-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
“মুহ্ইস্ সুন্নাহ” লক্বব মুবারক প্রসঙ্গেঃ
মুহইস সুন্নাহ’ অর্থ সুন্নত জিন্দাকারী। সুন্নতের পূর্ণপ্রচলনকারী। বিদয়াত চালু হলে সুন্নত বিলুপ্ত হয়। সুন্নত জারী হলে বিদয়াত থাকতে পারে না।
উলামায়ে “ছূ” অর্থাৎ দুনিয়াদার মাওলানা এবং মুর্খ আবিদ বা দরবেশদের মনগড়া আমল এবং দুনিয়া হাছিলের কর্মতৎপরতার কারণে বিদয়াত জারী হয়।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু’শ্রেণীর লোককে উম্মতের জন্য হুমকীস্বরূপ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
هلك امتى عالم فاجر وعابد جاهل.
অর্থঃ “দু’শ্রেণীর লোক আমার উম্মতের হালাকী বা ধ্বংসের কারণ। এক শ্রেণী হচ্ছে ফাসিক- ফুজ্জার আলিম তথা উলামায়ে “ছূ” আর দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে মুর্খ আবিদ।”
যারা ইল্ম হাছিলের গুরুত্ব দেয় না সাধারণ মানুষ তাদেরকে ইমাম বা অনুসরণীয় মনে করে তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে থাকে। ফলে সমাজ থেকে সুন্নত বিদায় হয়ে যায়। তাদের কারণে মানুষ সুন্নতকে বিদয়াত আর বিদয়াতকে সুন্নত মনে করতে থাকে।
ফকীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, এমন একটা সময় আসবে যখন সুন্নতকে বিদয়াত এবং বিদয়াতকে সুন্নত বলা হবে। নেক কাজকে গুণাহের কাজ এবং গুণাহের কাজকে নেক কাজ আখ্যা দেয়া হবে। আর এটা তখনই হবে যখন আলিম-উলামারা; রাজা-বাদশা, আমীর-উমারাগণের দ্বারস্থ হবে। তাদের দয়া-দক্ষিণার অন্বেষণ করবে। সে সময় সামাজিক অবস্থা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা ফিকিরযোগ্য।”
আজকের প্রেক্ষাপটে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি। ফকীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফের বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে।
উল্লেখ্য যে, “মুহ্ইস সুন্নাহ” ব্যক্তিত্বের উপর সবসময় আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রহমত, ইহ্সান বর্ষিত হয়। কাজেই তাঁর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ এবং রোবের কারণে বিদয়াতীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। তারা শত্রুতায় লিপ্ত হয়ে ব্যর্থ হয়। ফলত: বিদয়াতের ঘোর অন্ধকার দূর হয়। সুন্নতের আলো প্রজ্জলিত হয়। তাঁর ছোহবত ইখতিয়ারকারীগণ বিদয়াতী আমল ছেড়ে দেয়। সহসাই সুন্নত তথা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত (অনুসরণ-অনুকরণ) করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সুন্নত আমলের মধ্যে তারা ইতমিনান লাভ করেন। মূলতঃ ইহা “মুহ্ইস সুন্নাহ” ব্যক্তিত্বের পরিচয় বটে। আর ইহা “মুহ্ইস সুন্নাহ” লক্বব মুবারকের একটি খুছুছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য।
কাজেই তার বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তিত্বকে উক্ত লক্বব বা খিতাবে সম্বোধন করা জায়িয নেই। বরং সম্বোধন করলে বা আখ্যা দিলে তা হবে মিথ্যা ও ধোকার শামিল। আল্লাহ পাক-এর বাণী, “মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী, “যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমার উম্মত নয়।” তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ যে বা যারা “মুহ্ইস সুন্নাহ” নয় সে বা তারা যদি তার পরিচয় দিতে কিংবা পরিচয় পেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন অথবা সে নামে পরিচিত হওয়ার জন্য সম্বোধনকারীকে নিষেধ না করেন তাহলে সে ব্যক্তি ধোকাবাজ ও মিথ্যাবাদীর অন্তর্ভূক্ত।
স্মর্তব্য যে, “মুহ্ইস সুন্নাহ” ব্যক্তিত্বের সাথে অনুক্ষণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গভীর তায়াল্লুক বা সম্পর্ক থাকবে। তিনি সবসময় তাঁর যিয়ারত পাবেন। এমনকি জাগ্রতাবস্থায়ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিয়ারত হবে। আর তাঁর নিকট থেকেই “মুহ্ইস সুন্নাহ” লক্ববে সম্বোধিত হবেন। মূলতঃ এরূপ ব্যক্তিই হবেন প্রকৃতপক্ষে মুহ্ইস সুন্নাহ। যেমনটি আমাদের আলোচিত ব্যক্তিত্ব- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।
“মুহ্ইস সুন্নাহ”-এর ছোহবত ইখ্তিয়ারকারীর অন্তরে অবশ্যই সুন্নতের মুহব্বত এবং তা পালনের আগ্রহ পয়দা হবে। সুন্নত আমলের জন্য তিনি ফানা হবেন। যার বাস্তব মিছাল হচ্ছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। তাঁর ছোহবত ইখ্তিয়ার করলে সুন্নতের হাক্বীক্বী মুহব্বত পয়দা হয়। আমলের জজবা পয়দা হয়। বিদয়াতীরা বিদ্য়াত ছেড়ে দেয়। উপরন্তু বিদয়াতের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা পয়দা হয়।