আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, তিনি সময়কে মানুষের মাঝে বিভিন্ন রূপে আবর্তিত করে থাকেন। সময়ের আবর্তে পরিবর্তিত পরিস্থিতি, মূল্যায়নের মানদণ্ডে একটা বিরাট অনুসরণ বটে।
মাত্র কিছুদিন আগের কথা। এন.এস.আই, ডি.জি.এফ.আই, এস.বি, পুলিশ, র্যাব, আর্মি এস.এস.এফ শীর্ষ কর্মকর্তারা হিমশিম খেতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ভীর ঠেকাতে, শৃঙ্খলা রাখতে, নিরাপত্তা দিতে। এদিকে ‘ভাইয়া খ্যাত তারেক রহমানের কাছে সেবা ছিল যেন রীতিমত সৌভাগ্যের বিষয়। তার ডানে, বায়ে, উপরে, নীচে চারপাশে গিজগিজ করত স্বেচ্ছাসেবী, ভক্ত অনুরক্তের দল।
তার জনসভায় তৈরী হত স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী তোরণ। হাজির হত হাজার হাজার লোক।
অন্যদিকে প্রায়ই রাজপথ গগণ বিদারী শ্লো গানে কাঁপত। শ্লোগানে ভয় নাই। রাজপথ ছাড়ী নাই। আমরা আছি লাখো ভাই ইত্যাদি।
বলাবাহুল্য এরা জনতা। গণতন্ত্রের ভাষায় জনগণ। গণতন্ত্রের এম.পি মন্ত্রীদের প্রভূ। সব ক্ষমতার মালিক।
আজকের খালেদা-হাছিনা তারেক-মামুন ওয়ায়দুল কাদের-নাজমুল হুদা তারা টের পাচ্ছেন জনগণের জনমতের ভি?িবা সুদায়িত?কতটুকু।
যে কোন জনসভায় তারেক বন্দনা এত হত তারেক কবিরা এমন গদগদ স্বরচিত কবিতা পাঠ করতেন যে তারেক রহমানের মত চাটুকারিতা প্রিয় লোকও অবশেষে বলতে বাধ্য হতেন যে তিনি লজ্জা পাচ্ছেন।
যে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক এখন অভিযুক্ত অন্যদের চেয়ে সে দুর্নীতির কথা তারা ঢের বেশী জানতেন। কিন্তু তারপরেও তারেক ভক্তির এমন পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতেন, প্রতিভাত হত তারেকের জন্য জীবন দিতে পারলে ধন্য হয়ে যাবেন।
বলাবাহুল্য এরা তারেক রহমান ভক্ত জনগণ।
কিন্তু এরপর যখন ব্যাপক সমাদৃত ভাইয়া তারেক রহমানকে চারদিনের রিমাণ্ডে নেয়া হয়, র্যাবের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট পরিয়ে জঙ্গি আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুশ শয়তান আর বাংলা ভাই ওরফে বাংলা সন্ত্রাসীর মত কোর্টে হাজির করা হয়, খালেদা জিয়ার হাত থেকে সাধারণ পুলিশ ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় তখনও জাতীয়তাবাদী জনগণ নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে হজম করে। অন্যদিকে বেগম জিয়া নিজে গিয়ে তদবির করার পরও অনেক সিনিয়র আইনজীবি তো দূরের কথা জুনিয়র আইনজীবিও উপস্থিত থাকেননি।
শুধু তাই নয় যেসব নেতারা নেত্রীর একটু সাক্ষাত পেলে ধন?হতেন তারাও এখন নেত্রীর ধারে কাছে ঘেষছেন না। সিনিয়র নেতারা তো পারলে খালেদা জিয়া নামই ভুলে যেতে চান। সাথে সাথে তাদের কর্মীরা তথা জনগণও।
এদিকে শেখ হাসিনাও দেশান্তরী হয়েছেন। গুজব উঠছে চিরদিনের জন্য। তবে চিরদিনের জন্য না হলেও অনেক দিনের জন্য যে বটেই তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
কিন্তু সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ভক্ত ভাই বোনের মাঝে যে আহাজারি, দু:খবোধ বিচ্ছেদ যন্ত্রণা হওয়ার কথা ছিল তার কোন কিছুই কিন্তু দেখা যায়নি।
কাজেই কি জাতীয়তাবাদী মন্ত্রী, এমপি অথবা কি আওয়ামী বা কি অন্য দলীয় এম.পি মন্ত্রী ছাহেবগণ আপনারা জনগণের ভালবাসার সি?আহবান, জনগণের প্রতিনিধি বলে গব?করেন তারা এবারে যার যার ঘরনার জনগণের চেহারাটা চিনে রাখতে পারেন। তাদের প্রকৃতি ও পরিচয় সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন।
তাদের ভালবাসার ব্যারোমিটারের পারদের উঠা-নামা বা স্থায়িত্ব সম্পর্কে সমঝে নিতে পারেন।
বলাবাহুল্য এই জনগণ গণতন্ত্রের জনগণ। যাদের মত প্রকাশের অধিকার আছে কিন্তু সে মতের কোন ভিত্তি নেই। জনগণ আজ যাকে তার সুউচ্চে বসিয়েছে কালকে তাকেই গহীন গহবরে ফেলে দিতে ক্ষত দেয়ার অবাধ ক্ষমতা তারা ভোগ করে। জনগণ আজকে যার সম্পকে?প্রশংসার মালা গাথে কালকে তাকেই কথার তীক্ষ্মবাণে জর্জরিত করার অসীম ক্ষমতা ভোগ করে।
জনগণ আজকে যাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করছে কালকে তাকেই পাথর ছূড়ে ক্ষত বিক্ষত করার বিশাল ক্ষমতা ভোগ করে।
জনগণ মূলতঃ উচ্ছাস যা আবেগেরও ঊর্ধ্বে। সামান্য ভাল দেখলেই তা ফুলেফেপে উঠতে পারে আবার সামান্য হের-ফেরেই তা কঠিন ত্যাক্ত বিরক্ত হতে পারে।
কাজেই Majority must be grunted, জনগণের প্রাধান্য নিয়ে চটকদার কথাগুলোর সারবত্ত্বা সম্পর্কে এখন অনুধাবন করতে হবে।
মূলত জনগণ নিজেই নিজের প্রকৃতি, পরিধি সম্পর্কে অবগত নয়। জনগণ, জনমত, জনস্রোত সবই প্রবাহমান। কিন্তু যে প্রবাহের দিকরেখা তাদের জানা নেই। গতি-প্রকৃতি তাদের উপলব্ধিতে নাই। পরিণতি ও মূল্যায়ন তাদের অবগতিতে, চেতনায় নাই। হুযুগে মাতা প্রবাদ তাদের সাথে অসম্পৃক্ত নয়। বরং এ হুযুগ তাদের কখন কোথায় নিয়ে যায় বা কি অবস্থায় রাখে তারা নিজেরাও বুঝেনা।
কে বা কারা উঠিয়েছে সে ব্যাপারে জনগণ এখনও চিন্তা করেনি। কিন্তু একটা হুযুগ জনগণের জনমতে খুব বদ্ধমূল হয়ে বসে আছে যে, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তন হবে কি করে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর অনবদ্য তাজদীদ ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র হারাম এ ফতওয়া যখন প্রচার করা হয়, গণতন্ত্রের কুফল সম্পর্কে যখন বোঝানো হয় তখন সব বুঝের পরও, সব স্বীকারের পরও একটি বিষয়ে তারা আটকে যায়, বুঝতে অক্ষম হয় তাহলো দেশ চলবে কিভাবে। ক্ষমতার পরিবর্তন হবে কিভাবে? ক্ষমতায় আসা হবে কিভাবে?
এ ধরনের নাদানি বাক্যালাপ যারা করেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের জন্য চোখে আঙ্গুল দেয়ার মত এক বিষয়।
কারণ বর্তমান তত্ত্ববধায়ক সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আসেনি। এবং এক তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রতিস্থাপনে আরেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়াও সংবিধানে সরাসরি নেই।
সুতরাং সংবিধানে নেই অতএব নির্বাচন পেছানো যাবে না, দেশ চলবেনা এসব কথা বলে তথাকথিত ইসলামী দল তথা জামাতে ইসলামী গগন বিদারী শ্লোগান উঠিয়েছিল আজকের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদেরকে গোটা জাতির সামনে জাতীয়ভাবে মিথ্যা ও ধোঁকাবাজ প্রতিপন্ন করল।
পাশাপাশি তারা সংবিধান অটুট রাখার জন্য যে জিহাদ ঘোষণা করেছিল আজকে তাদের সে জিহাদ কোথায় গেল?
আজকে কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারা চট্টগ্রামে তাদের তথাকথিত ২৬ বৎসরের ঐতিহাসিক তাফসীর মাহফিল করতেও ব্যর্থ হল। মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী এ শ্লোগান এখন কর্পূরের মত উড়ে গেছে।
অপরের ক্ষেত্রে বৃষ্টির মত গুলি করার নির্দেশ দিলেও সামান্য কারাগারের ভয়ে নিজেরা দপকে গেছে, চুপসে গেছে, পিছুটান দিয়েছে।
মূলতঃ ওদের কথিত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পরিণতি ওই। কাক হয়ে ময়ূর সাজতে আগ্রহী এই দলটি বলে বেড়ায় যে ওরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে। প্রচলিত গণতন্ত্রের বিরোধীতা না করে, জনগণকে না ক্ষেপিয়ে, বিশ্বকে অগ্রাহ্য না করে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, জনগণকে সাথে রেখে ওরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অধীনে ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের রাজনীতি করছে।
কিন্তু কথিত নিয়মটা যে কার নিয়ম সেটা উল্লেখ করতে, উপলব্ধি করতে, চেতনায় আনতে ওরা রীতিমত ভুলে যায়।
একথা ওরা বেমালুম চেপে যায় যে ওদের কথিত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির নিয়মটা কিন্তু ইসলামের নয়, কুরআন সুন্নাহর নয়। বরং ওদের কথিত নিয়মটা উৎসরিত হয়েছে পাশ্চাত্য থেকে। পাশ্চাত্য গণতন্ত্র থেকে কাফির মুশরিকদের থেকে। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “কাফির মুশরিকরা চায় যে মুসলমানরা ঈমান আনার পর পূনরায় কুফরীতে প্রবেশ করে।?
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “হে, হাবীব ছল্লাল্লা?আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কাফির-মুশরিকরা ততক্ষন পর্যন্ত খুশী হবেননা যতক্ষন পর্যন্ত আপনি ওদের তজ?তরীকা গ্রহন না করবেন।?
কাজেই গণতন্ত্রের প্রবক্তা খ্রিষ্টান নাছারারা যে মুসলমানরা গণতন্ত্রের নামে পূনরায় খ্রিষ্টান মতালম্বী হোক তা চায় তা স্বতঃসিদ্ধ। আর ওদের যে তজ?তরীকা, ওদের যে নিয়ম-কানুন, ওদের যে কথিত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি এর অন্তর্ভু?হয়ে যে কখনও ইসলামের কাজ হয় না কাজ করা যায় না, বার বার বিভিন্ন কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তা জালিম ও জাহিল বলেই জামাতীরা এখনও বোঝে না।
জামাতীরা এদেশে নারী নেতৃত্ব জায়িয করেছিল স্বৈরাচার এরশাদের কথা বলে। তাদের ব্যাখ্যায় স্বৈরাচার এরশাদ তাদের জন্য তখন বড় বাঁধা। প্রথমে তাকে দূর করতে হবে। এই বলে তখন তারা ইসলামের দৃষ্টিতে এমনকি তাদের প্রচারিত আদলেই নারী নেতৃত?হারাম থাকলেও সেটাকে হালাল করল। এরপর হালাল করল আওয়ামী লীগ, হারাম করল বি.এন.পি। এরপর আবার হারাম করল আ’লীগ। হালাল করল বি.এন.পি।
যে সংবিধান সংশোধন করার জন?তাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতি ২২শে ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তারাই তখন সাজল প্রচণ্ড রকমের সংবিধান দরদী।
অবস্থাটা এতই হাস্যকর ও াঘামূলক দাড়িয়েছিল যে তারা কুরআন-সুন্নাহ পরিবর্তন করে ছবি, বেপর্দা, নারী নেতৃত? গণতন্ত্র এসব হারামকে হালাল করল তাতে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই কিন্তু সংবিধান একচুল পরিবর্তন হতে পারবেনা সেখানে তাদের ঘোর বিপরীতে কঠোর জিহাদ।
কিন্তু মজার বিষয় হল সংবিধান ঠিকই পরিবর্তিত হয়েছে, ওদের কথিত নির্বাচনও হয়নি তার পাশাপাশি ওদের বহুল উচ্চারিত জিহাদও হয়নি।
কারণ ওদের সাথেও যা রয়েছে সে ওদেরই জনগণ। ওদের গণতান্ত্রিক জনগণ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অধীনে সুযোগ সন্ধানী, ধোঁকাবাজ জনগণ। যারা ইসলামের নামে ধোঁকা দিয়ে চুষতে শিখেছে কামড়াতে শিখেছে। হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়েছে।
এরা ইসলামের স্বরূপ দেখেনি। আদর্শ বুঝেনি। উজ্জীবিত হয়নি। প্রয়োজন মনে করেনি। এরা ইসলাম চায়নি। এরা মত, পথের স্বাধীনতা চেয়েছে। যা নফসের স্বাধীনতা। ইসলামের নামে সুবিধাবাদী মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ইসলামরে নামে হত্যা-লুক্তন ধর্ষন করার স্বাধীনতা। মার্কীনী-লাদেনের সাথে আঁতাত করার স্বাধীনতা। হক্বের বিরোধিতা করার স্বাধীনতা হারামকে হালাল করার স্বাধীনতা।
ইসলামের নামে জামাত করলেও আসলে ওরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতভূক্ত নয়। ওরা জনগণ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির জনগণ। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জনগণ। যাদের কাছে ইসলাম পরিবর্তনযোগ্য। কিন্তু সংবিধান নয়। ওরা সংবিধানের বান্দা, গণতন্ত্রের বান্দা, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বান্দা। আল্লাহ পাক-এর বান্দা নয়। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত নয়।
-মুহম্মদ জীসান আরিফ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২