আল্লাহ পাক কতটুকু সম্মান দিয়েছেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতটুকু সম্মান পেয়েছেন। সেজন্য বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক তো নিজেই বলেন কুরআন শরীফে। কি বলেন?
انا اعطینک الکوثر.
“নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।”
কাওছারের অর্থ রয়েছে? লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে কাওছারের। দু’টা অর্থ প্রধান। একটা হচ্ছে,
حوض کوثر (হাউযে কাওছার)। যে হাউযে কাওছারের পানি পান করলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত পিপাসা লাগবে না।
আরেকটা হচ্ছে, خیر کثیر (খইরে কাছীর) সমস্ত ভালো জিনিসগুলো আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ।
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পর্শে আসার কারণেই সবকিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। যেমন ফযীলতপ্রাপ্ত হয়ে গেছে আসমান, যমীন, জান্নাত, সম্মানিত হয়েছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্্ সালামগণ। অর্থাৎ সকলেই ফযীলপ্রাপ্ত হয়ে গেছেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবতের কারণে, তাছিরের কারণে, উনার আগমনের কারণে, অজুদ মুবারকের কারণে আল্লাহ পাক-এর ক্বায়িনাতের সমস্ত কিছু সম্মানিত হয়ে গেছে, ফযীলতপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক خیر کثیر (খইরে কাছীর) অর্থাৎ ভালাই দান করেছেন। এর অর্থ দু’টা। একটা অর্থ হচ্ছে ভালো জিনিসগুলো দেয়া হয়েছে, আর দু’ নাম্বার হচ্ছে, উনার সংশ্লিষ্টতায় যা কিছু এসেছে সেটা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক ভালো হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ। সেই জিনিসটা, সেই দ্রব্য, সেই মানুষ, সেই জিন, সেই আসমান, যমীন, জান্নাত, আরশ, কুরষী, লৌহ, কলম, সমস্ত কিছুই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সম্মানিত হয়ে গেছে, ফযীলতপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ।
এজন্য ইজমা’ করা হয়েছে, কি ইজমা’ করা হয়েছে? ইজমা’ হচ্ছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিসিম মুবারক ও পা মুবারকের মধ্যে যে মাটি মুবারক স্পর্শ করেছে এবং রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে, পা মুবারকে স্পর্শ করেছে সেই মাটি মুবারকের মর্যাদা আরশে মুয়াল্লার চাইতে লক্ষ কোটি গুণ বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ। এটা ইজমা’ হয়ে গেছে।
আল্লাহ পাক-এর আরশে আযীম। তাকে বলা হয় আরশে আযীম। মহা সম্মানিত স্থান। যেখানে আল্লাহ পাক-এর যত রহমত, বরকত, সাকীনা, যত ফয়েজ রয়েছে, অর্থাৎ যা কিছু রয়েছে সেগুলো নাযিল হয়ে থাকে আরশে মুয়াল্লার মধ্যে। সেই আরশে মুয়াল্লার চাইতে সম্মানিত হয়ে গেল আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকের স্পর্শকৃত মাটি মুবারক। সুবহানাল্লাহ।
তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ও স্পর্শকৃত হওয়ার কারণে সোমবার দিন, ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ কতটুকু সম্মানিত হবে? এটাতো ফিকির করতে হবে।
কুরআন শরীফে রয়েছে, কি রয়েছে? আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার শ্বশুর হযরত শুয়াইব আলাইহিস সালাম থেকে বিদায় নিয়ে আসতেছিলেন উনার আহলিয়াসহ। তখন উনার আওলাদ-এর বিলাদত শরীফ-এর সময় নিকটবর্তী। এদিকে ব্যাথা উঠে গেছে। অন্ধকার রাত্রি, আগুন তালাশ করতে লাগলেন। দেখা গেল, একটা গাছের উপর আগুন দেখা যাচ্ছে। হাক্বীক্বত সেটাতো আগুন ছিল না। আল্লাহ পাক হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর নুবুওওয়াত প্রকাশ করবেন সেজন্য সেটা যাহির করেছিলেন। তিনি যখন সেখানে গেলেন। আল্লাহ পাক কি বললেন? সেখানে কিছু নূরের তাজাল্লা যাহির হচ্ছিল, নূর ঝরতেছিল। সেই নূর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা আরশে মুয়াল্লার অর্থাৎ আরশে মুয়াল্লার যে নূর রয়েছে, সেই নূরের সত্তর ভাগের এক ভাগ নূর সেখানে নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ পাক বললেন,
فاخلع نعلیک.
হে আমার নবী, আমার রসূল, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম! না’লাইন শরীফ খুলে আসুন।
انک بالواد المقدس طوی.
‘আপনি নিশ্চয়ই এই ‘তুয়া’ পবিত্র স্থানে, পবিত্র প্রত্যাদেশ জানতে এসেছেন।’
কাজেই, আপনার না’লাইন শরীফ খুলে এখানে তাশরীফ আনুন। কি হয়েছে সেখানে? কতটুকু পবিত্রতা রয়েছে? আরশে মুয়াল্লার যে নূর তার সত্তর ভাগের এক ভাগ সেখানে নাযিল হয়েছে।
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারকে যে ধুলাবালিগুলো স্পর্শ করেছে সেটার মর্যাদা আরশে আযীমের যে অজুদ রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে তার চাইতেও কোটি কোটি গুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকের যে ধূলা-বালিগুলো স্পর্শ করেছে সেই দূলাবালিগুলিও আরশে আযীমের চাইতে লক্ষ কোটি গুণ বেশি মর্যাদা সম্পন্ন।
এখন অনেকে একটা প্রশ্ন করতে পারে, ইজমা’ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফে শরীর মুবারকে, পা মুবারকে যে মাটি স্পর্শ করে আছে সেটার মর্যাদা আরশে আযীম থেকে লক্ষ্য কোটি গুণ বেশি।
তার জবাবে আমরা বলে থাকি, সেটাতো অবশ্যই রয়েছে। শুধু তাই নয় বরং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা মুবারকে যে মাটি স্পর্শ করেছে সেটাই লক্ষ কোটি গুণ বেশি মর্যাদা সম্পন্ন হয়েছে। (সুবহানাল্লাহ)
এখন কেউ বলতে পারে, তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফে হেঁটেছেন, মদীনা শরীফে হেঁটেছেন আরো অনেক জায়গায় সফর করেছেন। তাহলে সব জায়গার মাটিগুলো সম্মানিত হয়ে যাওয়ার কথা। হ্যাঁ, অবশ্যই সব জায়গার মাটিগুলো সম্মানিত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই মাটিগুলো কি সেখানে রয়েছে? না নেই? সেটা দেখতে হবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনেক ফযীলত রয়েছে। এজন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইস্তিঞ্জা মুবারক করতেন সেটা গায়িব হয়ে যেত। আল্লাহ পাক সেখানে সেটা রাখতেন না। কারণ, সেই ইস্তিঞ্জা মুবারকের তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক কায়িনাতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইস্তিঞ্জা মুবারককে কেউ যদি ইহানত করে সেও কাট্টা কাফির হয়ে যাবে, চির জাহান্নামী হয়ে যাবে। সেগুলো আল্লাহ পাক গায়িব করে দিতেন, অদৃশ্য করে দিতেন। ঠিক একইভাবে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যমীনে চলেছেন, হেঁটেছেন, সবই করেছেন কিন্তু চলার পরে সেই মাটি মুবারকগুলো সেখানে থাকেনি। আল্লাহ পাক অদৃশ্য করে দিয়েছেন। সে মাটি মুবারকের মর্যাদা তো অবশ্যই কোটি কোটি গুণ বেশি হবে। বেমেছাল। (অসমাপ্ত)