প্রবাদ রয়েছে- দো’দেল বান্দা কলেমা চোর, না পায় শ্মশান, না পায় গোর। মুখে এক আর অন্তরে আরেক। ইসলামের পরিভাষায় এদের বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিক যে কারণে দো-দেল বা দো-যবান হয় তার পিছনে মূল কাজ করে স্বার্থগত প্রবণতা তথা দুনিয়ার লিঞ্ঝা। এ লিঞ্ঝা হতে পারে প্রভাব প্রতিপত্তির, হতে পারে অর্থের। হতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতার। সারা জীবন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শিরক বলে আজ নিজামী-সাঈদী গং সেসব কাজই সমর্থন করছে পাশাপাশি মদের দাম কমানোসহ মদের কারখানার অনুমতি দিলেও বা আমেরিকা-আফগানিস্তানসহ ইরাক আক্রমন করলেও সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করে গেছে, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে আকাশ ফাটানো শ্লোগানধারী বর্ণচোরা ঐ মহলটি। তবে যে কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণচোরা ঐ মহলটি জন্মগতভাবেই পেয়েছে গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং বদলানোর প্রবণতা তথা মুনাফিকী খাছলত। হাদীছ শরীফে মুনাফিকদের চারটি খাছলত বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি হলো- ১. কথা বললে মিথ্যা বলা, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করা। হাদীছ শরীফের এ ভাষ্য অনুযায়ী তথাকথিত জামাতে ইসলামীর জন্মদাতা মওদুদী কোন্ পর্যায়ের মুনাফিকরূপে সাব্যস্ত হন তা বিচারের জন্য পাঠকের নিকট নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ও বক্তব্য (প্রথম পর্যায়ে ইসলামী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রচেষ্টায় নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে এবং পরবর্তীতে তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে) যা চরম নির্লজ্জতার, বেহায়াপনার ও নগ্ন স্বার্থবাদিতার জ্বলন্ত প্রমাণ এখানে পেশ করা গেলো- মওদুদী ১৯৬৫ সালের নির্বাচনের কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত তাঁর একাধিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বলে এসেছেন মহিলা সমাজকে রাজনীতিতে টেনে আনা, আইন পরিষদের সদস্য হওয়ার অধিকার দেয়া, এমনকি কোন দায়িত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগ করাও ইসলামের মূলনীতি বিরোধী। তিনি বলতেন, এটা পাশ্চাত্য জগতের অন্ধ অনুকরণ বৈ কিছু নয়। মওদুদী বলেছেন, “আইন পরিষদগুলোতে মহিলাদের সদস্য হওয়ার অধিকার দেয়া হলো পাশ্চাত্যে জাতিসমূহের অন্ধ অনুকরণ। ইসলামের নীতিমালা এর এতটুকু অনুমতি দেয় না। ইসলামের রাজনীতি ও দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব কেবলমাত্র পুরুষের উপরই ন্যস্ত। এসব দায়িত্ব মহিলাদের কর্মক্ষেত্রের বাইরে।” (দাস্তরী তাজাবিয-মওদুদী) তিনি বলেছেন, “পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও এ কথার কী অবকাশ আছে যে- মুসলিম মহিলারা কাউন্সিল ও পার্লামেন্টের সদস্য হবে? ঘরের বাইরে সামাজিক তৎপরতায় দৌড়াদৌড়ি করবে, সরকারি দফতরে পুরুষের সাথে কাজ করবে, কলেজগুলোতে ছেলেদের সাথে শিক্ষাগ্রহণ করবে, পুরুষদের হাসপাতালে নার্সিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে, বিমান ও রেলকারে যাত্রীদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হবে এবং শিক্ষাদীক্ষার উদ্দেশ্যে আমেরিকা-ইংল্যান্ড যাবে? (তাফহিমুল কোরআন, ৪৬ পৃষ্ঠা-মওদুদী) উপরোক্ত উদ্ধৃতি দুটোর প্রথমটি তো একেবারে স্পষ্ট। তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি মওদুদী রচিত তাফহিমুল কোরআন থেকে সঙ্কলিত। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, “মহিলাদের কাউন্সিল ও পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া, ঘরের বাইরে সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা, পুরুষের সাথে চাকরি করা, সহশিক্ষা, নার্সিং প্রভৃতি ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলাদের এসব ব্যাপারে অংশ নেয়ার কোন অবকাশ নেই।” এ হলো সকল মুসলিম মহিলার অধিকার সম্পর্কে মওদুদীর ইসলামিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা অভিমত। মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর বিভিন্ন গ্রন্থের এ ধরনের আরো বহু উদ্ধৃতি রয়েছে। ১৯৬৪ সালে ফাতিমা জিন্নার মনোনয়ন লাভের পূর্ব পর্যন্ত এ ছিলো মহিলাদের সম্পর্কে মওদুদীর ইসলামী ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ। ১৯৬৫ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলীয় প্রার্থিনী ফাতেমা জিন্নাহ হবেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তাতে করে জামাতে ইসলামীও ক্ষমতার বখড়া লাভ করবে। নিছক ক্ষমতার লোভে সেবার জামাতে ইসলামী মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান পদপ্রার্থীকে সমর্থন করে। শুধু সমর্থনই নয়, মিস ফাতেমা জিন্নার সপক্ষে জামাতে ইসলামীর পুরো মিশনারী নিয়োগ করা হয়। এরূপে মওদুদী অতীতে মহিলাদের ব্যাপারে যেসব ইসলামী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে আসছিলেন সেগুলো বেমালুম ভুলে যান। মহিলাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার তিনি যে কোরআনের দোহাই পেড়ে হরণ করার প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন, ক্ষমতার মোহে সে কোরআনের নামেই মওদুদী পুনরায় মহিলার রাষ্ট্রপ্রধান পদপ্রার্থী হওয়ার স্বপক্ষে প্রচারণা চালান। ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনী প্রচারণায় মওদুদী ও তাঁর জামাত মিস ফাতেমা জিন্নার সমর্থনে যেসব বিবৃতি ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছিলেন, বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে সংক্ষেপে এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা যাক। তিনি বলেছেন, মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাকে নির্বাচন করায় এ ছাড়া কোন অসুবিধা নেই যে, তিনি একজন মহিলা। এদিক ছাড়া আর সব গুণাবলীই তাঁর মধ্যে রয়েছে যা একজন যোগ্য রাষ্ট্রপ্রধান প্রার্থীর জন্য বলা হয়েছে। (সাপ্তাহিক শেহাব, ১১ অক্টোবর, ’৬৪) “মহিলার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ব্যাপারে কোনোই বাধ্যবাধকতা নেই। মহিলার নেতৃত্বে যুদ্ধ করা কিংবা হজ করা অবৈধ বলাও অন্যায়।” (শেহাব, ১৮ই অক্টোবর, ’৬৪) “আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান প্রার্থী মাদারে মিল্লাত মোহতারামা ফাতেমা জিন্নাহ প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের চাইতে হাজার গুণ উত্তম।” (নাওয়ায়ে ওয়াকত, ২৪ ডিসেম্বর ’৬৪) “বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে মিস ফাতেমা জিন্নার পরিবর্তে যদি কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও খোদাভীরু পুরুষকে রাষ্ট্রপ্রধান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হতো তবে তা হতো পাপ কাজ।” (শেহাব, ১ জানুয়ারি, ’৬৫) “জনসাধারণের এ ব্যাপারে উদাসীন থাকা উচিত নয় যে, যদি তাদের অবহেলার দরুন তাদের প্রতিনিধিরা ভুল সিদ্ধান্ত করে (মিস ফাতেমা জিন্নাকে রাষ্ট্রপ্রধান মনোনীত না করে) তবে খোদাও তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করবেন না।” (এশিয়া, ২৭ ডিসেম্বর, ’৬৪) “আমাদের উপর ফরজ হলো মিস ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে বর্তমান সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক পথে ক্ষমতাচ্যুত করা। আল্লাহ তায়ালাও এর চাইতে সুবর্ণ সুযোগ আর দান করতে পারবেন না।” (নাওয়ায়ে ওয়াকত, ২৬ অক্টোবর, ’৬৪) এসব হলো মওদুদীর উক্তি। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি মিস ফাতিমা জিন্নার স্বপক্ষে এসব বলেছিলেন। অপরদিকে মওদুদী ১৯৬৪ সালে ফাতেমা জিন্নাহকে বিরোধী দলের তরফ থেকে মনোনয়ন দানের পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া দূরে থাক, মহিলাদের সাধারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার দানেরও বিরোধিতা করেছেন। তিনি একে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ বলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন। মওদুদীর অনুসারী বাংলাদেশের জামাতীরাও বর্তমানে মহিলা নেতৃত্বের সাথে জোট করেছেন, এক সাথে পোস্টার ছেপেছেন। ষড়যন্ত্র করে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। আমাদের ভাবতেও লজ্জা লাগে, জামাতীরা যে মুখে দীর্ঘদিন যাবত এসব উক্তি করেছিলেন, স্বার্থ হাসিলের মোহে সে মুখ দিয়েই এগুলোর বিপরীত কাজ করছেন। এর পরেও কারো পক্ষে বিশ্বাস করা কি সম্ভব, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জামাতে ইসলামী দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন এবং ইসলামই তাদের দলের একমাত্র আদর্শ। ১৯৫২ সালের ‘মাসিক তরজুমানুল কুরআন’ ও ‘মাসিক আল ফুরকান’ পত্রিকায় মওদুদী লিখেছেন নারী নেতৃত্ব কোন ইজতিহাদী মাসয়ালা নয়। অর্থাৎ কোন মাওলানা, কোন শাইখুল হাদীছ, কোন খতীব, কোন মুফাস্সিরে কুরআন, কোন মুফতির কিয়াস, পর্যালোচনা মতামত বা অভিমত খাটানো এখানে চলবে না। বড় খারাপ মোকাবিলায় ছোট খারাপ গ্রহন এ জাতীয় কথা এখানে বলা চলবে না। মওদুদীর ভাষায়ঃ “শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমান তলব করে তার স্থান ইসলাম গ-ীবহির্ভূত; অন্তর্ভুক্ত নয়।” অর্থাৎ মাওঃ মওদুদীর ফতওয়া অনুযায়ীই তিনি ইসলামের গ-ীবহির্ভূত। অন্তর্ভুক্ত বা মুসলমান তিন নন। বরং হাদীছ শরীফের বিচারে স্পষ্ট মুনাফিকই তাকে বলা যায়। এখানে উল্লেখ্য, বৃটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোথি আর্কাইভ’ নামক বইয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সি.আই.এ’র এজেন্ট। পাশাপাশি ফিরআউনের কাহিনীও মওদুদীর প্রতি প্রযোজ্য হয়। একবার মানুষের ছুরতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এসে ফিরআউনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোন মনিব যদি কোনো গোলামকে অনেক কিছু দেয় পরবর্তীতে সে গোলাম যদি উক্ত মনিবের বিরোধীতা করে তাহলে তার কি শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ফিরআউন তখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলেছিল তাকে লোহিত সাগরের পানিতে চুবিয়ে মারা উচিৎ। আল্লাহ পাক আপন কুদরতে ফিরআউনের মুখেই তার শাস্তির কথা উল্লেখ করিয়েছিলেন। তদ্রুপ তথাকথিত ইসলামী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর হাক্বীকত কী তা কুদরতময় আল্লাহ পাক তার হাত দিয়েই লিখিয়েছেন। এর প্রমাণ স্বরূপ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর আরো চিঠির উল্লেখ করা যায়। যেমন মওদুদী বলেনঃ ২১শে নভেম্বর- ’৬৪ পত্র- ৮৭ শ্রদ্ধেয়, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনার চিঠি পেয়েছি। আল্লার যমীনে আল্লার আইন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পথ থেকে বর্তমান একনায়কত্ব হটানো ছাড়া এ উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে না। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোনা বাস্তব পন্থা নেই। এ সময়ে যদি তৃতীয় একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্টের জন্যে দাঁড় করানো হয় তবে এটা প্রকৃতপক্ষে আইউব খানকে একনায়কত্বে প্রতিষ্ঠত রাখারই প্রচেষ্টা হবে। খাকসার আবুল আলা প্রাপক কাযী নাসীর আহমদ সাহেব নারুওয়াল। পত্র- ৮৮, ২১শে নভেম্বর- ’৬৪ শ্রদ্ধেয়, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার পেশকৃত প্রস্তাব শরীয়তের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। জাল ভোট গ্রহণ করা অথবা টাকা দিয়ে ভোট কেনা এ দেশের জন্যে এমন ধ্বংসাত্মক যেমন ক্ষতিকর একনায়কত্ব। এ পন্থায় যারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে তাদের দ্বারা কোনো সংস্কার ও কল্যাণধর্মী কাজ হতে পারে না। খাকসার, আবুল আলা প্রাপক, আবু নোমান, শিয়ালকোট। (সূত্রঃ মওদুদীর পত্রাবলীঃ আধুনিক প্রকাশনি) মন্তব্যঃ ৮৮ নং চিঠিতে মওদুদী মন্তব্য করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ৮৭ নং প্রশ্নে উল্লিখিত “এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোন বাস্তব পন্থা নেই।” এই বক্তব্যও পরাজয়েরই পথ। কারণ মওদুদী নিজেই স্বীকার করেছে নারী নেতৃত্ব হারাম এটা কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা সরাসরি ছাবেত। এর মধ্যে মানুষের ইজতিহাদ করার কিছু নেই। এটা স্পষ্ট হারাম। যে হালাল বলবে মুসলমানই থাকবে না। তাহলে সে হারাম পথে যদি বিজয় আসেও সে হারাম পথে আইয়ুব খান তথা একনায়কতন্ত্রকে যদি ঠেকানো যেতো তাহলেও মওদুদীর ভাষ্যানুযায়ী তা হত পরাজয়। কারণ তা হারাম পথে তথা অবৈধ পন্থায়। আর মওদুদী নিজেও স্বীকার করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। কিন্তু কার্যত মওদুদী সেই হারাম পথেই গিয়েছে এবং তার কথিত পরাজয়ের পথেই তার কবর রচিত হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত জামাতে ইসলামী অদ্যাবধি সে পরাজয়ের পথে তথা হারাম পথেই রয়েছে। যা তাদের স্বীকারোক্তিতেও বিদ্যমান। ’৯৪ সালে প্রকাশিত এসোসিয়েশন অব মাওলানা সাঈদী সাপোর্টার্স- এর বিশেষ বুলেটিন ‘মুলধারার’ সাথে সাক্ষাতকারে সাঈদী যা বলেছে, প্রশ্নঃ আপনে সর্বদা নারী নেতৃত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন? অথচ ৯১ এর নির্বাচনের পর নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিলেন কেন? উত্তরঃ আমরা নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অতীতেও বক্তব্য রেখেছি। এখনো আমরা সে অবস্থান থেকে সরে যাইনি। জনগণকে সবসময়ই বুঝাচ্ছি ইসলামে নারী নেতৃত্ব স্বীকৃত নয়। নারী নেতৃত্বকে আমরা সমর্থন দেইনি।” কিন্তু পাঠক ৯১ এ বি.এন.পির সাথে আঁতাত, ৯৬-এ আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত এবং বর্তমান জোট সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা সাঈদীর উপরোক্ত কথার সত্যতা কত চরম মিথ্যা তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাও বোধ হয় সুস্থ মানুষের নেই। মূলতঃ এহেন চশমখোর গোষ্ঠীর পক্ষেই সম্ভব ’৭১ এর মত রাজাকারগিরি করা, নারী-ধর্ষন হত্যা ও লুটতরাজের মহোৎসব করা। কারণ আসলেতো এরা ইসলাম করে না। করে ইসলামের লেবেল এটে স্বার্থের রাজনীতি। স্বার্থের জন্যই আজ নারী নেতৃত হারাম বলে কাল হালাল বলে। আর এরূপ স্বার্থবাদী রাজনীতি করে বলেই দে. হো সাঈদী অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে ৯০ সালে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায়’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, প্রশ্নঃ গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পর আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে; আপনি কি বলেন? সাঈদী (মুচকি হেসে)ঃ রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা শেষ কথা বলে কিছু নেই। (অর্থাৎ ইসলামকে এরা রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে ইসলাম হিসেবে মানে না এবং এরা অন্যান্য দুনিয়াবী রাজনীতিবিদদের মতই) বাস্তবেও তাই হয়েছে। এরা ঠিকই ৯৬ এ আওয়ীমী লীগের সাথে আঁতাত করেছে। আবার বেশী ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ৯৯ এ বিএনপির সাথে আঁতাত করেছে। তাদের নিজামী বলেছে ইসলাম কায়েমের জন্য নয় বরং আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য তারা নির্বাচন করেছে। অথচ এ নির্বাচনকে তারা আখ্যা দিয়েছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। এর জন্য মাল, অর্থ-সময় সব কিছু দেয়াকে তারা জিহাদ বলে উল্লেখ করেছে। কাজেই ধর্মের নামে এভাবে ধোঁকা প্রতারণা, মুনাফেকী আর কত দিন। হাদীছ শরীফে এদেরকে যমীনের নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এদের কাছে না যেতে এবং কাছে আসতে না দিতে বলা হয়েছে। তাহলে তারা আমাদের গুমরাহ করতে পারবে না তাও বলা হয়েছে। আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাযীম।
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২