-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ পৃথিবীর সকল দেশ ঈদুল আদ্বহা পালনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে ঘোষিত জিলহজ্জ মাসের তারিখ অনুসরণ করে পালন করতে হবে-এটি একটি অবান্তর, যুক্তিহীন প্রস্তাব।
বেশ কয়েক বছর পূর্বে ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা (অওূই) ব্যাপকভাবে একটি মতের প্রচলন ঘটায় যে, সমস্ত পৃথিবীতে ঈদুল আদ্বহা পালনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে ঘোষিত হজ্জ তারিখ অনুসরণ করেই নিজ দেশে ঈদুল আদ্বহা পালন করা উচিৎ।
অওূইর ফতোয়ায় কয়েকটি বিষয় আলোচিত হয় যে, কোন দেশের ঈদুল ফিতর পালন করা সৌদি আরবের ঈদুল ফিতর পালন তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু যে কোন দেশে ঈদুল আদ্বহা পালনের তারিখ নিজ দেশের তারিখ অনুসরনে নয় বরং সৌদি আরবে ঘোষিত ঈদুল আদ্বহার তারিখ অনুসারে পালন করা উচিৎ। এতে দেখা যাচ্ছে নর্থ আমেরিকাকে ঈদুল আদ্বহা পালন করতে হবে ৮ অথবা ৯ই জিলহজে।
সুতরাং, অওূইর এই ফতোয়া অবাস্তব ও যুক্তিহীন।
তাদের ফতওয়াতে মুসলমানদের খভর্ধহর উপর জোর দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে এভাবে ঈদুল আদ্বহা পালন করলে মুসলমানদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে সেটা সত্যি কিন্তু তার মানে এই নয় সমস্ত বিশ্বের মুসলমানদের একই সময়ে সকল ইবাদত করতে হবে। এটা বাস্তবে সম্ভবও নয়। কেননা যখন সৌদি আরবে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত হবে তখন নর্থ আমেরিকাতে তার পূর্বের দিনের ইশার ওয়াক্ত শেষ হয়নি। আবার যখন লস এঞ্জেলেসের মুসলমানরা ফজরের নামায পড়ছে তখন বাংলাদেশে হয়তো সেইদিনের মাগরিব অথবা ইশার নামায আদায় করছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন সময় অঞ্চলের জন্য বাস্তবে কোন নির্দিষ্ট ইবাদত পৃথিবীর সকল মানুষের পক্ষে একই সময়ে পালন করা সম্ভব নয়। আর বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের নিজ নিজ সময়ে ইবাদত পালন করলে এতে ভ্রাতৃত্ববোধের কোন সমস্যা থাকার কারণ নেই।
এটা সত্য যে, আরাফার পরের দিন ঈদুল আদ্বহা পালিত হয়। কিন্তু এটা জরুরী নয় যে, সব দেশের সকল মুসলমানদের সৌদি আরবের ঈদুল আদ্বহার সেই নির্দিষ্ট দিন অনুসরণ করতে হবে। যদিও হজ্জ পালন একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু ঈদুল আদ্বহা পালনতো আর নির্দিষ্ট জায়গার সাথে সম্পর্কিত নয়।
অওূইর ফতোয়াবাজদের আরেকটি ভুল হল তারা বলতে চায় পনের শত বছর পূর্বে আরবের ঈদুল আদ্বহা পালনের সাথে অন্যান্য দেশে ঈদুল আদ্বহা পালিত হতনা, কেননা সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবার কারণে সবাই হজ্জের তারিখ জানতে পারে। সুতরাং অওূইর যুক্তি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবার ফলে সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একই সময়ে ঈদুল আদ্বহা পালন করা নাকি সম্ভব।
যেহেতু মক্কা শরীফ আমাদের পশ্চিমে অবস্থিত সেহেতু সেখানে নামাযের সময় হয়ে থাকে আমাদের নামাযের ওয়াক্তের তিন ঘন্টা পরে। এ হিসাব অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্তের প্রতিটি নামায আমরা মক্কা শরীফের প্রায় তিন ঘন্টা পূর্বে আদায় করি। অওূইর যুক্তি অনুযায়ী বলতে হয় ঈদুল আদ্বহার নামাযের ওয়াক্ত যেহেতু আমাদের দেশে তিনঘন্টা পূর্বে হবে সেক্ষেত্রে মক্কা শরীফের পূর্বে আমাদের দেশে ঈদুল আদ্বহার নামায পড়া জায়িয নেই। প্রথমেই বলতে হয় নামাযের ওয়াক্তের জন্য শর্ত একটি তা সূর্য। কিন্তু ঈদের নামাযের জন্য শর্ত দু’টি। ১) চাঁদ দেখা। ২) সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী ওয়াক্ত হওয়া। নামাযের ওয়াক্ত যেহেতু সূর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সেহেতু আমাদের এখানে যখন নামাযের ওয়াক্ত হয় তার তিন ঘন্টা পর পর্যায়ক্রমিকভাবে মক্কা শরীফে নামাযের ওয়াক্ত হতে থাকে এবং সে ওয়াক্ত অনুযায়ী সেখানে নামায পড়া হয়ে থাকে। কোন সময় সৌদি আরবের পূর্বেই আমাদের দেশে চাঁদ দেখা গেলে আমাদের দেশে ঈদের জামাত সৌদি আরবের ঈদের জামাতের তিন ঘন্টা পূবেই পড়তে হবে। আর যদি সৌদি আরবের পরে ঈদের জামাত পড়তে হয় তখন ঈদের জামাত আদায় করতে হবে বেলা অনেক হলে যখন প্রায়শই ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে না। সুতরাং সৌদি আরবে আরাফার পরের দিন ঈদুল আদ্বহা পালিত হয় বলে সৌদি আরবে ঈদুল আদ্বহা নামাযের সাথে সাথে বা নামাযের পরে আমাদের দেশে ঈদুল আজহার নামায আদায় করতে হবে- এমন কোন ব্যাখ্যা শরীয়তে নেই। সব দেশ তাদের নিজ নিজ দিগন্তে চাঁদ দেখে ১০ই জিলহজ্জ তারিখে তাদের ওয়াক্ত অনুযায়ী ঈদুল আজহা পালন করবে এটাই বাস্তব। যে কোন প্রকার মনগড়া বক্তব্য ইসলামের জন্য দলীল হতে পারে না।
জুমাদাল উখরা মাসের চাঁদ দেখার রিপোর্টঃ
নিউমুন সংঘটিত হবে ১৫ই জুন, শুক্রবার/২০০৭, ৩টা ১৩ মিনিট আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী। ১৪ই জুন থেকে চাঁদ অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং ১৫ই জুন শুক্রবার মধ্য আমেরিকা, নর্থ আমেরিকা এবং ক্যারাবিয়ান আইল্যান্ডে চাঁদ দেখা যেতে পারে।
সৌদি আরবে চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হতে পারে ১৬ই জুন, শনিবার।
বাংলাদেশে ১৪২৮ হিজরীর জুমাদাল উখ্রা মাসের
চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাব্য তারিখ ও বারঃ
বাংলাদেশে ১৪২৮ হিজরীর জুমাদাল উখ্রা মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে ১৬ই জুন, শনিবার/২০০৭। ১৬ই জুন, শনিবার চাঁদ দেখা গেলে ১৭ই জুন, রবিবার হবে জুমাদাল উখরা মাসের ১ম তারিখ। ১৬ই জুন সন্ধ্যায় চাঁদের বয়স হবে ৩৩ ঘণ্টারও বেশী এবং সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখা থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রীর বেশী উপরে অবস্থান করবে। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে এবং আকাশ মেঘলা না থাকলে ১৬ই জুন সমগ্র দেশেই চাঁদ দেখা যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২