গ্লোবাল ভিলেজ তথা বিশ্বায়নের বাতাবরণে বিশ্বকাপ জ্বরের প্রকোপে ম্লান  হচ্ছে ইসলামী অনুভূতি॥ নির্বিকার মুসলমান; বোধোদয় হবে কবে?- (১)

সংখ্যা: ১৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী।’ ‘চলছে বিশ্বায়নের যুগ।’ অথবা “এষড়নধষ ারষষধমব” এসব শ্লোগান যে আপ্ত এবং এর পিছনে যে রয়েছে সূক্ষ্ম অথচ গভীর ষড়যন্ত্র, তা অন্তত যাদের বিরুদ্ধে এ জঘন্য কূট প্রক্রিয়া সে মুসলমানের বুঝা অন্তত: উচিত ছিল। যদিও উপরের আপাত মধুর শ্লোগানের চাকচিক্যতা ও তার মনভুলানো কথায় বেশামাল হওয়াটাই মুসলমানের না বুঝে উঠার পিছনে কারণ। ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। স্বল্প শিক্ষিতরাও “ওংষধস রং ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব” বলে ইংরেজী কোটেশনটা উল্লেখ করেন। অর্থাৎ কথাটা যতটা প্রচারিত তার বিন্দুমাত্রও মূল্যায়িত হচ্ছে কিনা তাই বিচার্য বিষয়। যে মুসলমান এ উদ্ধৃতি দিয়ে গর্ববোধ করেন সে মুসলমানই এর পরিধি সম্পর্কে পরিজ্ঞাত কিনা তা সন্দেহের বিষয়। ‘ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম’- এটা মানলে তাতে কোন কিছু অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকেনা। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ‘গ্লোবাল ভিলেজের’ কনসেপ্টকে সহজেই ইসলামের দৃষ্টিতে মেনে নেয়ার অবকাশ পাওয়া যায় না। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “হে মুসলমানগণ! তোমরা ইহুদী-খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু।” আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন, “ইহুদী-খ্রিস্টানরা চায় যে, তোমরা মুসলমান হওয়ার পর আবার গোমরাহ হয়ে যাও।” অতএব, দেখা যাচ্ছে, ইহুদী-খ্রিস্টান আর মুসলমান ইসলামের দৃষ্টিতে কখনও এক কাতারে হওয়া সম্ভব নয়।  সুতরাং বিশ্বায়ন তথা গ্লোবাল ভিলেজের কনসেপ্টের এখানেই মৃত্যু হয়। বিশ্বায়ন তথা গ্লোবাল ভিলেজ কনসেপ্টটি মূলতঃ ইহুদী-খ্রিস্টানদের একটা ধূর্ততাময় ধোঁকা, প্রতারণামূলক প্রচারণা। অক্টোপাসের মতই এর অনেকগুলো বাহু। ভয়াল থাবা। মরণ কামড়। আজকের বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে আরম্ভ করে বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়া কাপ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক অনেক থাবা। আজকের বাঙ্গালী মুসলিম শিশু নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের নাম শুনেনা, জানেনা, উচ্চারণ করতে পারেনা। কিন্তু ব্রাজিলের রোনালদা, রোনালদিনহো, আর্জেন্টিনার জুয়ান রোমান রিফুয়েলমে, জার্মানির মিরো াভ ক্লোজ, ফ্রান্সের জিনেদান জিদান, ইতালির লুকাটনি, ইংল্যান্ডের স্টিভেন জেরার্ড ইত্যাদির নাম গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করে, আত্মস্থ করে এবং অহরহ আওড়ানো রপ্ত করে। তারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত জানেনা, পালন করেনা; কিন্তু ব্রাজিলের রোনালদোর অনুকরণে দলে দলে মাথার চুল প্রায় ন্যাড়া করে। মূলত: এসবই হচ্ছে তথাকথিত ঐ বিশ্বায়নের বাতায়নে গ্লোবাল ভিলেজের আবহে বিশ্বকাপের ফাঁদে। কিন্তু এটা যে ফাঁদ তা বুঝেও বুঝে উঠতে পারছেনা এ জাতি। তারা এটাকে গ্রহণ করেছে বিশ্বকাপ জ্বর হিসেবে। তথাকথিত এ বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে যেন গোটা বাংলাদেশ। অথচ পাশ্ববর্তী ভারতে বিশ্বকাপের এত উন্মাদনা নেই। কারণ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “সব কাফিরের ধর্ম এক।” কাজেই বেছে বেছে মুসলিম বিশ্বই ওদের মূল টার্গেট। এক্ষেত্রে একবারে না পারলেও ধাপে ধাপে আগানো ওদের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। বিবিসি সূত্রে জানা যায়, উত্তর কেনিয়ার ডালবাবা উদ্বাস্তু শিবিরের কড়া ইসলামী অনুশাসন থাকায় তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে খ্যাত ক্রীড়া পোশাক নির্মাতা ইহুদী কোম্পানী নাইক স্যালোয়ার ও তথাকথিত বোরকার সম্মিলনে জিলবাব নামক পোশাক বানিয়ে ছেড়েছে। তারা এর দ্বারা কেনিয়ার ধর্মভীরু মুসলিম মহিলাদেরও অবশেষে ভলিবল খেলায় নিয়োজিত করতে পেরেছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এভাবে অভ্যস্ত হবার প্রেক্ষিতে অবশেষে আর ইহুদীদের হস্তক্ষেপ করতে হবেনা, কেনিয়ার নামধারী মুসলিম মহিলারাই তাদের পোশাক পর্যায়ক্রমে সংক্ষিপ্ত করে নেবে। মূলত: ইহুদী-খ্রিস্টানদের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বায়নের বাতাবরণে একটা ক্রেজ, একটা হুজূগ তৈরী করে দেয়া। সে হুজুগ যে মুসলমানদের ইসলাম ও স্বদেশী প্রবণতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিবে এ কথা ওরা ভালভাবেই জানে। আজকে এখনই এদেশের মুসলমান যতটা আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল ভক্ত হয়ে উঠেছে, তাদের কথায় আচরণে তা প্রকাশ করছে, উভয় দেশের পতাকার বহর দেখাতে যে নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় নেমেছে, এমনকি পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে, ছাদ থেকে পড়ে ভুড়ি ভুড়ি মারা যাচ্ছে সে তুলনায় তাদের মাঝে মক্কা শরীফ আর মদীনা শরীফের প্রীতি তো দূরের কথা এমনকি সে মুবারক নামদ্বয় উচ্চারণ বা মুহব্বতের খেয়ালও তারা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার তুলনায় হাজারভাগের একভাগও করেনা। সুতরাং এক্ষেত্রে ইহুদী ষড়যন্ত্র কত সফল তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গতঃ এবারের বিশ্বকাপ ক্রেজও এদেশের জনজীবনে কিরূপ ক্রেজ তৈরী করেছে দেশের পত্র-পত্রিকার রিপোর্টগুলোও অকুণ্ঠভাবে তার সাক্ষ্য বহন করে।  পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছেঃ বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উন্মাদনাঃ আর বিশ্বকাপ ফুটবলে তো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই যেন একাকার হয়ে যায়। কর্মব্যস্ত মানুষ ভুলে যায় তার কর্মের কথা, ছাত্র-ছাত্রী ভুলে থাকে লেখাপড়ার কথা, এমনকি ছোট ছেলেমেয়েরাও খাবার মুখে নিতে চায়না খেলা দেখা ছেড়ে। সবার ভেতর এই মহা উৎসবের মাসটি যেন একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। ছকবাঁধা মানুষগুলো নিয়মের বেড়াজাল ভেঙ্গে এক মাসের জন্য অস্থায়ী কর্মসূচীতে বাঁধা পড়ে। বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে এদেশের আকাশে বাতাসে এখন সাজসাজ রব। সবার ভিতর একটা প্রাণ চাঞ্চল্যতা কাজ করছে। বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে মহা পরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই। ইতোমধ্যে প্রিয় দলের পতাকা উড়িয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এখানে অন্য দলের সমর্থক নেই। পুরনো টেলিভিশন ছেড়ে নতুন টেলিভিশন ঘরে তুলছে। যাদের টেলিভিশন ছিল না তারাও অতিকষ্টে নুতন টেলিভিশন কিনেছে। যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তারা আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, অথবা পাড়া পড়শির টেলিভিশনে খেলা দেখার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছে। আবার পাড়া মহল্লায়, ক্লাব সমিতিতে দল বেধে খেলা দেখার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে অনেকে।  এখন মহল্লায় আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চলছে প্রিয় দলের সমর্থক গোষ্ঠী সংগ্রহের কাজ। এ কাজটা করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ দু’দলের সমর্থকদের মারামারি হানাহানির খবরও পাওয়া গেছে। এসবই হচ্ছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে।  এদেশের জনগণ এতটাই খেলার পাগল যে, প্রিয় দলের পতাকা বিক্রির ব্যবসায় নেমে পড়েছে। ঢাকাসহ অনেক বিভাগীয় শহরই ছেয়ে গেছে বিভিন্ন দেশের পতাকায়। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলই। সেই সাথে স্বাগতিক জার্মানি, ইতালী, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের পতাকাও স্থান পেয়েছে অনেকের কাছে। তবে ঢাকার উৎসবের আনন্দটা ছড়িয়ে গেছে সবার মাঝে।” উপরোক্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে প্রতিভাত হয় যে, একমাস ব্যাপী বিশ্বকাপ এদেশীয় মুসলমানদের মাঝে যে আলোড়ন, যে উন্মাদনার জোয়ার তৈরী করেছে সে তুলনায় মুসলমানগণ তাদের পবিত্র ধর্মীয় মাস রমযান শরীফেও এত আন্দোলিত হচ্ছেনা।  পাশাপাশি ফাইনাল খেলার জন্য তারা যেভাবে অধীর আগ্রহ ও ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করছে এবং বিজয়ে উল্লাসিত হচ্ছে সে তুলনায় তারা রোজার ঈদেও ততটা উদ্দীপ্ত হচ্ছেনা। অর্থাৎ তথাকথিত বিশ্বায়নের ফাঁদে বিশ্বকাপ জ্বরে এদেশীয় মুসলমানদের অনুভূতি বিজাতীয় খাতে প্রবাহিত হয়ে ধর্মীয় অনুষঙ্গের অনুভূতি ও জজবাকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ও ম্লান করে দিয়েছে ও দিচ্ছে। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের এই হুযুগ অনাকাঙ্খিত হলেও মূলতঃ একদিনে এই ক্রেজ বা তার ভিত্তি তৈরী হয়নি। বিগত শতাব্দীর প্রথম থেকেই এ খেলা এ দেশে চালু হয়ে উঠে। এমনকি গ্রাম পর্যায়ে জাম্বুরা, মিল্কভিটার প্যাকেট ইত্যাদিতে কাপড় ভরেও এ খেলার অনুশীলন হত। বিস্তর মুরুব্বী এতে পৃষ্ঠপোষকতা করত। নামধারী আলিম সমাজরা তাতে দোষের কিছু পেতনা বরং পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মাঝেও এই খেলা সংক্রমিত হয়। যে কারণে আজকে অনেক মাদ্রাসায় ওস্তাদের সক্রিয় ভূমিকায়ই এ খেলার চল আছে। আর আলিম নামধারীদের এরূপ সমর্থন তথা সহযোগিতাই সাধারণ মানুষকে আজকের উম্মাতাল পর্যায়ে এনেছে।  অথচ এ খেলা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক স্পষ্টভাষায় বলেছেন, “আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি, আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝেনা।” (সূরা দুখান/৩৮, ৩৯) “আকাশ পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত।” (সূরা আম্বিয়া- ১৬, ১৭) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। কিয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব, পরম অবজ্ঞার সাথে ওদের খেলাধুলা উপেক্ষা করুন।” (সূরা হিজর-৮৫) কাজেই এরপরেও যখন নামধারী আলিম সমাজ এ ব্যাপারে নীরব থাকে, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা করে তখন তারা মিছদাক হয় ঐ হাদীছ শরীফের- “যে কেউ একটি পাপ কাজের সূচনা করল, যতজন লোক ঐ কাজের সাথে জড়িত হল তাদের সকলের বদী যে দেখিয়েছে তার উপরই বর্তাবে।” পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে কেউ বদ কাজ করলে, পশ্চিম প্রান্ত থেকে সমর্থন করলেও সমান বদী হবে।   হাদীছ শরীফের ভাষায় তাই এসব নামধারী আলিমদের মূলতঃ বদ আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাক এদের হাত হতে উম্মাহকে হিফাজত করুন। (আমীন) -মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের  দাঁতভাঙ্গা জবাব- ১৫

 বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫ 

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-৩

চাঁদের তারিখ নিয়ে জাহিলী যুগের বদ প্রথার পুনঃপ্রচলন॥ নিশ্চুপ উলামায়ে ‘ছূ’ ঈদ, কুরবানীসহ জামিউল ইবাদত হজ্জও হচ্ছে বরবাদ

শুধু ছবি তোলা নিয়েই বড় ধোঁকা নয়, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র চর্চা করে “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের” নামেও তিনি মহা ধোঁকা দিচ্ছেন