পর্দার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সে প্রসঙ্গে একটা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطان.
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইরশাদ করেন, যে- আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطان.
“তোমাদের কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা মহিলার সাথে নিরিবিলি একাকী মিলিত না হয়। যদি মিলিত হয় তাহলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হবে শয়তান।” এই হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যার ছানা-ছিফত আল্লাহ পাক করেছেন। আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। উনার ফযীলত বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা। উনার মান-সম্মান, উনার ফযীলত, উনার রো’ব-বুযূর্গী এবং পর্দার ব্যাপারে উনার কতটুকু গুরুত্ব ছিলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফ থেকে আসলেন। এসে অনেক কিছু বর্ণনা করলেন। বর্ণনা করার সময় এক প্রসঙ্গে বললেন, ‘হে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আল্লাহ পাক আপনার জন্য জান্নাতে যে বালাখানাগুলো তৈরী করেছেন সেটা আমি দেখে এসেছি। ’ যখন একথা বললেন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা শুনে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কেমন? আমাকে দয়া করে বিস্তারিত কিছু বলবেন কি?’ তখন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার বালাখানা আমাকে দেখানো হয়েছে। তবে ভালো করে দেখিনি। এই জন্য দেখিনি, হয়ত আপনি কিছু মনে করতে পারেন।’ যখন একথা বলা হলো, তখন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জান্নাতে আমার বালাখানা দেখবেন ভালো করে, তার জন্য আমি কি মনে করবো? সেখানে আমার মনে করার তো কিছুই নেই।’ এটা বলে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাঁদলেন। আর বললেন, ‘বালাখানা দেখবেন আপনি, আপনি আখিরী রসূল, আল্লাহ পাক-এর হাবীব। সেখানে আমার চু-চেরা, কিলো-কাল করার তো কিছু নেই। আর কিছু মনে করারও নেই।’ কিন্তু আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটা বললেন, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যে ব্যক্তিত্ব, স্বাতন্ত্রবোধ, পর্দা ইত্যাদি সম্পর্কে খুব দৃঢ়চিত্ত ছিলেন। যার জন্য আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সে বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। অর্থাৎ এক দিক থেকে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ব্যক্তিত্ব, স্বাতন্ত্রবোধ ও পর্দা ইত্যাদি আর অন্য দিকে হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও আনুগত্য ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে ঠিকই রয়েছে। শুধু আল্লাহ পাক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি-এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন এমন অবস্থায় যে, উনার কপাল মুবারক ফেটে রক্ত দরদর করে প্রবাহিত হচ্ছে। সেটা দেখে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন, ‘হে উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার কি হলো, আপনার মাথায় কে আঘাত করেছে, মাথা ফেটে গিয়েছে?’ হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের যমীনে এমন কোন মা জন্মগ্রহণ করেনি এবং তার এমন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি যার এত সাহস রয়েছে, যে এত বাহাদুর হবে, উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাথায় আঘাত করবে। এমন কোন সন্তান আরবের যমীনে জন্মগ্রহণ করেনি। যখন একথা বলা হলো তখন আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তা হলে কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে কেন? কে আঘাত করেছে? কিসে আঘাত লেগেছে?’ হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার একটা হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে। যার জন্য কপাল ফেটে রক্ত দরদর করে প্রবাহিত হচ্ছে।’ সেটা শুনে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘আমার হাদীছ শরীফ আপনার মাথায় আঘাত করেছে! সেটা কোন হাদীছ শরীফ?’ তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি আমার মেয়ে, আপনার স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। উনার সাথে আমি বসে নিরিবিলি কিছু আলোচনা করতেছিলাম। হঠাৎ সে হাদীছ শরীফখানা আমার স্মরণ হলো। স্মরণ হওয়া মাত্রই আমি ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য দৌঁড় দিয়েছিলাম। কপাল চৌকাঠে লেগে কপাল ফেটে যায়। তার কারণে আমার কপাল থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তখন আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোন হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার কারণে আপনি দৌঁড় দিয়েছিলেন।’ উনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্বয়ং ইরশাদ করেছেন,
لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطان.
“তোমাদের কোন পুরুষ, যেন কোন বেগানা মহিলার সাথে নিরিবিলি একাকী মিলিত না হয়। যদি হয় তাহলে তোমাদের তৃতীয় সঙ্গী হবে শয়তান।” এ হাদীছ শরীফখানা আমার স্মরণ হওয়া মাত্রই আমি দৌড় দিয়েছিলাম, চৌকাঠে আমার কপাল (মুবারক) লেগে ফেটে যায়। কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাধারণ লোক থেকে এক হাত লম্বা ছিলেন। উনি যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাঁটতেন মানুষ দূর থেকে মনে করত, তিনি কোন বাহনের উপর বসে রয়েছেন। এত লম্বা; যে, কোন ঘর-বাড়ীর দরজা থেকে উনি লম্বা ছিলেন। যার জন্য দৌঁড় দেয়ার সময় কপাল চৌকাঠে লেগে কপাল ফেটে যায়। এখন ফিকির এবং চিন্তার বিষয় যে, আল্লাহ পাক এই ঘটনার মাধ্যম দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিলেন। যে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যার শানে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لو كان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন তাহলে সে ব্যক্তিত্ব হতেন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আরো ইরশাদ হয়েছে, ইবলিস হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দেখলে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে কোন্ রাস্তা দিয়ে পালাবে পথ খুঁজতে থাকে, সে অস্থির, বেকারার হয়ে যায়, পেরেশান হয়ে যায়। এত ফযীলত, এত বুযূর্গী-সম্মান হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর রয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে কমপক্ষে কুরআন শরীফের ২২ খানা আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। (সুবহানাল্লাহ) (অসমাপ্ত)