‘হাসিনা-খালেদা বিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদক্ষেপ ভুল ছিলো সে স্বীকৃতি তারাই মিডিয়াকে ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি ভুল থেকে দ্রুত সরে আসতে পারাকে তারা সাহসী সিদ্ধান্ত বলেও আত্মপ্রচার করেছেন।
এর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারও যে ভুলের ঊর্ধ্বে নয় সে তত্ত্বও তারা প্রত্যক্ষ ভাবে জাহির করলেন।
সন্ধ্যা ৭টায় দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ায়, ক্ষুদে, উপ-মাঝারি, মাঝারি ব্যবসায়ীরা যে কত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সম্প্রতি এক সভায়, বাণিজ্য উপদেষ্টাকে দোকানের চাবি বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ তার এক জ্বলন্ত বহি:প্রকাশ। কিন্তু এ ভদ্রবেশী প্রতিবাদের অন্তরালে ক্ষুন্নিবৃত্তির বিদ্রোহের যে তীব্য অনল তা কেবলি জরুরী অবস্থার জরুরী বাধ্যবাধকতার আবেষ্টনে ছাইচাপা পড়ে আছে।
দ্রব্যমূল বৃষ্টির লাগামহীন গতিতে তা তুষের আগুনের মত ধিকি ধিকি জ্বলছে। কিন্তু সে আগুন ছাইচাপা আগুন,
সে আগুন অনেক ক্ষুরর্য কণিকার আগুন। কেবল ক্ষুদ্য বলেই তার বহি:জ্বালার বহি: প্রকাশ এখনও প্রচণ্ড হয়নি।
অবশ?এ বহি:জ্বালার বহি:প্রকাশের সূচনা যে আদ্যে হয়নি তা কিন্তু নয়। ৫২-এর, ৬৯-এর, ৭১ এর জ্বলজ্বল ইতিহাস রয়েছে।
৭১ এর ইতিহাস এ দেশের মুসলমানের আর্জন গৌরবের, অনুপ্রেরনার, অনুরননের। আত্মবোধ, আত্মস্বীকৃতি, আত্মউপলব্ধির তথা আত্মপ্রকাশের পরিধি ও পরিমন্ডলের।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন এক উপদেষ্টার বিবৃতি সে পরিমন্ডলে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। দেশ স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে? আর কে বিপক্ষে এ নির্ণয়কে তিনি অর্থহীন বলেছেন। তার এ বক্তব?দ্বারা ইসলামের নামধারী রাজারকার, আল বদর গোষ্ঠী তথা দেওবন্দী, ওহাবী, খারিজী ও জঙ্গী-জামাত বেনিফিসিয়ারী হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন খোলাখুলি বলেছেন, হাসিনা-খালেদা বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্তের প্ররোচনা উক্ত দু’দলের ভিতর থেকেই দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি তথা জামাতীদের সম্পকে?কার দ্বারা অনুপ্রাণিত, প্ররোচিত বা উৎসাহিত হয়ে উপদেষ্টা মতিন ছাহেব উপরো?মন্তব?করেছেন তা তিনি আজো প্রকাশ করেননি।
তবে মূলত: জামাতে ইসলামী সম্পৃক্ত এ বিষয়ে মন্তব?করার আগে তিনি যদি ছহীহ ইসলামী কোন ব্যক্তিত্বের সাথে পরামর্শ করতেন তাহলে ভাল করতেন।
রাজাকার জামাতীদের সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য মতিন ছাহেব ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে করেছেন- এমনটি তিনি দাবী করেননি। আর ইসলামী মূল্যবোধ এটাই বলে যে, বান্দার হক পালন না করলে সে বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করে ততক্ষণ পর্যন্ত জুলূমকারীর ক্ষমা হয়না।
৭১-এ এদেশবাসী তথা এদেশের মা-বোন এমনকি যে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে আসীন হয়ে মতিন ছাহেব উক্ত মন্তব্য করেছেন সে সেনাবাহিনীর উপর পর্যন্ত ?রাজাকার আলবদর তথা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি কী ভীষণ, কী মর্মান্তিক, পৈশাচিক আক্রমন, লুণ্ঠন, বলাৎকার চালিয়েছে তা আজো চরম মর্মপীড়া, পরম বেদনা ও ভীষণ জ্বালার সৃষ্টি করে।
মতিন ছাহেব কি শুনতে পান, কত মায়ের বুক আজও জামাতী-রাজাকারদের কারণে সন্তান হারিয়ে হৃদয়বিদারক হাহাকার করছে।
তিনি কি জানেন, জামাতী-রাজাকারদের দ্বারা বিধবা হয়ে কত অবলা নারীর আজও নীরবে অশ্রুসিক্ত হচ্ছে।
তিনি কি দেখেন, জামাতী-রাজাকারদের দ্বারা সম্ভ্রমহীন হয়ে আজও কত মহিলা উম্মাদিনীর জীবন-যাপন করছে।
কাজেই এসব নিপীড়িত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, লুণ্ঠিত, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাহাজারি কেবলমাত্র ৩৫ বছরের ফারাকে শোধ হয়ে যাবে তা কেমন কথা? তাদের হৃদয়ে, দেহে যে দগদগে ঘা রয়েছে, তা কি কখনও শুকাবার?
আর এমনকি কোন নজীর রয়েছে যে, রাজাকার দেওবন্দী, খারিজী, জামাতীরা ঐসব বঞ্চিত, শোষিত মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
ইসলামের একটা উছূল রয়েছে, প্রকাশ্যে পাপের প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া।
কাজেই কেউ যদি মনে করে যে, ‘জামাতীরা আজকে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং তাতেই তারা পার পেয়ে যাবে? এ ফতওয়া ইসলামের নয়।
ইসলামের ফতওয়া হলো, প্রকাশ্য পাপের প্রকাশ্য ক্ষমা তো চাওয়াতেই শেষ নয় সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। এটাই স্বত:সি?কথা। কিন্তু জামাতীরা আজো তার ধারকাছেও যায়নি।
এদিকে স্বাধীনতার ৩৫ বছর পার হবার পরও ইসলামের দৃষ্টিতে জামাতীদের প্রতি যে কথা প্রণিধানযোগ্য তা হলো, এই ৩৫ বছরেও কিন্তু তারা তাদের খাছলত তথা প্রবৃত্তি থেকে আদৌ পরিবর্তিত হয়নি।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি যদি শোনেন, ওহুদ পাহাড় স্থানন্তরিত হয়েছে, আর আগের জায়গা থেকে সরে বহু দূরে চলে গেছে তাও আপনি বিশ্বাস করবেন কিন্তু মানুষের খাছলত, প্রবৃত্তি পরিবর্তিত হয়েছে- একথা কখনও বিশ্বাস করবেন না।
এ হাদীছ শরীফের আলোকে শুধু ৩৫ বছরের ফারাকেই জামাতীদের প্রবৃত্তি পাল্টিয়ে গেছে একথা কী করে গ্রহণযোগ্য সমর্থনযোগ্য বিশ্বাসযোগ?হতে পারে?
বরং জামাতীদের সে খুন, ধর্ষণ, লুটপ্রবণতা যে আগের থেকে অনেক বেড়েছে তা বলাইবাহুল্য। ৭১ এরপর রগ কাটার রাজনীতি শুরু করে আজকের জঙ্গী ক্যাডারের স্বীকারোক্তি অথবা মুজাহিদের “বৃষ্টির মত গুলী কর?এ প্রকাশ্য ঘোষণা আজও প্রত্যক্ষ প্রমাণ বহন করে।
এদিকে মানুষ হাসফাঁস করছে, হতাশায় ভুগছে যে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি সবকিছুই বিএনপি’র সাথে সমান্তরালে করার পরেও আজও জামাতকে কেন ধরা হচ্ছেনা? জামাত কেন পার পেয়ে যাচ্ছে?
ধোয়া দেখলেই আগুনের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। আর জামাত সে আগুনের ধোঁয়া নয়। বিএনপি যে দুর্নীতির আগুন হয়, জামাত সে আগুনের লেলিহান শিখা। কিন্তু তারপরেও কেন জামাতের প্রতি এ স্থবিরতা এড়িয়ে যাবার প্রবণতা?
বাংলার ইহুদী খ্যাত সাঈদী জামাতী বলেছিলো, ‘বিএনপি ও জামাত একই মায়ের পেটের দু’ভাই।তার সুরে সুর মিলিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান জামাতের রুকন সম্মেলনে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, জামাত ও বিএনপি একই পরিবারের লোক।
তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। একই দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের এক সদস্য জেলে সাধারণ কয়েদীর হালে। আরেকজন এখনও রীতিমত রাজহালে।
বিষয়টি যেন ঠিক তারেক রহমান আর আরাফাত রহমান কোকোর মত।
তারেক রহমানকে ধরে কিছু হলেও তার দুর্নীতির বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। ৫টি মামলা দেয়া হয়েছে। কিছু হলেও শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আরাফাত রহমানকে ধরার পরও তার দুর্নীতি জানার পরও, বলার পরও তাকে আবার ছেড়েও দেয়া হয়েছে।
বলাবাহুল্য হাসিনা-খালেদার বিষয়ে নেয়া ভুল সিদ্ধান্তের চেয়ে এ ভুল কোনমতেই কম নয়।
উল্লেখ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা-হাসিনার বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্তে বিশেষ বিদেশী চাপে পড়েছিলেন বলে মিডিয়ায় ব্যক্ত হয়েছে।
এদিকে মিডিয়াকেই বর্তমান পার্লামেন্ট বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সে মিডিয়ায়ই কি জামাতীতের দুর্নীতির ফিরিস্তি কম?
দৈনিক আল ইহসানে তো প্রতিদিনই এ বিষয়ে মেগা সিরিয়াল প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্যান্য পত্রিকাগুলোতেও প্রকাশিত হচ্ছে।
বিডিফুডের সাথে জামাতের সম্পৃক্ততা, বিডিফুডের হেরোইান পাচারের কাহিনী তাও প্রকাশিত হয়েছে। পাবনার মতিউর রহমান নিজামীর আত্মীয়ের দ্বারা দু’শ কোটি টাকার গাছ লোপাটের কথাও দৈনিক সংবাদে ছাপা হয়েছে। নিজামীর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নানা দুর্নীতির কথাও পত্রিকায় এসেছে।
তারপরেও জামাতীদের প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ নির্লিপ্ততাকে জনগণ তারেক রহমান আর আরাফাত রহমানের মতই মনে করেছে।
এটাকে হাসিনা-খালেদার সিদ্ধান্তের চেয়েও মহাভুল সিদ্ধান্ত বলে কথা উঠেছে।
হাসিনা-খালেদা ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো বিদেশীদের। কিন্তু জামাতীদের এক্ষেত্রে ভুলের প্রতিক্রিয়া এদেশীয়দের। সঙ্গতকারণেই তার চাপটা আগের তুলনায় অনেক বেশী। কারণ এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এদেশবাসী এবং তাদের উপলব্ধি।
কাজেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সে চাপের বহর বুঝতে হবে। হাসিনা-খালেদার সিদ্ধান্তের চেয়েও দ্রুত কালক্ষেপন করা থেকে সরে আসতে হবে।
মূলত: এক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশী সাহসী হতে হবে। কিন্তু তারপরেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তা করতেই হবে। নচেৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কথিত জেহাদ কেবল মিথ্যা আস্ফালন বলেই প্রমাণিত হবে।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২