আল বাইয়্যিনাতে প্রথমে তাকে ’মুফতী’র পরিবর্তে বলা হত ‘মুফতে’ আমিনী। ‘মুফতি’ মানে যিনি ফতওয়া দেন। কিন্তু ইসলামে শুধু ফতওয়া দেয়ার ইলমই বচার্ষ বিষয় নয়। পাশাপাশি ছহীহ আমল বা পরহেযগারীও এক্ষেত্রে অনিবার্য বিষয়। আমিনীর কোনোটাই না থাকায় আল বাইয়্যিনাতে তাকে ‘মুফতী’র পরিবর্তে ‘মুফতেই’ বলা হত।
কিন্তু তারপরে তার এমন সব কুকীর্তি বিশ্বস্ত ও প্রমাণিত সূত্রে জানা যেতে লাগল যে তখন ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ তাকে মুফতে আমিনী লিখতেও অপারগ হল। ‘আবুল হাকামকে’ কুফরীর কারণে ‘আবু জেহেল বলার সুন্নত আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তখন তাকেও ‘আমিনীর’ পরিবর্তে কমিনী বলতে ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ বাধ্য হল।
প্রথমদিকে কমিনী ভক্তরা তাতে ঢের হৈ চৈ ও পোসসা করেছেন। কেউ কেউ আল-বাইয়্যিনাত এর মাহফিলে হামলা করতে চেয়েছেন। যদিও তারা তাতে সফল হননি কিন্তু আজকে তারাই কমিনী থেকে আরো পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন।
কারণ, যে কমিনী ছিল তাদের কু’ পরামর্শদাতা, সে কমিনীর যাবতীয় কমিনা বা নিকৃষ্টতার ফিরিস্তি এখন দিন দিন তাদের সবার কাছেও জাহির হচ্ছে। গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় প্রতারণা ও জমি দখলের আরো একটি মামলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পত্রিকার রিপোর্ট হয়:
গতকাল মং্গলবার দুপুরে লালবাগ থানায় হাজির হয়ে কোতয়ালী থানাধীন ১০১ আবুল হাসনাত রোডের বাসিন্দা মৌলভী রশিদ আহাম্মদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় মামলার বাদী মৌলভী রশিদ আহাম্মদ চারদলীয় জোটের সাবেক সাংসদ ও ইসলামী ঐক্য জোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, লুটপাট, দখলবাজী ও হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে এজাহার নামায় আবেদনপথ লালবাগ থানার ডিউটি অফিসার নয়নের কাছে জমা দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনোর জন্য অভিযোগপত্রসহ বাদীকে থানার তারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবজ্যোতি খীসার কক্ষে পাঠানো হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় ওসির নির্দেশে মুফতী ফজলুল হক আমিনীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরে নিয়ে লালবাগ থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। মামলা নং ৪২ তারিখ ২৭/২/০৭ ইং। ধারা ৪৪৮/৩২৩/৩৭৯/৩৫৪/৪২৭/৫০৬/১১৪/৩৪ দঃবিঃ।
পুলিশ জানায়, বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেছে, লালবাগ থানাধীন ১৬, বড়কাটারাস্থ ৬৬ কাঠা জমির উপর তার পিতার প্রতিষ্ঠিত হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজীর ওয়াকফ এষ্টেট ও হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসায় সপরিবারে দীর্ঘ ৭৬ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন।
তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ক্ষমতার দাপটে দেখিয়ে তৎকালীন সাংসদ মুফতে ফজলুল হক কমিনীর নেতৃত্বে বিএনপির সাংসদ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর যোগসাজসে ২৬জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার অনুপস্থিতিতে ২০০৩ সালের ৯ জুন ভোর সাড়ে ৫টায় তার পৈত্রিক বাসভবনে হানা দেয়। এ সময আসামিরা পরিবারের সকল সদস্যকে মারধর ও নির্যাতন করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে জোরপূর্বক তার পরিবারের সদস্যদের বের করে সম্পত্তি দখল করে নেয়।
এ ঘটনায় তৎকালীন সময় তিনি থানায় মামলা করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার পিন্টুর দোহাই দিয়ে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তাদের চাপে পুলিশ একটি জিডি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আদালতে শরণাপন্ন হয়ে ১৪৫ ধারায় পি-২৫৭৮/২০০৩ নং মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত ২২/১২/০৩ইং তারিখে তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনা প্রমাণিত হয়। তৎকালীন সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় তিনি থানায় মামলা করতে পারেননি। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ন্যায় বিচার প্রার্থী হয়ে গতকাল এ মামলা দায়ের করেন।
মূলতঃ ধর্মের নামে যত অধর্ম-অপকর্ম তার সব কিছুতেই রয়েছে কমিনীর দখলদারিত্ব। আর ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের গডফাদার হিসেবে পুরনো ঢাকাতেই শুধু নয়; সারাদেশেই রয়েছে তার পরিচিতি।
কমিনী আমলনামার এ রকম আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো-
ধর্ম ব্যবসায়ী কমিনীর উত্থান পর্ব অনেকটা আলাদীনের চেরাগের গপপের মতো। দরিদ্র পিতার সন্তান ছিলেন তিনি। বাড়িতে অভাব। অনেক দিন হাড়িঁ জ্বলত না। পিতা ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলির গোপনঘাট এলাকার কাঠমিস্ত্রি ওয়াজ উদ্দিন। ছোটবেলা থেকেই কমিনী মাদ্রাসায় পড়তেন। পিতা তার লেখা পড়ার খরচ চালাতে পারতেন না। পরে একদিন কমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন পুরান ঢাকার বড় কাঠারায়। এখানে এসে ভর্তি হন হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায়। ছাত্র হিসেবে কিছুটা মেধাবী ছিলেন। তাই নজরে পড়ে যান খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জীর। তিনি তখন ছিলেন জামিয়া আরাবিয়া কোরাআনীয়া লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, পরে আমিনী ধীরে ধীরে হাফেজ্জীর ঘনিষ্ট হতে থাকেন। লেখাপড়া শেষ হতে না হতেই হাফেজ্জী কমিনীর সং্গে মেয়ে বিয়ে দেন। এরপর একই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেন। ১৯৮১ সালে শিক্ষক হয়ে রাতারাতি সিনিয়ার শিক্ষক হয়ে যান। হাফেজ্জী ১৯৮৬ সালে মারা যাওয়ার পর কমিনী মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদ দখল করে নেন্ এ সময় তিনি তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির রুটি হালুয়া নিতেও নিয়োজিত হন। গঠন করেন ইসলামী ঐক্যজোট নামের রাজনৈতিক দল। ১৯৮৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে নির্বাচনে অঙশ নিয়ে জামানত হারান। এভাবে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হতে হতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সং্গে যোগ দেন। যে আসন থেকে প্রতি নির্বাচনই তার জামানত হারাতে হতো, সেই আসনে বিতর্কিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর উপর চালান স্ট্রিম রোলার। এলাকা ছাড়া হন বহু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এমনকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হালিমকেও পড়তে হয়েছে নানা হয়রানিতে।
জোটের এমপি হওয়ার কারণে ক্ষমতার দাপট আকাশ ছোয়া হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় তার দখলদারিত্ব। ২০০৩ সালের ৯ জুন পুরানো ঢাকার আরেক গডফাদার। সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন পিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে যে মাদরাসায় তি লেখাপড়া করেছেন সেই মাদরাসা দখল করেন। মাদরাসার প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার সম্পদ এখন তার দখলে। হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব পীরজি ওয়াকফ এস্টেটও দখল করে নেন। ৮৬ কাঠা জমির উপর ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা এখন তার দূর্গ। এর মার্কেটের সমস্ত আয় তিনি ভোগ করেন। মাদরাসার নামে ঢাকার মহাখালীতে ১৬ কাঠা, খিলগাঁওয়ে ১১ কাঠা, গোপীবাগে সাড়ে পাঁ কাঠা, মানিকগঞ্জে ১৯ একর, ময়মনসিংহে ৯ একর জমি এখন কমিনীর দখলে। পুরনো ঢাকার কেল্লার মোড়ে সাড়ে চার কাঠা জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন ৭ তলা আলিশান বাড়ি। কিনেছেন ৮০ লাখ টাকা দামের একাধিক গাড়ি। জঙ্গীবাদের সঙ্গে মদদদাতা হিসাবে পরিচিত কমিনী ছোট ছেলে আবুল হাসানাত একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন থানায়। সন্ত্রাসী ডিপজলের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসাবে এক নামে তাকে সবাই চেনে। সব সময় অস্ত্র হাতে থাকত তার। আরেক ছেলে আবুল ফারাহ পাকিস্তানের এক মাদ্রাসায় পড়ছে।
২০০৩ সালে কমিনীর নেতৃত্বে গুণ্ডাবাহিনী যখন বড় কাটারা মাদরাসা দখল নিতে যায় তখন এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল ওহাবের ছেলে ওয়াকফ এস্টেটের মোতোয়ালী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা রশীদ আহমেদের পরিবার-পরিজনকে মারপিট করে বের করে দেন।
মাওলানা আব্দুর রশীদের ছেলে মোঃ ইসমাইল বলেন, সেদিনের সেই ঘটনায় আমার মা, খালা এবং মামা মাস্টার মোঃ তোহাকে কমিনীর গুণ্ডারা নির্মমভাবে মারপিট করেছিল। সেই সময় থানায় মামলা করতে গিয়েছিল কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নেয়নি কমিনীর বিরুদ্ধে। আমাদের গোটা পরিবারকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আমাদের বাসাটি দখল করে নেন কমিনী। আমরা এক কাপড়ে সবাই বের হয়ে যেতে বাধ্য হই। পরে আমাদের সমস্ত আসবাব কমিনী নিয়ে যান। আমাদের ছোট ভাই ইমরান আহমেদ সেই সময় এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল, তার বইগুলোও আনতে দেননি এই কমিনী।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও কুখ্যাত রাজাকার এই কমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গী ট্রেনিং কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়েছেন জনগণকে। ২০০২ সালের এপ্রিলের এক হরতালের এক কমিনীর জঙ্গি বাহিনী রেললাইন উপড়ে ফেলে।
এদিকে, জোট সরকারের শেষ সময়ে ক্বওমী মাদরাসার স্বীকৃতির নামে কমিনীর ভূমিকা ছিল জঙ্গীবাদের আরেকটি বর্হি প্রকাশ। সম্প্রতি কমিনীর বিরুদ্ধে বড় কাটারা মাদরাসার আরেকটি দোকান দখলের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় কমিনী এক নম্বর আসামী্
পরিশেষে কমিনীর এতসব কমিনা বা নিকৃষ্ট আমলের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, সেই মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিরোধিতা করার উপযুক্ত লোক বটে। কারণ কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা নিকৃষ্ট লোক তাদেরকেই আমি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের শত্রু করেছি।” (নাউযুবিল্লাহ)
-মুহম্মদ ইবনে
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২