হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত ইখতিয়ার করে ছাহাবী হয়েছেন। এই লক্বব মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কেউ লাভ করতে পারবে না। যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মুশাক্কাত, সাধনা-কোশেশ করতঃ আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রহমত ও ইহসান পেলে গাউছ-কুতুব, ওলী-আবদাল, পীর-মুর্শিদ, ছূফী-দরবেশ, মুফতী-মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির-ফক্বীহ্ ইত্যাদি হওয়া যেতে পারে কিন্তু ‘ছাহাবী’ লক্ববের মাক্বাম বা মর্যাদা এরূপ লক্ষ-কোটি লক্ববের অনেক ঊর্ধ্বে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সরাসরি দীদার লাভ ও ছোহবত ইখতিয়ার করে যেমন তাঁর সকল গুণে গুণান্বিত হয়েছেন, আউলিয়ায়ে কিরামগণও তেমনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহানী ছোহবত ইখতিয়ার করে তাঁর সকল গুণে গুণান্বিত হয়ে থাকেন। মূলতঃ এটাই তাঁদের উদ্দেশ্যও বটে। তবে উভয়ের ছোহবত ইখতিয়ারের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জাহিরী-বাতিনী উভয়ভাবে ছোহবত ইখতিয়ারকারী। আর আউলিয়ায়ে কিরাম তথা গাউছ-কুতুব, ওলী-আবদাল, পীর-মুর্শিদ, ছূফী-দরবেশগণ তাঁর বাতিনী ছোহ্বত ইখতিয়ারকারী। যদিও বা তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চর্মচোখে জাহিরীভাবে জাগ্রতাবস্থায় দেখে থাকেন। অতীতে অনেকে তাঁর সাথে সালাম-কালাম, মুছাফাহা-মুয়ানাকা পর্যন্ত করেছেন বলে অনেক প্রমাণ রয়েছে। এমনকি অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম রয়েছেন যারা এক মুহূর্তের জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার থেকে বঞ্চিত হননা।
সুলতানুল আরিফীন, আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘হাবী লিল্ ফতওয়া” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لو حجب عنى رسول الله صلى الله عليه وسلم طرفة عين ما عددت نفسى من المسلمين.
অর্থঃ- “যদি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুহূর্তের জন্য আমার দৃষ্টির অন্তরাল হতেন তবে আমি নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম না।” (দালায়িলুছ্ ছুলূক) আর যিনি যামানার ইমাম এবং মুজাদ্দিদ যিনি খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তাঁর সাথে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিসবত (সম্পর্ক) আরো কত গভীর, কত নিবিড় তা বর্ণনার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলতঃ তাঁর সেই মর্যাদা-মর্তবাকে সর্বসাধারণের বোধগম্য করার জন্য পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণের প্রসঙ্গের অবতারণা। অন্যথায় তাঁর মেছাল তিনি নিজেই।