আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
বর্তমান সংখ্যার আলোচনা: দিগন্তে হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়ার সময় “বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ” এবং “শহর ও রাস্তাঘাটের আলো” দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সংখ্যায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ:
অঞ্চলভেদে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ কম-বেশী হয়ে থাকে। মরু অঞ্চলসমূহে মরু ঝড় হলে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত শহর, নির্মানাধীন ঘর-বাড়ীর সংখ্যা যেখানে বেশী, রাস্তাঘাটে যানবাহনের দূষিত গ্যাসে যখন বাতাস ভারী থাকে তখন বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ বেশী হয়। আবার শীত প্রধান অঞ্চলে তুষারপাতের পর অথবা কোন অঞ্চলে বৃষ্টির পর আকাশ থাকে স্বচ্ছ নির্মল। বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা হিলালের আলো বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত করে থাকে। এই বিক্ষিপ্ত আলো আমাদের চোখে পৌঁছেনা। যে অঞ্চলে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ খুব বেশী সেখানে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হিলাল দেখার সম্ভাবনা কম হবে। দুষিত বাতাসের শহর হলো ঢাকা, মেক্সিকো সিটি, লস-এঞ্জেলেস ইত্যাদি।
ঘনবসতি পূর্ণ এলাকার চেয়ে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে আকাশ তুলনামূলকভাবে থাকে বেশী পরিস্কার। সমুদ্রের ওপারের দিগন্তরেখায় চাঁদ সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।
কল-কারখানা থেকে নির্গত গ্যাসসমূহে রাসায়নিক উপাদান থাকে যা বাতাসে ঘণীভূত থাকে। বাতাসে যদি ধুলিকনা, রাসায়নিক উপাদান বেশী থাকে তখন বাতাসের স্বচ্ছতা বাধাগ্রস্ত হয়। তখন এ সকল স্থানে সহজে চাঁদ দেখতে পাবার পরিবেশ বজায় থাকে না। দেখা গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ স্থানসমূহে যেমন পাহাড়ের উচ্চতায় বাতাসের স্বচ্ছতা বেশী থাকায় চাঁদ সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। তবে মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, যে চাঁদ দেখা যাবার আকৃতিতে আসে না তা পাহাড়ের চূড়ায় নয় এমনকি প্লেনে চড়েও দেখা সম্ভব নয়।
গ্রামাঞ্চলে গাছ-গাছালি, ঘাস থাকার কারণে ধূলির পরিমাণ কম হয়। নগর এবং শিল্প এলাকার চেয়ে গ্রামাঞ্চলে চাঁদ সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। বিষুবরেখার কাছাকাছি দেশসমূহের আকাশে গড় মেঘের পরিমাণ বেশী থাকে। শীত প্রধান দেশসমূহের আকাশ সাধারণত থাকে পরিষ্কার। মেঘের উপস্থিতি চাঁদ দেখাকে বাধাগ্রস্ত করে। যদি কোন স্থানের বাতাস দুষিত থাকে এবং বাতাসের আদ্রতা বেশী হয় তবে হিলালের ১ ভাগেরও কম আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।
শহর ও রাস্তাঘাটের আলোঃ
রাস্তাঘাটের আলো হিলাল দর্শনে কখনো কখনো বাধার সৃষ্টি করে থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ড আলো হিলালের উজ্জলতাকে হার মানায়। এস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরিগুলো এ কারণে শহর থেকে দূরে বসানো হয়।
রাস্তাঘাটের অতিরিক্ত আলো যে অস্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি করে তা চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে যথেষ্ট বাধার কারণ। দিগন্তরেখার খুব কাছে যে হিলাল দেখা যায় তার মোট আলোর মাত্র পাঁচ ভাগ বাতাস ভেদ করে আসে এবং বাকী ৯৫ ভাগ আলো বিভিন্ন দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অনেক সময় আকাশ পরিস্কার থাকলেও রাস্তাঘাটের উজ্জ্বল আলো চাঁদের ম্লান আলোকে বাধাগ্রস্ত করে। দিগন্তরেখার যেখানে চাঁদ দৃশ্যমান হয় সে অংশে ব্যাকগ্রাউন্ড আলো যদি তীব্র হয় এবং তার উজ্জ্বলতা যদি হিলালের আলোর চেয়ে উজ্জ্বল হয় তবে সে আলো চাঁদ দেখতে বাধা সৃষ্টি করবে।
চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে “বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ” এবং “শহর ও রাস্তাঘাটের আলো” এ ছাড়াও বাতাসের আদ্রতা, তাপমাত্রা, ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিজ্ঞানীরা তাদের চাঁদ দেখার শর্তসমূহের মধ্যে এ বিষয়গুলোকে স্থান দিয়েছেন।
১৪২৯ হিজরীর জুমাদাল উলা
মাসের চাঁদের রিপোর্ট:
নিউমুন সংঘটিত হবে সোমবার, ৫ই মে, ১২টা ১৮ মিনিটে (আর্ন্তজাতিক সময় অনুযায়ী)। সেদিন পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। সৌদি আরবে চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে মঙ্গলবার, ৬ই মে।
বাংলাদেশ ও ১৪২৯ হিজরীর জুমাদাল উলা
মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ
বাংলাদেশে জুমাদাল উলা মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে মঙ্গলবার, ৬ই মে। ৬ই মে চাঁদ দেখতে পেলে বুধবার, ৭ই মে হবে জুমাদাল উলা মাসের পহেলা তারিখ। ৬ই মে ঢাকায় সূর্যাস্ত ৬টা ২৯ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৭টা ৩৯ মিনিটে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার প্রায় ১৩ ডিগ্রী উপরে অবস্থান করতে পারে। তখন চাঁদের বয়স হবে প্রায় ২৪ ঘন্টার বেশী।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১