উল্লেখ্য, সুন্নীয়তের প্রতিভু ও আশিকে রসূল দাবীদার উক্ত মহাসচিব ছাহেব যে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করেন তাতে প্রতিদিনই কমপক্ষে একটি করে সিনেমা দেখানো হয়। এছাড়া মহাসচিব ছাহেব যে বেপর্দা-বেহায়ার বিরুদ্ধে ওয়াজ করে থাকেন উক্ত টিভি চ্যানেলই যে সে বেপর্দা-বেহায়ার হাট তা বলাই বাহুল্য। তাহলে তথাকথিত আশিকে রসূল, উক্ত মহাসচিব ছাহেব আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনাকে কোন পর্যায়ে নামালেন তা তিনি ভেবে দেখবেন কি? কারণ, বাথরুম যদিও হারাম জায়গা নয় তারপরেও তাতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা মাকরূহ। আর কুরআন শরীফেই আল্লাহ পাক বলেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার আলোচনাকে আমি সমুন্নত করেছি।” সুতরাং আল্লাহ পাক যার আলোচনাকে সমুন্নত করেছেন উক্ত মহাসচিব রসূল প্রেমের নামে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনাকে কত দূর অবনত করতে উদ্যত হয়েছেন তা তিনি একটু ফিকির করবেন কি? (৫) মহাসচিব ছাহেব রসূল প্রেমের নিদর্শন প্রকাশ করতে প্রায়ই দুরূদ শরীফের ওয়াজ করে থাকেন। দুরূদ শরীফের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলে থাকেন, দোয়ার প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়তে, মাঝে দুরূদ শরীফ পড়তে এবং শেষেও দুরূদ শরীফ পড়তে। কারণ, দুরূদ শরীফ আল্লাহ পাক-এর কাছে নির্ঘাত কবুলযোগ্য। সুতরাং আল্লাহ পাক-এর কাছে কোন্ আমলের প্রথম, মধ্যম ও শেষ যদি কবুলযোগ্য হয় তাহলে বাকিগুলো কবুলযোগ্য নাহলেও আল্লাহ পাক প্রথম, মধ্যম ও শেষ কবুলের কারণে সবটাই কবুল করে নেন। তাহলে বলতে হয়, দুরূদ শরীফ যেমন কবুলযোগ্য তেমনি নাচ-গান সরাসরি অকবুলীয় ও হারাম। বরং আল্লাহ পাক-এর কাছে চরম ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় বলে বিবেচিত। যদি তাই হয়ে থাকে তবে মহাসচিব ছাহেব তথাকথিত যে ইসলামী প্রোগ্রাম করে থাকেন তার আগে-পরে কি হয় তার একটি বিবরণ দেখা যায়। যা তার চ্যানেলের টিভি কিউতে ছাপানো আছে। ১-৮-১৫-২২-২৯ নভেম্বর (সোমবার) /০৪ বিকাল ৩.০০ চ্যানেল আই পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড/২০০৩ ৩.৩০ সত্যের সন্ধানে, ৪.৩০ দেখার গান শোনার গান, ৫.০০ সারেগামা ৩-১০-১৭-২৪-৩১ ডিসেম্বর (শুক্রবার)/০৪ ২.৩০ গ্রামীণ ফোন তৃতীয় যাত্রায় আপনি, ৩.৩০ সত্যের সন্ধানে ৪.১৫ দেখার গান শোনার গান, ৪.৪৫ সারেগামা ৭-১৪-২১ জানুয়ারী (শুক্রবার)/০৫ ২.৩০ তৃতীয় যাত্রায় আপনি, ৩.৩০ সত্যের সন্ধানে ৪.১৫ দেখান গান শোনার গান, ৪.৪৫ সারেগামা ৪-১১-১৮-২৫ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার)/০৫ ২.৩০ তৃতীয় যাত্রায় আপনি, ৩.৩০ সত্যের সন্ধানে ৪.১৫ দেখার গান শোনার গান, ৪.৪৫ সারেগামা দেখা যাচ্ছে যে, মহাসচিব ছাহেবের অনুষ্ঠানের ঠিক সাথে সাথে হচ্ছে গানের অনুষ্ঠান। আবার প্রথমে থাকছে নর্তকী, গায়ক-গায়িকাদের অনুষ্ঠান। মাঝখানেও থাকছে তাই। কাজেই মহাসচিব ছাহেবের নিকট প্রশ্ন, দোয়ার শুরু শেষ ও মাঝখানে দুরূদ পড়া হলে যদি তা কবুলযোগ্য হয়ে উঠে তাহলে আপনার প্রোগ্রামের শুরু শেষে ও মাঝখানে বিশেষ হারাম কাজ অনুষ্ঠিত হওয়ায় আল্লাহ পাক-এর দরবার আপনার প্রোগ্রাম কতটুকু অকবুলীয় হতে পারে? মহাসচিব ছাহেবের নিকট আরো প্রশ্ন যে, আপনার অনুষ্ঠানে আপনার বয়ানের ভাষ্য কি এই যে, যারা আপনার অনুষ্ঠান দেখছে তারা যেন প্রত্যকেই গান-বাজনা শোনার আগ্রহী হয়। সাথে সাথে প্রত্যেকে সারেগামা করতে শিখে। যদি তা হয়ে থাকে, তবে আপনার অনুষ্ঠানের পর দেখার গান শোনার গান এবং সারেগামার উপস্থিতি সাযুজ্য বটে। আর যদি আপনি, আপনার ঈমান রক্ষা করতে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাজনা হারাম’- একথা স্বীকার করেন, তাহলে আপনিই বলুন, আপনি যে টিভি চ্যানেলে যান যেখানে আপনার প্রোগ্রাম শেষের সাথে সাথে হারাম কাজ তথা গান-বাজনা আরম্ভ হয়ে যায়, এটা কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ নিয়ে উপহাস নয়। এটা যে বরং জাহান্নামী হওয়ার কারণ তা কুরআন শরীফে উল্লেখ রয়েছে। উক্ত প্রোগ্রামে আপনি যে তথাকথিত ইসলামী শিক্ষা দেন, সে শিক্ষা উক্ত টিভি চ্যানেলের পরবর্তী বা পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানগুলো সমর্থন করে, না বিরোধিতা করে? আবারো বলতে হয় যে, ঈমান রক্ষার স্বার্থে আপনি বলতে বাধ্য হন যে, বিরোধিতা করে। তাহলে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যা এমন স্ব-বিরোধী হারাম কাজের কি অর্থ ও দরকার থাকতে পারে? এটা কি নিছকই আপনার প্রচারণা ভিন্ন অন্য কিছু। মূলতঃ এটা যে নিছকই আপনার আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রতিষ্ঠা পাবার প্রক্রিয়া তা আপনাদের মুখপত্রে দেয়া আপনার বিজ্ঞাপন থেকেই বুঝা যায়। আমরা ভেবে আশ্চর্য হই যে, কি করে সম্পূর্ণ হারাম ছবি নির্ভর একটি অনুষ্ঠান- যার আগে, পরে, মাঝখানে অগণিত প্রকাশ্য চোখের ব্যভিচার, তার বিজ্ঞাপন দেয়া হয় আপনাদের রেযাখানীদের মুখপত্র ঐ পত্রিকায়। (৬) আপনি বলছেন যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ ছবির বিরুদ্ধে, টিভি চ্যানেলের বিরূদ্ধে বলে বেশী বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু আপনি নিজেও জানেন যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ ছবির বিরূদ্ধে যা বলা হয় তা আল বাইয়্যিনাত-এর নিজস্ব কোন বক্তব্য নয়। যা হাদীছ শরীফের ভাষ্য। যা আপনাদের রেযাখানীদের ইমাম তার মৃত্যুকালেও মেনে চলতে বাধ্য হয়েছেন। তার প্রমাণ ১৯৯৭ সালে আপনাদের ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংখ্যার ১১৫ পৃষ্ঠায় তারা উদ্ধৃত রয়েছে, “ইমাম আহ্মদ রেযা খান তাঁর বেছাল প্রাপ্তির ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট আগে (২৫শে সফর ১৩৪০হিজরী/১৯২১সন) অসিয়ত করেছিলেন যে, তাঁর বেছাল প্রাপ্তির স্থান বারান্দা হতে সকল ছবি সম্বলিত কার্ড, মুদ্রা ও খাম অপসারণ করতে হবে” (হাসনাইন রেযা খাঁন প্রণীত ওয়াসায়া শরীফ, লাহোর, পৃষ্ঠা-৮) ছবি সম্বলিত চিঠির খাম, কার্ড ও মুদ্রা ইমাম ছাহেব সহ্যই করতে পারতেন না। তাঁর অসিয়তনামার লেখক মওলানা হাসনাইন রেযা লিখেছেনঃ “যখন দু’টো বাজার চার মিনিট বাকী, তখন তিনি সময় কত হয়েছে তা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি দেওয়াল ঘড়ি তাঁর সামনে খোলা রাখতে বল্লেন। অতঃপর হঠাৎ তিনি বললেনঃ ‘ছবি সরিয়ে ফেলো! তিনি কার্ড, খাম, টাকা-পয়সাগুলো নিজের কাছে রাখতে চাননি।” (প্রাগুক্ত ওয়াসায়া শরীফ, পৃষ্ঠা-৮) আপনি আরো বলে বেড়াচ্ছেন যে, টিভি চ্যানেলে আপনি ভাল কথাই বলে থাকেন। এর জবাব উপরের কথায় এসেছে। তারপরেও আপনার এই কথিত ভাল সম্পর্কে আল্লাহ পাক জবাব দিচ্ছেন, ‘হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারা আপনাকে প্রশ্ন করে শরাব এবং জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন শরাব ও জুয়াতে ভালোও আছে, মন্দও আছে। তবে ভালোর চেয়ে মন্দটাই বেশী।” (সূরা বাক্বারাঃ ২১৯) কাজেই আপনার কথানুযায়ী আপনার টিভি প্রোগ্রাম দেখার জন্য টিভি সেট রাখতে হয় তাহলে মানুষ শুধু আপনার অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। মানুষের নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় আগে-পরেরগুলোও দেখবে। তাছাড়া আপনার অনুষ্ঠানটাও ছবি নির্ভর হওয়ায় তা যে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী তা যদি এতক্ষণের আলোচনায় আপনার বুঝে না আসে তাহলে ইসলামের মূল্যায়ন আপনাকে আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিলে পরিণত করবে। আর কুরআন শরীফের নির্দেশ অনুযায়ী জাহিলদের নেতা হিসেবে আপনার প্রতি বিশেষ সালাম এবং আপনি যে তথাকথিত সুন্নী সংগঠনের মহাসচিব তাদের জন্য অশেষ দুঃখবোধ। কারণ, রসূল প্রেম, রসূলের হাদীছ, নূরের বর্ণনা, দুরূদ শরীফের ফযীলত, রেযাখানীর ওসীয়ত ইত্যাদি আওড়িয়ে আপনি তাদের কব্জা করলেও টিভি চ্যানেলে আপনার প্রোগ্রামের দ্বারা প্রতীয়মান হয় সবকিছুই ফাঁকা বুলি মূলতঃ আপনার স্বার্থের ঝুলি। সুন্নীয়তের নামে বোকারা আপনার পিছনে গাধার মতোই ছুটছে। আপনি তাদের সামনে সুন্নীয়তের নামে মূলাটা ঝুলিয়ে রাখছেন বটে।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১