হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম
(ধারাবাহিক)
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হচ্ছেন ‘কামিল পীর ছাহেব।’ একজন মু’মিনের জীবনে আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে কামিল পীর ছাহেবের ছোহবত বা সন্ধান। কারণ কামিল পীর ছাহেবের ছোহবত পাওয়ার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ পাককে পাওয়া, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাওয়া। অর্থাৎ ইরফানে খোদাওন্দী বা আল্লাহ পাক-এর পরিচয়, মুহব্বত, মারিফাত ও সন্তুষ্টি হাছিল হওয়া। আর আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
رضوان من الله اكبر.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।” (সূরা তওবা/৭২) পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণের অনেককে সেই কামিল পীর ছাহেবের তালাশে (সন্ধানে) দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়েছে। মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর ধরে শত শত হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। অনাহারে, অর্ধাহারে, অনিদ্রায় কাটাতে হয়েছে কত রাত তার কোন হিসাব নেই। হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যদি কারো নছীবে কামিল পীর ছাহেবের সন্ধান মিলে যায় তখন উচিত তাঁকে খানায়ে কা’বার ন্যায় সম্মান করা।’ (ছিরাতুল মুস্তাকীম)
আলোচ্য নিবন্ধে আমরা কামিল পীর ছাহেবের পরিচয়, তাঁর ফযীলত, কামিল পীর ছাহেবের আবশ্যকতা বর্ণনার ধারাবাহিকতায় উল্লেখ করবো, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সত্যিই যে একজন কামিল পীর ছাহেব তার জাহিরী ও বাতিনী দলীল। কামিল পীর ছাহেব-এর পরিচয়ঃ স্ক“॥ (পীর) শব্দটি ফারসী। উর্দূ ভাষাতেও তার প্রয়োগ রয়েছে। অর্থ জ্ঞান বৃদ্ধ, পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানী, অভিভাবক, পথপ্রদর্শক, বুযূর্গ, হাদী, ওলী আল্লাহ পাক-এর মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের পূর্ণ অভিজ্ঞ ব্যক্তি ইত্যাদি। كامل (কামিল) শব্দটি আরবী, উর্দূ এবং ফার্সী তিন ভাষায় প্রয়োগ হয়ে থাকে। অর্থঃ পরিপূর্ণ, সিদ্ধপুরুষ, নিষ্কলঙ্ক, নিপুণ, চূড়ান্ত। এখানে পীর শব্দের ছিফত বা গুণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
সুতরাং ‘পীরে কামিল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরিপূর্ণ গুণ সম্পন্ন পীর। অর্র্থাৎ পীর ছাহেবের যতগুলো গুণাবলী বা যোগ্যতা থাকা আবশ্যক তা যার মধ্যে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তাঁকে ‘পীরে কামিল’ বলা হয়।
পারিভাষিক অর্থে ‘পীরে কামিল’ বলা হয় যিনি নায়িবে নবী অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর যাঁরা তাঁর ক্বায়িম-মক্বাম (স্থলাভিষিক্ত) হয়ে মুসলিম উম্মাহ্র হিদায়েতের কাজে অধিষ্ঠিত। বিশেষতঃ যিনি আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের তা’লীম ও তরবিয়ত (প্রতিপালন) দান করেন তাঁকে ‘পীরে কামিল’ বলে। উল্লেখ্য যে, ‘পীরে কামিল’-এ শব্দ বা বাক্যটি যদিও সরাসরি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে নেই। তবে মূল বিষয় বা তার আলোচনা ও বর্ণনা রয়েছে। যেমন শব্দ হিসেবে নেই- ‘নামায, রোযা, দুরূদ’ ইত্যাদি। কারণ এগুলো উর্দূ, ফার্সী শব্দ। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফে তা হুবহু কিভাবে থাকতে পারে? তবে তার প্রতিশব্দ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে আছে। কুরআন শরীফে পীর ছাহেবকে সাধারণত ওলী ও আওলিয়া এবং মুর্শিদ বলা হয়েছে।