(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এর ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ، فَـقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا يُوْجِبُ الْحَجَّ؟ قَالَ اَلزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন বিষয় হজ্জকে ফরয করে থাকে?
مَا يُـوْجِبُ الْحَجَّ؟
কোন বিষয় হজ্জকে ফরয- ওয়াজিব করে থাকে?
قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যাদ- পাথেয় এবং রহেলা- বাহন। অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফে ঠিক একই কথা বলেছেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَأَلَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا السَّبِيْلُ ؟ قَالَ زَادٌ راحِلَةٌ
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আরেকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি যে বললেন সাবীলের কথা,
مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا
যাদের পথের সামর্থ রয়েছে, পাথেয় বা বাহনের। অর্থাৎ সাবীল অর্থ এখানে কি উল্লেখ করা হয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি বললেন, সাবীল শব্দের অর্থ হচ্ছে, যাদুন রাহিলাতুন।
مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا
যাদের পথের সামর্থ অর্থাৎ তার বাড়ী থেকে মক্কা শরীফ হজ্জ করে প্রত্যাবর্তন করা এবং তার আনুসাঙ্গিক খরচ যাদের রয়েছে তাদের জন্য হজ্জ করা ফরয। এখন এ বিষয়টা স্পষ্ট করার জন্য একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-
مَا السَّبِيْلُ ؟
ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাবীলটা কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্পষ্ট করে দিলেন-
زَادٌ رَاحِلَةٌ
‘যাদুন’ অর্থ পাথেয় ‘রাহিলাতুন’ অর্থ- বাহন। এ দু’টা বিষয় বুঝানো হয়েছে। এখন যাদুনটা কি আর রাহিলাতুনটা কি সেটা বুঝতে হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলে দিয়েছেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে,
فَمَنْ فَـرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ ۗ وَمَا تَـفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّـعْلَمْهُ اللهُ ۗ وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى ۚ وَاتَّـقُوْنِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
فَمَنْ فَـرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ
যাদের হজ্জ ফরয হবে, যারা হজ্জ করতে যাবে
فَلَا رَفَثَ
তারা যেন হজ্জে যেয়ে বেপর্দা-বেহায়ীমূলক কোন কাজ, অশ্লিল অশালীন কাজ না করে
وَلَا فُسُوْقَ
নাফরমানীমূলক কোন কাজ যেন না করে
وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ ۗ
হজ্জের মধ্যে মারা-মারি, কাটা-কাটি, ঝগড়া-ঝাটি, ফিতনা-ফাসাদ যেন তারা না করে।
এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলতেছেন,
وَمَا تَـفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّـعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে কাজগুলো করে থাকো সে বিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। ভালো কাজ করো অথবা যদি তার বিপরীত করো। দান-খয়রাত করো অথবা তার বিপরীত করো প্রত্যেকটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى
তোমরা পাথেয় অবলম্বন করো, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।
وَاتَّـقُوْنِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ
এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন, হে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! তোমরা মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনাকে ভয় করো। এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিচ্ছেন, পাথেয় যে বলা হচ্ছে, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। যেটা অন্য একটা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও এ বিষয়টা বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قالَ: كَانَ أهْلُ اليَمَنِ يَحُجُّوْنَ ولَا يَـتَـزَوَّدُوْنَ، وَيَـقُوْلُوْنَ: نَحْنُ الْـمُتَـوَكِّلُوْنَ، فَإِذَا قَدِمُوْا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ، فأنْـزَلَ اللهُ تَـعَالٰى: {وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى}
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। ইয়ামেনের কিছু লোক ছিলো
يَحُجُّوْنَ
যারা হজ্জ করতো
ولَا يَـتَـزَوَّدُوْنَ، وَيَـقُوْلُوْنَ: نَحْنُ الـمُتَـوَكِّلُوْنَ
তারা কোন পাথেয় আনতো না, টাকা-পয়সা সাথে আনতো না। বলতো যে, আমরা হচ্ছি তাওয়াক্কুলকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসাকারী। অথচ
فَإِذَا قَدِمُوْا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ
পবিত্র মক্কা শরীফ পেঁৗছার পরে সেই সমস্ত ব্যক্তি উনারা কি করতেন? মানুষের কাছে সুওয়াল করতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা বললেন-
فَأَنْـزَلَ اللهُ تَـعَالٰى: {وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى}
মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করে দিলেন যে, তোমরা পাথেয় অবলম্বন করো, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। এ বিষয় যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। (অসমাপ্ত)