-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে বাঁকা চাঁদের প্রশস্থতা” একটি শর্ত। এ সখ্যায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা) আকাশে কখন বাঁকা চাঁদ প্রথম দেখা যাবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের চলছে নিরলস গবেষণা। এ যাবত আমরা অনেকগুলো শর্ত বা মাপকাঠি (ঈৎরঃবৎরড়হ) নিয়ে আলোচনা করেছি। কেউ মনে করেন সূর্যাস্তের সময় চাঁদ একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌছলেই তা দৃশ্যমান হবে, কেউ মনে করেন সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার উপর একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় থাকলে দেখা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, আবার কেউ মনে করেন অমাবস্যার পর চাঁদ সূর্য থেকে একটা নির্দিষ্ট কোণ সৃষ্টি করে সরে আসার পর আকাশে দেখা যাবে। এভাবে অনেক শর্ত রয়েছে যা পূরণ হলে অমাবস্যার পর চাঁদ আকাশে দেখা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বিশেষ কিছু শর্তের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে প্রায় সকল বিজ্ঞানী তাদের ফর্মুলাতে দু’টো করে শর্ত বা মাপকাঠি বর্ণনা করেছেন। যেমন কেউ বলেছেন চাঁদের উচ্চতা এবং চাঁদের প্রশস্থতা, কেউ বলেছেন চাঁদের উচ্চতা এবং কৌণিক দূরত্ব, কেউবা সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স এবং চন্দ্রাস্ত ও সুর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য ইত্যাদি। বিগত সংখ্যাগুলোতে আমরা প্রতিটি মাপকাঠির উপর আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। আজকের আলোচনা চাঁদের প্রশস্থতা (ঈৎবংপবহঃ রিফঃয) নিয়ে। ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞানী ব্রুয়িন বাঁকা চাঁদের প্রশস্থতা এবং চাঁদ ও সূর্যের উচ্চতা এ মানগুলো নিয়ে একটি তাত্ত্বিক মডেল বর্ণনা করেন। কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে তার এই বর্ণনা সমালোচিত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞানী খালিদ শওকত চাঁদের নীচের অংশের টপোসেন্ট্রিক (ঞড়ঢ়ড়পবহঃৎরপ) উচ্চতা এবং সূর্যাস্তের সময় বাঁকা চাঁদের প্রশস্থতা এ দুটো মান নিয়ে একটি ফর্মুলা বর্ণনা করেন। আবার ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ সালে বৃটেনের বিজ্ঞানী বার্ণার্ড ইয়ালপ ২৯৫টি চাঁদ দেখার রিপোর্টকে বিশ্লেষণ করে একটি ফর্মূলা বর্ণনা করেন। ইয়ালপ চাঁদের রিলেটিভ জিওসেন্ট্রিক উচ্চতা এবং বাঁকা চাঁদের প্রশস্থতাকে তার বর্ণনায় নিয়ে আসেন। বিজ্ঞানী ব্রুয়িন, খালিদ শওকত, এবং ইয়ালপ এর ফর্মুলাতে একটি বিষয়ের মিল রয়েছে যে, তারা সকলেই বাঁকা চাঁদের প্রশস্থতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনেন। অমাবস্যার পর যখন চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হয় তখন চাঁদের আলোকিত অংশের প্রশস্থতা সবসময় একরকম থাকে না। কখনও থাকে সরু কখনও পুরু। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নির্ণয় করার চেষ্টা করেন অমাবস্যার পর চাঁদ যখন দৃশ্যমান হবে তখন চাঁদের কতটুকু অংশ আলো প্রতিফলিত করবে এবং সেই বাঁকা চাঁদের আলোকিত অংশের প্রশস্থতা কেমন থাকবে। কেননা এই প্রশস্থতার উপরও চাঁদ দেখতে পাওয়াটা অনেক সময় নির্ভর করে। অনেক অমাবস্যায় যদিও চাঁদ পৃথিবী থেকে দেখা যায় না কিন্তু তা সম্পূর্ণ অন্ধকার হয় না। এর কারণ সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী সবসময় একই রেখা বরাবর অবস্থান করে না। অর্থাৎ সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর কক্ষপথ আর পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের কক্ষপথ সবসময় একই তলে অবস্থান করে না। যে অমাবস্যায় চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী এক রেখা বরাবর অবস্থান করে সে সময় চাঁদ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়, অন্যথায় নয়। অনেক সময় অমাবস্যায় চাঁদ সম্পূর্ণ অন্ধকার না হয়ে সূর্যের কৌণিক আলোয় ০.২ ভাগ আলোকিত হয়ে থাকে যদিও সে চাঁদ দৃশ্যমান নয়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই যে চাঁদ তার জন্মের সময় সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে না তাকে দেখার সম্ভাবনা, যে চাদ অমাবস্যায় সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে তার চেয়ে বেশী যদিও চাঁদের বয়স সমান থাকে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা চাঁদের প্রশস্থতাকে চাঁদ দেখার একটি শর্ত হিসেবে তাদের ফর্মুলায় স্থান দিয়েছেন। ১৪২৯ হিজরীর ছফর মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ নিউমুন সংঘটিত হবে ৭ই ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার, ৩টা ৪৪ মিনিটে। (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। মধ্য এবং উত্তর আমেরিকাতে চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে। সৌদি আরবে চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে ৮ই ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার, বাংলাদেশে চাঁদ দেখতে পাবার পর। বাংলাদেশ ও ১৪২৯ হিজরীর ছফর মাসের চাঁদের রিপোর্ট বাংলাদেশে সফর মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে ৮ই ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখা থেকে প্রায় ১৪.৬ ডিগ্রী উপরে অবস্থান করবে এবং সেদিন চাঁদের বয়স হবে ৩২ ঘণ্টা প্রায়। ৮ই ফেব্রুয়ারী চাঁদ দেখতে পেলে ৯ই ফেব্রুয়ারী, শনিবার হবে সফর মাসের পহেলা তারিখ।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২