এমনভাবে হাঁটবে তোমাদের গুপ্ত সৌন্দর্য যেন গুপ্ত থাকে। আর অতিরিক্ত সৌন্দর্য যা রয়েছে সেটাও যেন গুপ্ত থাকে। কোনটাই যেন প্রকাশ না পায়। অর্থাৎ গুপ্ত সৌন্দর্যটা চুপিয়ে রাখবে। এরপর যা লক্ষ্যণীয় সেটাও যেন চুপিয়ে থাকে। মানুষ যেন বুঝতে না পারে যা রয়েছে তোমার মধ্যে। আল্লাহ পাক বর্ণনা করেছেন সবকিছু। অর্থাৎ সবকিছুই শালীনতা, ভদ্রতা, শরাফত ও বৈধতার মধ্যে চলতে হবে। পর্দা করবে, বের হতে চাইলে বের হতে পারবে। জোরে জোরে কথা বলতে পারবে, জোরে জোরে কিছু তলব করতে পারবে কিন্তু তার শরয়ী যে পর্দা রয়েছে সেটা বজায় রাখতে হবে। এতে কোন প্রকার ত্রুটি করা যাবে না। সেটাই বলা হয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাফসীরে উল্লেখ করে বলেছেন যে, ‘বর্তমান যামানায় মানুষ কুরআন শরীফ শুনবে। আয়াত শরীফ আমল করবে। তবে তিনটা আয়াত শরীফের আমল তারা ছেড়ে দিয়েছে এবং তার গুরুত্ব অনুধাবনে মানুষ অক্ষম হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে যে, আল্লাহ পাক উল্লেখ করেন,
يايها الناس انا خلقنكم من ذكر وانثى وجعلنكم شعوبا وقبائل لتعارفوا ان اكرمكم عند الله اتقكم ان الله عليم خبير.
এটা হচ্ছে প্রথম আয়াত শরীফ। যে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম থেকে সৃষ্টি করেছি। তবে গোত্রে গোত্রে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি। কেন? لتعارفوا যাতে একজন আরেক জনের পরিচয় পেতে পার। তবে জেনে রাখ,
ان اكرمكم عند الله اتقكم ان الله عليم خبير.
নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যিনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন বা মুত্তাক্বী হয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সবকিছু জানেন ও খবর রাখেন। এর তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মানুষ আজকে তাক্বওয়ার গুরুত্ব ভুলে গেছে। যে তাক্বওয়াই হচ্ছে সবকিছুর মূল। এবং যে মুত্তাক্বী সেই যে আল্লাহ পাক-এর কাছে সম্মানিত এটা মানুষ অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা আমল থেকে মানুষ মনে হয় গাফিল হয়ে গেছে যে, তাক্বওয়া অবলম্বন করার দরকার রয়েছে যা সবচেয়ে প্রধান বিষয়। এরপর বললেন যে, দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহ পাক উল্লেখ করেন কুরআন শরীফের মধ্যে,
واذا حضر القسمة اولوا القربى واليتمى والمسكين فارزقوهم منه وقولوا لهم قولا معروفا.
‘যখন সম্পত্তি বন্টনের সময় হবে তখন আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন যারা উপস্থিত হবে তাদেরকে খাদ্য খাওয়াবে ও উত্তমভাবে কথা বলবে ও আচরণ করবে।’ এ আয়াত শরীফের আমল মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। যখন কোন মানুষ ইন্তিকাল করে, ইন্তিকাল করার পর, তিনদিন তার শোক। চতুর্থ দিন হচ্ছে, তার সম্পদ বন্টনের সময়। মানুষ সম্পদ বন্টন করার জন্য ফারায়েজ করে, যার যার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়। যারা আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, ইয়াতীম-মিসকীন রয়েছে মৃত ব্যক্তির, তাদের অনেকেই উপস্থিত হয়, মনে করে থাকে, তাদের কোন ওয়ারিছ সত্ত্ব রয়েছে। সেটা নেয়ার জন্য এসে থাকে।
فارزقوهم منه وقولوا لهم قولا معروفا.
ইয়াতীম-মিসকীন, গরীব-বিধবা যারা রয়েছে তারা যখন এসে থাকে, যার যা প্রাপ্য সম্পদ তোমরা তা বন্টন করে দিয়ে দাও। যার যার সত্ত্ব নিয়ে যাক। কিন্তু যদি অতিরিক্ত ইয়াতীম-মিসকীন এসে থাকে, তারা কিছু সেখান থেকে লাভ করতে পারেনা। তারা ওয়ারিছ হয়নি, যার জন্য তারা কিছুই পায় না। তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। তখন তাদেরকে নিরাশ করে ফিরিয়ে না দিয়ে তাদেরকে কিছু সেখান থেকে খাদ্য খাওয়াবে, কিছু মেহমানদারী করে দিও। আর সম্ভব হলে কিছু হাদিয়া-তোহফা দিয়ে দিও। কিন্তু আজকাল মানুষ এ আমল থেকে গাফিল হয়েছে। ইয়াতীম-মিসকীনের হক্ব মানুষ ভুলে গেছে। যার জন্য সে ইন্তিকাল করলে তার ইয়াতীম-মিসকীন যারা থাকে, যারা ওয়ারিছ হয় না আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে। তাদের মানুষ খোঁজ-খবর নেয় না এবং তাদের গুরুত্ব দেয় না। সেটা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি দৃষ্টি রাখা। এবং আয়াত শরীফ থেকে চতুর্থ দিন যে, মানুষ খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে, ইন্তিকাল করার পর মাহ্ফিল করে থাকে, ঈছালে ছওয়াবের ব্যবস্থা করে থাকে, এই আয়াত শরীফে সে কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এর পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ দিন মানুষ সম্পদ বন্টন করার সময় কিছু সম্পদ বন্টন করে আর কিছু সম্পদ থেকে মানুষকে মেহমানদারী করে দেয় যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক-এরই নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে তৃতীয় যেটা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, পর্দা সম্পর্কে নির্দেশ এসেছে,
يايها الذين امنوا ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم والذين لم يبلغوا الحلم منكم ثلث مرت من قبل صلوة الفجر وحين تضعون ثيابكم من الظهيرة ومن بعد صلوة العشاء ثلث عورت تلكم ليس عليكم ولا عليهم جناح بعدهن.
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আরেকটা আমল যেটা মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষ আমল সেটা হচ্ছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের যারা অধীন রয়েছে, বাঁদী-দাসী, কর্মচারী এবং তোমাদের যে নাবালেগ-নাবলেগা যারা রয়েছে, তারা যেন তিন সময় তোমাদের অনুমতি নিয়ে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করে। তিন সময় অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। কারণ, ثلث عورت لكم এ তিন সময় তোমাদের পর্দা রক্ষা করার সময়। কোন্ তিন সময়? من قبل صلوة الفجر. ফজরের নামাযের পূর্ব সময়। حين تضعون ثيابكم من الظهيرة. যোহর নামাযের পর মানুষ খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রামে যায়। যখন তাদের কাপড়-চোপড় ঢিলা করে রাখে। من بعد صلوة العشاء. এবং ইশার নামাযের পর মানুষ যখন বিশ্রামে যায়। এ তিন সময় তোমাদের যারা অধীন রয়েছে, বাঁদী-দাসী, কর্মচারী, ছেলে-মেয়ে প্রত্যেকেই যেন তোমাদের অনুমতি নিয়ে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করে। এছাড়া অন্য সময় প্রবেশ করলে তাদেরও গুণাহ হবেনা এবং তোমাদেরও গুণাহ্ হবেনা। উনি ইরশাদ করেন, দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ এ তিন সময় বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করে যায়। নাবালেগ, নাবালেগা যারা রয়েছে তারাও এবং বাঁদী-দাসী যারা রয়েছে তারাও না বলে ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু সেটা আল্লাহ পাক-এর আইনের খিলাফ। এ তিনটা আমল থেকে মানুষ মাহরূম হয়ে গেছে। এবং এ তিনটা আমলই মানুষের জন্য মহা জরুরী। যেমন, তাক্বওয়া অর্জন না করলে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না। ঠিক ইয়াতীম, মিসকীনের হক্ব যদি কেউ আদায় না করে, তার জন্য জাহান্নাম ছাড়া কোন গতি নেই। যেটা আল্লাহ পাক বলেন, পরবর্তী আয়াত শরীফে,
ان الذين ياكلون اموال اليتمى ظلما انما ياكلون فى بطونهم نارا. وسيصلون سعيرا.
নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমের মাল জোর করে খেয়ে ফেলবে, জুলূম করে খাবে। নিশ্চয়ই তারা তাদের পেটের মধ্যে আগুন প্রবেশ করিয়ে থাকে। এবং অতিশীঘ্রই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কাজেই ইয়াতীম, মিসকীনের হক্ব মানুষ ভুলে গেছে এবং পর্দার গুরুত্ব মানুষ ভুলে গেছে। যে পর্দা করা ফরয। এর মধ্যে কোন চু-চেরা, কিলো-কাল নেই। যেটা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يا على لاتنبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে। কিন্তু এর পরবর্তীতে প্রতি দৃষ্টিতে একটা করে কবীরাহ গুণাহ্ লিখা হবে। এখন পর্দার কতটা গুরুত্ব রয়েছে, সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, মানুষ এটার ক্বদর ও গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে। যার জন্য আমলে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে আযাব-গযব আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে নাযিল হচ্ছে।