-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
“ইমামুছ ছিদ্দীকীন” লক্বব মুবারক প্রসঙ্গে
امام (ইমাম) শব্দটি এক বচন। তার বহু বচন হচ্ছে ائمة – (আইম্মাহ্্) অর্থ খলীফা, ইমাম প্রধান, ‘নেতা’ ইত্যাদি। তবে হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণের শানে নেতা শব্দটি সম্পৃক্ত করা জায়িয নেই। কারণ বাংলা ভাষায় ‘নেতা’ শব্দটি ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিক, হিন্দু-বৌদ্ধ সবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ‘নেতা’ হিন্দু, ফাসিক-ফুজ্জার হতে পারে, কাফির, মুনাফিকও হতে পারে। আর ইমাম কিংবা খলীফা, ঈমানদার ব্যতীত অন্য কেহ হতে পারে না। অনেকে খোদ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘নেতা’ বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তাঁর শানে ‘নেতা’ শব্দটি সম্পৃক্ত করে থাকে। ‘তোমর নেতা আমার নেতা, বিশ্ব নবী মোস্তাফা’ শ্লোগান দিয়ে আত্ম তৃপ্তির ঢেকুর দেয়। অথচ তাদের এ স্বাচ্ছন্দরোধ ও শ্লোগান যে তাদেরকে কুফরীতে পৌঁছে দেয় তা একবারও ফিকির করার ফুরসত পায়না। মূলতঃ গোমরা বা পথভ্রষ্ট লোকদের ছোহবতের বদ তাছিরই তাদেরকে অনুভূতিহীন করে দিয়েছে।صدیقین (ছিদ্দীকীন) শব্দটি মূলতঃ ছিল صدیقون (ছিদ্দীকুন)। হালতে যাররীর কারণে صدیقین হয়েছে। শব্দটি বহু বচন। তার একবচন হচ্ছে صدیق (ছিদ্দীক) অর্থঃ সদা সত্যভাষী, সত্যনিষ্ঠ, চরম সত্যবাদী, চরম ন্যায় পরায়ন। ইমামুছ্্ ছিদ্দীকীন অর্থ চরম সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিগণের ইমাম বা প্রধান।
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ্, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাকিমুল হাদীছ, সুলতানুল আ’রিফীন, গাউছুল আ’যম, হাবীবে আ’যম, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দাজিল্লুহুল আলী হচ্ছেন- ইমামুছ্্ ছিদ্দীকীন। পৃথিবীতে যত ছিদ্দীক রয়েছেন তিনি তাঁদের ইমাম বা প্রধান।
আমরা আগেই বলেছি এবং বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাও পেশ করেছি যে, আওলিয়ায়ে কিরামগণের নাম মুবারকের পূর্বে ব্যবহৃত লক্বব মুবারকগুলো নিছব ব অর্থহীন কোন বিষয় নয়। বরং তা উম্মাহর জন্য হেদায়েতের কারণ স্বরূপ। আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের উছিলা।
উল্লেখ্য যে, দুনিয়াতে ছিদ্দীকগণের অবস্থান সব সময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে। মূলতঃ আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে খাছ নিয়ামত দিয়েছেন ছিদ্দীকগণ হচ্ছেন তাঁদের অন্যতম। আল্লাহ পাক বলেন-
انعم الله علیهم من النبین والصدیقین والشهداء والصلحین.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক নবী, ছিদ্দীক, শহীদ এবং ছলেহীনগণকে বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন। (সূরা নিসা-৬৯)
অর্থাৎ নবী হচ্ছেন এক তবকা বা স্তর। আর ছিদ্দীক, শহীদ ও ছলিহীন হচ্ছেন হযরত আওলিয়ায়ে কিরাগণের তবকা। নিয়ামত প্রাপ্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরেই ছিদ্দীকগণের মাকাম। অতঃপর শহীদ তারপর ছলেহীনগণ। ছিদ্দীক এবং শহীদগণ মুমিন-মুত্তাকীগণের বিশেষ একটা শ্রেণী যা উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ দ্বারা ছাবিত (প্রমানিত) হয়েছে।
والذین امنوا بالله ورسله اولئک هم الصدیقون والشهداء عند ربهم لهم اجرهم ونورهم.
অর্থঃ- “আর যারা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান এনেছেন তাঁরাই তাঁদের রবের নিকট ছিদ্দীক এবং শহীদ হিসেবে পরিগণিত। তাঁদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার এবং নূর।” (সূরা হাদীদ-১৯) (চলবে)