চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৫

সংখ্যা: ১৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

(বর্তমান সংখ্যার আলোচনা: এ বছর অর্থাৎ ১৪২৮ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে সৌদি সরকার চাঁদ না দেখেই হজ্জ ও ঈদের তারিখ ঘোষণা দেয়ায় হজ্জ, কুরবানীসহ সকল ফরয ও ওয়াজিব আমল বাতিল হয়েছে) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ চাক্ষুস দেখেই মাস শুরু করতে আদেশ করেছেন। অনেকেই এই হাদীছ শরীফের সঠিক অর্থ না বুঝতে পেরে এবং কেউ কেউ ইহুদী-মুশরিকদের দ্বারা বিভ্রান্ত বা প্রভাবিত হয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা করে থাকে। চাঁদ দেখা নিয়ে সারা পৃথিবীতে কয়েকটি মত প্রচলিত আছে। একদল পৃথিবীর কোনস্থানে প্রথম চাঁদ দেখা গেলেই সারা পৃথিবীতে একদিনে ঈদ বা রোযা পালন করার পক্ষে। অর্থাৎ এ দলটি ওহাদাতাল মাতলা বা এক উদয়স্থল ধারণায় বিশ্বাসী। একদল সমস্ত পৃথিবীকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। একটি ভাগ নর্থ আমেরিকা, কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকা। আরেকটি ভাগ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু অংশ এবং অপর ভাগটি পূর্ব প্রান্ত। তাদের মতে এই তিনটি অঞ্চলেই আলাদা করে চাঁদ দেখতে পাওয়া শর্ত। একটি দল নিউমুন এর  আভিধানিক অর্থ নতুন চাঁদ মনে করে তারিখ ঘোষণা করে। শেষ দলটি ইখতিলাফূল মাতলা বা বিভিন্ন উদয়স্থলে বিশ্বাসী। ইখতিলাফুল মাতলা বা বিভিন্ন উদয়স্থল ধারণাটি সঠিক হলেও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কিন্তু বাকী তিনটি ধারণাই ভুল। চাঁদ পৃথিবীর কোথাও প্রথম দেখা গেলেই তা সারা পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য হবে এ  ধারণা সঠিক নয়। আর পৃথিবীকে তিনভাগ করে ট্রাই জোনাল ক্যালেন্ডার রচনার বিষয়টিও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস সমর্থিত মত নয় বরং মনগড়া পদ্ধতি। সৌদি আরব সরকার মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চাঁদ না দেখে নিউমুন বা অমাবস্যা অনুযায়ী তারিখ ঘোষণা করে যাচ্ছে। নিউমুন এর আভিধানিক অর্থ নতুন চাঁদ হলেও অমাবস্যায় আমরা  চাঁদ দেখিনা এবং দেখা সম্ভব নয়। অমাবস্যার পর পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখার মত অবস্থানে যেতে চাঁদের যেখানে সময় লাগে প্রায় একথেকে দেড়দিন সেখানে সৌদি আরব সরকার কি করে অমাবস্যার দিন চাঁদ দেখতে পাবার খবর প্রচার করে এবং নতুন মাসের তারিখ ঘোষণা করে তা সত্যিই ভাববার বিষয়। এবছর ১৪২৮ হিজরী অর্থাৎ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখতে পেয়েছে ১১ই ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। সৌদি আরবের চাঁদ দেখার কথা আমাদের প্রায় ৩ঘণ্টা পর। অথচ সৌদি সরকার চাঁদ না দেখেই ঘোষণা দিয়েছে তারা চাঁদ দেখতে পেয়েছে রবিবার, ৯ই ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী অকুফে আরাফা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮ই ডিসেম্বর এবং ঈদুল আদ্বহা পালিত হয়েছে ১৯শে ডিসেম্বর। প্রকৃতপক্ষে অকুফে আরাফা অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ছিল ২০শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার এবং ঈদুল আদ্বহা পালিত হওয়া উচিত ছিল ২১শে ডিসেম্বর শুক্রবার। অথচ আমরা দেখতেপাই- ১. নিউমুন অর্থাৎ অমাবস্যা সংঘটিত হয়েছে ৯ই ডিসেম্বর, রোববার, ১৭টা ৪০ মিনিট ২৫ সেকে-ে (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী) এবং সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী রাত ৮টা ৪১ মিনিটে। ২. সেদিন অর্থাৎ ৯ই ডিসেম্বর রবিবার সৌদি আরবের মক্কা শরীফে চাঁদ অস্ত যায় ৫টা ১৬মিনিটে এবং সূর্য অস্ত যায় চাঁদ অস্ত যাবার ২২ মিনিট পর। যে চাঁদ সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই অস্ত যায় সৌদি আরব কি করে সে চাঁদ দেখতে পেল? ৩. অমাবস্যর একদিন পূর্ব থেকেই যখন চাঁদ অদৃশ্য হয়ে যায় সেখানে অমাবস্যায় যাওয়ার ৩ ঘণ্টা পূর্বেই কি করে সৌদি সরকার চাঁদ দেখতে পেল? সৌদি সরকারের এই ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী বিশ্বের সকল হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত থেকেছেন ১৮ই ডিসেম্বর অর্থাৎ ৭ই যিলহজ্জ, মঙ্গলবার। ফলে বিশ্বের কোন হাজীর যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকার ফরয আদায় হয়নি। অতঃপর পর্যায়ক্রমে মুজদালিফায় উপস্থিত থাকার ওয়াজিব, মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ওয়াজিব, কুরবানী আদায়ের ওয়াজিব, চুলকাটার ওয়াজিব কোনটাই হয়নি। অতঃপর ইহরাম খুলে ফেলার কারণে ফরয তরক হয়েছে। এরপর যারা ৮ই বা ৯ই যিলহজ্জ তাওয়াফে জিয়ারত করেছে তাদের ৩য় ফরযটিও তরক হয়ে গেছে। অর্থাৎ হজ্জ সম্পূর্ণরূপে বাতিল ও ফাসিদ বলে গণ্য হয়েছে। ৮ই যিলহজ্জের সকালে ঈদুল আদ্বহার নামায পড়াতে তাও আদায় হয়নি। সুতরাং এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এসবের পিছনে সৌদি সরকারের উদ্দেশ্য কী? হজ্জ, কুরবানী, ঈদুল আদ্বহার নামায এই সকল ইবাদতগুলো বাতিল হবার পাশাপাশি মক্কা শরীফের পবিত্র স্থানসমূহ যেমন, আরাফা, মুজদালিফা, মিনা, মসজিদুল হারাম এবং অন্যান্য পবিত্র স্থানে স্থাপিত প্রায় নয় হাজার সিসিটিভি এবং মসজিদে নববী শরীফে স্থাপিত প্রায় এক হাজার সিসিটিভিতে ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে অসংখ্য কবীরা গুণাহর বোঝা নিয়ে হাজীরা দেশে ফিরছেন। মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মুসলামনদের ঈমানী দায়িত্ব এ বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে প্রতিবাদ করা। ১৪২৯ হিজরীর পবিত্র মুহররম মাসের চাঁদের রিপোর্ট নিউমুন সংঘটিত হবে ৮ই জানুয়ারী, মঙ্গলবার ২০০৮ সালে, ১১টা ৩৭ মিনিটে (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও অমাবস্যার দিন চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। জানুয়ারীর ৯ তারিখে রাশিয়া এবং উত্তর ইউরোপ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই চাঁদ দেখা যেতে পারে। সৌদি আরবে নিউমুনের দিন অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারী মঙ্গলবার চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। সৌদি আরবে চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে জানুয়ারীর ৯ তারিখ, বুধবার। বাংলাদেশে ও ১৪২৯ হিজরীর পবিত্র মুহররম মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ বাংলাদেশে পবিত্র মুহররম মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে ৯ই জানুয়ারী, বুধবার, ২০০৮ সালে। সেদিন ঢাকায় সুর্যাস্ত হবে ৫টা ২৮ মিনিটে এবং চাঁদ অস্ত যাবে ৬টা ১৫ মিনিটে। প্রায় ৪৭ মিনিট সময় চাঁদ সূর্যাস্তের পর আকাশে অবস্থান করতে পারে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদের উচ্চতা থাকবে ৮.৫১ ডিগ্রী প্রায় এবং চাঁদের বয়স হবে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। চাঁদ দেখতে পাবার অনুকুল পরিবেশ  থাকলেই কেবল সেদিন চাঁদ দেখা যেতে পারে। দেশের সকল অঞ্চলে চাঁদ দেখা নাও যেতে পারে। তাই চাঁদ দেখার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮

‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’- একটি সূক্ষ্ম ও গভীর ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া অথচ নিশ্চুপ তথাকথিত খতীব, মহিউদ্দীন, আমিনী ও শাইখুল হাদীছ গং তথা তাবত ধর্মব্যবসায়ীরা- (১)

মওদুদীর নীতি থেকেও যারা পথভ্রষ্ট সেই জামাত- জামাতীদের জন্যও ভয়ঙ্কর মুনাফিক॥ আর সাধারণের জন্য তো বলারই অপেক্ষা রাখেনা

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২