কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের সবচেয়ে বড় পুঁজি সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা। সাধারণের অনেকের বিশ্বাস রয়েছে যে,নবী-রসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো কাছে ফেরেশ্তা নাযিল হয়না। সেক্ষেত্রে “ …. খাগড়াছড়ির দুর্গম ও শঙ্কাজনিত যাত্রা পথের পুরোটিতেই মহান আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে খাছ গায়েবী মদদ রূপে আলাদাভাবে, খাছ করে সাদা কবুতর ও ডাহুক পাখির ছূরতে সত্তর হাজার ফেরেশ্তা মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, গাউছূল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীসহ পুরা সফরসঙ্গীগণকে বেষ্টন করে উড়তেছিল। ….” যখন দৈনিক আল ইহসানে এই ঘটনা প্রকাশিত হলো তখন তারা খুব ফলাও করে প্রচার করল যে, ‘এটা কেমন কথা যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর প্রতি ফেরেশ্তা নাযিল হয়। এটা নেহায়েত ভণ্ডামী কথা। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, তিনি রসূল দাবী করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) কারণ অতীতে কোন আউলিয়ায়ে কিরাম-এর ক্ষেত্রে এসব কথা শোনা যায়নি। অতএব আস রাজারবাগ প্রতিরোধ কর।’ (নাউযুবিল্লাহ্)
পাঠক! ইবলিসের চাল খুবই সূক্ষ্ম ও ব্যাপক সন্দেহ নেই। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর রহমত তার চেয়েও অনেক শক্তিশালী।
অতএব, আসুন আমরা পর্যালোচনা করে দেখি ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে আল্লাহ পাক ফেরেশ্তা দিয়ে সাহায্য করেন একথা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কিনা?
“মিশকাত শরীফে” উল্লেখ আছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى قال لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببته فكنت سمعه الذى يسمع به وبصره الذى يبصربه ويده التى يبطش بها ورجله التى يمشى بها.
অর্থঃ- “রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক বলেন, আমার বান্দা নফল ইবাদতগুলোর দ্বারা আমার নৈকট্য (কোরবত) লাভের চেষ্টা করে, এমনকি আমি তাকে বন্ধু (দোস্ত) রূপে গ্রহণ করি। আর যে সময় আমি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করি, তখন আমি তার শ্রবন শক্তি হই যদ্বারা সে ব্যক্তি শ্রবন করে, আমি তার দর্শণ শক্তি হই যা দ্বারা সে ব্যক্তি দর্শণ করে, আমি তার হস্ত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ব্যক্তি ধরে থাকে এবং আমি তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে ব্যক্তি চলে থাকে।”
“মুজাহিরে হক্ব” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে, “ওলী আল্লাহগণ আল্লাহ পাক-এর মর্জি ব্যতীত দেখা-শুনা, ধরা-চলা কোন কাজই করেননা। তার সমস্ত কাজ আল্লাহ পাক-এর মর্জি অনুযায়ী হয়ে থাকে। আল্লাহ পাক তার সাহায্যকারী ও কার্য নির্বাহকারী হয়ে থাকেন।”
উপরোক্ত বিবরণে বুঝা যায় যে, ওলীগণের কাজ আল্লাহ পাকই নির্বাহ করেন। কিন্তু কিরূপে নির্বাহ করেন, তাঁর ফেরেশ্তাগণ কর্তৃক নির্বাহ করে থাকেন এর বহু প্রমাণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
ان الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا تتنزل عليهم الملئكة الا تخافوا ولا تحزنوا وابشروا بالجنة التى كنتم توعدون نحن اوليئكم فى الحيوة الدنيا وفى الاخرة ولكم فيها ما تشتهى انفسكم ولكم فيها ما تدعون.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা বলেন, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তারপরে তারা ইস্তিকামত থাকেন, তাঁদের উপর ফেরেশ্তাগণ নাযিল হয়ে থাকেন। (আর তারা বলেন) তোমরা ভয় করোনা, দুঃখ করোনা এবং তোমরা যে বেহেশ্তের ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) প্রাপ্ত হয়েছ তার সুসংবাদপ্রাপ্ত হও। আমরা দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে তোমাদের বন্ধু। তোমাদের মন যার আগ্রহ করে, তা উক্ত আখিরাতে তোমাদের জন্য আছে এবং তোমরা যা দাবি কর তথায় তোমাদের জন্য আছে।” (সূরা হা-মীম-সিজদা/৩০, ৩১)
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে কবীর”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومعنى كونهم اولياء للمؤمنين ان للملائكة تاثيرات فى الارواح البشرية بالا لها مات الحقيقية وبالجملة فكون الملائكة اولياء للارواح الطيبة الطاهرة حاصل من جهات كثيرة معلومة لارباب المكاشفة والمشاهدات.
অর্থঃ- “ফেরেশ্তাগণের ঈমানদারদের বন্ধু হওয়ার অর্থ এই যে, ফেরেশ্তাগণ অনেক ইলহাম, নিশ্চিত ইয়াকীন, কাশ্ফ ও হাক্বীক্বী মাকাম দ্বারা মানুষের রূহগুলোতে তাছির করে থাকেন। মূলকথা এই যে, কাশ্ফ ও মোশাহাদাবিশিষ্ট দরবেশরা অবগত আছেন যে, ফেরেশ্তাগণ অনেক প্রকারে নেক পাক রূহদিগের সহায়তা করে থাকেন।”
“তাফসীরে আবূ সাউদ”-এর ৭ম খণ্ডের ৬৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(تتنزل عليهم الملئكة) من جهته تعالى يمدونهم فيما بينهم من الامور الدينية والدنيوية بما يشرح صدرهم ويدفع عنهم الخوف والحزن بطريق الالهام.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁর ওলীগণের উপর ফেরেশ্তাগণ নাযিল হয়ে থাকেন। দ্বীন এবং দুনিয়ার যে কার্যগুলো তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত হয় উক্ত ফেরেশ্তাগণ তৎসমুদয়ে তাঁদের সাহায্য করেন, ইলহাম দ্বারা তাঁদের সিনা (বক্ষঃদেশ) প্রশস্ত করে দেন এবং তাদের ভয় ও দুঃখ নিবারণ করে দেন।”
“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৭ম খণ্ডের ৪৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(نحن اوليئكم فى الحيوة الدنيا) اى اعوانكم فى امركم نلهمكم الحق ونرشد كم الى مافيه خير كم وصلاحكم.
“ফেরেশ্তাগণের উক্তিঃ আমরা তোমাদের কার্যসমূহে তোমাদের সাহায্যকারী, আমরা তোমাদিগকে সত্য মতের ইলহাম করে থাকি এবং যে কাজে তোমাদের কল্যাণ (ভালাই) ও হিত হয়, আমরা তোমাদিগকে সে কাজের দিকে পথ দেখায়ে থাকি।”
“হাশিয়ায়ে জোমাল”-এর ৪র্থ খণ্ডের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال مجاهد نحن قرنائكم الذين كنا معكم فى الدنيا.
“হযরত মোজাহেদ রহমতুল্লাহি আলাইহি (উহার অর্থে) বলেন, আমরা তোমাদের সঙ্গী, দুনিয়ায় তোমাদের সঙ্গে থাকি।”
“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৭ম খণ্ডের ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فقد كلمت الملائكة عليهم السلام مريم ام موسى وفى قوله ……… رجل جزج لزيارة اخ له فى الله تعالى الخ.
অর্থঃ- “ফেরেশ্তাগণ হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম ও এক রেওয়ায়েতে হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর মাতার সাথে কথা বলেছেন।”
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, অবশ্য আমি মসজিদে দাখিল হয়ে নামায পড়ব এবং এরূপ প্রশংসাবলী দ্বারা আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা করব যেরূপ প্রশংসা কেউ করতে পারেনি, যে সময় তিনি নামায পড়ে আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা ও ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে বসলেন, সেই সময় পিছন দিক হতে অতি উঁচু স্বরে বলতে শুনলেন, আয় আল্লাহ পাক! তোমারই সমস্ত প্রশংসা, তোমারই সমস্ত বাদশাহী, তোমার দিকে প্রকাশ্য গুপ্ত প্রত্যেক বিষয় রুজু করে, তোমারই প্রশংসা, নিশ্চয়ই তুমি প্রত্যেক বিষয়ের উপর সক্ষম। অতীতকালের সমস্ত গুনাহ হতে বাঁচায়ে রাখ। পাক আমলগুলো করতে আমাকে তাওফিক দাও, তৎসমস্তের জন্য আমার প্রতি রাজি হও। আমার তওবা কবুল কর।”
তৎপরে উক্ত ছাহাবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তা বর্ণনা করলেন। তৎশ্রবণে তিনি বললেন, তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ফেরেশ্তাগণের সাথে সাক্ষাত করার ও তাঁদের কথা শোনার হাদীছ শরীফ অনেক আছে।
এছাড়া আল্লাহ পাক কুরআন শরীফেই যা বলেছেন, “নিশ্চয়ই যারা বলেছে যে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ পাক, তৎপরে তাতে স্থির প্রতিজ্ঞ রয়েছে তাদের উপর ফেরেশ্তাগণ নাযিল হয়ে থাকেন (এবং বলেন যে,) তোমরা ভীত হইও না এবং দুঃখিত হইও না।”
এই আয়াত শরীফের দ্বারা পয়গম্বরগণ ব্যতীত অন্য লোকদের নিকট ফেরেশ্তাগণের নাযিল হওয়া এবং তাদের সাথে ফেরেশ্তাগণের কথা বলা প্রমাণ হয়। কেউ বলেননি যে, এতে নুবুওওয়াতের দাবি করা হয়।
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘আল মোনকেযু মিনাদ্দালাল’ কিতাবে হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেবগণের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন, “পীর ছাহেব-ওলীআল্লাহগণ চৈতন্য অবস্থায় ফেরেশ্তাগণ ও নবীগণের রুহের সাথে সাক্ষাৎ করে থাকেন। তাঁদের আওয়াজ শুনে থাকেন, তাঁদের নিকট হতে অনেক ফায়েদা লাভ করে থাকেন, তাঁদের আকৃতি ও রূহানী ছুরত দেখার পরে তাদের দরজা এত উন্নত হয় যে যা বর্ণনা করা কঠিন।
হযরত কাজী আবু বকর আরাবী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ক্বানূনুত্ তা’বীল’ কিতাবে লিখেছেন, “সুফীগণের মত এই যে, যখন মানুষের নফছ ও দিল পাক হয়ে যায়, ইল্ম ও আমল দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সর্বদা খোদাতায়ালার নিমগ্ন হয় ছয়, দুনিয়ার সর্ব সম্বন্ধ হতে বিছিন্ন হয়ে যায়, তখন তার দিল খুলে যায়, ফেরেশ্তাগণকে দেখতে পায়, তাদের কথা শুনতে পায়, পয়গম্বরগণের রুহ্ মুবারক ও ফেরেশ্তাগণ তাঁর নিকট উপস্থিত হয়। কোন আহলে বায়েত ইমাম বলেছেন যে, ফেরেশ্তাগণ ছওয়ার অবস্থায় আমাদের গৃহে সমবেত হয়ে থাকেন।” (এহকাকোল হক)
উপরোক্ত বুযূর্গগণের কথায় বুঝা গেল যে, যারা কামিল হয়েছেন, তাঁরাই ফেরেশ্তাগণের সাথে সাক্ষাত করতে এবং তাঁদের নিকট শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়ে থাকেন।
আর “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের পর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম যমীনে নাযিল হবেন না” একথা মোটেও শুদ্ধ নয়। মূলতঃ হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম ওহীসহ বা ওহী নিয়ে পৃথিবীতে কখনো নাযিল হবেননা। এছাড়া হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম যে, পৃথিবীতে নাযিল হবেন তাঁর বহু প্রমাণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে রয়েছে।
যেমন, “সূরা ক্বদরে” আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
تنزل المليكة والروح فيها باذن ربهم.
অর্থঃ- “ক্বদরের রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম ফেরেশ্তাসহ যমীনে নাযিল হন।”
আর “ত্ববারানী শরীফের” হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, ‘হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি পছন্দ করিনা যে, কোন নাপাক ব্যক্তি ওযু না করে শুয়ে যায়। কেননা, আমি আশঙ্কা করি যে, সে ব্যক্তি ওযু ছাড়া মারা যাবে এবং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম তার নিকট উপস্থিত হবেননা।”
উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম যমীনে নাযিল হন এবং প্রত্যেক ঈমানদারের মৃত্যুকালে উপস্থিত হন যাকে আল্লাহ পাক ওযু অবস্থায় মৃত্যুদান করেন।
আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে আরো ইরশাদ করেন,
له معقبات من بين يديه ومن خلفه يحفظونه من امر الله.
অর্থঃ- “তার জন্য কতকগুলো ফেরেশ্তা তার সম্মুখে ও পশ্চাদ্দিকে থাকেন। তারা আল্লাহ পাক-এর হুকুমে উক্ত ব্যক্তিকে রক্ষণাবেক্ষণ করেন।” (সূরা রা’দ)
“তাফসীরে কবীর”-এর ৫ম খণ্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال عليه السلام ملك عن يمينك يكتب الحسنات وهو يمين على الذى على الشمال فاذا عملت حسنة كتبت عشرا واذا عملت سيئة قال الذى على الشمال لصاحب اليمين اكتب فيقول لا لعله يتوب فاذا قال ثلاثا قال نعم اكتب وملكان بين يديك ومن خلفك وملك قابض على ناصيتك واذا تواضعت لربك رفعت وان تخيرت قصمك والملكان على شفتك يحفظان عليك الصلاة على وملك على فيك لايدع ا يدخل الحية فى فيك وملكان على عينك.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন ফেরেশ্তা তোমার ডান দিকে আছেন তিনি নেকিগুলো লিখে থাকেন। তিনি বাম দিকের ফেরেশ্তার উপর থাকেন। যখন তুমি একটি নেকি কর তখন দশটি নেকি লিখা হয়। আর যখন তুমি একটা গুনাহ কর তখন বাম দিকের ফেরেশ্তা ডান দিকের ফেরেশ্তাকে বলেন, আমি কি লিখব? তিনি বলেন, বোধ হয় উক্ত ব্যক্তি তওবা করবে। তৎপরে যখন বাম দিকের ফেরেশ্তা তিনবার এইরূপ বলেন, ডান দিকের ফেরেশ্তা বলেন, হ্যাঁ লিখ। আর দু’জন ফেরেশ্তা তোমার সম্মুখে ও পশ্চাতে থাকেন। একজন ফেরেশ্তা তোমার ললাট ধরে থাকেন যদি তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নম্রতা স্বীকার কর তবে তোমাকে তিনি উচ্চ করে দেন। আর যদি তুমি অহঙ্কার কর তবে তিনি তোমাকে অবনত করে দেন। আর দুইজন ফেরেশ্তা তোমার দুই ঠোটের উপর থাকেন। তুমি আমার উপর যে দরূদ পড়ে থাক তারা উহার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আর একজন ফেরেশ্তা তোমার মুখে থাকেন তোমার মুখের মধ্যে সর্প প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেন। আর তোমার দুই চোখে দুই জন ফেরেশ্তা থাকেন।”
“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৪র্থ খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والاكثرين ان المراد بالمعقبات الملائكة الخ.
অর্থঃ- “অধিকাংশ বিদ্বান ব্যক্তি বলেন যে, এর অর্থ ফেরেশ্তাগণ।”
আবূ দাউদ, ইবনুল মোঞ্জের ও ইবনে আবিদ্দুনিয়া হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে উল্লেখ করেছেন; তিনি বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য কতকগুলো রক্ষক ফেরেশ্তা আছেন এরা এজন্য তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন যে, যেন তার উপর প্রাচীর পতিত না হয়, যেন কোন চতুস্পদ জন্তু তাহাকে আঘাত না করে, এমন কি যখন তার নির্ধারিত তকদীর উপস্থিত হয় তখন রক্ষক ফেরেশ্তাগণ তার নিকট হতে পৃথক হয়ে যান। তৎপরে আল্লাহ পাক যা ইচ্ছা করেন তাই উক্ত ব্যক্তির উপর পৌঁছে থাকে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষে তিনশত ফেরেশ্তা নিয়োজিত করা হয়েছে। যতক্ষণ তকদীরের হুকুম উপস্থিত না হয় ততক্ষণ তাহার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তাহার সম্মুখে সাতজন ফেরেশ্তা থাকেন, যেরূপ গ্রীষ্মকালে মধুপাত্র হতে মধুমক্ষিকাকে বিতাড়িত করা হয়। তদ্রুপ তারা বিতাড়িত করে থাকেন। যদি তারা তোমাদের পক্ষে প্রকাশ হত তবে তোমরা প্রত্যেক সমতল ভূমি ও পর্বতে তাদের প্রত্যেকেকে দেখতে যে, দুই হাত বিছিয়ে ও মুখ বিস্তার করে রয়েছে। যদি মানুষকে এক নিমিষ পরিমাণ তার নিজের উপর ছেড়ে দেয়া হয় তবে অবশ্যই শয়তানেরা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।”
পাঠক! উপরোক্ত প্রমাণসমূহের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, ওলীআল্লাহ তো অবশ্যই সাধারণ মু’মিন-মুসলমানই ফেরেশ্তাদের হেফাযতে থাকেন।
কিন্তু কু-মন্ত্রক কায্যাব উদ্দীন গং সেই সাধারণ বিষয়টিও জানেনা, তারা এতই জাহিল। আর যেহেতু তারা সুন্নত পালন আদৌ করেনা বরং বিজাতীয়, বিদয়াতী কর্মসূচীতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সেহেতু তারা ফেরেশ্তাদের সাহায্য পাওয়া তো দূরের কথা বরং ফেরেশ্তাদের তারা দেখতেও পায়না। যেমন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, “ছহীহ মুসলিম শরীফের” হাদীছ শরীফটি উক্ত মতের সমর্থন করে। ‘হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, একজন ফেরেশ্তা আমাকে সালাম করতেন, তৎপর আমি শরীরে অগ্নির দাগ লাগাতে শুরু করলে ফেরেশ্তা সালাম ত্যাগ করলেন। পরে আমি তা ত্যাগ করলে পুনরায় ফেরেশ্তা সালাম করতে লাগলেন।”
এতদ্বপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী যে ব্যক্তিগতভাবে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা মুবারক পর্যন্ত, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি অবস্থায়ই সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেন শুধু তাই নয় বরং আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তাঁর এমনই দায়িমী রূহানী সম্পর্ক, সুন্নত পালনের ফয়েজ দানে তিনি এতই সমৃদ্ধ যে, তাঁর ছোহবতে যে কেউই এবং যত সংখ্যক লোকই আসে তারা সবাই সুন্নতের আমলদার হয়ে যান। তাদের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত সুন্নতের সৌন্দর্যে সুশোভিত হয়ে উঠে।
তাই বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হযরত ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতি কাজে ও সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক যেরূপ বেমেছালভাবে অগণিত ফেরেশ্তা দিয়ে সাহায্য করেন তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। (সুবহানাল্লাহ্) য
-মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ