোযা রেখো, সোমবার দিন রোযা রেখো। যেহেতু সোমবার দিন আমি এসেছি, আমি আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে যাব, আমার মি’রাজ শরীফ হয়েছে, হিজরত হয়েছে, নুবুওওয়াত প্রকাশ পেয়েছে, বিশেষ বিশেষ ঘটনাগুলো আমার সোমবার দিন হয়েছে। কাজেই, তোমরা সোমবার দিন রোযা রেখো। সুবহানাল্লাহ।
কাজেই, এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর যে আগমনের দিন যেটা আমরা ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈদ বলে থাকি সেই দিনের মর্যাদা-মর্তবা কতটুকু রয়েছে সেটা অনুধাবনের জন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো রয়েছে সেটা যদি কেউ বুঝে তাহলে তার জন্য উল্লেখিত বিষয়গুলিও বুঝা সহজ হবে। আর যদি কেউ নাদান হয়ে থাকে, আহমক হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য এটা বুঝা সম্ভব হবে না। নির্বোধকে তো বোধ দেয়া যাবে না।
আল্লাহ পাক-এর নবী এবং রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন যে, আমি মৃতকে যিন্দা করেছি।
ابرئ الاكمه والابرص واحى الموت باذن الله.
আল্লাহ পাক-এর নবী এবং রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অনুমতি সাপেক্ষে জন্মান্ধ, শ্বেতকুষ্ঠকে সুস্থ করেছি এবং মৃত ব্যক্তিকে জিন্দা করেছি। কিন্তু আমি নির্বোধকে বোধ দিতে পারিনি। কারণ, যার বোধ শক্তি নেই, বুঝ শক্তি নেই তাকে তো বুঝানো সম্ভব নয়।
এই শ্রেনীর লোক যারা বলে থাকে, শরীয়তে দু’ ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদ নেই, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাকরীম করা যাবে না, সেটা পালন করা যাবে না ইত্যাদি যারা বলে থাকে, প্রকৃতপক্ষে এরা নির্বোধেরই অন্তর্ভুক্ত। তাদের হাক্বীক্বী সমঝ-আক্বল নষ্ট হয়ে গেছে। যার জন্য তারা এই এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ আল্লাহ পাক সরাসরি কুরআন শরীফে বলেছেন সেটা পালন করার জন্য।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يا يها الناس قد جاء تكم مو عظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ور حمة للمو منين. قل بفضل الله وبر حمته فبذ لك فليفر حوا هو خير مما يجمعون.
হে হাবীব আমার! আপনি বলে দিন, হে মানুষেরা! আল্লাহ পাক শুধু মুসলমানদের বলেননি, সমস্ত ইনসানকে বলেছেন, জিনদেরকে সম্মোধন করে বলেছেন, হে মানুষেরা! তোমরা যেনে রাখ, নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসেছে একটা নছীহত আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে।
وشفاء لوا فى الصدور.
এবং তোমাদের অন্তরের আরোগ্যদানকারী অর্থাৎ তোমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ বা ইছলাহ করার জন্য ঔষধ বা আরোগ্যকারী এসেছেন।
وهدى ورحمة للمؤ منين
এবং মু’মিনদের জন্য হিদায়েত এবং রহমত এসেছেন।
قل بفضل الله وبر حمته فبذ لك فليفر حوا
হে আমার হাবীব! আপনি বলুন, এই ফযল- করম ও রহমতের জন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে।
هو خير مما يجمعون
দুনিয়াবী সম্পদ যা তারা জমা করে তা থেকে এটা অবশ্যই অনেক উত্তম।
এ আয়াত শরীফ-এর অনেক লম্বা আলোচনা ও লম্বা কথা রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত যে বিষয় সেটা হচ্ছে আল্লাহ পাক যে ইরশাদ করেছেন,
يا يها الناس قد جاء تكم
হে মানুষেরা! তোমাদের কাছে এসেছে
مو عظة من ربكم
তোমাদের রবের তরফ থেকে নছীহত
شفاء لما فى الصدور
যা অন্তরকে অর্থাৎ অন্তরের মধ্যে যে রোগ রয়েছে তা থেকে তোমাদের আরোগ্য করে দেয়।
এখানে এক অর্থ হচ্ছে কুরআন শরীফ। আরেকটা অর্থ হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব যিনি তোমাদেরকে ইছলাহ করে দিবেন।
يز كيهم
তাদেরকে অর্থাৎ জিন-ইনসানকে ইছলাহ করবেন।
هدى ور حمة للمؤ منين
নছীহত এসেছে, কুরআন শরীফ এসেছে, তোমাদেরকে হিদায়াত দান করতে। আর যিনি তোমাদেরকে আরোগ্য করবেন তিনি হচ্ছেন তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ।
এরপর আল্লাহ পাক বলেন,
قل بفضل الله وبر حمته.
হে আমার হাবীব! আপনি বলুন, আল্লাহ পাক-এর ফযল হলো কুরআন শরীফ, ইসলাম, ঈমান।
وبر حمته
এবং রহমত অর্থাৎ আমার হাবীবকে তারা পেল
فببذلك এইজন্য
فليفر حوا তারা খুশি প্রকাশ করুক।
هو خير مما يجمعون
তারা যে দুনিয়াবী সম্পদ উপার্জন করে থাকে, জমা করে থাকে, সঞ্চয় করে থাকে, তাদের আল-আওলাদ, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ যা রয়েছে, ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি যা কিছু রয়েছে তার থেকে এ দু’টা নিয়ামত অনেক অনেক বেশি সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত।
আল্লাহ পাক এখানে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন কুরআন শরীফের মধ্যেই। সমস্ত মানুষকে সম্বোধন করে বলে দিয়েছেন যে, তোমাদের কাছে এসেছে কুরআন শরীফ এবং শিফা দানকারী, হিদায়েত দানকারী, রহমত, ইসলাম, ঈমান এবং রহমত অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব। কুরআন শরীফ এসেছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব এসেছেন, কুরআন শরীফ এসেছে, তোমাদের কাছে আমি পাঠিয়েছি। এবং আল্লাহ পাক বলেন, আমার হাবীবকে পাঠিয়েছি। এ কারণে তারা আল্লাহ পাক-এর কাছে, فليفرحوا খুশি প্রকাশ করুক। এবং কতটুকু খুশি প্রকাশ করবে। দুনিয়াবী যত বিষয় রয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি প্রকাশ করবে।
যেমন একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। কোন লোকের যদি সন্তান হয় সে খুশি হয়। কতটুকু খুশি হয়? এটা যার যে অবস্থা সে অনুযায়ী সে খুশি হয়। এখন তার চেয়ে তাকে বেশি খুশি হতে হবে।
কেউ যদি একটা চাকুরী পায়, একটা ভালো চাকুরী পায়, সে খুশি হয়ে থাকে। ব্যবসা করে কিছু টাকা-পয়সা কামাই করে থাকে, লাভ হলে সে খুশি হয়ে থাকে। বিপদ-আপদ থেকে কেউ বেঁচে গেলে, সে খুশি হয়। একটা ঘর-বাড়ী করতে পারলে সুন্দর করে, সে খুশি হয়। জায়গা-সম্পতি কিনতে পারলে, সে খুশি হয়। যমিনে সে মর্যাদা লাভ করলে, সম্মানিত হলে, সে খুশি হয়ে থাকে। রাজা-বাদশা, আমীর-উমারা হতে পারলে, সে খুশি হয়। সম্পদশালী হতে পারলে, সে খুশি হয়। অথচ দুনিয়াবী যে কোন সম্পদ হাছিল করুক না কেন প্রত্যেকটার জন্য আলাদাভাবে সে খুশি হয়ে থাকে, সন্তুষ্ট হয়ে থাকে। এখন তার অবস্থা অনুযায়ী সে সন্তুষ্ট হয়, খুশি হয়।
সেটাই আল্লাহ পাক বলেন, তারা তো খুশি হয়ে থাকে, দুনিয়াবী সম্পদ লাভ করে থাকে। দুনিয়াবী সম্পদ লাভ করে অর্জন করে তারা সন্তুষ্ট হয়ে থাকে। এবং সেটাকে তারা মনে করে থাকে, তা অনেক উত্তম, অনেক ভালো, সেজন্য তারা অনেক দুনিয়াবী সম্পদ এবং টাকা-পয়সাও খরচ করে থাকে।
আল্লাহ পাক-এর যে নিয়ামত আল্লাহ পাক দিয়েছেন- কুরআন শরীফ, আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে যে দিয়েছেন। সেজন্য তারা অনেক অনেক বেশি খুশি প্রকাশ করুক।
তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব যেদিন আসলেন ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ, সোমবার দিন সেদিন তাহলে কতটুকু খুশি প্রকাশ করতে হবে? যে কোন লোক, যে কোন সময়, যে কোন নিয়ামত লাভ করলে সে সন্তুষ্ট হয়, সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, খুশি হয়ে থাকে। যেমন পরীক্ষার যদি ফল বের হয়, যে কোন পরীক্ষা হোক না কেন। স্কুল, কলেজের হোক, মাদ্রাসার হোক না কেন দেখা যাবে, যে দিন ফল বের হবে সে দিন কোন মিষ্টির দোকানে মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তারা সকলেই কিনে নিয়েছে। এত খুশি হয়েছে সমস্ত দেশের মিষ্টি সব শেষ হয়ে গেছে। এত খুশি তারা প্রকাশ করে থাকে। সেটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে আাখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন আগমন করলেন তাহলে সেদিন কতটুকু খুশি প্রকাশ করতে হবে? মিষ্টি দিয়ে, না মাল দিয়ে, না জান দিয়ে কোনটা দিয়ে খুশি প্রকাশ করতে হবে? যার যতটুকু তাওফীক, যেভাবে তাওফীক রয়েছে ঠিক সেভাবে, ততটুকু দিয়ে সে খুশি প্রকাশ করবে। তাহলে তার জন্য কামিয়াবী রয়েছে।