আমাদের তো ইলম্-কালাম নেই, কারো কোন ইলম্-কালাম নেই, সকলেই মুর্খ। একমাত্র সমস্ত কিছুর ছাহিবুল ইলম্ হচ্ছেন আল্লাহ পাক। আর আল্লাহ পাক ইলম্ দান করেছেন তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। সেখান থেকে সকলে ইলম্ অর্জন করেছে। কারো কোন ইলম্-কালাম নেই। আক্বল-বুদ্ধি নেই। সমস্ত কিছু অনুমোদন হয়েছে, হাছিল হয়েছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকেই।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটা কুরআন শরীফ, এটা আমার হাদীছ শরীফ। তোমরা এভাবে এভাবে মানবে, এভাবে পালন করবে। এভাবে নামায পড়বে, রোযা রাখবে, হজ্জ করবে, যাকাত দিবে। আমরা সেটা শুনেছি, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সেটা শুনেছেন, দেখেছেন, উনারা শিখেছেন। পরবর্তীদের উনারা শিখিয়েছেন, আমরাও সেভাবে শিখেছি।
কাজেই, হাক্বীক্বত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যদি কেউ বিশ্বাস না করে, না মানে, তাহলে সে আল্লাহ পাককে মানতে পারবে না। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফেই রয়েছে, এটা কুরআন শরীফ। আপনি কুরআন শরীফ কোথায় পেলেন, এটা কুরআন শরীফ। দলীল কোথায়? যদি বলে, কুরআন শরীফের ভেতর রয়েছে। এই কুরআন শরীফ কে এনে দিয়েছেন আপনাকে? আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এনে দিয়েছেন। তাহলে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যদি আপনি না মেনে নিতে পারেন, মুহব্বত করতে না পারেন, স্বীকার করতে না পারেন, তা’যীম- তাকরীম না করতে পারেন, তাহলে আল্লাহ পাককে কি করে তা’যীম করবেন, স্বীকার করবেন, মেনে নিবেন?
কাজেই, এটা মনে রাখতে হবে, প্রথমে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্বাস করতে হবে, অর্থাৎ উনার প্রতি ঈমান আনতে হবে, স্বীকার করতে হবে, তাহলেই কুরআন শরীফ মানাটা সহজ হয়ে যাবে। আদেশ-নিষেধ পালন করা সহজ হয়ে যাবে।
সেটাই বলা হয়েছে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে যা রয়েছে, হুবহু সেটা পালন করতে হবে। এর মধ্যে কোন চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করা যাবে না। কুরআন শরীফে যেমন চু-চেরা করা যাবে না, হাদীছ শরীফেও করা যাবে না।
কাজেই, এখন যদি কেউ বলে, সে দু’ঈদ মানে তাহলে দু’ঈদতো কুরআন শরীফে নেই। ঐ দু’ঈদতো হাদীছ শরীফে রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। তাহলে, বাকী যে ঈদগুলো রয়েছে সেই ঈদগুলোও হাদীছ শরীফে রয়েছে। তাহলে তুমি অর্ধেক হাদীছ মানবে, অর্ধেক হাদীছ মানবে না, তাহলে তুমি মুনাফিক। তুমিতো ঈমানদার নও। সেটাই যদি হয়ে থাকে, হাদীছ শরীফের দ্বারা শুক্রবার, সোমবার, আরাফার দিন, রোযার দিনগুলো ঈদের দিন হয়ে থাকে, খুশীর দিন হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে বিলাদত শরীফের দিন, সেটা যে সত্যিই ঈদের দিন সেটাতো ফিকির করতে হবে, সেটা চিন্তা করতে হবে।
এখন হাদীছ শরীফের এত গুরুত্ব রয়েছে। এই হাদীছ শরীফগুলো কারা বর্ণনা করেছে? ওহাবী, খারিজী, রাফিজী, মু’তাজিলা? না এরা বর্ণনা করেনি। বেদ্বীন, বদ্দ্বীন? বদ মাযহাব, বদ আক্বীদার লোক? তারাও করেনি। মুনাফিকরাও করেনি। এগুলো বর্ণনা করেছেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা ছাহাবী। আল্লাহ পাক-এর নবীদের পরে যাদের স্থান আল্লাহ পাক-এর যমীনে, আল্লাহ পাক-এর নবীদের পরে যাদের স্থান যমীনে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। যাদের শানে আল্লাহ পাক বলেছেন,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
আল্লাহ পাক যাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন আর যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন, উনারাই হাদীছ শরীফগুলি বর্ণনা করেছেন। বিশেষকরে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন, আরাফার দিনকে ঈদের দিন, সোমবার দিনকে ঈদের দিন, রোযার দিনকে ঈদের দিন এই হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেছেন, মূল ছাহাবী হচ্ছেন তিনজন। একজন হচ্ছেন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আরেকজন হচ্ছেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আর তৃতীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এই তিনজন ছাহাবী এই হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেছেন। হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তিত্ব। যিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, উনার ছানা-ছিফত, প্রশংসা তো করার অপেক্ষা রাখে না। সমষ্টিগতভাবে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে যেটা বলা হয়েছে,
ليغيظ بهم الكفار
আল্লাহ পাক বলেন, একমাত্র কাফিরেরাই আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা ছাহাবী রয়েছেন তঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। (নাউযুবিল্লাহ)
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব সরাসরি আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন,
من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كا فر.
যেই ব্যক্তি বা যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী যাঁরা রয়েছেন তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, তারা কাট্টা কাফির। এটা কোন মানুষের ফতওয়া নয়। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফতওয়া।
আর আল্লাহ পাক-এর ফতওয়া
ليغيظ بهم الكفار
“একমাত্র কাফিরেরাই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধিতা করে থাকে। বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।
এখন কেউ দু’ঈদ মানল, বাকী ঈদগুলো মানল না তাহলে সে তো হাদীছ শরীফ অস্বীকার করল। ছাহাবায়ে কিরামগণের বিরোধিতা করল। উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। তাহলে সেওতো কাট্টা কাফির হয়ে গেল। সে কি করে ঈমানদার থাকতে পারে? কস্মিনকালেও সে ঈমানদার থাকতে পারে না। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যে মর্যাদা, যে ফযীলত আল্লাহ পাক বর্ণনা করেছেন সেটা বেমেছাল। উনাদের মর্যাদা বুঝলে, ফযীলত বুঝলে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফযীলত বুঝলে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফযীলত, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফযীলত বুঝলে মানুষের পক্ষে বুঝতে সহজ হবে এই হাদীছ শরীফগুলোর কত গুরুত্ব রয়েছে।
কুরআন শরীফের যেমন মর্যাদা রয়েছে, হাদীছ শরীফেরও তদ্রুপ মর্যাদা রয়েছে। এর মধ্যে উম্মতের জন্য চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল বা পার্থক্য করার কোন সুযোগ নেই।
যেমন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন,
تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض
আল্লাহ পাক কিন্তু বলেন, এক রসূলের চেয়ে আরেক রসূলের মর্যাদা রয়েছে।
আর উম্মতের বেলায় কি বলা হয়েছে?
لا نفرق بين احد من رسله.
আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন, উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমরা কোন রসূলের মধ্যে পার্থক্য করো না। আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা কোন রসূলের মধ্যে পার্থক্য করো না। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বলেছেন,
ولا تفو قونى فوق يو نس بن متى.
তোমরা আমাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে, ফযীলত দিতে গিয়ে হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম এরও ইজ্জত-সম্মানের ত্রুটি করো না, ক্ষতি করো না।
অর্থাৎ আমার সম্মান দিতে গিয়ে কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে ইহানত করো না। সেটা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। অথচ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল। আল্লাহ পাক-এর পরেই উনার স্থান। উনিও বলেছেন যে, তোমরা আমার ইজ্জত দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক-এর নবী আলাইহিমুস্ সালামদের প্রতি ইহানত করো না।
(চলবে)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩