যেমন হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ان العبد ليعمل عمل اهل النار وان من اهل الجنة وان العبد ليعمل عمل اهل الجنة وان من اهل النار.
হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে দেখ, বান্দা দু’রকম রয়েছে। একজন বান্দা তাকে মানুষ দেখতে পাচ্ছে, সে লোকটা জাহান্নামীদের আমল করতেছে। অর্থাৎ আহলে নার বা জাহান্নামী অথবা দোযখী যারা, তাদের আমল সে করছে, তার আমলগুলো দেখে মনে হচ্ছে সে জাহান্নামে যাবে। হাদীছ শরীফে রয়েছে, وان من اهل الجنة. অথচ সে জান্নাতী। দেখা যাচ্ছে সে হারাম কাজ করতেছে কিন্তু সে জান্নাতী। সে মৃত্যুর পর জান্নাতে যাবে। আর একটা লোক নেক কাজ করে যাচ্ছে, মানুষ মনে করছে সে নেককার। অথচ সে হচ্ছে জাহান্নামী। মৃত্যুর পর সে জাহান্নামে যাবে। সেটা কেমন? এটা বলা হয়েছে যে, নেক কাজ করে কেউ জাহান্নামে যাবে না, আর পাপ কাজ করে কেউ জান্নাতে যাবে না। এটার মেছাল হচ্ছে যে, একটা লোক সে নেক কাজ করবে ছূরতান কিন্তু হাক্বীক্বতান সে নেক কাজ পছন্দ করেনা। নামায পড়ে, রোযা করে, হজ্জ করে, যাকাত দেয় কিন্তু সে বলে, ‘এতো সুন্নত দরকার নেই। লম্বা কোর্তা পড়লে এর মধ্যে চু-চেরা কিল কাল করে। গোল টুপির মধ্যে চু-চেরা কিল ও কাল করে। বেপর্দা হলে বলে কোন অসুবিধা নেই। ছবি তুললে বলে কোন অসুবিধা নেই। হারাম কাজ করলে বলে কোন অসুবিধা নেই। গান-বাজনা শুনলে বলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সে নামায-কালাম সবই পড়তেছে।
অথচ এগুলো সে বিশ্বাস করছে। ছূরতান তাকে দেখা যাচ্ছে, সে জান্নাতের আমল করতেছে অথচ হাক্বীক্বতান সে জাহান্নামী। কারণ, তার অন্তরের মধ্যে জাহান্নাম রয়েছে। এর অর্থ হলো তার অন্তরে ও আক্বীদার মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহ শরীফের বিরোধিতার ভাব রয়েছে। আর আরেকটা লোক পাপ কাজ করতেছে ঠিকই। কিন্তু সে অন্তরে অন্তরে পোষণ করতেছে যে, আমি অনেক পাপ করছি। আমার উচিত ছিল এগুলো ছেড়ে দেয়া, তওবা করা, নেক্কার হয়ে যাওয়া। অমুক লোকটা নেক্কার হয়েছে কত সুন্দর তার আমল-আখলাক্ব তার চাল-চলন। সে নামায পড়ে, সে রোযা করে, হজ্জ করে, যাকাত দেয়, আমি কিছুই করতে পারতেছিনা। সে অন্তরে অন্তরে খুব ইস্তিগফার-তওবা করছে এবং কোশেশ করছে, কি করে নেক কাজে পরিপূর্ণভাবে মশগুল হবে। তার অন্তর পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ পাক-এর দিকে রুজু হয়ে রয়েছে। কিন্তু সে মানুষের ওয়াসওয়াসার কারণে, শয়তানের ধোঁকায়, নফসের তাড়নায় নেক কাজ করতে পারছে না। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন লোকটা সব ত্যাগ করে নেক কাজ করে ঈমানদার হয়ে মারা যাবে। (সুবহানাল্লাহ) যেমন মেছাল স্বরূপ বলা যায়, একটা টিয়া পাখিকে যত কথাই শিখানো হোক না কেন, সে যত কথাই শিখুক, সে যত শুদ্ধ-বিশুদ্ধ ভাষা শিখুক, দেশী-বিদেশী যত ভাষাই শিখুক না কেন, কিন্তু তার গলায় যখন টিপ দেয়া হবে তখন সে আর বিশুদ্ধ ভাষা বলবে না। সে তখন ট্যা-ট্যা করে উঠবে। তার হাক্বীক্বত জাহির হয়ে যাবে। ঠিক, একটা মানুষ সে ছূরতান যত ভালো কাজ করুক, আর মন্দ কাজ করুক তার অন্তরে যে বিষয়টা রয়েছে, সেটাই মৃত্যুর সময় জাহির হয়ে যাবে, সে যত কিছুই করুক না কেন। সেজন্য আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একটা লোককে দেখে মানুষ মনে করে হয়ত সে ভালো কাজ করছে, নেক কাজ করছে, সে নেক্কার। কিন্তু তার অন্তরের মধ্যে কুফরী রয়েছে। মৃত্যুর সময় তার কুফরীটা জাহির হয়ে সে বেঈমান হয়ে মারা যাবে। আর একটা লোককে ছূরতান দেখে মনে হচ্ছে সে হয়তো ভাল কাজ করছেনা। মনে হয় খারাপ কাজ করছে। তার অন্তরের মধ্যে ঈমান রয়েছে। সে কোশেশ করতেছে খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসার জন্য জান-মাল দিয়ে। হয়তো নফসের তাড়নায় হোক, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় হোক বা মানুষের ধোঁকার কারণে হোক সে আসতে পারছেনা। কিন্তু হাক্বীক্বতান সে মৃত্যুর আগে অবশ্যই ঈমান এনে ঈমানদার হয়ে তারপর মারা যাবে। কাজেই, ঈমান হচ্ছে সুক্ষ্ম বিষয়। এর স্থান হচ্ছে অন্তরে।
তাই বলা হয়েছে, التقوى ههنا واشار الى صدره. তাক্বওয়া হচ্ছে এখানে, আর ইশারা করলেন অন্তরের দিকে। ঈমানও হচ্ছে অন্তরের মধ্যে। সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে, একটা লোকের আমলের মাধ্যম দিয়ে। যদি সত্যিই কোন ব্যক্তি তার অন্তরে সুন্নতগুলি পছন্দ হয়, ফরয তার পছন্দ হয়, আলিমদেরকে পছন্দ হয়, মুহব্বত হয়, ওলীআল্লাহদের মুহব্বত হয়, নবী-রসূলদের প্রতি মুহব্বত থাকে তাহলে অবশ্যই সে ঈমানদার। সে ঈমানদার হয়ে ইন্তিকাল করবে। আর যে ব্যক্তি সবকিছু করে কিন্তু ওলীআল্লাহ পছন্দ করলনা। সুন্নত তার পছন্দ হয়না। নবী-রসূলের আমলগুলি তার পছন্দ হয়না। সেখানে চু-চেরা, কিল-কাল রয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে তার পছন্দ হয় না। তাহলে দেখা যাবে সে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে ঈমান হারা হয়ে বেঈমান হয়ে সে মারা যাবে। খুব কঠিন বিষয়, সুক্ষ্ম বিষয়।
সেজন্য আল্লাহ পাক বলেন,
ان الله يدخل الذين امنوا وعملوا الصلحت جنت تجرى من تحتها الانهر والذين كفروا يتمتعون ويأكلون كما تأكل الانعام والنار مثوى لهم.
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক, যারা ঈমানদার ও আমলে ছালেহ করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নীচ দিয়ে নহর প্রবাহিত।”
অর্থাৎ الذين امنوا وعملوا الصلحت. যারা ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে, তাদেরকে আল্লাহ পাক জান্নাতে স্থান দান করবেন,
والذين كفروا يتمتعون ويأكلون كما تأكل الانعام والنار مثوى لهم.
আর যারা কাফির তারা ফায়দা ভোগ করবে সত্যিই। তবে কেমন? যেমন পশুরা ফায়দা ভোগ করে থাকে এবং তারা খাদ্য খাবে যেমন খায় পশুরা। তাদের জায়ে ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম বা শেষ স্থান হবে জাহান্নাম।”
কাজেই, যমীনে থাকতে তার আমলগুলো, তার আখলাক, তার ঈমান বিশুদ্ধ করে নিতে হবে তাহলে তার জন্য কামিয়াবী। আর ঈমান যদি বিশুদ্ধ করে নিতে না পারে তাহলে তার জন্য কিন্তু কোন কামিয়াবী নেই। তার আমল, তার আখলাক, তার সীরত তার ছুরত সবকিছুই তাকে শুদ্ধ করে নিতে হবে।
যেমন হাদীছ শরীফে এসেছে, الايمان بضع وسبعون شعبة.
“ঈমানের শাখা হচ্ছে সত্তরেরও বেশী। ঈমানের শাখা হচ্ছে সত্তরেরও বেশী।”
فافضلها قول لا اله الا الله وادنها اماطة الاذى عن الطريق.
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমানের শাখা হচ্ছে সত্তরেরও বেশী। কিন্তু সবচেয়ে উঁচু স্তরের যেটা, সেটা হচ্ছে এক আল্লাহ পাককে স্বীকৃতি দেয়া বা মেনে নেয়া। قول لا اله الا الله. এক আল্লাহ পাককে মেনে নেয়া। ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর। আর সবচেয়ে ঈমানের ছোট স্তর যেটা বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলো- اماطة الاذى عن الطريق. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোন কিছু সরিয়ে দেয়া। একটা ইট পড়ে রয়েছে, পাথর পড়ে রয়েছে বা রাস্তায় হাঁটার সময় মানুষ ব্যাথা পেতে পারে এমন কিছু পড়ে রয়েছে, সেটা সরিয়ে দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে নিম্ন স্তর ঈমানের লক্ষণ। যে দু’টা মাপ নেয়া হয়েছে। উঁচুস্তর হচ্ছে আল্লাহ পাককে মেনে নেয়া। আর নিম্নস্তর হচ্ছে মানুষকে কষ্ট দেয় এমন কোন জিনিষ রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া।
এক কথায় হচ্ছে, খালিক এবং মাখলুক অর্থাৎ হক্কুল্লাহ এবং হক্কুল ইবাদ। আর যদি এক কথায় মানুষ ফিকির করে হাদীছ শরীফ তাহলে হক্কুল্লাহ এবং হক্কুল ঈবাদ প্রত্যেকটা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। যে আল্লাহ পাককে মেনে নিবে, চু-চেরা কিল-কাল সে করবে না এবং মানুষকে কষ্ট দিবে এমন কোন কাজ সে করবে না। অর্থাৎ মানুষকে কষ্ট দেয়না এমন আমল সে করবে। সেটা বলা হয়েছে, সবচাইতে ছোট স্তরের ঈমান। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩