-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
(বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখতে পাবার শর্তসমূহের উপর আলোচনা)
চাঁদ পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী এবং তা পৃথিবীর চারপার্শ্বে ঘুরছে বলে একে আমরা উপগ্রহ বলি। সূর্যের আলো চাঁদের উপর পড়লে চাঁদ আলোকিত হয়। চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। চাঁদের আলোকিত অংশ পৃথিবী থেকে কতটুকু দেখা যাবে সেটা নির্ভর করে পৃথিবীর চারপার্শ্বে চাঁদ তার কক্ষপথের কোথায় অবস্থান করছে। চাঁদ যেহেতু পৃথিবীর চতুর্দিকে একটি কক্ষপথে ঘুরছে তাই ধীরে ধীরে তার অবস্থানেও বিভিন্ন পরিবর্তন হচ্ছে এবং সে কারণে বিভিন্ন রকমের আলোকিত অংশ দেখা যায়। চাঁদ অতি দুর্বল প্রতিফলক। আপতিত আলোর শতকরা ৭ ভাগ প্রতিফলিত হয়ে থাকে। আমরা হিলাল দেখে থাকি এই ৭ ভাগ আলো দিয়ে। হিলাল অবস্থায় (যে বাঁকা চাঁদ আমরা ২৯তম দিনে বা ৩০তম দিনে দেখতে পাই) চাঁদের অর্ধেকাংশের ব্যাস ২ হাজার মাইলের কিছুবেশী আর চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে।
চাঁদ এক চন্দ্রমাসে পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরে আসে। চাঁদ যখন পৃথিবীর ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করে এ অবস্থায় চাঁদের অন্ধকার অংশ পৃথিবীর দিকে থাকে। ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদের কোন আলোকিত অংশ দেখতে না পারার কারণে আকাশে চাঁদ দেখা যাবে না। যদিও চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝামাঝি অবস্থান করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষুবরেখা থেকে চাঁদ ও সূর্যের কৌণিক দূরত্বের বিভিন্নতার কারণে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার পথে চাঁদ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। চাঁদ এই অবস্থায় থাকলে সেটাকে অমাবস্যা বলে এবং এই অবস্থায় চাঁদ সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত যাবে। তবে আমরা চাঁদের উপস্থিতি এবং অস্ত দেখতে পাবনা। চাঁদ যখন ধীরে ধীরে মাঝের অবস্থান থেকে সরে আসতে থাকবে তখন চাঁদের উপর পতিত আলোর কিছু অংশ পৃথিবী থেকে একটা ফালির মত দেখা যাবে। বেশীরভাগ আলোকিত অংশই সূর্যের দিকে থেকে যাবে। চাঁদের অবস্থান সূর্যের পূর্বে হওয়াতে সূর্য অস্ত যাবার কিছুক্ষণ পরেই চাঁদ অস্ত যাবে। একটি পর্যায়ে চাঁদ এমন একটি অবস্থানে আসবে যখন চাঁদের উপর পতিত আলোর ঠিক অর্ধাংশ পৃথিবী থেকে দেখা যাবে, তখন সূর্য অস্ত যাবার সময় চাঁদ মাথার উপরে থাকবে। আবার ধীরে ধীরে চাঁদ এমন অবস্থায় পৌঁছে যখন চাঁদ পৃথিবীর যে পার্শ্বে সূর্য রয়েছে তার বিপরীত পার্শ্বে অবস্থানের জন্য সূর্যের পতিত আলোর প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পৃথিবী থেকে দেখা যাবে। এই অবস্থায় পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব আকাশে পূর্ণ চন্দ্র উদয় হয়। যাকে আমরা জ্যোৎসনা বলি। এখানে উল্লেখ্য যে, বিষুবরেখা থেকে চাঁদ ও সূর্যের কৌণিক দূরত্বের বিভিন্নতার জন্য সূর্যের আলো চাঁদে পৌঁছার পথে পৃথিবী বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এভাবে পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের মাসিক প্রদক্ষিণকালে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত পুনরায় অমাবস্যার দিকে পৌঁছায়। এখান থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা হচ্ছে-
অমাবস্যা (Zero moon)- চাঁদ অদৃশ্যমান।
বাঁকা চাঁদ (New moon)- সূর্যাস্তের পর কিছু সময়ের জন্য দৃশ্যমান।
চাঁদের প্রথম পক্ষ (ঋরৎংঃ ছঁধৎঃবৎ)- দৃশ্যমান রাত্রির শুরু থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত।
জ্যোৎসনা (ঋঁষষ সড়ড়হ) সারারাত্রি দৃশ্যমান।
চাঁদের তৃতীয় পক্ষ (ঞযরৎফ ছঁধৎঃবৎ)- দৃশ্যমান মধ্যরাত্রির পর, সূর্যোদয় পর্যন্ত।
অমাবস্যা যাওয়ার পূর্বে ক্ষয়প্রাপ্ত চাঁদ (ডধহরহম সড়ড়হ)- দৃশ্যমান সূর্যোদয়ের পূর্বে কিছু সময়ের জন্য।
অমাবস্যা (ঘবি সড়ড়হ) চাঁদ অদৃশ্য।
এ যাবৎ মুসলিম গবেষকরা হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখার কিছু শর্তাদি আবিষ্কার করেছেন।
১) চাঁদের ব্যাস।
২) চন্দ্র, সূর্যের কৌণিক দূরত্ব।
৩) উন্নতি কোন।
৪) সূর্যাস্তের লাল আভা বিকিরণের বিস্তৃতি ও স্থায়ীত্ব।
৫) হিলালের তীর্যক পথ ও খাড়া পথে গমণ।
৬) হিলালের আলোকিত অংশ বা চাদের পুরুত্ব।
৭) পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব।
৮) সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব।
৯) যখন কৌণিক দূরত্ব উন্নতি কোণের অধিক।
১০) রাস্তাঘাট ও বাড়ীঘরের আলো।
১১) বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমান।
আমরা পরবর্তী সংখ্যা থেকে প্রতিটি বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ।
১৪২৮ হিজরীর পবিত্র শা’বান
মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ
নিউমুন সংঘটিত হবে ১২ই আগস্ট, রবিবার, ২৩:০২ (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। পৃথিবীতে চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে ১৩ই আগস্ট, সোমবার ল্যাটিন আমেরিকা ও নর্থ আমেরিকাতে। ১৪ই আগস্ট মঙ্গলবার পৃথিবীর বেশীর ভাগ অঞ্চল চাঁদ দেখতে পেলেও নর্থ এশিয়ার কিছু অংশে দেখা যাবার সম্ভাবনা কম।
সউদী আরবে চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হতে পারে ১৪ই আগস্ট, মঙ্গলবার।
বাংলাদেশে ১৪২৮ হিজরীর পবিত্র
শা’বান মাসের চাঁদ দেখার রিপোর্টঃ
বাংলাদেশে পবিত্র শা’বান মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে ১৪ই আগস্ট, মঙ্গলবার। সেদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে ৬টা ৩২ মিনিটে এবং চন্দ্র অস্ত যাবে ৭টা ২৭ মিনিটে। অর্থাৎ মোট ৫৪ মিনিট চাঁদ আকাশে অবস্থান করবে। সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখায় চাঁদের উচ্চতা থাকবে ৯.৯ ডিগ্রী এবং চাঁদের বয়স হবে ৩৭ ঘণ্টা প্রায়। আকাশ মেঘলা না থাকলে চাঁদ দেখতে পাবার সম্ভাবনাই বেশী।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২