-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
“ছহিবু কুন ফাইয়াকুন” লক্বব প্রাপ্ত ওলী আল্লাহ কি নিজে আল্লাহ হওয়ার দাবী করেন?
“ওলী আল্লাহ” অর্থ আল্লাহ পাক-এর পরম বন্ধু। আল্লাহ পাক-এর বন্ধু কখনো আল্লাহ হওয়ার দাবী করতে পারেন? কস্মিনকালেও না।
মূলতঃ আল্লাহ হওয়ার দাবী তারাই করতে পারে যারা আল্লাহ পাক-এর শত্রু। ফিরআউন নমরুদের উত্তসূরী, কাফির। আর তাদের সমমনারা সেই দাবীর সত্যায়ন করে। লক্বব বিরোধী, ওলীআল্লাহ বিদ্বেষীরা তাদের সহায়তাকারী বৈকি। তারা নিজেদের বদ খাছলতকে ঢাকার জন্য ওলীআল্লাহদের শানে এরূপ মিথ্যা তোহমত লেপন করে মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালায়। মূলতঃ ওলীআল্লাহগণের মুখালিফ বা বিরোধীরাই এমন কথা বলে ও বিশ্বাস করে। ওলীআল্লাহ বিরোধীরা মুসরমানদের বিভ্রান্তকারী। তারা মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার বংশধর। ওলী আল্লাহগণের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট। আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তুষ্ট।
আল্লাহ পাক
رضی الله عنهم ورضوا عنه ذلک لمن خشی ربه
অর্থ: “তারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। আর আল্লাহ পাকও তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট। আর এই নিয়ামত তাঁর জন্য, যে তাঁর রবকে ভয় করে।” (সূরা বাইয়্যিনাত-৮) সেই সন্তুষ্টির বহিঃ প্রকাশ হচ্ছে লক্বব। আল্লাহ পাক-এর গুণে গুনাম্বিত হওয়াই হাক্বীক্বী বান্দার আলামত। কামিল ঈমানদার প্রকৃত মুসলমানের পরিচয়। কাজেই যারা বলে এবং বিশ্বাস করে যে, “ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন” লক্বব ধারী নিজে আল্লাহ হওয়ার দাবীকারী, তারা প্রকারান্তরে আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশের বিরোধিতাকারী। কারণ আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই স্বীয় গুণে গুণাম্বিত হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন,
صبغة الله ومن احسن من الله صبغة
অর্থ: “তোমরা আল্লাহ পাক-এর রঙে রঞ্জিত হও। আল্লাহ পাক-এর চেয়ে উত্তম রঞ্জনকারী আর কে আছেন? (সূরা বাকারা-১৩৮)
এ আয়অত শরীফের ব্যাখ্যায় আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تخلقوا باخلاق الله
অর্থ: “তোমরা আল্লাহ পাক-এর চরিত্রে চরিত্রবান হও।”
ওলীআল্লাহ বিরোধী, লক্বব বিদ্বেষী, যারা ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্্ইস্্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর “ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন” লক্বব বরদাশত করতে পারে না। তাদের হিদায়েতের জন্য এই হাদীছে কুদসীখানাই যথেষ্ঠ। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেন, “আমার বান্দা নফল (সুন্নতে যায়িদা) ইবাদতের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভের কোশেশ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে মুহব্বত করতে থাকি। আমি যখন তাকে মুহব্বত করি, তখন আমি তার কান হই, সেই কানে সে শুনে। আমি তার চোখ হই, সেই চোখে সে দেখে। আমি তার হাত হই, সেই হাতে সে ধরে। আমি তার পা হই, সেই পায়ে সে চলে। তখন সে আমার কাছে যা চায় আমি তাকে তা অবশ্যই দিয়ে থাকি।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ ওলীআল্লাহগণের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণাম্বিত। তাঁরা যা চান আল্লাহ পাক সেটাই দেন। তাঁরা যেটা হতে বলেন, সেটাই হয়। আর তখনই উক্ত ব্যক্তিত্বকে “ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন” বলা হয়।
দ্বিতীয়ত: বলতে হয়- যারা বলে “ছহিবে কুন ফাইয়াকুন” দ্বারা আল্লাহ হওয়ার দাবীকারী বুঝায়।” তারা খ্রিস্টানদের চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ হযরত ঈসা আলাইহিস্্ সালাম আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণাম্বিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তোমাদের (হেদায়েতের জন্য) মাটির দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করি। অতঃপর তাতে ফু’ দিই। আর সাতে সাথে তা আল্লাহ পা-এর হুকুমে পাখি হয়। আমি জন্মান্ধ এবং শ্বেত-কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করি। আল্লাহ পাক-এর হুকুমে মৃতকে জীবিত করি। আমি তোমাদেরকে অবহিত করি, তোমরা যা খেয়ে আস এবং যা ঘরে রেখে আস সে সম্পর্কে।” (সূরা আলে আমরান-৪৯)
এত সব গুণাবলী দেখে খ্রীস্টানরা তাঁকে আল্লাহ পাক-এর পূত্র বলতো। আর লক্বব বিরোধীদের বক্তব্য দ্বারা স্বয়ং তিনিই আল্লাহ সাব্যস্ত হন। (নাউজুবিল্লাহ)