চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ৫

সংখ্যা: ১৬৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

 

বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মত মাস আগ-পাছ করে মনগড়াভাবে নতুন চন্দ্রমাস গণনা করার নেপথ্যে সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এ কোন প্রকারের কুফরী?

 (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এ বছর অর্থাৎ ১৪২৭ হিজরী সনের যিলহজ্জ মাস নিয়েই প্রথমে আলোচনা করা যাক। সৌদি সরকার হঠাৎ করেই ঘোষণা দিল তারা ২০শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখতে পেয়েছে। অর্থাৎ ২১শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার থেকে ১ম যিলহজ্জ শুরু করে ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৬, শনিবার ঈদুল আদ্বহা পালন করবে। অথচ অবাক ব্যাপার হচ্ছে-

১. সৌদি আরবের উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে পূর্ব থেকেই ঘোষণা ছিল ১ম যিলহজ্জ শুরু হতে পারে শুক্রবার, ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে এবং ঈদুল আদ্বহা হবে ৩১শে ডিসেম্বর, রবিবার ২০০৬ ইংরেজীতে।

২. অমাবস্যা (New Moon) সংঘটিত হয়েছে ২০শে ডিসেম্বর, দুপুর ২টায় (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। সেদিন পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। সৌদি আরব কি করে ২০শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখতে পেলো? অনেকেরই ধারণা সৌদি আরব হয়তো চন্দ্রমাসের তারিখ গণনার ক্ষেত্রে কোন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করছে। যদি তাদের পদ্ধতিগুলোর ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া যায় তবে হয়তো সৌদি আরবের মুসলমানদের এবং সৌদি আরবকে যারা অন্ধের মত অনুসরণ করে তাদের আমলগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। যে জেগে থেকে ঘুমের ভান করে থাকে তাকে যেমন জাগানো যায়না তেমনি সৌদি আরবের শাসক এবং উলামায়ে ছূ’দেরও সংশোধন সম্ভব নয়। এই শ্রেনীদ্বয় সজ্ঞানেই সব করছে যার যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে যিলহজ্জের প্রথম তারিখ ডিসেম্বরের ২২ তারিখ শুক্রবার দেখানো হয়েছিল। তাহলে হঠাৎ করেই সৌদি জাষ্টিস ডিপার্টমেন্ট বৃহস্পতিবার থেকে কেন তারিখ গণনা শুরু করলো? সৌদি আরবের King Abdul Aziz City for science  and technology-এ Astronomy department-এর প্রধান জাকিউল মুস্তফা জানান ২০শে ডিসেম্বর বুধবার সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই চাঁদ অস্ত গেছে। সুতরাং সৌদি আরবের পক্ষে চাঁদ দেখা সম্ভব হয়নি এবং বৃহস্পতিবার ২১ শে ডিসেম্বর থেকে যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণা সঠিক নয়। এছাড়াও আমাদের হাতে প্রমাণ আছে ডঃ সালমান জাফর শাইখ একজন এস্ট্রোনমার ১৪২৭ হিজরী যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণার দিন সৌদি আরবের রিয়াদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি রিয়াদের চাঁদ দেখা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সৌদি আরবের মক্কা, রিয়াদ, কাসিম, হাইল, তাবুক এবং আসির এই ৬টি চাঁদ দেখা কমিটির রিপোর্টেই জানানো হয় ২০ শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখা যায়নি। অথচ কোন্ অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে দুঃখজনকভাবে সৌদি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মনগড়াভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই যিলহজ্জ মাসের প্রথম তারিখ গণনার ঘোষণা দেয়? এছাড়াও আমরা আরেকটি প্রমাণ উপস্থাপন করবো যাতে সহজেই বোঝা যাবে সৌদি আরব ইচ্ছাকৃতভাবেই এ যাবৎকাল ধরে চন্দ্রমাসের ভুল তারিখ ঘোষণা করছে। সৌদি আরবের উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে ১৪২৫ হিজরী পহেলা যিলহজ্জের তারিখ ছিল বুধবার ১২ই জানুয়ারী ২০০৫ এবং ঈদুল আদ্বহার তারিখ ছিল শুক্রবার ২১ শে জানুয়ারী ২০০৫। কিন্তু হঠাৎ করেই সৌদি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার ১১ই জানুয়ারী ২০০৫ সালে ১ম যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণা করে এবং ঈদুল আদ্বহার তারিখ হয় বৃহস্পতিবার ২০শে জানুয়ারী ২০০৫। সে বছর সোমবার ১০ই জানুয়ারী সন্ধ্যায় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন চাঁদ দেখা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই রাতে দু’জন সাক্ষী এসে উপস্থিত হয় এবং তারা দাবী করে যে, রাতে তারা চাঁদ দেখেছে। তাদের স্বাক্ষ্য অনুযায়ী জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার ১১ই জানুয়ারী ২০০৫ থেকে পহেলা যিলহজ্জ ঘোষণা  করে। সৌদি আরবের একজন লেখক হামজা-আল মুজানি সৌদি আরবের “আল ওয়াতান” পত্রিকায় “Testimonies of the Impossible” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে। এই লেখা প্রকাশের পর লেখক হামজা আল মুজানিকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে চার মাসের কারাদণ্ড এবং ২০০ বেত্রাঘাত শাস্তি প্রদান করা হয়। যদিও পরবর্তীতে সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ তাকে আর জেলে প্রেরণ করেনি। সৌদি আরবের “আল হায়াত” পত্রিকা থেকে সেই দু’জন সাক্ষীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালায় কিন্তু কোনভাবেই সাক্ষীদ্বয়কে দেখা করতে রাজী করানো যায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে King Abdul Aziz city for science & technology এর কয়েকজন এস্ট্রোনোমার সাক্ষীদ্বয়ের এলাকা আল রেয়ান গিয়ে তাদের সাথে দেখা করেন। তারা দেখতে পান একজন তথাকথিত সাক্ষীর বয়স ৮০ বৎসর। আসলেই কি তিনি সেদিন চাঁদ দেখেছিলেন নাকি অন্য কিছু? যদি আমরা ধরেও নেই সৌদি আরব New Moon এর দিন থেকে নতুন তারিখ ঘোষণা করে তাহেল প্রশ্ন আসে-

১. উম্মুল কুরা কি করে পূর্ব থেকেই সঠিক তারিখ ঘোষণা করেছিল পরবর্তীতে যা পরিবর্তন হয়ে যায়?

২. যদি New Moon দেখেই তারিখ শুরু করবে তবে রাতের বেলা চাঁদ দেখতে পবার মিথ্যা সাক্ষী যোগার করার কি প্রয়োজন?

৩. New Moon দেখে তারিখ ঘোষণা করা সহজ। তাহলে তাদের ৬টি চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করার কি প্রয়োজন এবং সেখানে কর্মরত চাঁদ দেখা বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকজনের মতামত উপেক্ষা করারই কি দরকার?

৪. King Abdul Aziz city for science & technology তে  Astronomy department আছে। তাদের সাথে আলোচনা না করে, চরম সত্য বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর স্বাক্ষ্যের কি প্রয়োজন? ৫. বিশ্বের সকল দেশ থেকে অনেক অর্থ ব্যয় করে অনেক পরিশ্রম করে আসা মুসলমানদের হজ্জ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়ার পেছনে তাদের কি সার্থকতা? ৬. ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারলে যার ফরয হজ্জ বাতিল হয়ে যায়, তাকে পরবর্তীতে তা পুনরায় আদায় করতে হয়। তাহলে হজ্জ করতে আসা সকল বিশ্বের মুসলমানদের আরাফার ময়দানে সঠিক সময়ে যেতে না দেয়ার পেছনে তাদের কি এমন উল্লাস? ৭. সৌদি আরবকে অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে কিছু ধর্মীয় জনগোষ্ঠী ভিন্ন দিনে ঈদ পালন করছে, রোযা শুরু করছে, নিজেদের দেশে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে। এতে সৌদি আরবের কি আনন্দ রয়েছে? ৮. সৌদি আরবের এহেন মিথ্যা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে সত্যবাদী লেখকদের বেত্রাঘাত করা হচ্ছে। এরা আসলে ইসলামের কোন  অনুশাসনের পায়রবী করছে? এ রকম হাজারো প্রশ্ন বিশ্বের বিবেকবান সকল মুসলমানদের মনে প্রতি মুহুর্তে জেগে উঠছে। প্রতিটির আলাদা উত্তর না দিলেও একটি উত্তর আমরা সহজেই দিতে পারি তা হলো এই শাসকগোষ্ঠী  হচ্ছে ইসলামের মুখোশধারী শয়তান তথা  বেদ্বীন গোমরাহ এবং ওহাবী সম্প্রদায়। এরা ইসলামকে জমীন থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। যদিও তা তারা পারবে না। বরং এরা ইহুদীদের চর এবং খ্রীস্টানদের দালাল। অচিরেই এই ওহাবী শাষকগোষ্ঠীর ধ্বংস অনিবার্য। আমরা জানি, হারাম থেকে শুধু হারামই সৃষ্টি হয়। সুতরাং এই ওহাবী সৌদি শাসকগোষ্ঠীর আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় যে সকল ব্যক্তি বা দল বিভিন্ন দেশে ইসলাম কায়েমের নামে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা মূলত কোন দিন ইসলাম কায়েম করতে পারবেনা। এ সকল উলামায়ে ছূ’দেরও ধ্বংস অনিবার্য। আমরা তাদের হিদায়েত চাই আর হিদায়েত না থাকলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেখার প্রতিক্ষায় রইলাম। চাঁদ দেখার রিপোর্টঃ নিউমুন (অমাবস্যা) সংঘটিত হবে ১৯শে মার্চ সোমবার, ২০০৭ ২:৪২ ঘণ্টায় (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। সেদিন অর্থাৎ ১৯শে মার্চ পৃথিবীর অস্ট্রেলিয়া, জাপান, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বেশীরভাগ অংশ, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় চাঁদ দেখা যাবে না। শুধু মধ্য আমেরিকা, নর্থ আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছূ অংশে ১৯শে মার্চ চাঁদ দেখা যেতে পারে। পৃথিবীতে প্রথম চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে নর্থ আমেরিকা এবং ইউরোপের মাঝামাঝি কোন স্থানে। সৌদি আরবে ১৪২৮ হিজরীর পবিত্র রবীউল আউয়াল মাসের চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হবে ২০শে মার্চ মঙ্গলবার ২০০৭ সালে, বাংলাদেশের পরে। বাংলাদেশে ১৪২৮ হিজরীর পবিত্র রবীউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাব্য তারিখ ও বারঃ বাংলাদেশে পবিত্র রবীউল আউয়াল মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে ২০শে মার্চ, মঙ্গলবার এবং সে অনুযায়ী পবিত্র রবীউল আউয়াল মাসের ১ম তারিখ হবে ২১শে মার্চ বুধবার। ২০শে মার্চ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ৯ মিনিটে। দিগন্তরেখা থেকে চাঁদ বেশ উপরে ১৬.৫৩ এলটিটিউডে অবস্থান করবে এবং তখন চাঁদের বয়স হবে ৩৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট (প্রায়)। বাংলাদেশে পবিত্র রবীউল আউয়াল মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে ২০শে মার্চ মঙ্গলবার।

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮

‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’- একটি সূক্ষ্ম ও গভীর ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া অথচ নিশ্চুপ তথাকথিত খতীব, মহিউদ্দীন, আমিনী ও শাইখুল হাদীছ গং তথা তাবত ধর্মব্যবসায়ীরা- (১)

মওদুদীর নীতি থেকেও যারা পথভ্রষ্ট সেই জামাত- জামাতীদের জন্যও ভয়ঙ্কর মুনাফিক॥ আর সাধারণের জন্য তো বলারই অপেক্ষা রাখেনা

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২