মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ أَكْبَرُ
অর্থ: খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক সবচেয়ে বড়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ত্বওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৭২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاللهُ وَرَسُوْلُهٗ أَحَقُّ أَنْ يُّرْضُوْهُ إِنْ كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক লাভের) অধিক হক্বদার বা উপযুক্ত, যদি তারা মুমিন হয়ে থাকে, তাহলে যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তষ্ট করে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ত্বওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)
অর্থাৎ প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা বা খুশি করা। কেননা উনারাই এ বিষয়ে অধিক হক্বদার। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকই বড়। আর এই সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও সন্তুষ্ট করতে হবে। তাই এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি মুমিনদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করার সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও সন্তুষ্ট করার আদেশ মুবারক করে উনার দিকে রুজু করে দিয়েছেন।
এ জন্য মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন ,
إِنَّۤا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا
অর্থ: (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে উপস্থিত বা সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দানকারী এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। যাতে তোমরা (বান্দারা) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনো এবং উনাকে সম্মান করো এবং উনার গোলামীর আনজাম দাও এবং উনার ছানা ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়েমীভাবে। (সম্মানিত ও পবিত্র সুরা ফাতহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
এখানে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা সাক্ষ্যদাতা। যারা খুশি প্রকাশের লক্ষ্যে উনার দিকে রুজু হয় তাদের জন্য তিনি সুসংবাদ প্রদান করেন আর যারা রুজু হয় না তাদের ভয় প্রদর্শন বা সতর্ক করেন। তারা (বান্দারা) যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করার সাথে সাথে উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও বিশ্বাস করে এবং সম্মান করে, উনার গোলামীতে আনজাম দেয় এবং সকাল সন্ধ্যা উনার মুবারক ছানা-ছিফতে মশগুল থাকে। যারা এরুপ আমল করবে তাদের পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে।
বান্দাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা হাযির-নাযির। তিনি প্রত্যেকের আমল দেখেন, কে আমল করে আর কে করে না। এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَقُلِ اعْمَلُوْا فَسَيَـرَى اللهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُهٗ وَالْمُؤْمِنُـوْنَ وَسَتُـرَدُّوْنَ إِلٰى عَالِـمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَـيُـنَبِّئُكُمْ بِـمَا كُنْـتُمْ تَـعْمَلُوْنَ
অর্থ: (মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি তাদেরকে বলুন, তোমরা আমল করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি, উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং মনোনীত খাছ বান্দাহগণ তোমাদের আমলসমূহ দেখেন। আলিমুল গইব ওয়াশ শাহাদাহ মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অতিশীঘ্রই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। অতপর, তোমরা যে আমল করো, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে সংবাদ জানানো হবে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ত্বওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّـمَا أَنْظُرُ إِلٰى كَفِّيْ هٰذِهٖ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাহিদুন নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরিশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ দুনিয়াকে আমার সামনে এরূপভাবে তুলে ধরেছেন যে, এ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি হবে সবকিছু আমি এরূপভাবে দেখি যেভাবে আমার হাতের তালু মুবারককে দেখে থাকি। সুবহানাল্লাহ। (ত্ববারানী ও মিশকাত শরীফ )
অপর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে ,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ اِسْتَوُوْ اِسْتَوُوْا فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ اِنِّىْ لَاَرَاكُمْ مِّنْ خَلْفِىْ كَمَا اَرَاكُمْ مِّنْ بَيْنِ يَدَىَّ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো। ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার কসম ! যার কুদরতি হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক। নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনে তোমাদেরকে দেখি যেরূপ আমার সামনে দেখি। (আবূ দাঊদ শরীফ)
তাই, বান্দাদের উচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাযির নাযির জেনে, উনাকে পাওয়ার কারণে আমল করার মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করা। বান্দাদের পক্ষে আমল করা তখনই সম্ভব হবে যখন তারা পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হবে। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَّلَا تَـتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তার ধোকায় পড়ে তার অনুসরণ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া থেকে বিরত থেকো না। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ামত স্বরূপ পবিত্র দ্বীন ইসলাম নিয়ে আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক এনেছেন।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَلْيَـوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْـنَكُمْ وَأَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْـنًا
অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত মুবারক পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য সম্মানিত ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট হলাম। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেই মনোনীত করেছেন এবং পবিত্র দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি রুজু না হওয়া পর্যন্ত কখনোই এই দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হওয়া যাবে না। দ্বীন ইসলামে দাখিল হওয়া মানেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হওয়া। কেননা তিনিই দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর উনার দিকে রুজু হওয়া মানেই উনাকে পেয়ে খুশি মুবারক প্রকাশ করা। (অসমাপ্ত)