কিন্তু ইসলামকে দুনিয়াবী মাপকাঠির মুখাপেক্ষী না করে ইসলামের আঙ্গিকে ইসলামের সৌন্দর্য ও আভিজাত্যতা খুঁজে দেখার চোখ এদের নেই। এরা মনে করে, ‘টেস্টটিউব শিশু নাজায়িয’- এ কথা বললে ইসলামকে কূপমণ্ডক করে রাখা হয়। এতদ্বপ্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, টেস্টটিউব বেবী পদ্ধতিকে নাজায়িয ঘোষণা করে মাসিক আল বাইয়্যিনাত তার তাজদীদী ধারাবাহিকতায় আরেকটি অনবদ্য শ্রেষ্ঠত্ব সংযোজন করলো।
আল বাইয়্যিনাত বক্তব্যে কেবল বিয়ে বহির্ভুত বেগানা পুরুষের মনি থেকে শুক্রাণু নিয়ে টেস্টটিউবে সন্তান লাভের সকল প্রচেষ্টাকেই শরীয়ত বহির্ভুত বলা হয়নি পাশাপাশি যে বিষয়টি এ যাবৎ অনেকেই বলতে পারেনি যে, স্বামী ও স্ত্রীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিয়েও টেস্টটিউব বেবী লাভের প্রচেষ্টা হারাম সেকথা বলার বেমেছালী, ঈমানী ও রূহানী কুয়তও আল বাইয়্যিনাত প্রদর্শন করেছে। আর এর পিছনে আল বাইয়্যিনাত দু’টো বিষয়কে মুখ্যভাবে উল্লেখ করেছেন (১) লজ্জা (২) ফিতরাত। টেস্টটিউব বেবী পদ্ধতি যে সমাজের ফিতরাত বা স্বাভাবিকতায় কিরূপ ফিৎনা তথা সমস্যার ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে বর্তমান বৎসরের মার্চের প্রথম সপ্তাহের একটা ঘটনা তার জ্বলজ্বল প্রমাণ বহন করে। পত্রিকান্তরে পত্রস্থ হয়- “টেক্সাসে যমজ নাতনী সন্তান জন্ম দিলেন দাদী টেক্সাসের ৫২ বছর বয়সী এক মহিলা নির্বিঘ্নে যমজ নাতনী প্রসব করেছেন। পুত্রবধূর জরায়ুর সমস্যার কারণে তিনি তার পুত্রের শুক্রাণু ও পুত্রবধূর ডিম্বাণু ধারণ করেন। টেক্সাসের লেভেলল্যান্ডের অধিবাসী ম্যারিয়েন থমাস যমজ নাতনী প্রসবের পর হাসপাতাল থেকে সুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় টেক্সাসের লুবুক শহরের কভেনন্টি মেডিকেল সেন্টারে তিনি যমজ নাতনী প্রসব করেন। থমাস টেলিফোন সাক্ষাৎকারে জানান, এই পৃথিবীতে তাদের আনতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি। তবে গর্ভকালীন সময়টি বেশ সহজ ছিল। এমন কি প্রায় ২৮ বছর আগে তার শেষ সন্তান জন্মদানের চেয়েও সহজ ছিল। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, তাদের জানা নেই এর আগে কোন দাদী নাতী প্রসব করেছে কিনা। থমাস স্বেচ্ছায় তার পুত্র শয়ান রডির শুক্রাণু ও তার স্ত্রী ট্রাসির ডিম্বাণু ধারণ করেন। শয়ান এবং তার স্ত্রী ট্রাসি ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাদের আইনি সমস্যা এড়াতে এ ধরনের মাতৃগর্ভের পরামর্শ দেন। তারা সুস্থ আছেন।”
প্রকাশিত খবরের প্রথম ও শেষের লাইন উল্লেখ্য। প্রথম লাইনে বলা হয়েছে, এক মহিলা নির্বিঘেœ যমজ নাতনী প্রসব করেছেন। আর শেষ লাইনে বলা হয়েছে, … ডাক্তার তাদের আইনি সমস্যা এড়াতে এ ধরনের মাতৃগর্ভের পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, স্বাভাবিকভাবেই মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা শিশুকে সন্তান হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এখানে কার্যতঃ বলা হয়েছে নাতনী। মূলতঃ টেস্টটিউব বেবী সমাজে আরো কত অরাজকতা তৈরী করতে পারে এটি তার সামান্য নজীর মাত্র। পাশাপাশি টেস্টটিউব বেবী পদ্ধতির প্রচলন সমাজে যে কত নির্লজ্জতার নজীর তৈরী করতে পারে বর্ণিত ঘটনা তারও উদাহরণ। ছেলের শুক্রাণু ধারণ করেছে মা। যা কার্যতঃ মা-ছেলের একান্তবাসের মতই জঘন্য কাজের শামিল। যেটা মানব সমাজে নয় বরং পশু জগতেই কল্পনা করা সম্ভব। প্রসঙ্গতঃ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “যখন তুমি নির্লজ্জ হও তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পার।” মূলতঃ বর্ণিত ঘটনায়ও তাই হয়েছে। এবং বলা চলে এ ধারাবাহিকতা গড়াতে পারে আরো অনেক দূর। যথা পিতার শুক্রাণু মেয়ের পেটে, ভাইয়ের শুক্রাণু বোনের পেটে ধারণ করারও নজীর তৈরী করতে পারে এ টেস্টটিউব প্রক্রিয়া। আর তাহলে মানুষের মধ্যে ও পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবেনা। অর্থাৎ মানুষের আশরাফিয়াতের কোন অস্তিত্বই থাকবেনা। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক লোক উপরোক্ত কাজ করে থাকে। কিন্তু সেটা যেহেতু তারা বিধর্মী তাই তাদের দ্বারা সম্ভব। কারণ, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।” আর যেহেতু বিধর্মীদের ঈমানও নেই তাই তাদের লজ্জাও নেই। তাই কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব এরূপ গর্হীত কাজ করা।
সুতরাং সচেতন মুসলমানের উচিত এ টেস্টটিউব বেবী ধারণাটির প্রতি চরম ঘৃণা ও শ্লাঘাজনিত মনোভাব এবং তা রোধ করার মানসিকতা তৈরী করা।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন