ছাহিবুল আয়াত, ছাহিবুল হাদীছ, ছাহিবুল বুরহান, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ ব্যতীত কালামুল্লাহ শরীফ বুঝা এবং আমল করা সম্ভব নয়

সংখ্যা: ১২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- “তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। যা বলেন একমাত্র ওহীই বলে থাকেন।” (সূরা নজম/৪, ৫) অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমস্ত কথাই ওহীর অন্তর্ভুক্ত।”

        মুহাদ্দিসীনে কিরামগণ ওহীকে দু’ভাগে ভাগ করেছেনঃ (১) ওহী মাতলু, যা তিলাওয়াত করা হয়। নামাযে পাঠ করতে হয়। সেটাই হচ্ছে কুরআন শরীফ। (২) ওহীয়ে গাইরে মাতলু, যা নামাযে পাঠ করতে হয় না। আর তাই হলো হাদীছ শরীফ।

মূলতঃ ওহী মাতলু’র মর্ম, অর্থ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গুরুত্ব এবং এর উপর পূর্ণরূপে আমল করার জন্য অবশ্যই ওহীয়ে গাইরে মাতলু তথা হাদীছ শরীফ এর মুখাপেক্ষী হতে হয়। হাদীছ শরীফ ব্যতীত কস্মিনকালেও কুরআন শরীফ এর উপর আমল করা  সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

وما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا.

অর্থঃ- “রসূলে পাক (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তোমরা দৃঢ়ভাবে তা পালন কর। এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা হতে বিরত থাক।” (সূরা সুরা হাশর/৭)

يايها الذين امنوا اطيعوا الله ورسوله ولا تولوا عنه وانتم تسمعون.

অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য কর এবং তাঁর আদেশ শোনার পর তা অমান্য করে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করোনা।” (সূরা আনফাল/২০)

‘সুনানে ইবনে মাজাহ্ শরীফের’ ৩য় পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

عن مقدام بن معد يكرب الكندى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوشك الرجل متكيا على اريكته يحدث بحديث من حديثى فيقول بيننا وبينكم كتاب الله عز وجل فما وجدنا فيه من حلال استحللناه وما وجدنا فيه من حرام حرمناه الا وان ما حرم رسول الله صلى الله عليه وسلم مثل ماحرم الله.

অর্থঃ- “হযরত মিকদাম ইবনে মাদি কারাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঞ্জইরশাদ করেন, এমন এক যুগ আসবে যখন কোন কোন লোক আরাম করে তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, আর তখন তার নিকট আমার হাদীছ সমুহ হতে কোন হাদীছ শরীফ পেশ করা হবে, আর সে বলবে, তোমাদের ও আমাদের মাঝে আল্লাহ পাক-এর কিতাব আল কুরআন রয়েছে, তাতে আমরা যা হালাল পাব তাই হালাল হিসেবে মেনে নিব। আর তাতে যা হারাম পাব তাকেই হারাম হিসেবে গণ্য করব। (অর্থাৎ কুরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট, হাদীছের দরকার নেই। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)

 হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাবধান! জেনে রেখ, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা হারাম বলেছেন, তাও ঠিক তেমনি হারাম হবে যেমন আল্লাহ পাক কোন বস্তুকে হারাম বলেছেন।” (সূবহানাল্লাহ)           উল্লেখ্য, পবিত্র কালামে পাকে এমন অনেক শব্দ, আয়াত তথা বিধি বিধান বর্ণিত হয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ মর্ম জানতে হলে অবশ্যই হাদীছ শরীফের মুখামুখী হতে হয়। হাদীছ শরীফ না হলে কস্মিনকালেও সেটা বোধগম্য হত না।

 নিম্নে কয়েকটি মিছাল পেশ করা হলো-

 প্রথম মিছালঃ  আল্লাহ্ পাক-এর কালাম,

وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الابيض من الخيط الاسود.

অর্থঃ- “এই আয়াত শরীফে বর্ণিত خيط শব্দের শাব্দিক অর্থ সুতা। তৎকালীন আরবে শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হত। এখন خيط শব্দের শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী আয়াত শরীফের অর্থ দাঁড়ায় তোমরা সাহরী খাও যতক্ষণ না তোমাদের জন্য সাদা সুতা কালোসুতা থেকে পার্থক্য হয়।”

উল্লিখিত আয়াত শরীফ নাযিল হলে বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আদী ইবনে হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি একটি সাদা সূতা ও কালো সুতা নিয়ে আমার বালিশের নীচে রাখলাম, সকাল পর্যন্ত উভয়টার মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারলাম না। পরে এ সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, উল্লেখিত আয়াতে الخيط الاسود দ্বারা রাতের অন্ধকার এবং الخيط الابيض দ্বারা সুব্হি সাদিক বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ আয়াতের মূল অর্থ হলো- ‘তোমরা সেহরী খাও রাতের অন্ধকার হতে সুবহ্ েসাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।” (বুখারী ১ম জিঃ, তিরমিযী ২য় জি: ১২০ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর ১ম জি: ২৯০ পৃষ্ঠা)

কাজেই আল্লাহ্ পাকের হাবীবের হাদীছ শরীফ ব্যতীত উল্লিখিত আয়াতের সঠিক অর্থ উদঘাটন কস্মিনকালেও সম্ভব হত না।

দ্বিতীয়  মিছালঃ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম,

الزانية والزانى فاجلدوا كل واحد منهما مائة جلدة.

অর্থঃ- “ব্যভিচারী নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই একশত করে বেত্রাঘাত করবে।” (সূরা নূর/১)

উল্লিখিত আয়াতে ব্যভিচারের শাস্তির বিধানে বিবাহিত অবিবাহিত কোন পার্থক্য  করা হয়নি। কিন্তু হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত উল্লিখিত আয়াতের হুকুম শুধুমাত্র অবিবাহিত দের প্রতি খাছভাবে প্রযোজ্য, বিবাহিতদের প্রতি এ আয়াত শরীফ প্রযোজ্য নয়। তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা হচ্ছে- তাদেরকে রজম অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।

তাই দেখা যাচ্ছে হাদীছ শরীফ না হলে এ বিধান কার্যকরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হত।

তৃতীয় মিছালঃ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম,

كتب عليكم اذا حضر احدكم الموت ان ترك خيران الوصية للوالدين والاقربين بالمعروف حقا على المتقين.

অর্থঃ- “তোমাদের কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে যদি সে ধন সম্পদ রেখে যায় তবে ন্যায় সঙ্গতভাবে তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ওসিয়ত করার বিধান তোমাদেরকে দেয়া হলো, এটা মুত্তাকীদের জন্য কর্র্র্তব্য।” (সূরা বাক্বারা/১৮০)

বর্ণিত আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্টতই উপলব্দি হয় যে, পিতা-মাতার জন্যও ওসিয়ত করা যাবে, কিন্তু শরীয়তের ফায়সালা হলো ওয়ারিশদের জন্য ওসীয়তের বিধান কার্যকর নয়। যেটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

لاوصية للوارث.

অর্থঃ- “ওয়ারিছদের জন্য কোন অসীয়ত নেই।” (তিরমিযী শরীফ ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠা)

তাহলে হাদীছ শরীফ ব্যতীত কিভাবে কুরআন শরীফের উপর আমল করা যায়?

চতুর্থ মিছালঃ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম,

اقيموا الصلوة.

অর্থঃ- “তোমরা নামায ক্বায়িম কর।” (সূরা হজ্জ/৭৮)

 কিন্তু কি প্রকারে, কত ওয়াক্ত, কত রাকাত এবং কি কি শর্ত রয়েছে, রুকন রয়েছে এবং কোন কোন কাজে নামায বাতিল হয়ে যায়; সে আলোচনা পবিত্র কালামে পাকে করা হয়নি। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন, আল্লাহ্ পাকের হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর অমীয় বাণী হাদীছ শরীফে। কাজেই হাদীছ শরীফ ব্যতীত সঠিক ভাবে নামায আদায় করার চিন্তাও করা যায় কি?

পঞ্চম মিছালঃ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম,

واتوا الزكوة.

অর্থঃ- “তোমরা যাকাত দাও।” (সূরা হজ্জ/৭৮)

এখন কোন কোন সম্পদে যাকাত দিতে হবে এবং কতটুকু দিতে হবে, কিভাবে দিতে হবে এর বিস্তারিত আলোচনা কুরআন শরীফে করা হয়নি; অসংখ্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে এর বিস্তারিত সমাধান। অনুরূপ রোযা ও হজ্বের ক্ষেত্রেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে হাদীছ শরীফে।

মোটকথা হলো, যে কোন প্রকার হুকুম-আহকাম, ইবাদত-বন্দিগী সঠিকভাবে পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদত্ত হাদীছ শরীফের মুখাপেক্ষী হতেই হবে। তা না হলে কোন আমলই সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে না।

        ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহ্ িআলাইহি যথার্থই বলেছেন,

لولا السنة ما فهم احد منا القران.

অর্থঃ- “সুন্নাহ তথা হাদীছ শরীফ না থাকলে আমাদের কারো পক্ষেই পবিত্র কুরআন শরীফ বুঝা সম্ভব হত না।” (মীযানে শা’রানী)

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,

ان السنة تفسير الكتاب وتبيينه.

অর্থঃ- “সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।”

কাজেই উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে কুরআন শরীফ বুঝার চেষ্টা বিভ্রান্তির দ্বার উন্মুক্ত করবে এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। য

-মাওলানা মুহম্মদ আব্দুর রহমান

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৮) প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

আউয়ালু শাফি’, আউয়ালু মুশাফ্ফা’, আউয়ালু মাঁই ইউহাররিকু বাবাল জান্নাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই জান্নাতের মালিক

ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল  মাহ্শার, ছাহিবুল  মাক্বামিল  মাহমূদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন

ছাহিবুল মদীনাহ, ছাহিবুল মক্কাহ, ছাহিবুল হাত্বীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত ইলমের অধিকারী ॥ সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন তাঁর মু’জিযা ॥ তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহুমগণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন

দা’ওয়াতু ইব্রাহীম, দা’ওয়াতুন্ নাবিয়্যীন, দলীলুল খইরাত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক স্বীয় উম্মতকে জাগ্রত ও স্বপ্নযোগে পথ প্রদর্শন