অনেকে মনে করে থাকে, “একবার তওবা করলে দ্বিতীয়বার আবার তওবা করবো কি করে? একবার ইস্তিগ্ফার করে ভঙ্গ করলে, এরপরে পরবর্তীতে তার গুনাহ্টা সত্তরগুণ হয়ে যায়।” (নাউযুবিল্লাহ)
গুনাহ্ কখনোও সত্তরগুণ হয়না। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে প্রমাণিত রয়েছে, একটা গুণাহ্তে একটা পাপ হয়। তাই একটা গুনাহ্ই লেখা হয়। একটা গুনাহ্তে দশটা পাপ লেখা হয় না। একটাতে একটাই লেখা হয়।
বরং ক্ষেত্রবিশেষে হাদীছ শরীফে এসেছে, বান্দা যখন গুনাহ্ করে, গুণাহ্ করার পর বাম দিকের ফেরেশ্তা যে গুনাহ লিখে থাকে, তাকে ডান দিকের ফেরেশ্তা বলে, তুমি অপেক্ষা কর ছয় থেকে আট ঘন্টা। ছয় থেকে আট ঘন্টা সে অপেক্ষা করে, সে কোন নেক কাজ করে কিনা। অর্থাৎ ইস্তিগ্ফার করে কিনা। যদি সে ইস্তিগ্ফার করে তাহলে তার সেই গুনাহ্টা লেখা হয়না, সেটা মাফ হয়ে যায়। আর যদি সে ইস্তিগ্ফার না করে কোন নেক কাজ করে সে প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে,
من جاء بالحسنة فله عشر امثالها.
যে একটা নেক কাজ করবে তার আমল নামায় দশটা নেকী লেখা হবে। যদি সে গুনাহ্ থেকে তওবা না করে নেক কাজ করে তখন সে নেকীর বদলা দশটা নেক না লিখে নয়টা লিখা হয়। একটা বিয়োগ করে দেয়া হয়। যেহেতু সে একটা গুণাহ্ করেছে। এখন তাকে নয়টা নেকী দেয়া হবে। (সুবাহানাল্লাহ)
এরপরও বান্দার আমল নামায় আল্লাহ পাক গুনাহ্ লিখে দেন না। ফেরেশ্তাদের বলেন, তাকে সময় দেয়া হোক, ইস্তিগ্ফারের সুযোগ দেয়া হোক। তওবা-ইস্তিগফার করে কি না? নেক কাজ করলে সেটা বিয়োগ করে দেয়া হয়। এরপর যদি সে ইস্তেগফার-তওবা না করে, নেক কাজও না করে, গুনাহ্ করে যেতেই থাকে, তারপরেও আল্লাহ পাক সুযোগ দিতেই থাকেন। যদি কখনও ইস্তেগ্ফার করে খালিছ নিয়তে তওবা করে, তাহলে করার সাথে সাথেই চোখের পলকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন। (সুবহানাল্লাহ)
সেটাই কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যখন কোন বান্দা ইস্তিগফার করে, তওবা করে, ইবলিস সেটা দেখতে পায় যে, সে ইস্তিগফার করেছে। আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন ইবলিস তার নাকে, মুখে, চোখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করতে করতে পালাতে থাকে। সে বলতে থাকে, এত কষ্ট করে, এত সময় ব্যয় করে লোকটাকে গুনাহ্ করানো হলো, সে গুনাহ্ করলো অতঃপর মাত্র একবার ইস্তিগফার করলো তার এত বছরের গুনাহ্ একবারে মাফ করে দেয়া হলো। তাহলে আমি কোথায় যাব। এটা বলে ইবলিস পালাতে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ)
যাকে ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে গুনাহ্ করিয়েছে আল্লাহ পাক যখন তাকে ক্ষমা করে দেন তখন ইবলিস নিরাশ হয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু বান্দাকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন। (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই সেটাই আল্লাহ পাক বলেছেন,
توبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون.
হে ঈমানদাররা! তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহ পাক-এর কাছে খালিছ তওবা করো। আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন।
لعلكم تفلحون.
অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে। কোন সন্দেহ নেই, কোন চু-চেরা কিল ও কাল নেই। এখানে সন্দেহ যদি কেউ করে তাহলে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অবশ্যই কামিয়াবী হাছিল করবে, যে ইস্তিগ্ফার-তওবা করবে।
কাজেই আল্লাহ পাক-এর কাছে আমরা দোয়া করবো, আল্লাহ পাক যেন আমাদের প্রত্যেককেই সেই শরয়ী পর্দা করার যেন তাওফিক দান করেন। হয়তো কেউ করি, কেউ হয়তো করিনা। তবে যারা করে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। যারা করে না তারা করার জন্য কোশেশ করবো
السعى منا والاتمام من الله.
চেষ্টা বান্দার তরফ থেকে, আল্লাহ পাক পুরা করে দিবেন। এটা প্রত্যেকেই মনে রাখবেন। আল্লাহ পাক যেন আমাদের শরয়ী পর্দা করার তাওফিক দান করেন। ভুল-ত্রুটি রয়েছে মানুষ মাত্রই। আমরা ইস্তিগ্ফার করবো, তওবা করবো, আবার পর্দা করবো। আবার ভুল হলে ইস্তিগফার করবো, তওবা করবো, আবার পর্দার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একবার, দু’বার, তিনবার। এভাবে করতে করতে দেখা যাবে, এক সময় আমাদের দ্বারা হাক্বীক্বী শরয়ী পর্দা হয়ে গেছে। এরপরও আল্লাহ পাক না করুন! যদি কারো কোশেশ করা অবস্থায় ইন্তিকাল হয়ে যায়। অর্থাৎ নফসানিয়তের কারণে, পরিবেশের কারণে, নানান অবস্থার কারণে পর্দার কিছু ত্রুটি থাকা অবস্থায় কারো ইন্তিকাল হয়ে গেলো, কিন্তু সে কোশেশ করেছে আজীবন। আল্লাহ পাক তাঁর কোশেশের জাযা-খায়ের দান করবেন। কারণ, বান্দা কোশেশ করলে আল্লাহ পাক তা পুরা করে দেন নিয়ত অনুযায়ী।
نية المؤمن خير من عمله.
মু’মিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম। এ জন্য খালিছ নিয়ত করে, কোশেশ করবো। আল্লাহ পাক তাওফিক দিয়ে দিবেন। অন্যথায় কঠিন পরিণতি। পর্দা না করলে যে কত বড় কঠিন গুণাহ্ সেটা আমরা শুনেছি এবং বেহেশ্তের দরজায় লেখা রয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
‘দাইয়্যূছ’ কখনই বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না। কখনই প্রবেশ করবে না। দাইয়্যূছ হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, “যে নিজে পর্দা করেনা ও তার অধীনস্থ স্ত্রী-মেয়েদের পর্দা করায় না”- সে হচ্ছে দাইয়্যূছ। সে কস্মিনকালেও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এটা আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে দিয়েছেন, আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন। বেহেশ্তের দরজায় সেটা লেখা রয়েছে। কাজেই খুব সতর্ক থাকতে হবে, সাবধান থাকতে হবে। ভুল-ত্রুটি হবে, আমরা কোশেশ করবো। আল্লাহ পাক তাওফিক দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ পাক তাওফিক দান করবেন।
কাজেই পর্দার হুকুম-আহকাম যা শোনা হলো, আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে আল্লাহ পাক যেভাবে চেয়েছেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই যেন আমরা শরয়ী পর্দা করতে পারি। সেই তাওফিক দান করেন। (আমীন)
واخر دعونا ان الحمد لله رب العلمين.
[বিঃদ্রঃ রব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু এবং রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রহমত ও ইহসানের বদৌলতে খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত
যামানার মহান তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৬তম সংখ্যা হতে ১৪১তম সংখ্যা পর্যন্ত মোট ৪৫ সংখ্যা ব্যাপী কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের আলোকে পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহকাম সম্পর্কে বিস্তারিত ওয়াজ শরীফ প্রকাশ করতে পারায় অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, বর্তমান সমাজে ব্যাপাকভাবে এবং সবচেয়ে মারাত্মক যে ফিৎনা বিরাজ করছে তা হচ্ছে ছবি ও বেপর্দা। যার ফলে মুসলমান অপরাপর আমল করা সত্ত্বেও ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দাইয়ূছ-এর অন্তর্ভুক্ত। অথচ বেহেশতের দরজায় লিখা রয়েছে, “দাইয়ূছ কখনো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়ূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্থদেরকে পর্দায় রাখেনা।
অতএব, ‘দাইয়ূছ’ এর তবক্বা হতে মুক্তি পেতে হলে সকলের জন্যই একান্ত প্রয়োজন যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর উল্লিখিত ওয়াজ শরীফ বিশেষভাবে পাঠ করা।
আল্লাহ পাক-এর খাছ রহমতে আমরা দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে বলতে পারি যে, কেউ যদি উল্লিখিত ওয়াজ শরীফ পাঠ করেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেন তাহলে নিঃসন্দেহে তার পক্ষে হাক্বীক্বী পর্দা পালন করা সম্ভব হবে। তিনি দাইয়ূছ হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন। (ইনশাআল্লাহ) -সম্পাদক ]