– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
‘ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘কারামত’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে মাহাত্ম্য, অসাধারণ শক্তি। কিন্তু তাছাউফের পরিভাষায় রূহানীশক্তি, যা রূহানী জজবায় বা মুহব্বতে মশগুল বীর সালিকের পুরস্কার। যাকে মা’রিফাতের পরিভাষায় قوة الكن (কুওওয়াতুল কুন) বলা হয়। অর্থাৎ কুন শক্তির অধিকার পাওয়া। মূলতঃ এ কুন শক্তি আল্লাহ পাক-এর নিজস্ব ব্যাপার। যদ্বারা তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগত ও তাঁর মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন।
আসলে এটা ইচ্ছা ও আদেশের বহিঃপ্রকাশ। সালিক বা মুরীদ যখন ফানাফিল্লাহর মাক্বামে রূহানী জজবার জগতে মজজুবী স্বভাব হতে শান্ত হয়ে বাকা বিল্লাহ-এর মাকামে স্থানান্তরিত হয় তখন তাকে বিলায়েত (আধ্যাত্মিক রাজত্বের শাসনভার) দান করা হয়। আর রাজত্ব পরিচালনার জন্য তাকে দেয়া হয় কুওওয়াতুল কুন শক্তি। ‘কুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে হও। এ শক্তি দ্বারা কোন বিষয়, বস্তু ও প্রাণীকে আদেশ করা মাত্র তা কার্যকর হয়।
এ বিষয়টাকে বুঝার জন্য কুতুবুল মাশায়িখ, হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সর্বজন বিদিত একটা কারামত উল্লেখ করা যায়। তিনি আনা সাগরের সম্পূর্ণ পানি একটা ছোট পাত্রের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন।
প্রসঙ্গতঃ বলতে হয়, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী যামানার ইমাম এবং মুজাদ্দিদ। তিনি বেমেছাল কুওওয়াতুল কুন শক্তির অধিকারী। তিনি যা আদেশ দিবেন তাই হবে। এটাই স্বাভাবিক। তিনি যাকে যে বিষয়ে যা আদেশ দিবেন কায়েনাতের সবাইকে তা যথাযথভাবে পালন করা আবশ্যক ।
তাঁর মধ্যে শৈশব কাল থেকে এইগুণের বিকাশ ঘটেছিল। তিনি যখন যা বলতেন তাই হতো। তখন অনেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে ভাবতেন। সম্মান-ইজ্জত করতেন। মুহব্বতে, আবেগে আপ্লুত হতেন। সঙ্গী-সাথীরা অনেক সময় হতভম্ব হয়ে যেতেন। কারণ তিনি যার পক্ষে কথা বলতেন তিনি কামিয়াব হতেন। যার-বিপক্ষে বলতেন তার পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়তো। এরূপ হাজার-হাজার ঘটনা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে যার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। তবে এক/দুটির উল্লেখ না করাটাও আমানতের খিয়ানতে পর্যবসিত হবে। বিধায় এক/দুটি পাঠক খিদমতে পেশ করবো (ইনশাআল্লাহ্)।
ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামাত, কুতুবুজ্জামান, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন খাদিম ছিলেন। তার সাথে একদিন আলোচনা হলো। তিনি বললেন, শৈশব কাল থেকে আমরা তাঁর মধ্যে এই সব গুণাবলী দেখে আসছি। তাঁদের কয়েকটা বাস ছিল। যা গুলিস্থান-মীরপুর রোডে চলতো। একদিন রাস্তায় বাসে সমস্যা দেখা দিল। আমি মেরামত করতে লাগলাম। প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত বেড়ে যাওয়ার কারণে দোকান-পাটও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে বাসায় ফিরতে না দেখে হাজী ছাহেব (তাঁর সম্মানিত পিতা) তাঁকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি এসে আমাকে মেরামত করতে দেখে বললেন, “কি আগামী কাল সকাল থেকে চালানো যাবে না?” আমি একটু গোস্বার স্বরে বললাম, যাবে। আপনারা মালিকের ছেলে, যা বলবেন সেটা কি আর না হয়। আমি জানতাম দু’ তিন দিনের আগে এটা চলানোর উপযুক্ত হবে না। তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আগামী কাল সকাল থেকে যথারীতি এটা চালানো যাবে। একথা শুনে আমার গোস্বা আরো বেড়ে গেল। কারণ আমি সব সময় বাসের সাথে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছি। অথচ তাঁর সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই। বললাম, হ্যাঁ, আপনারা তো আসমান-জমিন এক করে দিতে পারেন। তিনি কিন্তু কোন রাগ করলেন না। বরং মধুমাখা স্বরে বললেন, “আপনি কাজ করতে থাকুন। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।” আর সত্যি এক নিমিষের মধ্যে সেটা ভাল হয়ে গেল (সুবহানাল্লাহ)। এতো অল্প সময়ে বাসটি ভাল হওয়ার কারণে আমি তাঁর চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফিকির করতে লাগলাম, কি ব্যাপার! কি ঘটলো!! ইত্যবসরে তিনি আবারো আমাকে সম্বোধন করে বললেন, “কি ভাবছেন? চলুন। বাড়ী চলুন। রাত অনেক হয়েছে।”
তিনি একদিন এক সূফীকে বললেন, তোমাদের রিয়াজত-মুশাক্কাত, যিকির-ফিরিরের সময় তো এখনই। এই বয়সে যদি তা করতে না পার তাহলে আর কখন করবে? এক/দুই ঘণ্টা ঘুমালেই তো যথেষ্ট। সেই সূফী ছাহেব বললেন- সেই দিন হতে আমার এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি ঘুম হতো না। (চলবে)