-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুহ্ইস সুন্নাহ লক্বব মুবারক প্রসঙ্গঃ “মুহ্ইস সুন্নাহ” শব্দটি যৌগিক শব্দ। محى (মুহ্য়ী) শব্দটি اسم فا عل যা باب افعال (বাবে ইফয়াল) থেকে এসেছে। অর্থঃ জীবন দানকারী, জিন্দাকারী, পূনর্জাগরণকারী ইত্যাদি। السنة (আস্ সুন্নাহ) অর্থঃ সুন্নত, চলার পথ, রীতি-নীতি, তর্জ-তরীক্বা।
محى السنة (মুহ্ইস সুন্নাহ) অর্থঃ সুন্নত জিন্দাকারী। যিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের পরিপূর্ণ ইতায়াত করেন এবং সুন্নত জারী করেন তাকে মুহ্ইস সুন্নাহ বলে।
উল্লেখ্য যে, সুন্নতকে জিন্দাকরা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিন্দা করার নামান্তর। আল্লাহ পাক- এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
من احيا سنتى فقد احيا نى ومن احيا نى فقد معى فى الجنة.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জিন্দা করলো সে যেন আমাকেই জিন্দা করলো। আর যে আমাকে জিন্দা করলো সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।”
খলীফাতুল্লাহ খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একটি বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছে “মুহ্ইস সুন্নাহ।” হাল যামানায় তিনি হচ্ছেন সুন্নত জিন্দাকারী একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের ইতায়াত (অনুসরণ-অনুকরণ) করেন। তিনি মাল-জান সব কিছু বিসর্জন দিয়ে সুন্নত জারী করেন। এক একটা সুন্নাত জারীর পিছনে তিনি যে সময়, শ্রম এবং অর্থ ব্যয় করেছেন তা শুনলে রীতিমত অবাক হতে হয়। আমরা যথাস্থানে তা বিশদ ব্যাখ্যা করবো ইনশাআল্লাহ। সবার কাছে যেটা অসম্ভব তাঁর নিকট সেটা অতি সহজ ও সম্ভব। কোন কোন সুন্নত জারীর ক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রীতিমত সাধনা করেছিলেন। তিনি যে শুধুমাত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বর্ণনা মত সুন্নত জিন্দা করেছেন তা নয় বরং কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফের বর্ণনার সাথে সাথে চাক্ষুস দর্শন সুন্নত জারীর মূল ভিত্তি। তিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে স্বপ্নে, মুরাকাবায়, মুশাহাদায় ইত্যাদি ভাবে প্রতিটি বিষয় সরাসরি জেনে নেন। ইহা ব্যতীত অন্যান্য মাধ্যমেও পেয়ে থাকেন।
একবার একজন লোক কিছু কাঠের খরম বিক্রির উদ্দেশ্যে দরবার শরীফে আসলো। সুন্নত মনে করে অনেকে খরম কিনলেন। এ খবর এক পর্যায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর পবিত্র কান মুবারকে পৌঁছলো। তিনি সবাইকে খানকা শরীফে আসার আদেশ দিলেন। আমরা সবাই খানকা শরীফে হাজির হলাম। তিনি আমাদেরকে অনেক নছীহত করলেন। সাথে সাথে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা কোথায় পেয়েছ যে, খরম পরা সুন্নত? তোমাদেরকে দলীল দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, জনৈক মাওলানা ছাহেব বলেছিলেন, আমি মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বাথরুমে খরম দেখেছিলাম। তাই ধারণা করেছিলাম খরম পরা সুন্নত হবে। যিনি মুহইস্ সুন্নাহ, যাকে আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব বিষয়ই সরাসরি অবহিত করেন তাঁর সামনে দলীল পেশ করার সাহস কে রাখে?
আমরা সবাই নিশ্চুপ থেকে তাঁর মূল্যবান নছীহত শুনছিলাম। আমাদের এই নিশ্চুপ অবস্থা দেখে তিনি বললেন, খরম পরা সুন্নত নয়। তাতে বেশ ইখতিলাফ রয়েছে। দেখ, আমরা দুনিয়ার কোন মানুষ থেকে সুন্নত শিখিনি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমরা সুন্নত শিখে থাকি। মানুষ শুনলে তো বলবে “নিজের বুযুর্গী যাহির করে।” দীর্ঘদিন অনেক কষ্ট করে অর্থ ও সময় ব্যয় করে সিলেট থেকে একটা বেতের লাঠি সংগ্রহ করলাম। যে দিন সংগ্রহ করলাম সেই রাতেই জানানো হলো যে, “বেতের লাঠি সুন্নত নয়।” সেই লাঠিটি একটা দিনও ব্যবহার করা হয়নি। এরূপ অনেক বিষয় আছে যেটা মানুষ বুঝবে না। বরং ভুল বুঝবে।
ক্রস ফিতা বিশিষ্ট চামড়ার সেন্ডেল খাছ সুন্নত। যেটা স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছেন, “এরূপ সেন্ডেল পায়ে দেয়া সুন্নত।” এরূপ অনেক সুন্নত আছে যেগুলোর বর্ণনা কোন কিতাবাদিতে পাওয়া যাবে না। যা সরাসরি জানানো হয়েছে। (অসমাপ্ত)