আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে অনেক স্থানে বলেছেন,
ان الذين امنوا وعملوا الصلحت.
আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।”
الا الذين امنوا وعملوا الصلحت.
এবং “তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” প্রথমে আল্লাহ পাক ঈমানের কথা বলেছেন। আমলের কথা বলেননি। যেহেতু ঈমান ব্যতীত আমলগুলো আমলে ছালেহ হয়না। সেটা ভালো কাজ হতে পারে কিন্তু আমলে ছালেহ বলতে যা বুঝানো হয়েছে সেটা হয়না। এই জন্য আল্লাহ পাক যেহেতু প্রত্যেক মানুষকে যমীনে পাঠানোর সময়ই নির্দষ্ট সময় ও সম্পদ দিয়ে পাঠিয়েছেন যা কুরআন শরীফে ঘোষণা করা হয়েছে। যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে যমীনে পাঠান তখনই বলে দিয়েছেন,
ولكم فى الارض مستقر ومتاع الى حين.
“হে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম! আপনি জেনে রাখুন, আপনার জন্য, আপনার আওলাদদের জন্য নির্দষ্ট সময় এবং সম্পদ দিয়ে দেয়া হলো।” এ সময় এবং সম্পদ ভোগ করে যথা সময়ে আমার কাছে চলে আসতে হবে। এখন সম্পদ দেয়া হলো, সময় দেয়া হলো, সেটা ভোগ করে চলে আসতে হবে। সেটা ভোগ করে কি করবে? কেন ভোগ করবে? যেন সময় এবং সম্পদ ব্যয় করে সে হাক্বীক্বী আল্লাহ পাক-এর বান্দা বা বান্দি হওয়ার জন্য কোশেশ করে। সেজন্য আল্লাহ পাক সময় দিয়েছেন, সম্পদ দিয়েছেন। ঈমান বিশুদ্ধ করে সে যমীন থেকে আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে যাবে। যার জন্য আল্লাহ পাক একটা সূরাই নাযিল করেন, সময় সংক্রান্ত। যদিও আল্লাহ পাক খণ্ড খণ্ড আয়াত শরীফে সময়ের সম্পর্কে বলেন,
والفجر، واليل، والضحى، والنهار.
“কসম সকালের, কসম রাত্রির, কসম চাশতের সময়ের, কসম দিনের।” আল্লাহ পাক সময়ের কসম করেন, সময়ের গুরুত্বটা বুঝানোর জন্য। কাজেই দিন, রাত্র, সকাল, সন্ধ্যা, দুপুর, প্রত্যেকটা সময়ের গুরুত্ব রযেছে, তাৎপর্য রয়েছে। এজন্য আল্লাহ পাক একটা সূরার মধ্যে স্পষ্ট বলেন, والعصر “কসম সমস্ত সময়ের” ان الانسان لفى خسر. “নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত।” এটা বলার পর আল্লাহ পাক বলে দিলেন,
الا الذين امنوا وعملوا الصلحت وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر.
চারটা কথা আল্লাহ পাক ঘোষণা করলেন, নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ যারা সময় গুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে, যিন্দিগীকে বরবাদ করে দিয়েছে। জাহান্নাম ওয়াজিব করে নিয়েছে ঐ সমস্ত ব্যক্তি ব্যতীত- এক নম্বর হচ্ছে, الا الذين امنوا “যারা ঈমান এনেছে।” দুই নম্বর হচ্ছে, وعملوا الصلحت “আমলে ছালেহ করেছে।” অর্থাৎ, আমলে ছালেহ কোনটা, এখানে চারটাও বলা যেতে পারে, দু’টাও বলা যেতে পারে, ঈমান এবং আমলে ছালেহ। আমলে ছালেহ-এর ব্যাখ্যা হচ্ছে,
وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر.
“যারা সত্য এবং ধৈর্য-ছবর সম্পর্কে নছীহত করে থাকে।” ইত্যাদি আমলে ছালেহ যারা করে থাকে ঈমান আনার পর তারাই কামিয়াব। এখানে অর্থ দু’টা হচ্ছে, আবার চারটাও হচ্ছে। অর্থাৎ প্রথম হচ্ছে ঈমান, যে ইমান এনেছে এরপর হচ্ছে আমলে ছালেহ। আমলে ছালেহগুলো কি? সৎ কাজের আদেশ করবে, ছবর সম্পর্কে বা ধৈর্য সম্পর্কে আদেশ করবে, অছিয়ত-নছীহত করবে, তা’লীম-তালক্বীন দিবে, শিক্ষা-দিক্ষা দিবে, তাহলে তা আমলে ছালেহ-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আমলে ছালেহ ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমান আনবে। যেমন বলা হয় গ্রীশ চন্দ্র, যে প্রথম কুরআন শরীফ অনুবাদ করে ছাপিয়েছে বাংলায়। অর্থাৎ বাংলায় পূর্ণ কুরআন শরীফের যে অনুবাদ ছাপানো হয়েছে সেটা হচ্ছে গ্রীশ চন্দ্রের কৃত অনুবাদ। যে ছিল প্রকৃতপক্ষে হিন্দু, অতঃপর হিন্দু থেকে সে হয়েছিল ব্রাহ্ম্য। রাজা রাম মহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু থেকে তার ধর্ম পরিবর্তন করে ব্রাহ্ম্য হয়ে যায়। এক আল্লাহ দ্বিতীয় নাস্তি, অর্থাৎ এক আল্লাহ পাককে তারা মেনেছিল আর কাউকে মানেনি। রিসালত মানেনি। অর্থাৎ তারা ব্রাহ্ম্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গ্রীশ চন্দ্র ব্রাহ্ম্য সমাজের পয়সা দিয়ে তার অনুবাদকৃত কুরআন শরীফ সম্পূর্ণটাই ছাপিয়েছিল। মিশকাত শরীফও অনুবাদ করে সে ছাপিয়েছে। এছাড়া তাযকিরাতুল আওলিয়া অনুবাদ করে সে ছাপিয়েছে। কিন্তু সেগুলো আমলে ছালেহর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেহেতু সে ঈমান আনেনি। কাজেই, সময়ের প্রতি কসমের দ্বারা সময়ের কত গুরুত্ব রয়েছে, কি তাৎপর্য রয়েছে, সেই সময়টাকে কিভাবে যথাযথভাবে ব্যয় করতে হবে তা বুঝানো হয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে, সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত, শুধুমাত্র ঐ সমস্ত ব্যক্তি ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে। ঈমান আনার পর আমলে ছালেহ-এর প্রসঙ্গ আসবে। অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সেটা সে করবে। কাজেই ঈমান ব্যতীত কোন আমলই আমলে ছালেহ হতে পারে না। আগে ঈমান আনতে হবে তারপর নেক আমল আমলে ছালেহ হবে। কাজেই, সেটা আল্লাহ পাক সূরা আছরের মধ্যে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। যে, তোমরা সময় সম্পর্কে সাবধান থাকবে, সতর্ক থাকবে। অর্থাৎ তোমাদেরকে যে নিদৃষ্ট সময় দেয়া হয়েছে সেই নিদৃষ্ট সময়ে তুমি ঈমান এনে, আমলে ছালেহ করে যমীন থেকে আসবে। তাহলেই তোমার জন্য কামিয়াবী। অন্যথায় কোন কামিয়াবী নেই। এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عجلوا بالتوبة قبل الموت عجلوا باستعداد الموت قبل نزول الملك الموت.
“তোমরা তাড়াতাড়ি মৃত্যুর পূর্বে তওবাহ করে নাও। মালাকুল মউত নাযিল হওয়ার পূর্বে তাড়াতাড়ি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।” অর্থাৎ তওবাহ করে ঈমানদার হয়ে যাও। মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। মালাকুল মউত নাযিল হওয়ার পূর্বে ঈমানদার হয়ে যাও। অর্থাৎ ঈমান এনে, নিজেকে ঈমানদার করে নাও তাহলেই কামিয়াবী রয়েছে। যেহেতু ঈমান ছাড়া কারো কোন আমল মৃত্যুর পর কোন ফায়দা দিবে না। যমীনে অবশ্যই বদলা পাবে যদি কোন ভাল কাজ করে। যেমন যারা বেদ্বীন-বদদ্বীন রয়েছে, যমীনে তারা তার বদলা পাবে। কিন্তু মৃত্যুর পর তা থেকে এক বিন্দু পরিমাণও কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবেনা দুনিয়াবী ভাল কাজের জন্য। কিন্তু আমলে ছালেহ যদি হয় অর্থাৎ ঈমান এনে নেক কাজ করলে সেটার বদলা ইহকালেও পাবে, পরকালেও পাবে। যার জন্য হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, واغتنم خمسا. “পাঁচটা জিনিসকে গনিমত মনে কর।” شبابك قبل هرامك. “যৌবনকালকে বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে গনিমত মনে কর।” صحتك قبل سقمك. “অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে গনিমত মনে কর।” غنائك قبل فقرك. অভাবের পূর্বে “স্বচ্ছলতাকে গনিমত মনে কর।” فراغك قبل شغلك. “ব্যস্ততার পূর্বে অবসর মুহূর্তকে গনিমত মনে কর।” حياتك قبل موتك. “মৃত্যুর পূর্বে সম্পূর্ণ হায়াতকে গনিমত মনে কর।” (অসমাপ্ত)