কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক অনেক কাহিনী বর্ণনা করেছেন। হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাহিনীর অবতারণা করেছেন। এ লিখার প্রয়োজনে এখানেও এক ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানের কাহিনী অবতারণা করতে হচ্ছে।
উচ্চশিক্ষিত হওয়ার ফলে মূলে এ হিন্দু ব্যক্তির পূজা-অর্চনা ভাল লাগতোনা। চেতনাদগ্ধ মন সত্য খুঁজে বেড়াত। সে বিষয়ে যথারীতি পড়াশোনাও চললো। সব ধর্ম মত সম্পর্কে তার গবেষণাও হলো। অবশেষে ইসলামকেই আদর্শ ধর্ম মনে হলেও বাস্তবে সে গ্রহণ করল খ্রীষ্টান ধর্ম।
এর জবানবন্দিতে সে বলেছিল যে, ইসলাম সত্যিকার ধর্ম, এটা অতি পবিত্র ও সর্বোত্তম আদর্শবাদী ধর্ম, কিন্তু মানা খুব কঠিন।
কারণ ইসলাম পালন করলে বেপর্দা হওয়া যায় না, ছবি তোলা যায়না, শরাব খাওয়া যায়না। বেপর্দা নারীর পাশে দাঁড়ানো যায়না, সম্মুখস্থ নারীর দিকে চোখ প্রশস্ত করে তাকানো যায়না। গান-বাজনা করা যায়না, দম থাকা অবস্থায়, সমুদ্রে ডুবন্ত অবস্থায়, রোগ শয্যা অবস্থায় ইশারায় হলেও নামায পড়তে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আর খ্রীষ্টান ধর্মে মাটির পুতুলকে পূজা অর্চনা করার মত বোকামি নেই। আবার ইসলাম ধর্মের মত অতসব ইবাদত বন্দেগীর শর্ত নেই, গান-বাজনার আসর তথা বেপর্দা-বেশরা হওয়ার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা নেই।
উল্লেখ্য, ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানের এই জবানবন্দীতে কয়েকটি জিনিস ফুটে উঠেছে।
এক. পর্দা, নামায-কালাম ইত্যাদি বিষয়গুলো ইসলামের এতই মৌলিক বিষয় যে মুসলমান তো বটেই এমনকি বিধর্মীরাও সে বিষয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত।
দুই. ইসলামের এসব বিষয়গুলো পালন করতে নফস বা কুপ্রবৃত্তি বাধা দেয় এবং ইসলামের এসব বিধান অবশ্যই অনিবার্যভাবে পালনীয় তা জানার পরও মানুষ নফসের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে উক্ত শরয়ী বিধান থেকে বিচ্যুত হয়।
মূলতঃ এসবই শয়তানের ওয়াসওয়াসা। নফসের ধোকা; বলাবাহুল্য এই নফসের ধোকা থেকে উত্তরণ লাভ করতে হলে শুধু জাহিরী ইলমই যথেষ্ট নয়। কারণ শুধুমাত্র জাহিরী ইলম দ্বারা নফসের তথা কুপ্রবৃত্তির প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,“ ”মি’রাজ শরীফের বর্ণনায় আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, মানুষ পুলসিরাত অতিক্রম করে বেহেশতে যেতে থাকবে আর নীচে তাকিয়ে দেখবে যে, তাদের নসীহতকারী আলিম জাহান্নামে নিজের নাড়িভুড়িকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে। তখন মানুষ তাদের জিজ্ঞাসা করবে, হুযূর আপনার এ অবস্থা কেন? আপনার ওয়াজ শুনেই তো আমরা আজ বেহেশতে যাচ্ছি। তখন সে বলবে, আমি তোমাদেরকে আমল করতে বলেছি কিন্তু নিজে কুরআন সুন্নাহর আমল থেকে বিরত থেকে বদ আমল করেছি।”
মূলতঃ এখানেও সে নফসের প্ররোচনা। ইলম হাছিলের পরও তথা মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস, মুফাস্সিরে কুরআন, খতীব ইত্যাদি হওয়ার পরও; ছবি তোলা পাপ, পর-নারীর দিকে প্রতি দৃষ্টিতে কবীরা গুণাহ তথা জিনার গুণাহ হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অবগত থাকার পরও উপরোল্লিখিত সব হারাম আমলে মজে যাওয়া মূলতঃ সে নফসেরই পায়রবী করে নফসের বান্দা হওয়া তথা উলামায়ে ছু’তে পর্যবসিত হওয়ার প্রমাণ সাব্যস্ত হয়।
বলাবাহুল্য, নফসের প্ররোচনা এতই প্রবল যে, ওলী-আল্লাহগণ নফসকে নফসানিয়ত যুক্ত আনন্দ না দেয়ার জন্য অনেক রিয়াযত-মুশাক্কাত করেছেন। তারা দ্বীনী মাহফিল ব্যতীত জনসমাবেশকে এড়িয়ে গেছেন, বর্জন করেছেন।
তাযকিরাতুল আওলিয়ায় বর্ণিত রয়েছে, একবার সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি সফরের এক পর্যায়ে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে হাজার হাজার লোক তাকে স্বাগত জানানোর জন্য একত্রিত হল।
সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তখনও রিয়াজত করছিলেন। সুতরাং তিনি ভাবলেন রিয়াজতের এ পর্যায়ে এত জনসমাগমের উপস্থিতি স্বীয় নফসকে পুলকিত করতে পারে। এতবড় জনসমাগমে অভ্যর্থনা প্রাপ্তি তার নফসকে আনন্দিত করতে পারে, তাজা করতে পারে। তাই সে নফসকে দমনের জন্য তিনি এক কাজ করলেন। রোযার দিনে সে সময়ে সবার সামনে রুটি খাওয়া শুরু করলেন।
(উল্লেখ্য, সে সময়ে তিনি মুসাফির ছিলেন। শরীয়তের মাসয়ালা হল কেউ যদি মুসাফির হয় তাহলে সে রোযা ভাঙ্গতে পারে এবং পরে সে তা আদায় করে নিবে।)
কিন্তু উপস্থিত সাধারণ জনতা তা বুঝতে না পেরে, তাদের দৃষ্টিতে একটি ফরয কাজ, রোযাকে প্রকাশ্যে ভাঙতে দেখে, তাদের বিচারে হারাম কাজ করতে দেখে একজন দু’জন করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে লাগল, নিন্দাবাদ উচ্চারণ করতে শুরু করল এবং এরপর তীব্র তিরস্কার করে সবাই সটকে পড়ল।
এরপর হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় নফসফে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন, “হে নফস! তুই তো চেয়েছিলি এতবড় জনসমাবেশের মধ্যমনি হয়ে, সবার থেকে সংবর্ধনা পেয়ে তুই খুব আনন্দিত হবি, মানুষের বাহবা পেয়ে খুশী হবি, সংবর্ধনা, অভ্যর্থনা পেয়ে, খুব স্বাদ, খুব আনন্দ তুই পাবি। এখন তুই তা পেয়েছিস কি? সত্যিই তোর কাঙ্খিত স্বাদের পরিবর্তে মানুষের তিরস্কার দিয়ে তোকে তোর উপযুক্ত জিনিস এবং শিক্ষাই দেয়া হয়েছে।” (সুবহানাল্লাহ্)
এই হল হক্বানী ওলী-আল্লাহগণের পরিক্রমা ও পরিচয়। সেক্ষেত্রে আজকে যারা চারদলীয় জোট অন্তর্ভুক্ত মাওলানা, মুফতী, খতীব, মুফাস্সিরে কুরআন তথা শাইখুল হাদীছ সাহেবরা রয়েছে তারা গত ১৯-১০-০৩ তারিখে জোট সরকারের দুই বছর পূর্তিতে পল্টন ময়দানের সমাবেশে আমাদের কি দেখালেন?
তারা কি সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত একবারও ভেবে দেখেছিলেন যে, কথিত এই জনসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার ফলে তাদের নফসও নফসানিয়ত আনন্দে আপ্লুত হতে পারে, নফস মোটা-তাজা তথা আরো উত্তেজিত, আরো জীবন্ত হতে পারে?
তারা কি আদৌ উপলব্ধি করেছেন যে, ইসলামের শিক্ষা হক্ব আলিমের আদর্শ নফসের বিরোধিতা করা, নফসকে মৃত করে ফেলা; সেক্ষেত্রে এই জনসমাবেশে উপস্থিত হয়ে তারা ইসলামের শিক্ষা উপেক্ষা করে চিরন্তন হক্ব আলিমের আদর্শ বিচ্যুত হয়ে নফসেরই গোলামী করে আল্লাহ্ পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর মনোনীত দ্বীন থেকে অনেক দূরে সরে যাবেন।
তারা কি একবারও ফিকির করেছে যে, তারা যেখানে উপস্থিত হবেন সেখানে ছবি তোলা হবে। আর পঞ্চাশ বছর যাবৎ তারাই মাদ্রাসায় ছবি তোলার বিরুদ্ধে শত শত হাদীছ শরীফ পড়িয়ে শাইখুল হাদীছ লক্বব ধারণ করেছে। সেক্ষেত্রে এ সমাবেশে হাজির হয়ে ছবি তুলতে দিয়ে শাইখুল হাদীছ লক্ববেরই প্রকাশ্য অবমাননা করা হবে এবং আল্লাহ্ পাক, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করা হবে তথা শিরকী কাজ হবে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর কাছে সবচেয়ে বড় অপছন্দের কাজ, অসন্তুষ্টির কাছ শিরক করা। তাফসীরে বলা হয়েছে যে, ছবি তোলার দ্বারা বান্দা নিজেও একটি সৃষ্টির একটা প্রতিকৃতির দাবীদার হয়ে যায়। এজন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তি সৃষ্ট জীবের ছবি তুলেছে সে ব্যক্তিকে বলা হবে উক্ত ছবিতে প্রাণ সঞ্চার করতে। কিন্তু তা পারার প্রশ্নই উঠেনা। তখন আল্লাহ্ পাকই তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন এবং সেগুলো তখন জীবন্ত হয়ে ছবি তুলনেওয়ালাকেই পাকড়াও করবে।
কাজেই এহেন শিরকী-কুফর, হারাম কাজ যে জনসমাবেশে হবে সে জনসমাবেশের মধ্যমনি হয়ে বসার আগে উক্ত মাওলানা, মুফতী, শাইখুল হাদীছ সাহেবদের কি এসব বিষয় ভাবা উচিৎ ছিলনা; নাকি তারা মূক, বধির ও অন্ধ হয়ে গেছে, তাদের অন্তর মরে গেছে। এইসব তথাকথিত শাইখুল হাদীছ গং এর অন্তত এতটুকু জানা রয়েছে যে, বেহেশতের দরজায় লিখা রয়েছে, দাইয়্যুস কখনো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। তাদের আরো জানা আছে যে, রাস্তা দিয়ে একটা বেপর্দা মহিলা হেটে গেলে সেখানে চল্লিশ দিন পর্যন্ত খোদার লা’নত বর্ষিত হয়।
সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে কথিত জনসমাবেশে শাইখুল হাদীছ গং এর চোখ ছিল সততই খোলা। তাদের দৃষ্টিসীমার সম্মুখে তিন চারশ গজ ছিল শুধুই মহিলা আর মহিলা। এছাড়াও ডানে বায়েও ছিল মহিলা। সর্বোপরি এ জনসমাবেশের মধ্যমনিও ছিল মহিলা। এখন শাইখুল হাদীছ গংদের নিকট আমাদের প্রশ্ন যে, ইসলাম কি আবার নতুন করে নাযিল হয়েছে নাকি তারা নিজেরাই নতুন নবী দাবী করেছেন অথবা তারা কোন মাদ্রাসায় কোন কিতাব পড়েছেন বা কোন মাদ্রাসায় কোন কিতাব পড়াচ্ছেন যে প্রেক্ষিতে তারা ইসলামের মৌলিক শর্ত কুরআন শরীফের সূরা আহযাব, সূরা নূর সহ অনেক স্থানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত পর্দাকে এভাবে প্রকাশ্য লঙ্ঘন করছেন, আবার পাশাপাশি শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা পরিচয়ে বহাল থাকছেন? এটা তারা কোন ইসলাম করছেন?
আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম? না তাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির ইসলাম, মন্ত্রী এমপি, উপদেষ্টা হওয়ার ইসলাম, তা আজকে দেশ, জাতি ও মুসলমান স্পষ্টভাবে জানতে চায়।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করল সে যেন কুফরী করল।” এজন্য বলা হয়েছে যে, দম থাকা এবং জ্ঞান থাকা পর্যন্ত নামায মাফ নেই। ফিকাহর কিতাবে তাই লিখা হয়েছে পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তি, সন্তান প্রসবরত মহিলারও যদি হুশ থাকে তাহলে ইশারায় হলেও নামায পড়ে নিবে।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে ইসলামের ইতিহাসে নামায কায়িম রাখার বহু বহু নজীর মওজুদ রয়েছে।
নিকট ইতিহাসেও দেখা যায় খোদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন রচিত ইসলামী বিশ্বকোষে বাদশা আলমগীর সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, “রণাঙ্গনে যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে তিনি সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকতেন না। মধ্য এশিয়ায় বল্খের রনাঙ্গনে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলাকালে তিনি একদা নিজের ঘোড়া থেকে নেমে নির্বিঘেœ যুদ্ধের ময়দানে জায়নামায বিছায়ে ছালাত আদায় করেন।”
যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয়, কথিত জনসমাবেশে হাজার হাজার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মওজুদ যে তারা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছেন উল্লিখিত ইসলামী রাজনীতিক তথাকথিত মুফতী, মাওলানা কেউ আছরের নামায পড়েনি। অতএব, এভাবে প্রকাশ্যে আছর নামায ত্যাগ করে তারা কোন ইসলামের সেবকরূপে নিজেদের প্রমাণ করলেন?
তদুপরি আরো উল্লেখ্য যে, আছর নামায সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদীছ শরীফে এই নামাযকে বলা হয়েছে সালাতুল উস্তা। বরং এক হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমাদের সালাতুল উস্তা আদায়ে বাধা দিল আল্লাহ্ পাক তাদের ধ্বংস করুন।’
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একবার বিশেষ জরুরী প্রয়োজনে বিলম্ব হওয়ায় আছরের সালাত আদায়ের প্রায় শেষ মুহূর্তে বেকারার হয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আকুল আরজ করলেন । তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃষ্টি করলেন, সুর্য আবার উজ্বল হল এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামায পড়ার পর তা অস্ত গেল।
বাংলাদেশে যিনি ইসলাম প্রচার করলেন সেই হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন গৌড়গোবিন্দের বিরুদ্ধে জিহাদে পাঠাবেন তখন স্বীয় মুরীদদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমাদের মধ্যে কে জীবনে কখনো আছরের আগে চার রাকায়াত সুন্নত নামায ত্যাগ করেনি? তখন দেখা গেল যে একমাত্র হযরত নাসিরুদ্দীন চেরাগী রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবনে কখনো আছরের পূর্বে চার রাকায়াত সুন্নত নামায ত্যাগ করেননি। তখন তাকেই সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হল। বর্ণিত সংক্ষিপ্ত ঘটনা সমূহ থেকে এটাই প্রতিভাত হয় যে, ইসলামে আছরের নামাযের বিশেষ আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এবং ইসলামে যারা সেনাপতি তথা সৈনিক হবে তাদের মাঝে এই নামাযের প্রতিফলন থাকবে আরো অন্তর্ভেদীরূপে। সেক্ষেত্রে যখন জোটভুক্ত ইসলামী মাওলানা, মুফতী, শাইখুল হাদীছরা যত্রতত্র মিছিল মিটিং এর নামে আছরের নামায প্রকাশ্যে ক্বাযা আদায় করে তখন তারা সত্যিকার অর্থে ইসলামের সৈনিক না দুশমন তাই প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।
কিন্তু আফসোস হলেও সত্য যে, সে জোরালো প্রশ্নটি এদের অনুগামীদের মনে আদৌ উদয় হচ্ছেনা। ইতোপূর্বে সবগুলো তো বটেই এই যে সেদিন ১৯/১০/০৩ তারিখে কথিত জনসমাবেশে এই সব শাইখুল হাদীছ গং ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়াসহ প্রকাশ্যে আছরের নামায ক্বাযা করল সে বিষয়ে উপস্থিত জনতা কেউ টু শব্দ করলনা, কারো মনেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলনা। কেউ কিছু উচ্চারণ করলনা এমনকি তার পরদিন সাংবাদিকরাও কিছু লিখলনা।
অথচ এ লেখায় সুলতানূল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথা বলা হয়েছিল। যে রোযা রাখায় দিন (যেহেতু তিনি মুসাফির ছিলেন) প্রকাশ্যে মুখে রুটি দেয়ায় পুরো জনতার মাঝে বিরূপ প্রতিক্রয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তারা নিন্দাবাদ উচ্চারণ করেছিল তাকে ত্যাগ করেছিল।
কিন্তু আজকে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ গং এভাবে একের পর এক হারাম কাজ করার পরও এমনকি প্রকাশ্যে আছরের নামায তরক করার পরও আজকে কেন উপস্থিত জনতা কেন প্রতিবাদ করছেনা? কেন তাদের প্রতিহত করছেনা? তবে কি তারা আল্লাহ্ পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম ছেড়ে জোট সরকারভূক্ত রাজনৈতিক মুসলমান হয়ে গেল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আবারো প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামের নামে এ ধারার রাজনীতি আর ইসলাম এক নয়। বরং এটা হচ্ছে বর্তমান নামধারী ইসলামী দলগুলোর ইসলামের নামে ধোকা, ব্যবসা। এটা হচ্ছে সাধারণ মুসলমাদের সাথে প্রতারণা করা। এটা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ী মাওলানা, মুফতী, খতীব, শাইখুল হাদীছ গংদের নফসের প্রবণতা, ইবলিস তথা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান