(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
তারতীবুল আমালী এবং আল ঈমা কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَهْلُ بَـيْتِيْ أَمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ كَمَا أَنَّ النُّجُوْمَ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ فَـوَيْلٌ لِّمَنْ خَذَلَهُمْ وَعَانَدَهُمْ
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী যেমন তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে দূরে সরে যাবে, মানহানী করবে এবং উনাদের বিরোধিতা করবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
النُّجُومُ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ وَأَهْلُ بَـيْتِيْ أَمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ فَإِذَا ذَهَبَ أَهْلُ بَـيْتِي ذَهَبَ أَهْلُ الْأَرْضِ
তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বিদায় নিবেন, তখন সমস্ত যমীনবাসী সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন তারকারাজিসহ আসমানবাসী-যমীনবাসী, সমস্ত কুল কায়িনাতের জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাতবাসী নিরাপত্তা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! উক্ত হাদীছ শরীফ হতে আরো বুঝা যায় যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সবসময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অবস্থান মুবারক করবেন। আর উনাদের সম্মানার্থেই ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাত টিকে থাকবে। অতঃপর যখনই উনারা দুনিয়ার যমীন থেকে বিদায় নিবেন, তখনই সমস্ত কায়িনাত ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাইহাক্বী শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اجْعَلُوْا أَهْلَ بَـيْتِيْ مِنْكُمْ مَكَانَ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ وَمَكَانَ الْعَيْـنَـيْنِ مِنَ الرَّأْسِ وَلَا يَـهْتَدِى الرَّأْسِ إِلَّا بِالْعَيْـنَـيْنِ
শরীর থেকে মাথার স্থান ও মাথা থেকে দুই চোখের স্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন তোমরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করো। যেমন দুই চোখ ব্যতীত মাথা সঠিক পথে চলতে পারে না। সুবহানাল্লাহ!
এভাবে আরো অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ক্বওল শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
إِنَّا أَهْلُ الْبَـيْتِ لَا يُـقَاسُ بِنَا أَحَدٌ مَنْ قَاسَ بِنَا أَحَدًا فَـقَدْ كَفَرَ
নিশ্চয়ই আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না। যে ব্যক্তি আমাদের সাথে অন্য কাউকে তুলনা করবে, সে কুফরী করবে।
অর্থাৎ উনারা হচ্ছেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ, উনাদের সাথে কারো তুলনা করা যায় না। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার একমাত্র উসীলা বা মাধ্যম। উনারা ব্যতীত খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে শরহে আক্বাইদে ত্বহাবীতে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
نَحْنُ أٰلُ بَـيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (نَحْنُ أَهْلَ بَـيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَنَحْنُ الْوَسِيْـلَةُ إِلَى اللهِ وَلَا وَسِيْـلَةَ إِلَى اللهِ إِلَّا عَنْ غَيْرِ طَرِيْقِنَا أَوْ مِنْ سِوَانًا
আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার একমাত্র উসীলা মুবারক। আমাদের পথ বা আমরা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পাওয়ার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ।
মূলকথা হলো, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত না করা পর্যন্ত কেউ হাক্বীক্বী মু’মিন হতে পারবে না। উনাদের মুহাব্বতই ঈমান। উনাদের মুহাব্বত ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। আর মুহাব্বত তখনই অন্তর জাগ্রত হবে যখন সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা হবে, আলোচনা করা হবে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উনাদের অসামান্য অবদান, অকল্পনীয় ত্যাগ তিতিক্ষার কথা স্মরণ হবে। ফিকির করলে দেখা যায়, কারো আলোচনা করতে করতে কিংবা শুনতে শুনতেও অন্তর মুহাব্বত চলে আসে। আবার দেখা যায়, যে যাকে মুহাব্বত করে তার আলোচনাই সে বেশি করে। যত বেশি উনাদের আলোচনা করা হবে তত বেশি মুহাব্বত অন্তর পয়দা হবে। তাই হাক্বীক্বী মু’মিন হতে হলে আমাদেরকে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করে, উনাদের সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। উনাদের আদর্শ মুবারক নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনো কামিয়াবী থাকবে না। অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, মুসলমানদের গাফিলতির কারণে, দ্বীন থেকে সরে যাওয়ার কারণে, দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহামূল্যবান ইতিহাস মুবারক গায়েব হয়ে গিয়েছে। কাফির মুশরিকরা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবন ইতিহাস গায়েব করে ফেলেছে কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের বিরোধীতা করা। কেননা মুসলমানগণ যদি উনাদের জীবন ইতিহাস জানে তাহলে উনাদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি পাবে। কোনোভাবেই যাতে মুসলমানদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি না পায় কাফির-মুশরিক, ইহুদীরা সুদূর অতীতকাল হতে সেই চেষ্টাই চালিয়ে এসেছে, এখনও তাদের এসব ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তাদের ষড়যন্ত্র ও অনুসরণ থেকে মুসলিম উম্মাহকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কথা অনুযায়ী চলতে হবে। (অসমাপ্ত)