-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
“ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন”- লক্বব মুবারক প্রসঙ্গে
আল্লাহ পাক, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে قوة الكن তথা কুন শক্তি দান করেছেন। তিনি যা চান, যেভাবে চান, যেটা হতে বলেন সেটাই হয়, সেভাবেই হয়। বিষয়টি তাঁর ছোহবত ইখতিয়ারকারী মাত্রই অবগত। মূলতঃ ইহা ছিদ্দীক স্তরের ওলী আল্লাহগণের শান।
উল্লেখ্য যে, আওলিয়ায়ে কিরামগণ যা বলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়টি তাঁদের কারামতের অন্তর্ভূক্ত।
বাদশাহ জাহাঙ্গীরের উজিরে আ’যম ছিল আসফ খাঁ। সে ছিল শিয়া। সে সব সময় বাদশাহকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতো।
অপর দিকে বাদশাহের দরবারে একজন মুফতী ছিলেন। তাঁর নাম ছিল আব্দুর রহমান। তিনি ছিলেন ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ। তিনি বাদশাহকে সব সময় হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পরামর্শ দিতেন। একবার উজিরে আ’যম আসফ খাঁর নেতৃত্বে শিয়ারা ইউরোপ থেকে চৌদ্দ জন পাদ্রীকে নিয়ে আসলো। বাদশা যাতে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হয়। পাদ্রীরা এসে বাদশাহের দরবারে বীজ লাগালো, তাতে সাথে সাথে গাছ হয়ে ফল হলো। আগুন ব্যতীত ভাত পাকালো। বাদশাহ সেটা বুঝতে না পেরে তাদের অনুরক্ত হয়ে গেল। খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করবে বলে একপ্রকার সিদ্ধান্ত নিলো। মুফতী আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বিষয়টি আফযালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে অবহিত করলেন। ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাদেরকে থাকতে বল, আমি আসতেছি। তিনি বাদশাহের দরবারে এসে পাদ্রীদেরকে বললেন, “তোমরা তোমাদের কথিত কারামত দেখাও দেখি। তারা তাদের কথিত কোন কারামত দেখাতো পারলো না। ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। আর কাকুতি-মিনতি করে বার বার ক্ষমা চাইতে লাগলো। তখন তিনি তাদেরকে দু’ভাগ হতে বললেন। তারা দু’ভাগ হলো। তিনি তাদের একভাগকে বললেন, موتوا باذن الله (তোমরা আল্লাহ পাক-এর আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারা মারা গেল। অপর ভাগকে বললেন, দেখতো তারা জীবিত না মৃত। তারা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললো, “তারা মৃত”। তিনি বললেন, “তোমরা তাদেরকে জীবিত কর।” তারা জীবিত করতে পারলো না। তখন ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাদের (মৃতদের) প্রতি লক্ষ্য করে বললেন,
قم باذن الله (তোমরা আল্লাহ পাক-এর আদেশে জীবিত হও)। সাথে সাথে তারা জীবিত হলো। এবার অপর ভাগের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, موتوا باذن الله সাথে সাথে তারাও মারা গেল। জীবিতদেরকে বললেন, তাদেরকে জীবিত কর। তারা তাদের জীবিত করতে পারলো না। তখন তিনি তাদেরকেও জীবিত করলেন। ইহা দেখে বাদশাহ জাহাঙ্গীরসহ সবাই তাওবা এবং বাইয়াত গ্রহণ করলো। ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “সে দিন আমার কাইয়ূমিয়াতের জজবা এমনভাবে গালিব হয়েছিল যে, আমি যদি আসমানকে যমিন এবং যমিনকে আসমান হতে বলতাম তাহলে তাই হতো।” (সুবহানাল্লাহ)
গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি দীর্ঘ বার বছর পূর্বে বরযাত্রীসহ যে ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার করেছিলেন তা কিংবদন্তির মত সবার মুখে মুখে। তিনিও ছিলেন قوة اكن তথা কুন শক্তির অধিকারী। ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন মাকাম প্রাপ্ত ওলী আল্লাহ। একদিন একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে। তিনি মৃত্যুকে জীবিত করতে পারতেন। গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হে ব্যক্তি আমাদের যিনি রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো মৃত্যুকে জীবিত করতে পারতেনই। এমনকি তার উম্মতও তা পারেন। হযরত ঈসা আলাইহি সালাম তো قم باذن الله বলে জীবিত করতেন। আর আমি قم باذنى বললেও জীবিত হয়। যদি প্রমাণ দেখতে চাও তাহলে বল। তখন উক্ত খ্রিস্টান ব্যক্তি একটি কবরের প্রতি নির্দেশ করে বললো “এ কবরে শায়িত ব্যক্তিকে জীবিত করুন।” তখন গাউসূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই কবরের দিকে লক্ষ্য করে বললেন قم باذنى (আমার আদেশে জীবিত হও)। আর সাথে সাথে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। (সুবহানাল্লাহ) (ফতুহুল গাইব, রওজাতুল কাইয়ুমিয়াহ) (চলবে)