এখন রোযার ঈদ এবং কুরবানীর ঈদ সেই দু’ঈদের দিন ফজর নামাযের পরেই নামায দিয়ে শুরু করতে হয়। তারপর কুরবানীর ঈদের সময় কুরবানী দিয়ে ঈদের দিনটাকে আরো বেশী সৌন্দর্যমন্ডিত করতে হয়। কিন্তু জুমুয়ার দিন সেটা নয়, জুমুয়ার দিনও ঈদের দিন। এইদিন ফজর নামায পড়েই যে ময়দানে চলে যাবে, সেটা নয়। রোযার ঈদ এবং কুরবানীর ঈদের সময় খাছ সুন্নত হচ্ছে যদি মাঠ থাকে, ময়দান থাকে, ঈদগাহ থাকে, সেখানে গিয়ে নামায আদায় করা। এটা হচ্ছে তারতীব। يوم الا ضحى কুরবানীর দিন এবং يوم الفطر ফিতরের দিনের জন্য তারতীব এবং সুন্নত হচ্ছে, মাঠ থাকলে মাঠে, ঈদগাহ থাকলে ঈদগাহে গিয়ে নামায আদায় করা।
জুমুয়ার দিনও ঈদের দিন। তবে সে দিন কিন্তু সেটা নয়। জুমুয়ার দিন ওয়াক্তেরও পার্থক্য রয়েছে, আমলেরও পার্থক্য রয়েছে। সেটা যোহরের ওয়াক্ত হতে হবে। যোহরের ওয়াক্ত হলে, মসজিদে এসে জুমুয়ার নামায আদায় করবে। ঈদের নামায হচ্ছে ওয়াজিব। খুৎবা হচ্ছে সুন্নত। ত্বহারাত পবিত্রতা ঠিকই রয়েছে।
আর জুমুয়ার নামায হচ্ছে ফরয। খুৎবাটাও ফরয-ওয়াজিব। কাজেই, ঈদের নামায ওয়াজিব, খুৎবা সুন্নত। জুমুয়ার নামায ফরয, খুৎবাও ফরয। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক ঈদের তারতীব এক রকম নয়। রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদের তারতীব এক রকম।
আর জুমুয়ার দিনের অর্থাৎ এই ঈদের দিনের তারতীব হচ্ছে আলাদা। এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যা হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত। অতএব, বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফের দ্বারা এটা প্রামানিত হলো যে, জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন।
তাহলে যারা বলে থাকে, “শরীয়তে দুই ঈদ ছাড়া কোন ইদ নেই”- তাদের এ কথাটা কাট্টা মিথ্যা কথা। হয় তারা এটা জানে না, তাহলে তারা আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল। ফতওয়া দেয়ার উপযুক্ত তারা নয়। অথবা তারা জেনে চুপিয়ে রেখেছে, তাহলে তারা মুনাফিক হবে।
অন্তরে একটা, মুখে আরেকটা। দু’দিক থেকে এদের ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এরা হয় মুনাফিক হবে অথবা তারা জাহিল হবে, আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল। এ দু’টা থেকে তারা খালি নয়। কাজেই এদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। এরা বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।
এরপরে রয়েছে, ‘বুখারী শরীফে’ হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একবার কিছু ইহুদী আসলো। এসে বললো, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনাদের কুরআন শরীফে, আপনাদের কালামুল্লাহ শরীফে এমন একখানা আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে তা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সেটা যদি ইহুদীদের তাওরাত শরীফে, তাদের ধর্মে নাযিল হতো, তাহলে সেই দিনটাকে ইহুদী সম্প্রদায় ঈদের দিন, খুশীর দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দিত।”
এটা যখন ইহুদী সম্প্রদায় খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললো, তখন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ইহুদী সম্পদ্রায়! তোমরা কোন আয়াত শরীফের কথা বলতেছ?”
ইহুদী সম্প্রদায় বললো, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! সেটা হচ্ছে “সূরা মায়িদার” তিন নম্বর আয়াত শরীফ, সূরা মায়িদার তিন নম্বর আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اليوم اكملت لكم د ينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الا سلام دينا.
“আজকে তোমাদের দ্বীনকে আমি কামিল করে দিলাম।”
واتممت عليكم نعمتى
“আমার নিয়ামত তোমাদের জন্য তামাম করে দিলাম, পরিপূর্ণ করে দিলাম।”
ورضيت لكم الاسلام دينا
“এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম এবং এর মধ্যে আমি সন্তুষ্ট রইলাম।” (সুবহানাল্লাহ)
আল্লাহ পাক বলেন, “ইসলামকে পরিপূর্ণ করা হলো, নিয়ামত পরিপূর্ণ করা হলো, এটা মনোনীত করা হলো এবং এতে সন্তুষ্টি দেয়া হলো।” এ আয়াত শরীফ যদি নাযিল হতো ইহুদীদের মধ্যে, তাওরাত শরীফে, তাহলে তারা বললো, তারা ঈদের দিন ঘোষণা করতো।
যখন একথা তারা বললো, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমাদের কি জানা রয়েছে, এ আয়াত শরীফ কবে নাযিল হয়েছে?”
ইহুদী সম্প্রদায় বললো, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আসলে সেটা আমাদের জানা নেই।”
ইহুদীদের সেটা জানা ছিল না। কোন্ দিন, কবে, কোথায় আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
তিনি তখন বললেন, “দেখ, এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হজ্জের সময়। তিনি তো হজ্জ করেছেন একবার যা বিদায় হজ্জ নামে মশহুর। সেই বিদায় হজ্জের সময় আরাফার ময়দানে বা’দ আছর। আরাফার দিন ছিল শুক্রবার। সেই শুক্রবার দিন বা’দ আছর আরাফার ময়দানে সেই আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।”
হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, “দেখ, মুসলমানদের জন্য এই দু’টা দিনই হচ্ছে খুশীর দিন। কাজেই, মুসলমানদেরকে এ আয়াত শরীফ যেদিন নাযিল হয়েছে সেই দিনটাকে আলাদাভাবে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে না।” (সুবহানাল্লাহ)
যখন এটা বলা হলো তখন ইহুদীরা বুঝলো। অতঃপর তারা চলে গেল। এটা হচ্ছে একটা হাদীছ শরীফ, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, এটা বুখারী শরীফে বর্ণিত রয়েছে।
আর আরেকটা হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে ‘তিরমিযী শরীফে,’
عن ابن عبا س رضى الله تعا لى عنه
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে,
انه قرء اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الا سلام د ينا (الاية)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় এই আয়াত শরীফ পাঠ করতেছিলেন,
èوعنده يهودى হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পাশে একজন ইহুদী ব্যক্তি বসা ছিল। যেহেতু আরব দেশ সকলে আরবী জানে, কম-বেশী। যখন ইহুদী ব্যক্তি শুনলো কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, فقال ইহুদী ব্যক্তি সেটা শুনে বললো,
لو نز لت هذه الا ية علينا لا تخذ نا ها عيدا
“হে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! উত্তম আয়াত শরীফ, খুব সুন্দর আয়াত শরীফ। এ আয়াত শরীফ যদি আমাদের মধ্যে নাযিল হত তাহলে যে দিন নাযিল হয়েছে সে দিনকে আমরা ঈদের দিন ঘোষণা করতাম لاتخذ نا ها عيدا অবশ্যই সেই দিনকে আমরা ঈদের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম।” (সুবহানাল্লাহ)
فقال ابن عباس رضى الله تعالى عنه فا نها نز لت فى يوم عيد ين فى يوم جمعة ويوم عر فة.
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে ইহুদী ব্যক্তি! তোমার তো জানা নেই, এ আয়াত শরীফ কবে নাযিল হয়েছে? তুমি জেনে রাখ, নিশ্চয়ই এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে, আমাদের প্রতি, মুসলমানদের প্রতি, মুসলমানদের দুই ঈদের দিন।
فى يوم عيد ين মুসলমানদের দুই ঈদের দিন এই আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। কোন্ দুই ঈদের দিন?
فى يوم جمعة ويوم عر فة
একটা হচ্ছে জুমুয়ার দিন, আরেকটা হচ্ছে আরাফার দিন। সেই বিদায় হজ্জের সময় আরাফার ময়দানে, বা’দ আছর, শুক্রবার দিন সেটা নাযিল হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “মুসলমানদের দু’ঈদের দিন সেটা নাযিল হয়েছে।”
তাহলে দেখা যাচ্ছে, জুমুয়ার দিন, শুক্রবার দিন একটা ঈদের দিন। আবার আরাফার দিনও ঈদের দিন।
(অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩