মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের
ফযীলত মুবারক
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
তাখরীজু আহাদীছিল কাশশাফ ও নুজহাতুল মাজালিস কতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَّاتَ عَلٰى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيدًا. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُوْرًا لَهُ. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ تَائِبًا. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُسْتَكْمِلَ الْإِيْمَانِ. أَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلٰى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشَّرَهُ مَلَكُ الْمَوْتِ بِالْجَنَّةِ ثُمَّ مُنْكَرٌ وَّنَكِيْرٌ. أَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلٰى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ إِلَى الْجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوسُ إِلٰى بَيْتِ زَوْجِهَا. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلٰى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ اللهُ لَهٗ فِي قَبْرِهٖ بَابَيْنِ إِلَى الْجَنَّةِ. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللَّهُ قَبْرَهُ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْمَةِ. أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلٰى السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ. أَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلٰى بُغْضِ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ أَيِسَ مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ. أَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلٰى بُغْضِ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ كَافِرًا. أَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلٰى بُغْضِ اٰلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَمْ يَشُمَّ رَائِحَةُ الْجَنَّةِ
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদ হিসাবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশতের সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে নববধূকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে সম্মানিত জান্নাতের দিকে দু’টি দরজা খুলে দেয়া হবে। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্কাঈদের উপর ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! আর যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাউযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাউযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রণ পর্যন্ত পাবে না। নাউযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন,
প্রথমত, তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। তৃতীয়ত, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। চতুর্থত, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। পঞ্চমত, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশতের সুসংবাদ মুবারক দিবেন। ষষ্ঠত, উনাকে নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে। সপ্তমত, উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিক থেকে দু’টি দরজা খুলে দেয়া হবে। অষ্টমত, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। নবমত, তিনি সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বাইদের উপরই ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করলে বর্ণিত নিয়ামতসমূহ লাভ করা যায়; কেউ যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত না করে, উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম না দেয়, তাহলে সে কি ইন্তেকালের সময় উনাদের মুহাব্বত অন্তরে রাখতে পারবে? কখনোই নয়। হ্যাঁ, যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করে, উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম দেয়, তাহলে তার জন্য উভয়কালেই কামিয়াবী থাকবে। সে ইন্তেকালের সময়ও উনাদের মুহাব্বত অন্তরে রাখতে পারবে। ইনশাআল্লাহ।
আর যারা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান মর্যাদা-সম্মান মুবারক রক্ষা করবে না, উনাদেরকে মুহাব্বত করবে না বরং উনাদের প্রতি অসম্মান বা বেয়াদবীমূলক আচরণ করবে, উনাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে; তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত হবে, ঈমানহারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং পরকালে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ!
ফাযায়িলু ছাহাবা লিআহমদ ইবনে হাম্বল নামক কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبِي سَعِيدِهِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبْغَضَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَهُوَ مُنَافِقٌ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করে, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা মুনাফিক।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
لَوْ أَنَّ رَجُلًا صَعِدَ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ فَصَلَّى وَصَامَ ثُمَّ مَاتَ وَهُوَ مُبْغِضُ لِأَهْلِ بَيْتِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ النَّارَ
যদি কোনো ব্যক্তি সম্মানিত রুকনে ইয়ামিন ও পবিত্র মাক্কামে ইবরাহীমে আরোহণ করে অতঃপর সে নামায পড়ে এবং রোযা রাখে কিন্তু সে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, চু-চেরা কীল-কাল করে তবে সে নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নাঊযুবিল্লাহ!
এখন চিন্তা ও ফিকিরের বিষয় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার পরিণাম কতো ভয়াবহ!
অতএব, সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ঈমান আনা, উনাদেরকে মুহাব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারকের আনজাম দেয়া।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদর্শ মুতাবিক জীবন গড়ে হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। (আমীন)