কাজেই ঈমান বাড়বে না, কমবে না। ঈমানের কুওওয়াত বাড়বে, কমবে। সে অনুযায়ী আমল করে যেতে হবে এবং ঈমানের প্রত্যেকটা বিষয় রয়েছে। শাখা প্রশাখা, প্রত্যেকটার মধ্যে যথাযথ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যদি কোনটার মধ্যে সে বিশ্বাস স্থাপন না করে, ত্রুটি করে, তাহলে সেটার মধ্যে তার ঈমান ঘাটতি হবে। অর্থাৎ সে মুসলমান, মু’মিন থাকতে পারবে না। যত আমলই তার থাকুক না কেন? যত আখলাক তার থাকুক না কেন? সে ঈমানদার হতে পারবে না। যেটা আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন,
ان الذين كفروا لن تغنى عنهم اموالهم ولا اولادهم من الله شيئا واولئك هم وقود النار.
আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই যারা কাফির, যারা কুফরী করেছে, আল্লাহ পাককে অস্বীকার করেছে, তাদের মাল সম্পদ, টাকা-পয়সা, বাড়ী-গাড়ী, কোন ফায়দা আসবে না। কোন কাজে আসবে না। তারা হচ্ছে জাহান্নামের ইন্ধন। যে আবু লাহাব, আবু জাহিল। আবু লাহাবের উপর সূরা নাযিল হয়ে গেল। আল্লাহ পাক কি বললেন,
ما اغنى عنه ماله وما كسب.
আবু লাহাব যে সম্পদ সঞ্চয় করেছে, তার আল-আওলাদ যা কিছু রয়েছে, কোনটাই তার কাজে আসবে না। সে জাহান্নামে অতি শীঘ্রই প্রবেশ করবে। সে তার স্ত্রী, তার সমস্ত কিছুসহ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ধ্বংস হয়ে যাবে। কেন? একমাত্র কারণ সে ঈমান আনেনি সেজন্য। তার যত আমলে ছালেহ থাকুক না কেন, যত ভাল কাজ করুকনা কেন, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটা আমলে ছালেহ হবে না এবং সে নাযাত পাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর প্রতি পূর্ণ ঈমান, পুর্ণ আস্থা সে না আনবে। কাজেই, সে ঈমানদার হতে পারবে না। তার আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন,
ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.
আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, সে যদি যমীন থেকে আসমান পরিমাণ স্বর্ণ কাফ্ফারা দেয়, (যে, আল্লাহ পাক কুফরী করেছিলাম, তার কাফ্ফারা দিয়ে দিলাম।)
فلن يقبل সেটা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে এবং সে কোন সাহায্যকারী পাবেনা। কাজেই, ঈমানের যে শর্ত-শারায়েত রয়েছে, প্রত্যেকটা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাহলে তার জন্য কামিয়াবী রয়েছে। কোন একটা বিষয়ও অস্বীকার করা যাবে না। ঈমানে মুজমাল, ঈমানে মুফাস্সাল যেটা রয়েছে, তার মধ্যে ঈমানের কয়েকটা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।
امنت بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت.
এখানে কয়েকটা জিনিষ সম্পর্কে বলা হয়েছে। যে, ঈমান কিসের উপর- আল্লাহ পাক-এর প্রতি, ফেরেশ্তাদের প্রতি, কিতাবসমূহের উপরে, রসূলগণের উপরে, পরকালের উপরে, তাক্বদীরের ভালো, মন্দের উপরে এবং পুনরুত্থানের উপরে যেটা মানুষ হাশরে উঠবে, হিসাব-নিকাশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এখন বিশ্বাস স্থাপন করবে প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে। আল্লাহ পাক-এর তাওহীদের উপর যেমন বিশ্বাস করতে হবে তেমন প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাওহীদ সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা ইখলাছ নাযিল করেন,
قل هو الله احد. الله الصمد. لم يلد ولم يولد. ولم يكن له كفوا احد.
আল্লাহ পাক বলেন, আপনি বলে দিন। আল্লাহ পাক এক। আল্লাহ পাক বেনিয়াজ বা কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কারো কাছ থেকে আসেননি এবং তাঁর থেকেও কেউ নয়। এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়। আল্লাহ পাক-এর পরিচয়, গোত্র, বংশ, ছেলে-মেয়ে, আল-আওলাদ, স্ত্রী-পুত্র ইত্যাদি সম্পর্কে কাফিররা যখন জিজ্ঞেস করলো। যেহেতু তাদের আল্লাহ পাক সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলনা। তারা জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যে আল্লাহ পাক-এর সংবাদ দিচ্ছেন। যার কথা বর্ণনা করতেছেন, যিনি আমাদের মা’বুদ, খালিক্ব উনার পরিচয় কি? কোথায় থাকেন? কি করেন? ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পুত্র কত জন উনার রয়েছেন? আমাদের জানার বিষয় রয়েছে। তখন আল্লাহ পাক সূরা ইখলাছ নাযিল করে দিলেন। হে ব্যক্তিরা তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ পাককে তোমাদের মত মনে করনা।
قل هو الله احد. الله الصمد.
বলুন, আল্লাহ পাক এক, আল্লাহ পাক বেনিয়াজ। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। এবং তিনি কারো কাছ থেকে আসেননি। তাঁর থেকে কেউ নয় এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়।
কাজেই, আল্লাহ পাক-এর তৌহিদের কথা আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষণা করে দিলেন। যে, এই বিষয়ে সূরা ইখলাছের উপর ঈমান আনতে হবে। তাহলে আল্লাহ পাক-এর প্রতি যেরূপ বিশ্বাস বা আক্বীদা পোষণ করার আদেশ করা হয়েছে তা সূরা ইখলাছ বিশ্বাস করলে, আল্লাহ পাক-এর প্রতি বিশ্বাস তার যথাযথ হবে। এর মধ্যে চু-চেরা, কিল ও কাল সে করতে পারবে না। কোন দিক থেকে الله الصمد আল্লাহ পাক বেনিয়াজ, কতটুকু বেনিয়াজ? হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে দেখ, আল্লাহ পাক বেনিয়াজ কতটুকু, আল্লাহ শব্দ যে রয়েছে এ শব্দ থেকেও আল্লাহ পাক বেনিয়াজ। (সুবহানাল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহ পাক ‘আল্লাহ’ শব্দেরও মুহতাজ নন। আমরা, যিনি আমাদের খলিক্ব ও মালিক, উনাকে ডাকব কি করে, সেজন্য ‘আল্লাহ পাক’ বলে ডেকে থাকি। কিন্তু হাক্বীক্বতান আল্লাহ পাক এ শব্দেরও মুহতাজ নন। এর চাইতেও আল্লাহ পাক উর্ধ্বে। এর মুখাপেক্ষীও আল্লাহ পাক নন।
কাজেই, আল্লাহ পাক উনি আল্লাহ পাকই, সেটা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আল্লাহ পাক-এর কোন শরীক নেই। এখন অনেকে চু-চেরা ও কিল ও কাল করে থাকে, আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক বানিয়ে থাকে। কেউ আল্লাহ পাক-এর সাথে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শরীক বানিয়ে থাকে। যেমন জাতি নূর, ছিফতি নূর, ইত্যাদি নানান চু-চেরা, কিল ও কাল। কিন্তু হাক্বীক্বত আল্লাহ পাক আল্লাহ পাকই। আল্লাহ পাক-এর যে তৌহিদ রয়েছে সেটা যে রকম রয়েছে ঠিক সে রকমই বিশ্বাস করতে হবে। তাহলে সে ঈমানদার হতে পারবে। সূরা ইখলাছের মধ্যে যা বর্ণনা করা হয়েছে, একটা বিন্দু থেকে বিন্দুতম চু-চেরা, কিল ও কাল করে, বাড়ানো, কমানো, ইফরাত-তাফরীত করে, তাহলে কোন ব্যক্তি ঈমানদার থাকতে পারবে না। আল্লাহ পাক এক, বেনিয়াজ, কারো মুখাপেক্ষী নন। কোন কিছুরও মুখাপেক্ষী নন তিনি। তিনি কোন মাখলুকাতের মুখাপেক্ষী নন এবং উনার থেকে কেউ আসেনি, উনি কারো কাছ থেকে নন। উনার সমকক্ষ কেউ নয়। আল্লাহ পাক-এর মেছালের সমকক্ষও কেউ নয়। কাজেই, এখানে বিন্দুতম চু-চেরা করলে সে কাফির হয়ে যাবে। কাজেই, তৌহিদ সম্পর্কে এই আক্বীদা বা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, এটা বিশ্বাস স্থাপন করার পর সে ফেরেশ্তা, কিতাব, রসূল, পরকাল, তাক্বদীর, পুনরুত্থান, পর্যায়ক্রমে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যদি প্রথমটাই কেউ বিশ্বাস স্থাপন না করে তাহলে পরবর্তীগুলি তার আর বিশ্বাস করার জরুরত নেই। কাজেই, আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বীভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবেক আক্বীদা পোষণ করার এবং তাতে দায়িম ও ক্বায়িম থাকার তাওফীক দান করেন।
{বিঃ দ্রঃ- এ সংখ্যা হতে “ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা” সম্পর্কিত ওয়াজ শরীফ আপাতত শেষ করা হলো। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে ওয়াজ শরীফ পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আর আগামী ১৫১তম সংখ্যা হতে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের আলোকে “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয” সম্পর্কে ওয়াজ শরীফ পেশ করা হবে। আল্লাহ পাক তাওফীক দানের মালিক।} -সম্পাদক।
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩