-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
(বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত- এ সংখ্যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা) আমরা যখন খোলা মাঠের দিকে তাকাই যেখানে আকাশটা যমিনের সাথে মিশে গেছে বলে মনে হয়, সে স্থানটিকে দিগন্তরেখা বা উদয় রেখা বলে। পৃথিবী পৃষ্ঠের একজন পর্যবেক্ষক যদি নিজের চোখ থেকে দিগন্তে একটি রেখা আর পশ্চিমাকাশে চাঁদে অপর একটি রেখা কল্পনা করে তবে দুই রেখার মিলিত বিন্দুতে যে কোণ তৈরী হবে সেটাই হবে চাঁদের উন্নতি কোণ। এস্ট্রনমীর ভাষায় একে বলা হয়- Angle of heiht of moon, above horizon বা altitude of moon. এই উন্নতি কোণ পরিমাপের মাধ্যমেই বুঝতে হয় চাঁদ দিগন্তরেখার উপর কত ডিগ্রী উচ্চতায় অবস্থান করবে। চাঁদ যখন দর্শকের মাথার উপর অবস্থান করে তখন চাঁদের উন্নতি কোণ ৯০ ডিগ্রী । যে চাঁদ সূর্যাস্তের সময় দৃশ্যমান হবে সাধারণতঃ সে চাঁদকে ১০ ডিগ্রী উচ্চতায় বা তার চেয়েও অধিক উচ্চতায় অবস্থান করতে হবে। হিলাল বা বাঁকা চাঁদ যদি আমরা সন্ধ্যায় বা সূর্যাস্তের পর দেখতে পাই প্রকৃতপক্ষে তা ঐ দিন সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর আকাশে উদয় হয় এবং সারাদিন সূর্যের সামান্য পূর্বদিকে থাকে কিন্তু তা দেখা যাওয়ার অবস্থায় থাকে না। চাঁদ সূর্যের কিছুটা পূর্বদিকে অবস্থান করার কারণে সূর্য যখন অস্ত যায় তখনও চাঁদের অস্ত যেতে কিছু সময় বাকি থাকে। ঐ সময়টা হচ্ছে প্রায় ৫০ মিনিট। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার উপর ১০ ডিগ্রীর উপর অবস্থান করলে ধীরে ধীরে চাঁদ নীচের দিকে নামতে থাকে এবং কেবলমাত্র ভূমি থেকে ৪-৫ ডিগ্রী উপরে থাকে তখন ২৯ দিনের চাঁদকে দেখা যায়। দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা চাঁদ দেখতে পাবার জন্য এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি সূর্যাস্তের সময় চাঁদ ১০ ডিগ্রীর উপর অবস্থান না করে বরং তার নীচে অবস্থান করে তবে চাঁদ দেখা যাবার সময় দিগন্ত রেখার মাত্র ২-৩ ডিগ্রী উপরে অবস্থান করবে। আর এই উচ্চতায় অধিকাংশ সময়ই অস্ত যাওয়া সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোতে দিগন্ত এত উজ্জল থাকে যে সে আলোতে চাঁদের আলো ম্লান থাকে এবং চাঁদ দেখা যায় না। সে কারণেই বিজ্ঞানীরা দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতাকে চাঁদ দেখতে পাবার অনেকগুলো শর্তসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। উন্নতি কোণের বা উচ্চতার পরিমাপঃ অস্তগামী সূর্যের প্রেক্ষিতে হিলালের অবস্থান নির্ণয়ে কোণের পরিমাপ করা খুব সহজ। অস্তগামী সুর্যের অবস্থান থেকে কত ডিগ্রী ডানে বা বায়ে বা কত ডিগ্রী উপর হিলাল অবস্থান করবে তা জানতে অর্থাৎ কোণ মাপতে হাতের অঙ্গুলি ব্যবহার করা যায়। অতি সহজ পথ হচ্ছে সম্মুখে প্রসারিত ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যবহার করা। বৃদ্ধাঙ্গুলকে অন্যান্য আঙ্গুল ও হাতের দৈর্ঘ্যরে সঙ্গে লম্বভাবে রাখতে হবে। অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুল বামদিকে প্রসারিত থাকবে। এমতাবস্থায় বৃদ্ধাঙ্গুল আমাদের চোখে ১.৫ ডিগ্রী কোণ তৈরী করে থাকে। দুটি আঙ্গুল তৈরী করে ৩ ডিগ্রী কোণ এবং চার আঙ্গুলে হয় ৬ ডিগ্রী কোণ। একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে তৈরী হয় ১০ ডিগ্রী কোণ এবং একটি হাতের প্রসারিত সবগুলো আঙ্গুল দিয়ে তৈরী হয় ২০ ডিগ্রী কোণ। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার উপরে ১০ ডিগ্রী বা তার ততোধিক উচ্চতায় অবস্থান করলে সে চাঁদ সহজেই দৃশ্যমান হয়।
১৪২৮ হিজরীর পবিত্র জিলক্বদ মাসের চাদের রিপোর্ট
নিউমুন সংঘটিত হবে ৯ই নভেম্বর শুক্রবার, ২৩টা ৪ মিনিটে (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। নিউমুনের দিন পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। নভেম্বরের ১০ তারিখ, শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে চাঁদ দেখতে পাবার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেদিন মধ্য ও উত্তর আমেরিকাতে চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। ১১ই নভেম্বর চাঁদ দৃশ্যমান হবে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এবং আমেরিকাতে। সৌদি আরবে জিলক্বদ মাসের চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে ১১ই নভেম্বর, রবিবার।
বাংলাদেশ ও জিলক্বদ মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ
বাংলাদেশে পবিত্র জিলক্বদ মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে ১১ই নভেম্বর, রবিবার। সেদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৫টা ৫৭ মিনিটে। অর্থাৎ মোট ৪৩ মিনিট সময় চাঁদ আকাশে অবস্থান করবে। ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ৩৬ ঘণ্টারও বেশী এবং দিগন্তরেখার উপর চাঁদ ৭.৪৩ ডিগ্রী অবস্থান করবে। আকাশ পরিষ্কার এবং চাঁদ দেখতে পাবার অন্যান্য শর্তসমূহ অনুকূলে থাকলে ৫টা ৩৩ মিনিটের কাছাকাছি সময়ে চাঁদ দেখা যেতে পারে। সূর্যাস্তের সময় দিগন্তরেখা থেকে চাঁদের উচ্চতা ১০ ডিগ্রীর কম হওয়াতে সূর্যের আলোর বিকিরণ চাঁদ দেখতে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২