জাতীয় মসজিদ কথাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে গৃহীত বটে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের আলোকে এটা কতটুকু দুরস্ত সেকথা জাতীয় মসজিদের খতীব পরিচয় দানকারী অদ্যাবধি একবারও ফিকির করেছেন তা বলা যায় না।
বলাবাহুল্য, তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মসজিদ হতে পারে কিন্তু বাঙ্গালী তথা বাংলাদেশী বা মুসলমান জাতি হিসেবে কোন অর্থে একটি মসজিদকে কোন জাতির সাথে সম্পৃক্ত করা যায় কি?
উল্লেখ্য, বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী যে জাতীয়তাবাদের কথাই বলা হোকনা কেন, তাতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ইত্যাদির সংমিশ্রণ স্বীকার করতেই হবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান নির্বিশেষে বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী জাতির জাতীয় মসজিদ কথাটি কতদূর সঠিক হতে পারে।
অপরদিকে মুসলমান জাতি হিসেবে যদি কল্পনা করা হয়, তাহলে হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে বলতে হয়, তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদ সমান। যথা- (১) বাইতুল্লাহ, (২) মসজিদে নববী, (৩) বায়তুল মুকাদ্দাস।
এ ব্যতীত বাইতুল মোর্কারম মসজিদ যা অন্য সব মসজিদও একই কথা। তাই বাইতুল মোকাররম মসজিদকেই জাতীয় মসজিদ ঘোষণা ও তার প্রাধান্য বা শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা ইসলামের দৃষ্টিতে শোভা পায়না। বড় দুঃখজনক ও ধিক্কারজনক যে, এ বোধটি জাতীয় মসজিদের তথাকথিত খতীব পরিচয় দানকারী ব্যক্তিটি তার দীর্ঘ বয়ঃবৃদ্ধ জীবনে আজও অনুভব করতে পারেননি। বরং জাতীয় মসজিদের তথাকথিত জাতীয় খতীব পরিচয় প্রকাশে তিনি বেশ পুলকিত বোধ করেন।
অথচ জাতীয়তাবোধ সম্পর্কে, সংস্কৃতি সম্পর্কে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তিনি নিতান্তই নাদান ও বেখবর। যদিও এ বিষয়েই তিনি ওয়াজ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, “নববর্ষের দিন যুবক-যুবতি বেহায়াপনার সাথে রাস্তায় চলাফেরা করে। এগুলো আল্লাহ পাক-এর নাফরমানি। ইসলামে এসব বৈধ নয়। এসব মুসলমানের সংস্কৃতি নয়। এজন্য বিপদ আসতে পারে। আমরা মুশরিকদের অনুসরণ করবো না। অন্যের কালচার, খ্রীষ্টানদের কালচার, সংস্কৃতি অনুসরণ করবো না। মুসলমান হিসেবে ইসলামের অনুসারী হতে হবে। নববর্ষে আমরা যেন ইসলামের নীতি পালন করতে পারি এটাই দোয়া করতে হবে।”
পাঠক! ইসলামের দৃষ্টিতে তথাকথিত খতীবের এই নছীহত হয়েছে ঐরকমই যেমন, পেপার-পত্রিকায় প্রচারিত হয়ে থাকে, “ইনশাআল্লাহ অমুক তারিখে অমুক সিনেমা শুভমুক্তি।” অনেকটা বিছমিল্লাহ বলে ঘুষ খাওয়ার মত অথবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে কালিপূজা করার মত।
কারণ, নববর্ষ পালনই যেখানে ইসলামের দৃষ্টিতে জায়িয নেই, নববর্ষই যেখানে বিধর্মী, মুশরিক, আগুন পূজারী, পারসিকদের কালচার। সেখানে আমরা মুশরিকদের অনুসরণ করবো না, অন্যের কালচার খ্রীষ্টানদের কালচার, সংস্কৃতি অনুসরণ করবো না … সেকথা বলার পরেই ‘নববর্ষে আমরা যেন ইসলামের নীতি পালন করতে পারি’ একথা বলা তথাকথিত খতীবের নিরেট অজ্ঞতা ও জিহালত তথা অথর্বতা ও অযোগ্যতা প্রমাণ করে।
পাঠক! এবার আসুন তথাকথিত এই খতীব যে বাইতুল মোকাররমের খতীব, সেখানেরই ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষে নওরোজ সম্পর্কে কি বলেছে।
মুসলিম গণনায় তথা হিজরী সালে
নওরোজ গৃহীত হয় নাই
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
“ফার্সী নববর্ষের দিন, আরবী গ্রন্থসমূহে প্রায় নাওরোজরূপে উল্লিখিত (কালকাশান্দী, সুবহুল আশা, ২খ ৪০৮)। পারস্যের সৌরসালের ইহা ছিল প্রথম দিন এবং মুসলিম চান্দ্র সহ হিজরীতে ইহা গৃহীত হয় নাই।”
অর্থাৎ মুসলিম হিজরী সালে বৎসরের প্রথম দিন বা নববর্ষের কোন উল্লেখ নেই। এর কোন ফযীলত নেই বরং তা পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও বিদয়াত।
নওরোজ মানেই বল্গাহারা
অনৈসলামিক আনন্দ উৎসব
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
“যেখানেই নওরোজ অনুষ্ঠিত হইয়াছে সেইখানেই আনন্দ উৎসব হইয়াছে। সাসানীয় পারস্যে সম্রাটগণ বিরাট ভোজের আয়োজন করিতেন, সেই সময়ে তাহাদিগকে উপহার দেয়ারও রেওয়াজ ছিল আর রাস্তায় যাহারা জড়িত হত সে সাধারণ লোকেরা রঙিন পানি ছিটাইয়া বাতি জ্বালাইয়া আনন্দ করিত।” কাজেই নওরোজ পালন মানেই অনৈসলামিক আনন্দ কিন্তু তার উপর ইসলামী লেবেল আটা বা ইসলাম সম্মত উপায়ে তা পালন করার জন্য তথাকথিত খতীবের আহবান আমাদেরকে ঐ হাদীছ শরীফের কথা মনে করিয়ে দেয় যে, “আখিরী যামানায় মানুষ শরাব পান করবে নাম পাল্টিয়ে বা হালাল বানিয়ে।”
নওরোজ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের উৎসব
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
“পারস্যের সুপ্রাচীন কাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইহা ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের দিন হিসাবে চিরদিন বিরাট আনন্দ উৎসবের সঙ্গে পালিত হইয়া আসিয়াছে। ”
সুতরাং এটাই এখন সাব্যস্ত হয়না যে, তথাকথিত খতীব এতদিন পর্যন্ত যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রতি বিষোদগার করেছেন এখন নিজেই তার ক্যানভাসে নেমেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
নওরোজের উৎস পারস্যের অগ্নি
উপাসকদের থেকে
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
ঐতিহ্যমতে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খৃষ্ট পূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিলেন। সেই হতে যুগে যুগে উদযাপিত হইয়া ইহা জাতীয় আনন্দময় নববর্ষ দিবসে পরিণত হইয়াছে। এবং এ ধারাবাহিকতা এখনও পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
পারসিক কালচারে সমৃদ্ধ কাট্টা শিয়া রাষ্ট্র ইরানে এখনও ইহা জাতীয় দিবস এবং দেশের সকল অধিবাসী মহা আনন্দ উৎসবের সঙ্গে উদযাপন করিয়া থাকে, ২২-২৪ মার্চ সেখানে ‘ঈদ-ই নওরোজের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন।
ভারতবর্ষে নওরোজের প্রচলন ছিলনা
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই ফার্সীকে রাষ্ট্রভাষা করা হলেও নওরোজ উদযাপনের রীতি প্রচলিত হয়েছিল বলে জানা যায় না। পূর্ব প্রান্তের বাংলাদেশ পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করিয়াছিলেন প্রধানত ইরানের ছূফী দরবেশগণ কিন্তু এখানে ধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইরানী রীতিনীতি প্রচলিত হতে থাকলেও প্রাক মুঘল যুগে কোথাও নওরোজ পালিত হয়েছিল বলে জানা যায় না।
হুমায়ূনের আমলে শিয়াদের প্রাধান্যের কারণে তাদের দ্বারাই ভারতে তথা বাংলাদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের সূচনা হয়
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষের ত্রয়োদশ খণ্ডের ৬০৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
মুঘল সম্রাট হুমায়ুন পারস্য সম্রাট ২য় শাহ তাহমাসপ-এর সৈন্যের সহায়তায় দ্বিতীয়বার পিতার সিংহাসন অধিকার করিলে (১৫৫৬ খৃ.) তখন হতে উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ইরানী শিয়াগণের আগমন ঘটিতে থাকে এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক রীতিনীতিতে ইরানী (শিয়া) প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে থাকে। নওরোজ উৎসব এই সময় হতেই সম্রাজ্যের সর্বত্র উদযাপিত হতে থাকে। আগ্রা ও দিল্লীতে এই দিনে বিরাট রাষ্ট্রীয় ভোজ এবং সর্বসাধারণের মেলা, ক্রীড়া, রাত্রে বাতি জ্বালানো উৎসব হইতো কিন্তু বিশেষ উৎসবটি হত রাজপ্রাসাদ এলাকাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সমাবেশে।
বাংলা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উপলক্ষে শহরে ও গ্রামে যে ভোজ, মেলা উৎসব হয় তাও ইরানী নওরোজ হতেই পরোক্ষভাবে এ দেশে এসেছে। মুঘল পূর্ববর্তী আমলে এ দেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিলনা।
বাংলা নববর্ষ পালন দ্বীন-ই-ইলাহীর
প্রবর্তক আকবরের আরেক প্রচলন
সুলতানী আমলে এই দেশের সমাজ জীবনে প্রচলিত উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে নববর্ষ বা নওরোজের কোন উল্লেখ নাই। বস্তুত নববর্ষ বা নওরোজ এই উৎসব এবং তা সম্রাট আকবর এর আমলে নতুন সন আকবরী সন বা ফসলী সন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছে।
সম্রাটের ফরমানে প্রত্যেক সনের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনগুলো উল্লিখিত ছিল, সকলের আগে ছিল ‘নওরোজের কয়েক দিন” এবং নির্দেশ ছিল যে, প্রত্যেক শহরে ও গ্রামে গ্রামে সেই উপলক্ষে যেন ভোজ ও উৎসব করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, তথাকথিত খতীব সহ কিছু কিছু নামধারী মাওলানা মনে করে যে, বাংলা সন ইসলামী সন। কারণ উহা আকবর করেছে। মূলতঃ এরা ইতিহাস সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। কারণ যে আকবর আল্লাহ দাবী করল, যে আকবর গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করল, পূজা প্রচলন করল, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বন্ধ করল, যে আকবর হিন্দুদের জিজিয়া কর বন্ধ করল, সে আকবর ইসলামী দরদে গদগদ হয়ে ইসলামী সন প্রচলন করবে তা নেহায়েত আহম্মক ও মূর্খ ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা।
তদুপরি এটা সাধারণ আক্বলের কথা যে, আকবর যদি ইসলামী সনই প্রচলন করতে চাইত তাহলে সে সৌর সাল প্রবর্তন করল কেন? মূলতঃ ইসলামকে বাদ দিয়ে তথাকথিত সব ধর্ম মত এক করে দ্বীনে ইলাহী প্রবর্তনের মত এখানেও সে হিজরী সালের সাথে নিজস্ব মত যোগ করে নতুন ধর্ম মতের নতুন সনের উদ্ভাবক সেজেছে। আর প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য ছিল তার খাজনা আদায়ের সুবিধা ভোগ করা। ইসলামী ভাবধারা তার সাথে যুক্ত ছিলনা। সুতরাং আকবরের এই স্বার্থবাদী চিন্তাকে যারা ইসলামী বলতে চান তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন।
আরো উল্লেখ্য যে, দ্বীনে ইলাহীর প্রবর্তক তার খেয়াল অনুযায়ী শুধু বাংলা সনই প্রবর্তন করেনি তার সাথে সেই বাংলা সনের প্রথম দিন বা বাংলা নববর্ষ পালন বাধ্যতামূলক বা সরকারীকরণ করেছিল।
বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের পূজার দিন
উল্লেখ্য, বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্ত। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন। সুতরাং সে পূজার দিনে মুসলমানদেরও শামীল হওয়ার জন্যই কি খতীবের বাংলা নববর্ষ পালনের আহবান। (নাউযুবিল্লাহ)
খতীবের চরম জেহালতিঃ
ইসলামে তিনটি নববর্ষ আছে
তথাকথিত এই খতীব বলেছেন, ইসলামে ৩টি নববর্ষ আছে। এর একটি হল ঈসায়ী বর্ষ, যেটা খ্রীষ্টাব্দ হিসেবে চালু আছে, অন্যটি চাঁদের হিসেবে হিজরী বর্ষ আর অন্যটি হল হিজরী সন থেকে বাংলা বর্ষে রূপান্তর।”
এখানে উল্লেখ্য ইসলাম আসার পর বিগত সব ধর্মের কৃষ্টি কালচার তথা হুকুম-আহকাম বাদ হয়ে যায় সেটাকে ইসলামী বলা যায়না। যেমন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর যামানায় ভাই বোনে বিয়ে জায়িয ছিল কিন্তু ইসলামে নেই। সুতরাং খ্রীষ্টাব্দ ঈসায়ী শরীয়তে ঠিক আছে কিন্তু তাকে ইসলামী বলা যায়না।
আর যদি তা ইসলামীই হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয় যে, তথাকথিত খতীব বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর বহু বড় নিয়ামত হল নববর্ষ। তাহলে খতীবের একথা মুতাবিক ১লা জানুয়ারী অর্থাৎ খ্রীষ্টাব্দের হিসেবে ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে ঈসায়ী নববর্ষ মুসলমানদের পালন করতে হবে। যা বর্তমানে তাবত খ্রীষ্টানরা থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার হিসেবে পালন করছে এবং তথাকথিত খতীব নিজেও তার বিরুদ্ধে মেকী হুঙ্কার দিয়েছে। অথচ আজকে তার খুৎবায় সে নিজেই তার দিকে প্ররোচিত করছে।
খতীবের চরম নাদানি
তথাকথিত এই খতীব বলেছে, যেদিন আসমান জমিন সৃষ্টি হয়েছে সেদিনই বর্ষের শুরু।
তথাকথিত খতীবের এই নির্লজ্জ জেহালতি আমাদের হতবাক করে। কারণ হিজরী সালের প্রথম দিন হচ্ছে পহেলা মুহররম। কিন্তু পহেলা মুহররমে আসমান জমিন সৃষ্টি হয়েছে এরকম কথা কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও নেই।
ইসলামে পহেলা তারিখ বা বর্ষের শুরুকে প্রাধান্য ও ফযীলত দেয়া হয় নাই। বরং দেয়া হয়েছে ১০ই মুহররম বা আশুরাকে, যেদিন আসমান-যমীন সৃষ্টি হয়েছে তথাকথিত খতীবের একথাকে যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে বলতে হয় আসমান জমিন সৃষ্টি হয়েছে ১০ই মুহররম বা আশুরার দিন। অতএব, শুকরিয়া যদি করতে হয় তাহলে আশুরারই করতে হবে যা কুরআন-সুন্নাহ সম্মত। অথচ তা বাদ দিয়ে তথাকথিত খতীব আমাদেরকে নববর্ষের শুকরিয়া করতে বললেন।
ইমাম আবু হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর ফতওয়া ও তথাকথিত খতীবের অবস্থান
ইমাম আবু হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তাহলে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
অথচ তথাকথিত এই খতীব বলেছেন যে, নববর্ষের দিনে দান খয়রাত করতে হবে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) তথাকথিত এই খতীবের খুৎবা তাহলে জাতির জন্য, উম্মাহর জন্য কতটুকু নিরাপদ তা সত্যিই ভাববার বিষয়। তথাকথিত জাতীয় খতীবের আসনে বসে তিনি উম্মাহকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, ভুল শিক্ষা দিয়ে হারাম পথে পরিচালিত করছেন তাও আবার বিশিষ্ট ইসলামের লেবাসে তা কোনভাবেই বরদাশত যোগ্য নয়।
হারাম থেকে হারামেরই জন্ম হয়
তথাকথিত জাতীয় খতীব নববর্ষের নামে বেহায়াপনা তথা হারাম কাজ থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাও বা পারবেন কিভাবে। কারণ তিনি নিজেই যে অজস্র হারামের সাথে জড়িত।
গত ১০-০৪-০৪ তারিখে মানবজমিনে তার যে আহবান ছাপা হয়েছে সেখানেও রয়েছে হারামের স্বাক্ষর। সেখানেও যুক্ত হয়েছে তার ছবি। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি তোলা নাজায়িয একথা সবারই জানা।
তিনি বলছেন, নববর্ষের নামে গান-বাজনা নাজায়িয। আমাদের প্রশ্ন, তাহলে ছবি তোলা কি জায়িয?
তিনি বলেছেন, নববর্ষের দিন যুবক-যুবতী বেহায়াপনার সাথে রাস্তায় চলা-ফেরা করে এগুলো আল্লাহ পাক-এর নাফরমানি।
আমাদের প্রশ্ন-
খতীব নিজেও কি নাফরমানি করছেন না? কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কিয়ামতের ময়দানে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে যে ছবি তোলে বা আঁকে।” কারণ ছবি তোলার দ্বারা বান্দা নিজেও একটা সৃষ্টির দাবীদার হয়ে থাকে যা আল্লাহ পাক-এর সাথে শিরক তথা শক্ত নাফরমানির শামিল।
অথচ তথাকথিত খতীব সেই নাফরমানী প্রকাশ্যেই করছেন এবং প্রকারান্তরে তা জায়িয বলে উম্মাহকেও সে নাজায়িয তথা হারাম কাজে শামিল করছেন।
কাজেই নিজেই আদ্যোপান্ত হারাম কাজে মশগুল থাকার ফলে উম্মাহকে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার আহবানের নৈতিক অধিকার তার কোথায়?
কারণ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করানা।”
মূলতঃ এসব নামধারী ব্যবসায়ী তথাকথিত আলিম, খতীব, শায়খুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, “আমলহীন, ধর্মব্যবসায়ী, নামধারী মাওলানারাই সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব।” য
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ