-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ লক্বব সম্পর্কে বিভ্রান্তি এবং তার জাওয়াব
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী নিজের নাম মুবারকের সাথে নিজেই “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন” লক্বব সংযুক্ত করেছেন- এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, অজ্ঞতাসূচক এবং কল্পনাপ্রসূত। তিনি কোন লক্ববের মুহতাজ (মুখাপেখী) নন। তিনি শুধু আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহতাজ।
লক্বব বিরোধী, ওলী আল্লাহ বিদ্বেষী লোকগুলো গন্ডমূর্খও বটে। তারা জানে না যে, যারা গইরুল্লাহ’র মুহতাজ, যারা দুনিয়াতে সম্মান-ইজ্জত তালাশের উদ্দেশ্যে ইল্ম্ শিক্ষা করে এবং আমল করে তারা ওলীআল্লাহ নয়; তারা ওলীউশ শয়তান বা শয়তানের বন্ধু। এরূপ ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। সেক্ষেত্রে আল্লাহ পাক-এর মা’রিফাত-মুহব্বতের মত অতি মূল্যবান নিয়ামত, কিভাবে হাছিল করতে পারবে।
“ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন” দাবী করার মত বিষয় নয়। যদি তাই হতো তাহলে লক্বব বিরোধীরা তাদের নামের সাথে এমন অনেক লক্বব ব্যবহার করে যে গুণাবলী তাদের মধ্যে নেই।
মূলতঃ যিনি “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন” নন তিনি যদি ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন পরিচয় দেন তাহলে তার উপর লা’নত বর্ষিত হবে। আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله على اكذبين
অর্থঃ “মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (আলে ইমরান-৬১)
ইহা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ দান। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা দান করেন।
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন।” হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সবাই ছিলেন ছিদ্দীক্ব। তাঁকে স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যবান মুবারকে এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে ছিদ্দীক্ব লক্বব দান করেছেন। যদি কেউ বলে যে, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেকে ছিদ্দীক্ব বলে দাবি করেছেন, তবে তা হবে মিথ্যা তোহমত এবং কাট্টা কুফরীর শামিল।
উল্লেখ্য, যিনি “ছিদ্দীক্ব” শ্রেণীর ওলীআল্লাহ হবেন তাঁর কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, আহার-বিহার ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে তা স্পষ্ট ফুটে উঠবে। নির্বোধ ও লা’নতগ্রস্থ লোকজন ব্যতীত সবার কাছে তা দিবালোকের ন্যায় পরিস্ফুটিত হবে।
যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হচ্ছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।
সুলতানুল আরিফীন, কাবিরুল আওলিয়া হযরত ইব্রাহীম খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একবার বাগদাদ শরীফে ছুফিয়ানে কিরামের একটি জামায়াতের সাথে আমি উপস্থিত ছিলাম। একদিন সেখানে একজন সুদর্শন যুবক আগমন করলো। তাকে দেখে আমার সঙ্গী-সাথীদেরকে বললাম, আমার মনে হচ্ছে এই যুবক একজন ইহুদী। আমার এই কথা শুনে সঙ্গী-সাথীগণ বিরক্তিবোধ করলেন। এক কান দু’কান করে সেই যুবকের কাছে কথাটা পৌঁছলো। যুবক তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলো, ঐ ব্যক্তি আমার সম্পর্কে কি বলে?
প্রথমে তারা কেউই মুখ খুললো না। পরে যুবকের বার বার অনুরোধের কারণে তারা বললেন যে, “শায়খ বলছেন, সম্ভবত তুমি একজন ইহুদী।” এই কথা শুনামাত্র যুবক সুলতানুল আরিফীন হযরত ইব্রাহীম খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গিয়ে ক্বদম মুবারকে পড়ে গেল। বললো, আমাকে কালিমা শরীফ পাঠ করান এবং আপনার মুরীদ হিসেবে কবুল করুন।
সুলতানুল আরিফীন হযরত ইব্রাহীম খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে কালিমা শরীফ পড়িয়ে নিজের মুরীদের অন্তর্ভূক্ত করলেন।
পরে লোকেরা তাকে ঘটনার রহস্য জিজ্ঞাসা করলেন। সে বললো, “আমাদের ধর্মগ্রন্থে লিখিত আছে, ছিদ্দীক্ব ও সত্যবাদী ব্যক্তিদের ধারণা কখনো ভুল হয় না। আমি মনে করেছিলাম, মুসলমানদের এই জামায়াতের মধ্যে যদি কোন সত্যবাদী ও ছিদ্দীক্ব শ্রেণীর ওলীআল্লাহ থাকেন তবে নিশ্চয়ই তিনি আমার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পোষণ করতে পারবেন। আর সত্যি তাই হলো, আমার উপর শায়খ-এর নজর পড়ামাত্র তিনি আমার সঠিক পরিচয় বলে দিলেন। (রওদুর রিয়াহীন-১৪৬) (চলবে)