আহলে তাসাউফগণ বলিয়াছেন, “খোদাতায়ালা মানুষকে দুইটি চক্ষু দুইটি কান ও একটি জিহ্বা প্রদান করিয়াছেন। ইহার পিছনে কারণ হইল যে, মানুষ লেখিবে শুনিবে ও বুঝিবে বেশী; কিন্তু বলিবে কম।”
তদুপরি খোদাতায়ালা এক জিহ্বার জন্য দুইটি ঠোট পাহারাদার নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন উহারা জিহ্বাকে স্বীয় আয়ত্তাধীনে রাখিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের” হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان العبد ليتكلم بالكلمة من رضوان الله لا يلقى لها بالا يرفع الله بها درجات وان العبد ليتكلم بالكلمة من مخط الله لا يلقى لها بالا يهوى بها فى النار ابعد ما بهن المشرق والمعرب.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই বান্দা বিনা তাহক্বীকে, বিনা পরিণাম চিন্তায় আল্লাহ তায়ালার কাছে সন্তোষজনক একটি কথা বলিয়া থাকে, আল্লাহ পাক তজ্জন্য তাহাকে বহু উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন। আর নিশ্চয়ই বান্দা পরিণাম চিন্তা না করিয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে অসন্তোষজনক একটি কথা বলিয়া থাকে আল্লাহ্ পাক তজ্জন্য তাহাকে সূর্যের অস্তদয় স্থলের দূরত্ব অপেক্ষা অধিকতর দোযখের নিম্নস্তরে নিক্ষেপ করেন।”
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তুমি নিজেকে (বাতিল কথা হইতে) রক্ষণাবেক্ষণ কর। ইহাতে বলা হইল, হে আল্লাহ পাক-এর নবী! আমরা যে কথা বলিয়া থাকি তজ্জন্য সত্যই কি আমরা শাস্তিগ্রস্ত হইব? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, হে মু’আজ! তোমার মাতা তোমার উপর ক্রন্দন করুক। লোকদিগকে তাহাদের জিহ্বা নিঃসৃত বাক্যাবলী ব্যতীত অন্যকিছু উল্টোভাবে দোযখে নিক্ষেপ করেনা।”
পাঠক! উপরোক্ত হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে এবারে বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতীব তথা তথাকথিত খতীবের দুটো কথা নিয়েই এই লেখার অবতারনা।
সম্প্রতি সে বলিয়াছে যে, “ইসলামে ৩টি নববর্ষ রহিয়াছে এর একটি হল ঈসায়ী বর্ষ, যেটা খ্রীষ্টাব্দ হিসাবে চালু আছে অন্যটি চাঁদের হিসাবে হিজরী বর্ষ। আর অন্যটি হল হিজরী সন থেকে বাংলা বর্ষে রুপান্তর।
…… আল্লাহ্র বহু বড় নিয়ামত হলো নববর্ষ। নববর্ষ পালন করতে গিয়ে দান-খয়রাত করতে হবে শুকরিয়া আদায় করতে হবে দোয়া করতে হবে।” (দৈনিক মানবজমিন ১০-০৪-’০৪ শেষ পৃষ্ঠা)
পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সে বলিয়াছে, “ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত। এটা খ্রীষ্টানদের কালচার। খ্রীষ্টানরা জন্মদিন পালন করে থাকে। এজন্য কোন অনুষ্ঠান বা দান-খয়রাত করা যাবেনা ইত্যাদি।”
মূলতঃ নববর্ষ ও ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তথাকথিত এই খতীবের খুৎবা এতই স্ববিরোধী ও জিহালতী এবং প্রতারণা ও ধোকাযুক্ত হইয়াছে কেবল সূক্ষ্মভাবে ফিকির করিলেই তাহা গভীরভাবে অনুভব করা যাইবে।
তথাকথিত এই খতীব খ্রীষ্টাব্দ সনকে ইসলামী সন বলিয়াছে। আরও বলিয়াছে যে নববর্ষ আল্লাহ্ পাক-এর বহু বড় নিয়ামত।
যদি তাহাই হইয়া থাকে তাহা হইলে বলিতে হয় যে, খ্রীষ্টাব্দ ইসলামী সন হিসাবে ইহারও নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা জানুয়ারী যাহা বিশ্বের তামাম খ্রীষ্টানরা থার্টি ফাষ্ট নাইট হিসেবে পালন করিয়া থাকে তাহা পালনও মুসলমানদের জন্য ফরয হইয়া যায়?
খতীব জন্মদিন পালন খ্রীষ্টানদের কালচার বলিয়া ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন নাজায়িয ঘোষণা করিয়াছে। কিন্তু খ্রীষ্টাব্দ ইসলামী সন এবং নববর্ষ বড় নিয়ামত বলিয়া তথা পহেলা জানুয়ারী বা থার্টি ফাষ্ট নাইট কালচারে উদ্বুদ্ধ করিয়া সে নিজেই সবাইকে কাট্টা খ্রীষ্টানী কালচারে ভাসাইয়া দিলো না কি?
খতীব বলিয়াছে, “জন্মদিন পালন করা খ্রীষ্টানদের কালচার।”
কিন্তু আমরা বলি যে, খতীব যদি বলিতেন বিয়া-শাদী করা, সন্তানের নাম রাখা, দাফন করা এইগুলো খ্রীষ্টানদের কালচার তাহা হইলেও ভুল হইত না।
কিন্তু শুধু ভুল নয় মহাভুল তখনই যখন ঐগুলো খ্রীষ্টানরা করে বলিয়া তথাকথিত খতীব তাহা মুসলমানদের জন্য বিদয়াত বলিয়া ঘোষণা করে।
আমরা আশঙ্কা করিতেছি যে কবে যেন বয়ঃবৃদ্ধ খতীবকে বুড়ো বয়সে আরো ভীমরতিতে ধরে। আমরা জানিয়াছি এই বুড়ো বয়সে তিনি আগের মত খাইতে পারেননা। আর ইহার কারণ খুঁজিতে গিয়া অবশেষে তিনি না ভাবিয়া বসেন আসলে খ্রীষ্টানরাও খায়, খৃষ্টানরা যা খায় সেই শুকরও খায় সুতরাং খাওয়া দাওয়া করিয়া খ্রীষ্টানদের কালচারই নয় বরং শুকরের কালচারও পালন করা হয়।
আমরা ভাবিয়া গলদঘর্ম হইতেছি এই কারণে, না জানি তথাকথিত খতীব কোনদিন আরেক খুৎবা দিয়া বসেন যে, খাওয়া-দাওয়া করা বিয়ে-শাদী করা, পোশাক পড়া, সন্তানের নাম রাখা, দাফন করা এইসবই খ্রীষ্টানী কালচার কাজেই এসবই বাদ দিতে হইবে।
মূলতঃ ইহার সমাধান খতীব বার বার আওড়াইলেও তাহার বুকের মধ্যে সেই ইল্মের নূর জাগিয়া উঠে নাই।
কথায় কথায় অনেকবারই তিনি আওড়ান তর্জ-তরীক্বা। এখানে শুধু তর্জ দেখিলে হইবে না তরীক্বার প্রতিও খেয়াল রাখিতে হইবে। সেইটাই হইলো আসল কথা।
খ্রীষ্টানরাও খায় কিন্তু কি তরীক্বায় খায়? মুসলমানদের মত বিসমিল্লাহ বলিয়া হাত ধুইয়া, বাসন চাটিয়া খায়? মুসলমানদের একান্ত বাস পর্দার সাথে হয়, ফরয গোসল করতে হয়; খ্রীষ্টানরা কি তাহা করে?
খ্রীষ্টানদের দাফন কি মুসলমানদের মত? যদিও হিন্দুদের মত খ্রীষ্টানদের চিতা পোড়ানো হয়না মাটির নীচেই শোয়ানো হয়।
খ্রীষ্টানরা জন্মদিনে কেক কাটে, মোমবাতি ধরায়, নাচ-গান করে, হৈ-হুল্লোর করে কিন্তু মুসলমানরা পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিনে কি তাহাই করে।
হ্যা,ঁ যাহারা জশনে জুলুছের নামে গান-বাজনা করে, যুবতীদের মিছিল বাহির করে সেসব নাজায়িয কাজের বিরুদ্ধে বলিলে তাহা শোভা পাইত। কিন্তু মাথাব্যাথা বলিয়া মাথাই কাটিয়া ফালাইতে চান তথাকথিত খতীব। মসজিদে জুতা চুরি হয় বলিয়া, মসজিদই উচ্ছেদ করার মত কথা বলতে চান তিনি।
খতীব বলিয়াছে, ‘জন্মদিন পালন খ্রীষ্টানদের বড় দিন হিন্দুদের জন্মষ্টমীর থেকে আসিয়াছে।’ (নাউযুবিল্লাহ)
কিন্তু বাংলা নববর্ষ কোথা থেকে আসিয়াছে? ইহা যে ইসলাম ধর্মদ্রোহী খোদাদাবী কারী সিজদা প্রচলনকারী দ্বীনে ইলাহী প্রবর্তনকারী মুরতাদ আকবরের ঐতিহ্যগতভাবে অগ্নিপূজারী পারসিক কালচারের ভাবধারা হইতে আসিয়াছে; তাহা খতীব জানিয়াছে কি? ইহা যে খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০ সালে জমশীদ প্রবর্তন করে তাহা সে ভাবিয়া দেখিয়াছে কি?
মূলতঃ তথাকথিত খতীব বয়সে যত বৃদ্ধ হইয়াছে কাঙ্খিত জ্ঞান গরীমায় তত অভিজ্ঞ হইয়াছে তাহা আদৌ বলা যায়না।
কারণ, মাসিক আল বাইয়্যিনাতে এযাবত বিস্তর দলীল-আদিল্লা দেয়া হইয়াছে যে, ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের খাছ সুন্নত। তাহা আদৌ খ্রীষ্টান-হিন্দুদের কালচার নয়। খ্রীষ্টান ও হিন্দুদের কালচার নববর্ষ পালন করা। বাংলা নববর্ষে হিন্দুরা ঘট পূজা করিয়া থাকে।
অতএব ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে খতীবের জিহালতি ও গোমরাহী খুৎবা প্রত্যাহার না করিলে হাদীছ শরীফের বরাতে বলা য়ায় সে, এই ধরণের কুফরীমূলক বক্তব্যর জন্য তাহাকে অধঃমস্তকে জাহান্নামে যাইতে হইতে পারে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
-মুহম্মদ ওয়ালীর্উ রহমান, ঢাকা।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ