-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণ আল্লাহ পাক-এর কুদরত জাহিরের স্থল। কখনো কখনো সাধারণ মানুষের মাঝেও আল্লাহ পাক-এর কুদরত জাহির হয়। তবে তা সংখ্যায় কম। আওলিয়ায়ে কিরামগণের লক্বব মুবারকগুলো আল্লাহ পাক-এর কুদরতেরই একটি অংশ।
লক্বব বা উপাধি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মর্যাদা-মর্তবার প্রকাশ ঘটায়। যিনি যত গুণাম্বিত ও মর্যাদাশীল তাঁর লক্ববও তত অধিক। (নাসিমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফাহ)
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আশরাফুল আওলিয়া, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী যামানার ইমাম। বর্তমান যামানায় তিনি আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লক্ষ্যস্থল। তাঁর একটি বিশেষ লক্বব হচ্ছে “ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন”
“ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন”-এর ব্যাখ্যা
صاحب অর্থঃ সঙ্গী, সাথী, বন্ধু, মালিক, কর্তা এবং ওয়ালা। বহুবচন صحب، اصحاب আর كن অর্থ হও فيكون হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক বলেন,
واذا قضى امرا فا نما يقول له كن فيكون.
অর্থাৎ আল্লাহ পাক যখন কোন বস্তুকে সৃষ্টি করতে চান তখন সেটাকে শুধু বলেন, كن হয়ে যাও। আর তাঁর ইচ্ছার অনুরূপ সৃষ্টি হয়ে যায়। (সূরা বাক্বারা-১১৭)
এর দ্বারা আল্লাহ পাক-এর কুদরত বা ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে। একইভাবে সমস্ত মাখলুকাত তাঁর কত অনুগত সে বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। (তাফসীরে বাইযাবী, কুরতুবী, তাবারী, লুবাব, মাযহারী)
ইমাম হাফিয আল্লামা ইমাদুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা স্বীয় কুদরত বা ক্ষমতার পরিপূর্ণতাকে বর্ণনা করেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
কাজেই ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘কুন ফাইয়াকুন’-এর সঙ্গী, সাথী তথা আল্লাহওয়ালা।
পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে “ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন” লক্বব দ্বারা সেই আওলিয়ায়ে কিরামকে খিতাব (সম্বোধন) করা হয়, যিনি আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরম-পরম নৈকট্য প্রাপ্ত। যার দ্বারা আল্লাহ পাক-এর كن فيكون গুণের বিকাশ ঘটে। তিনি যা চান আল্লাহ পাক তাঁকে সেটাই দান করেন।
তবে যে আওলিয়ায়ে কিরাম-এর মাধ্যমে অধিক কারামত জাহির হয় কেহ কেহ তাঁকেও ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকুন’ লক্বব দ্বারা খিতাব করেছেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, একজন ওলীআল্লাহ একদিন স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আল্লাহ পাক আমাকে এমন নৈকট্য দান করেছেন যে, আমি যা চাই সেটাই হয়। আর আমি যেটা চাই না সেটা হয়না।”
মুরীদ-মু’তাকিদগণ সবিনয়ে আরজ করলেন। হুযূর, বেয়াদবী ক্ষমা চাই। এটা কেমন হাল? আপনি যা চান তাই হয়, আর যা চান না তা হয় না? দয়া করে এর হাক্বীক্বত বর্ণনা করবেন কি?
তখন সেই ওলী আল্লাহ বললেন, মূলতঃ আমার মতকে আল্লাহ পাক-এর মতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছি অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা চান আমি সেটাই চাই। আর সেটাই হয়। আর আল্লাহ পাক যেটা চাননা আমিও সেটা চাইনা। কাজেই সেটা হয় না।
অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর ওলী (বন্ধু)গণের নিজস্ব কোন মত ও পথ থাকে না। তাঁরা আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতের খিলাফ কোন মত পোষণ করেন না। তাঁদের শানে আল্লাহ পাক বলেন,
رضى الله عنهم ورضوا عنه
অর্থঃ তাঁরা (আওলিয়ায়ে কিরাম) আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ পাকও তাঁদের (আওলিয়ায়ে কিরামগণের) প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা মুজাদালা-২২)