আবু দাউদ শরীফের হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে আল্লাহ পাক একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন। যিনি দ্বীনের মধ্যে উদ্ভূত সব বেশরা-বিদয়াত দূর করে দ্বীনকে তার সঠিক আদলে সমুজ্জল করবেন। উল্লেখ্য দ্বীনের মধ্যে বেশরা-বিদয়াতের অনুপ্রবেশ ঘটায় ইসলামের লেবাসে আমলহীন ধর্মব্যবসায়ীরাই। অর্থাৎ সামান্য দুনিয়াবী লাভে ও লোভে ইসলামের পথে বিচ্যুত তথাকথিত আলেম সমাজই। তাই এমনও দেখা যায় যে হক্ব পথ বিচ্যুত এসব আলেম সমাজ দুনিয়াবী লালসার স্বীকার হওয়ার আগে ঠিকই হক্ব কথা বলেছে। কিন্তু যখনই তারা নফসের প্রতারণায় পড়েছে, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় মজে দুনিয়ার লোভে আসক্ত হয়েছে তখন নিজের বলার বিরুদ্ধে নতুন করে বলেছে। নিজের লেখার বিরুদ্ধে উল্টো লিখেছে। নিজের বিরোধীতা নিজে করেছে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর যুগে আবুল ফজল তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্র্রথম জীবনে ছুফী থাকলেও পরবর্তী জীবনে সেই বাদশাহ আকবরের দ্বীনে-ইলাহী প্রবর্তনে মূল ভূমিকা পালন করেছে। বাদশাহ আকবরের আমলের উলামায়ে ছুরা করেছিল দ্বীন-ই-ইলাহী। আর এখনকার উলামায়ে ছুরা করছে দ্বীন-ই-জমহুরী। দ্বীন-ই-ইলাহীতে যেমন সব হারাম হালাল ছিল তেমনি দ্বীন-ই-জমহুরীতে মৌলবাদ,হরতাল, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি সব হারামই হালাল হয়েছে। এমনকি নারী নেতৃত্ব, বেপর্দা, ছবি তোলা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা সবই জায়িয। ইদানিং নাকি টিভি চ্যানেলগুলোতে কেন আল বাইয়্যিনাতে টিভিতে প্রোগ্রাম করার বিরুদ্ধে বলা হয় সে সম্পর্কে মনগড়া অনেক বিষোদগারও করা হয়। তারা জোর গলায় আরো চেচাচ্ছে যে, বর্তমানে সব শীর্ষস্থানীয় ওলামারাই টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম জায়িয করেছে। পাঠক! আবারো সেই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমুতল্লাহি আলাইহি-এর কাহিনী পুনঃ উপস্থাপন করছে আজকে তথাকথিত শীর্ষস্থানীয় উলামারা। টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম কর যারাা জায়িয বলেছেন তাদেরই শীর্ষ নেতা তথাকথিত শায়খুল হাদীস আজ থেকে মাত্র ছয় বৎসর পূর্বে জোট সরকার গঠনের আগে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা সম্পর্কে কি লিখেছে তা তারই “ আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” শীর্ষক বইয়ে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে, শাইখুল হদস লিখিত এই বইয়ের ভাষ্যমতে, ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, সিনেমা ইত্যাদি যন্ত্রের সুযোগ করে দেয়া ইসলামের শত্রুর কাজ, এগুলো মানুষের পাশবিক লালসাকে উত্তেজিত করে। আর এসব হচ্ছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। সাংস্কৃতিক বোমা শারীরিকভাবে আঘাত না করলেও এ চরিত্র বিধ্বংসী আগ্রাসন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হৃদয়, মন তথা চরিত্রকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। আর এসব ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে টিভি, সিনেমা, ভিসিআর, ডিস ইত্যাদি। আর সে প্রসঙ্গে খোদ শাইখুল হদস তার “আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” নামক বইয়ের ১০৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ “ইসলামের শত্রুরা ইসলামের পর্দা প্রথাকে উচ্ছেদ করার জন্য সর্ব প্রধান হাতিয়ার হিসেবে যা ব্যবহার করেছেন তা হচ্ছে এই যে, তারা আমাদের ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, সিনেমা ইত্যাদি গুনাহ ও পাপকর্মে উত্তেজিতকারী যন্ত্রসমূহকে খুব সহজে পৌঁছায়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ পর্দা প্রথা ধ্বংস করে অশ্লীলতা বৃদ্ধির জন্য এসব যন্ত্রকে সামাজিক আগ্রাসন হিসেবে ইসলামের শত্রুরা ব্যবহার করেছে, কারণ কোন জাতিকে সমূলে বিনাশ করতে কিংবা জাতির নৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দিতে এবং জাতির অস্তিত্ব মুছে ফেলতে বিরুদ্ধবাদী শক্তি দু’ভাবে আগ্রাসন চালায়, সামরিক আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।” মিসাইল, তলোয়ার, অস্ত্রশস্ত্র প্রভৃতি সামরিক আগ্রাসন চোখে পড়ে বিধায় এ আগ্রাসন মুকাবিলা করা অতি সহজ। এ আগ্রাসনে হয়তো কিছু মানুষ নিহত, আহত হয় এবং এর ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠা যায় অল্প সময়ে। পক্ষান্তরে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হয় সরাসরি রাজধানী থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরে ঘরে, এ আগ্রাসনে একটি বোমাও ব্যবহৃত হয় না বিধায় কারো শারীরিক ভাবে আহত-নিহত হবার সম্ভাবনা নেই; কিন্তু এ আগ্রাসন এতোই মারাত্মক যে, জাতি মানসিকভাবে আগ্রাসী শক্তির কাছে এমন বশ্যতা স্বীকার করে যে, ভৌগলিক সীমারেখায় উভয় জাতি ভিন্ন হলেও চরিত্র, কালচার, চালচলন, মন-মানসিকতায় উভয়ই এক হয়ে যায়। জাতির কোন পরিচয় ও স্বকীয়তা বজায় থাকেনা। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চোখে পড়েনা বিধায় তা মুকাবিলা করা কঠিনতর এবং এর ক্ষতি সামরিক আগ্রাসনের চাইতে অনেক গুণে বেশী। সাধারণতঃ সামরিক আগ্রাসনের চেয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অন্যতম হাতিয়ার হলো টিভি, সিনেমা, ভিসিআর প্রভৃতি। কাফির শক্তি কোন কালেই মুসলমানদের সাথে সামরিক যুদ্ধে টিকতে পারেনি, বিধায় মুসলমানদের বশ করার জন্য এরা টিভি, সিনেমা দিয়ে সাংস্কৃতিক ক্রুসেড শুরু করেছে।
এ ক্রুসেডে এরা কোন বাহ্যিক রোমা, মিসাইল ব্যবহার না করলেও এর চেয়ে মারাত্মক বোমা এতে ব্যবহার করছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বোমা মিসাইল হলো অশীল ছায়াছবি. পর্ণোগ্রাফি, সিনেমা, কদর্যপূর্ণ পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী ও অনুচিত পর্ণো পুস্তক সাহিত্য। এ নীরব সাংস্কৃতিক বোমা, মিসাইলের আঘাতে চক্ষু অস্ত্র হয়না, শরীর ঝলসে যায় না, ঘরবাড়ী ধ্বংস হয় না, কারো দেহ ক্ষত করে না, শারীরিকভাবে কাউকে আহত-নিহত করেন। ঠেকই, কিন্তু এ চরিত্র বিধ্বংসী আগ্রাসন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু কিশোর-কিশোরী, বর্তমান হৃদয়-মন, আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়, যুবক-যুবতীদের নৈতিকতা আভ্যন্তরীণভাবে ধ্বংস করে দেয়।” যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, জোট সরকারের অধীনে সিনেমা, টিভি, সিনেমার নাচ-গান এসবই চলছে পূর্ণোদ্যমে; তদুপরি আজকের জোট সরকারের প্রধান মন্ত্রী কেবল এ সবের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষক ও পূর্ণ মদদগারই নয় বরং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই দেশে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির তথা ডিস এন্টিনার প্রথম প্রচলন করেন। কিন্তু এতে করে তথাকথিত শাইখুল হাদীসের রচিত “আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ভাষ্যমতে-বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী তথা তাকে সমর্থনকারী শাইখুল হৃদস নিজে এবং তার সমগোত্রীয় সকল মাওলানা, মুফতী, তথা খতীব ইসলামের চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
-মুহম্মদ আশরাফুল আলম, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১