–আল্লামা মুহম্মদ আবুল বাশার
বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ চাঁদের নতুন তারিখ ঘোষণার ?ত্রে সৌদি আরবে ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহ এবং পদ্ধতির ত্রুটিগুলো।
চাঁদ দেখা এবং আরবী মাসের নতুন তারিখ ঘোষণার ?ত্রে বিভিন?দেশে বিভিন?মত ও পদ্ধতি চালু আছে। সব দেশের বিভিন?পদ্ধতি বর্ণনার পূবে?আমরা প্রথমে সৌদি আরবে ব্যবহৃত পদ্ধতি সমূহের উপর বিস্তারিত আলোচনা করবো কেননা পৃথিবীতে সৌদি আরব অল্পসংখ্যক কয়েকটি দেশের মধে?একটি যে কিনা হিজরী ক্যালেন্ডার তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে। এটি অবশ্যই একটি মহত উদ্যোগ। মুসলমানদের অবশ্যই সবকিছুতেই নিজস্বতা থাকা উচিত। গ্রোগারিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবতে?হিজরী ক্যালেন্ডার, Universal Time-এর পরিবতে Islamic Standard Time, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পরিবতে?হিজরী তারিখ রেখা ইত্যাদি। কিন্তু কথা হচ্ছে সৌদি আরবে চন্দ্রমাসের তারিখ গণনা নির্ভুল হওয়া বিভিন?কারণেই প্রয়োজন যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সৌদি আরব আরবী মাসের নতুন তারিখ ঘোষনা করতে গিয়ে এ যাবৎ কাল ধরে মনগড়া ভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছে।
এ যাবৎ সৌদি আরব চন্দ্রমাসের নতুন তারিখ ঘোষণার ?ত্রে তিন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
(১) পুরাতন পদ্ধতি (১৪১৯ হিজরী পর্যš?
(২) দ্বিতীয় পদ্ধতি (১৪২০-১৪২২ হিজরী পর্যš?
(৩) নতুন পদ্ধতি (১৪২৩ হিজরী থেকে…. পর্যš?
পুরাতন পদ্ধতিঃ আরবী মাস শুরুর ?ত্রে বাস্তবে চাক্ষুষ চাঁদ দেখার যে পদ্ধতি রয়েছে অনেকেই মনে করেন সৌদি আরব চাঁদ দেখার সেই প্রকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কিন্তু সচেতন মানুষ এবং জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের কাছে ধরা পড়েছে যে সৌদি আরবে বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ মাসই মনগড়া তারিখে শুর?হয়েছে অর্থাৎ চাঁদ না দেখেই আরবী মাস শুর?করেছে।
জর্দানিয়ান এস্ট্রোনোমিক্যাল সোসাইটি (JAS), সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধম?বিষয়ক কাউন্সিল “মজলিস আল ইফতা আল আলা?থেকে চাঁদ দেখা বিষয়ক একটি টেলিগ্রাম পায় যা প্রমাণ করে সৌদি আরব বাস্তবে চাঁদ না দেখে শুধু Astronomical Calculation ব্যবহার করে। তবে এই Calculation এর পুতরান পদ্ধতি যা উম্মুল কুরা তার ক্যালেন্ডার রচনায় ব্যবহার করতো তা হচ্ছে- অমাবস্যার পর যখন চাঁদের বয়স কোন দিনের সূর্যাস্তের সময় ১২ ঘণ্টা অথবা তার বেশি তখন পূর্বের দিনটি আরবী মাসের প্রথমদিন।
ব্যাখ্যাঃ উম্মুল কুরার নীতিতে দেখা যাচ্ছে নিউমুন সংঘটিত হবার পর কোন দিনের সন্ধ্যায় যদি চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টা অথবা তার বেশি হয় তবে পূর্বের দিন সন্ধ্যা থেকে তারা নতুন মাসের নতুন দিন শুর?করতো। কিন্তু কথা হচ্ছে যদি নিউমুন রাত ১১টায় সংঘটিত হয় তবে পরের দিন সন্ধ্যায় চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশী হবে। কিন্তু শরীয়তে দিন শুর?হয় সূর্যাস্তের পর থেকে তাহলে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যš?পালিত হবে পুরনো চাঁদের সময়কালে। কারণ পুরনো চাঁদ ক্ষয় হয়ে রাত ১১ টায় অমাবস্যায় পৌঁছেছে।
চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি হলেই নতুন চাঁদ আকাশে দেখা যায় না। আর প্রায়শই এসব ?ত্রে সূর্যাস্তের পূর্বেই চাঁদ অস্ত যেয়ে থাকে। সুতরাং চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা অবান্তর।
ধরে নেয়া গেল সবসময়ই ১২ ঘণ্টার বেশী বয়সের চাঁদ আকাশে দৃশ্যমান হয় তাহলেও সৌদি আরবের নতুন মাসের তারিখ শুর?করা উচিত ছিল সেদিনের সন্ধ্যা থেকে অর্থাৎ যে সন্ধ্যায় বয়স ১২ ঘণ্টার বেশী হয়েছে। পূর্বের দিনের সন্ধ্যা থেকে নয়। কেননা পূর্বের দিনের সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টায় চাঁদ অমাবস্যা যাওয়ার আগ পর্যš?ছিল পুরনো চাঁদের তারিখ।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, ২৯ শে ডিসেম্বর হচ্ছে ২৯ শে শা’বান। ২৯ শে ডিসেম্বর রিয়াদে রাত ১১ টায় (সন্ধ্যার পর থেকে ৩০ শে শা’বান শুর?হবার কথা) অমাবস্যা সংঘটিত হলো। তাহলে পরের দিন অর্থাৎ ৩০শে ডিসেম্বর সূর্যাস্তের সময় (ধরা যাক সূর্যা¯?৬টায়) চাঁদের বয়স হবে ১৯ ঘণ্টা যা ১২ ঘণ্টার বেশী, তাহলে ৩০ শে ডিসেম্বর দিনের বেলা হবে ১ম রমজানের দিবাভাগ অর্থাৎ ২৯শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই ১ম রমজান গণনা শুর?হয়ে যাবে। যদিও তা ৩০ শে শাবান। অমাবস্যা ২৯শে শাবানের সন্ধ্যায় (অর্থাৎ ২৯শে ডিসেম্বর) শুর?হয়নি শুর?হয়েছিল রাত ১১টায় ফলে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যš?ছিল শা’বানের চাঁদে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ সৌদি উম্মুল কুরা আরবী মাস শুর?করার ?ত্রে পরবর্তীতে কিছু পরিবর্তন আনে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, যদি মক্কায় কোন মাসের উনত্রিশতম দিনে চাঁদ সূর্যাস্তের পরে অস্ত যায় তবে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। এ পদ্ধতি প্রথম পদ্ধতি থেকে কিছুটা উন্নত হলেও এ নতুন পদ্ধতিতেও বাস্তবিকভাবে চাঁদ দেখাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে কিছু নির্দিষ্টমাস তারা মাস শুর?করে যখন চাঁদ অমাবস্যার যায়নি। সূর্যাস্তের পর চাঁদের অস্ত যাওয়াতে সবসময় বোঝা যায়না যে চাঁদ অমাবস্যায় পৌছেছিল। নতুন চন্দ্রমাস শুর?করার এ পদ্ধতিটিও উম্মুল কুরা বিবেচনা করেছিল এবং মসজিদুল হারামের সমন্বয়কারীরা স্বীকৃতি দিয়েছিল।
নতুন পদ্ধতিঃ ১৪২৩ হিজরীর পর থেকে সৌদি আরব নতুন চন্দ্রমাস শুর?করার পদ্ধতিকে আরো পরিবর্তন করে। নতুন পদ্ধতিতে বলা হয়- যদি কোন আরবী মাসের ২৯তম দিনে নীচের দুটি অবস্থা পরিপূণ?হয় তবে পরবতী?দিন হবে নতুন মাসের প্রথম তারিখ।
১। যদি Geocentric Conjunction ঘটে সূর্যাস্তের পূবে?( Geocentric-যখন পৃথিবীর কেন্দ?থেকে দেখা হয়। Topocentric- যখন দর্শক তার দেখার স্থান থেকে দেখে)
২। যদি চাঁদ, সূয?অস্ত যাওয়ার পরে অস্ত যায়। তবে এই নতুন পদ্ধতিতেও চাঁদ দেখাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এই নতুন পদ্ধতি ঘোষিত হবার পর সৌদি আরবের উম্মুল কুরার উর্ধ্বতন কতৃপ?র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উত্তরে উম্মুল কুরা বলে, এই ক্যালকুলেশন ব্যবহার করে ক্যালেন্ডার রচনা করার মূল কারণ হচ্ছে প্রশাসনিক কাজ কম?যেমন মন্ত্রণালয়, স্কুল, কলেজ, এয়ার লাইন্সের কাজকম?সম্পন?করা। হিলাল দেখার তারিখ বা ধর্মীয় কোন তারিখ নির্বাচন করা উদ্দেশ?নয়। বিষয়টি অবশ্যই হাস্যকর এবং উদ্দেশ?প্রণোদিত। নতুবা কি করে উম্মুল কুরা অনেক সময় প্রশাসনিক কাজের জন?সঠিক তারিখ ঘোষণা করলেও ধর্মীয় কাজের ?ত্রে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট তারিখ আগে-পিছে করে ফেলে সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটিতে রয়েছে (১) একজন কাজী (জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট থেকে) (২) একজন এস্ট্রোনোমার (৩) শহর প্রতিনিধি (৪) সেচ্ছাসেবক।
এভাবে মক্কা, রিয়াদ, কাসিম, হাইল, তাবুক এবং আসিরে মোট ছয়টি কমিটি রয়েছে।
অবাক বিষয় হচ্ছে, চাঁদ দেখার বিষয়ে তাদের মতামতকে তেমন প্রাধান?দেয়া হয়না। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট যে কোন সময় যে কোন মসুলমানের সাক্ষীর উপর-রায় প্রদান করে। ফলে দেখা গেছে এই ছয় কমিটির কোন সদস্যই যখন চাঁদ দেখেনা তখনও নতুন মাসের তারিখ ঘোষিত হয়।
তবে আশার বাণী হচ্ছে, সৌদি আলেমদের সবাই সৌদি আরবের এই নীতির প? নয়।
উনাইজাহর শেখ আল উসমান, মক্কার শেখ আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল মানিয়া এ সকল মনগড়া সিদ্ধান্তের বিপ? এবং তারা আশাবাদী বিষয়গুলো ঠিক হবে। সঙ্গে আমরাও আশাবাদী সৌদি আরবে সঠিকভাবে আরবী মাস ঘোষিত হবে, মানুষের আমলগুলো সঠিক হবে ঈমানের হিফাযত হবে এবং সর্বোপরি সৌদি আরবকে অনুসরণ করে বিশ্বের অন্যান?দেশেও আরবী মাসের সঠিক তারিখ ঘোষিত হবে। পালিত হবে।
রবিউস সানী মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ
নিউমুন সংঘটিত হবে ১৭ই এপ্রিল, মঙ্গলবার ১১:৩৬ ঘন্টায় (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)।
পৃথিবীতে প্রথম চাঁদ দেখা যেতে পারে আলাস্কা, নথ?আমেরিকা ও কানাডায়। এছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও চাঁদ দেখা যাবার তেমন কোন সম্ভবনা নেই।
সৌদি আরবে চাঁদ প্রথমে দেখা যেতে পারে ১৮ই এপ্রিল।
বাংলাদেশে রবিউস সানি মাসের চাঁদ প্রথম দেখা
যাবার সম্ভাব?তারিখ ও বারঃ
বাংলাদেশে রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে ১৮ই এপ্রিল বুধবার। সেদিন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ প্রায় ১৩ ডিগ্রী উচ্চতায় অবস্থান করবে এবং চাঁদের বয়স হবে প্রায় ২৫ ঘণ্টা। সুতরাং বাংলাদেশে রবিউস সানি মাসের প্রথম তারিখ হতে পারে ১৯শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২