হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী জামানায় এমন কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে তারা এমনসব মিথ্যা কথা বলবে, যা তোমরা শোননি তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষ শোনেনি।” আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষ শোনেনি যে, মসজিদে মহিলাদের জামায়াত হয়। এ কারণে বাংলাদেশ, এ উপমহাদেশ তথা বিশ্বের সর্বত্রই মহিলাদের জন্য আলাদা মসজিদ বা মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিলনা বললেই চলে। কিন্তু নেকীর ছূরতে ইবলিসের ওয়াস্ওয়াসা বলে একটা কথা রয়েছে। এদিক থেকে এক ধরনের তথাকথিত প্রগতিবাদী ইসলামী চিন্তাবিদরা খুব সহজেই ইবলিসের এ ধরনের ওয়াস্ওয়াসার স্বীকার হচ্ছেন। আধুনিক শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সমান্তরালে তারা তাদের অর্জিত শিক্ষা, প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্ব দ্বারা আলাদাভাবে সমুজ্জ্বল বৈশিষ্টম-িত হতে পারেন নি বিধায় প্রবাহমান সামাজিক মানসিকতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। মসজিদে মহিলাদের জামায়াত করার একটা নতুন অনুষঙ্গেঁর প্রচারণা ও ব্যবস্থাপনা করতে পারলে কথিত সুশীল সমাজের নেক দৃষ্টি তারা পাবেন বটে- এই স্বার্থবাদী চিন্তা তাদেরকে আক্রান্ত করেছে। একশ্রেণীর তথাকথিত আধুনিক মাওলানা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এরা যেসব তথাকথিত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা পেয়ে আসছে সেসব প্রতিষ্ঠান ইসলামের নামে একটি চিহ্নিত, বিকৃত জামায়াত দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ও পরিচালিত। ইসলামের নামধারী ঐ চিহ্নিত ইসলামী জামায়াতটির মসজিদে মহিলা জামায়াত প্রচলনের পিছনে অবশ্য তাদের স্বার্থবাদী, রাজনৈতিক কারণটা সুস্পষ্ট। সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে ‘ভোট দিলে পাল্লায় … খুশী হবে আল্লায়’- এ শ্লোগানে ধোঁকা দেয়ার পাশাপাশি সাধারণ মহিলাদেরকে বোরকার অন্তরালে কুরআন শরীফের স্পর্শে ফুসলানো তাদের বহুদিনের রীতি। সেক্ষেত্রে মসজিদে জামায়াতের দোহাই দিয়ে যদি মহিলাদের ঘর থেকে বের করা যায় তবে সহজেই তাদেরকে শিকার করা যায়। বাড়ী বাড়ী যাওয়া ঝামেলা ও সঙ্কুলতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মহিলা জামায়াতের নামে মসজিদেই এক সাথে এক ঝাঁক মহিলা কর্মী বানানোর মওকা পাওয়া যায়। অর্থাৎ মহিলা জামায়াতের নিয়তের উদ্দেশ্য যে এখানে সম্পূর্ণাই গায়রুল্লাহ বা স্বার্থমুখী প্রবণতা তা একশ’তে একশ’ স্পষ্ট ও নিশ্চিত। নিয়ত বা উদ্দেশ্য যদি আল্লাহ পাকই হতো তাহলে তথাকথিত খতীব “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করার তুলনায় নিজ বাড়ীতে নামায আদায় করার ফযীলত বেশী”- এ কথা স্বীকার করার পরও আবার মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার জন্য ওকালতি করবে কেন? মুছল্লীরা ফযীলতের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে জামায়াতেনামায আদায় করে। যাতে ২৭ থেকে ৫০০ গুণ বেশী ফযীলত হয়। ফযীলত বেশী বলেই পরহিযগারগণ পাগড়ী পড়ে নামায পড়েন যার কারণে ৭০ গুণ বেশী ফযীলত হয়। হাদীছ শরীফে এও ইরশাদ হয়েছে যে, “পুরুষরা যদি জানত যে, মসজিদে জামায়াতের কি ফযীলত, তাহলে তারা অসুস্থ হলেও গড়িয়ে গড়িয়ে মসজিদে জামায়াতে হাজির হতো।” মূলত: এ কারণে ফযীলতের জন্যই পুরুষদের এত কষ্ট করে হলেও মসজিদে জামায়াতে হাজির হওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। উল্লেখ্য, কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “পুরুষ যা কামাই করে তা পুরুষ এবং নারী যা কামাই করে তা নারীর জন্য।” মূলত: পুরুষ ও নারীর নামায, রোযা সব ইবাদতেই রয়েছে ভিন্নতা। পুরুষের জন্য হালাল কামাই করা ফরয; নারীর জন্য নয়। তদ্রুপ পুরুষের জন্য জামায়াতে হাজির হওয়া ফযীলতের কারণ। কিন্তু নারীর জন্য ঘরের ভিতরেই নামায আদায় করা ২৫ গুণ বেশী ফযীলতের কারণ। সুতরাং ফযীলতের জন্য যদি পুরুষকে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধকরণ ইসলামী চেতনা হয় সেক্ষেত্রে ঘরের ভিতরই মহিলাদের ২৫ গুণ বেশী ফযীলতের কথা হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে মহিলাদের ঘরের ভিতরেই নামায আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করা কি সত্যিকার ইসলামী চেতনা নয়? এবং তার বিপরীত তাদেরকে ঘর থেকে বের হতে উদ্বুদ্ধ করা কি নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা নয়? হাদীছ শরীফে ব্যক্ত ২৫ গুণ ফযীলত থেকে বঞ্চিত করার ইবলিসি চক্রান্ত নয়? উল্লেখ্য, সে ইবলিসি এ চক্রান্তেই বা ইবলিসের ফাঁদে পড়ে গেছেন তথাকথিত খতীব ওবায়দুল হক। যিনি বলেছেন, “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করার তুলনায় নিজ বাড়ীতে ফযীলত বেশী। তবে তাদের মসজিদে যাতায়াতে মূলত: শরীয়তের কোন বাধা নেই।” অথচ এরপরেই আবার তিনি বলেছেন, “তাছাড়া পরিবেশগত কারণে ফিৎনার আশঙ্কায় এবং পর্দার প্রতি অবহেলার কারণে হানাফী ফক্বীহগণ মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন।” উল্লেখ্য, এটা শুধু হানাফী ফক্বীহগণ নয় বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাঝেও ইজমা হয়ে গেছে যে, ‘মহিলাদের জন্য মসজিদে জামায়াতে হাজির হওয়া মাকরূহ।” দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন সর্বপ্রথম মসজিদে মহিলা জামায়াত নিষিদ্ধ করেন তখন সে বিষয়ে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছে পেশ করা হয়। তিনি বললেন, “স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যদি তোমাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন তাহলে তিনিও নিষেধ করে দিতেন।” “তবে আশার কথা পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে বর্তমানকালে তাদের মসজিদে আগমনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”- খতীবের এ মন্তব্য ইসলামের দৃষ্টিতে কোন্ পর্যায়ে পড়ে? তিনি কি একটি নাজায়িয ও হারাম কাজের জন্য আশাবাদী হলেন না। যা কি সুস্পষ্ট কুফরী নয়? আর তিনি কি নিজের ভাষ্যমতেই মহিলাদের জন্য বেশী ফযীলত থেকে কমের দিকে প্ররোচনাকারী হিসেবে সাব্যস্ত হলেন না? আর তার বক্তব্য দ্বারা আসলে সেটাই যে তিনি চান’ তাই কি প্রমাণিত হয় না? তিনি বলেছেন, “পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে বর্তমানে মহিলাদের মসজিদে আগমনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।” কিন্তু কথা হলো, তিনি নিজেই আসলে পর্দা করেন না। করলে তিনি কি করে গত ৩রা জুলাই প্রকাশ্যে বর্তমান মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দিকে ঘণ্টা খানিকেরও বেশী সময় ধরে তাকিয়ে থাকলেন। অথচ তার জানা রয়েছে, হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরাহ গুনাহ্।” তাহলে বর্তমান প্রধামমন্ত্রীসহ আরো মহিলাদের দিকে এরূপ অহরহ তাকানোর ফলে কত কঠিন ও কত বেশী কবীরাহ গুনাহ তার দ্বারা হয়েছে বা হয়। আর শুধু তিনি নিজেই মহিলাদের দিকে তাকান না। তার অধীনস্ত মহিলারাও দিব্যি পর-পুরুষের সাথে উঠা-বসা, দেখা-সাক্ষাত করে। সেক্ষেত্রে হাদীছ শরীফে বর্ণিত ‘দাইয়্যূসের’ সংজ্ঞা থেকে তাকে আলাদা করা যায় কি করে? আর বেহেশতের দরজায় যে লেখা রয়েছে, “দাইয়্যূস্ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা।”- এটাও তার অজানা থাকার কথা নয়। আর শুধু কি পর্দা? ‘ছবি তোলা ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন আযাব যোগ্য কাজ।’ যা বুখারী শরীফে আছে। অথচ এই কাজটি তিনি দিব্যি করে যাচ্ছেন। ‘বিজাতীর অনুসরণ করা হারাম।’ অথচ তিনি দিব্যি ব্লাসফেমী আইন চাইছেন, ভোট-নির্বাচন করছেন। এতসব প্রকাশ্য কুফরী করার পর মূলত: তার ঈমান থাকে কি করে? এ কারণে হানাফী মাযহাবের লোক হওয়া সত্বেও তার কথায় হানাফী মাযহাবের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পাওয়া বিচিত্র নয়। কিন্তু কথা হলো, ক্রমাগত হারাম আর কুফরী করার পর সে ইল্ম বা বুঝটুকুও তার অন্তর থেকে অন্তর্হিত হয়েছে। নচেৎ “তবে আশার কথা বর্তমানে মহিলাদের মসজিদে আগমনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”- তার এ মন্তব্য দ্বারা যে হানাফী মাযহাব ইসলামের বাইরে অথবা হানাফী মাযহাবের ফক্বীহগণ ভুল করেছেন আর বর্তমান মহিলারা মসজিদে এসে আশার আলো জ্বালাচ্ছেন- সে কথাই বোঝায়- তা তিনি বুঝতে পারতেন। তিনি আরো উপলব্ধি করতে পারতেন যে, তার এ বক্তব্য দ্বারা তিনি লা-মাযহাবী সন্ত্রাসী গালিবের দলভুক্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য, এই লা-মাযহাবীরাও মসজিদে মহিলা জামায়াতের জন্য তৎপর। অতএব, বাইতুল মোকাররমে নামায আদায়কারী শত-সহস্র হানাফী মাযহাবের অনুসারী মুছল্লীদের ইমামতি করার অধিকার তিনি স্পষ্ট হারিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তওবা না করা পর্যন্ত তার পিছনে নামায আদায় করা ধর্মপ্রাণদের জন্য ঠিক হবে না। কেননা, তার উদাহরণটা এরকম যে, যদি প্রশ্ন করার হয়- ‘ভাই-বোন বিয়ে জায়িয কিনা? মূর্তি তৈরী জায়িয কিনা?’ তখন তার উল্লিখিত মন্তব্যের ধরণ অনুযায়ী জবাবে হবে, শরীয়তে মুহম্মদীতে জায়িয নেই তবে জায়িয রয়েছে।” উল্লেখ্য, একথা ঠিক যে ভাই-বোন বিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর শরীয়তের জায়িয ছিলো। পূজাবিহীন মূর্তি হযরত সোলায়মান আলাইহিস্ সালাম-এর জামানা পর্যন্ত শরীয়তে জায়িয ছিল। মূলত: হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর শরীয়তী হুকুম বা পূর্ববর্তী অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণের শরীয়তী সব আমল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য জায়িয হবে না। তদ্রুপ এক মাযহাবের আমল অন্য মাযহাবীদের জন্য জায়িয নয়। আর মাযহাব পরিবর্তনও ঈমানের খেলাফ। সেক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের ইমাম ও খতীব হিসেবে থেকেও তিনি কি করে অন্য মাযহাবের জন্য ওকালতি করেন। তবে কি তিনি মনে করেন, হানাফী মাযহাব ইসলামের বাইরে। এর হুকুম বর্তমানে উপযোগী নয়। সেক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে শত সহস্র হানাফী মুছল্লীর ইমামতি ও খতীবগিরি করার অধিকার তার আদৌ বলবৎ নেই। তারপরেও যদি তিনি গায়ের জোরে করে যান তবে সেটা হবে স্পষ্ট মুনাফিকী। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “মুনাফিকরাই ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর।”
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫